রবিবার, ২৯ মে, ২০২২

ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক সত্যজিৎ রায় এর বাংলা জীবনী।


ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক সত্যজিৎ রায় এর বাংলা জীবনী।

  সত্যজিৎ রায় (২ মে ১৯২১ – ২৩ এপ্রিল ১৯৯২) ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক এবং লেখক। তাঁকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। সত্যজিৎ রায়ের জন্ম কলকাতা শহরে সাহিত্য ও শিল্প সমাজে খ্যাতনামা রায় পরিবারে। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। 

  চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ ছিলেন বহুমুখী এবং তাঁর কাজের পরিমাণ বিপুল। তিনি ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী (১৯৫৫), ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া “শ্রেষ্ঠ মানুষে-আবর্তিত প্রামাণ্যচিত্র” (Best Human Documentary) পুরস্কার। পথের পাঁচালী, অপরাজিত (১৯৫৬) ও অপুর সংসার (১৯৫৯) – এই তিনটি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত, এবং এই চলচ্চিত্র-ত্রয়ী সত্যজিতের জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে বহুল স্বীকৃত। 

  চলচ্চিত্রর মাধ্যমে সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করাসহ নানা কাজ করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক। বর্ণময় কর্মজীবনে তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে বিখ্যাত হল ১৯৯২ সালে পাওয়া একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার), যা তিনি সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন। তিনি এছাড়াও ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১টি গোল্ডেন লায়ন, ২টি রৌপ্য ভল্লুক লাভ করেন।

  তিনি বেশ কয়েকটি ছোট গল্প এবং উপন্যাস রচনা করেছেন, প্রাথমিকভাবে শিশু-কিশোরদের পাঠক হিসেবে বিবেচনা করে। কল্পবিজ্ঞানে তাঁর নির্মিত জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র দুটি হল গোয়েন্দা ফেলুদা এবং প্রোফেসর শঙ্কু। সত্যজিৎ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারত রত্ন সম্মাননা প্রদান করে। সত্যজিৎ ভারত রত্ন এবং পদ্মভূষণসহ সকল মর্যাদাপূর্ণ ভারতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন।

২০০৪ সালে, বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় সত্যজিৎ ১৩তম স্থান লাভ করেছিলেন। হৃদযন্ত্রের জটিলতার কারণে ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ রায় মৃত্যুবরণ করেন।

পারিবারিক ইতিহাস -

  রায় পরিবারের ইতিহাস থেকে জানা যায়, তাঁদের এক পূর্বপুরুষ শ্রী রামসুন্দর দেও (দেব) নদীয়া জেলার চাকদহ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ভাগ্যান্বেষণে তিনি পূর্ববঙ্গের শেরপুরে গমন করেন। সেখানে শেরপুরের জমিদার বাড়িতে তাঁর সাক্ষাৎ হয় যশোদলের জমিদার রাজা গুণীচন্দ্রের সাথে। রাজা গুণীচন্দ্র রামসুন্দরের সুন্দর চেহারা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হন এবং রামসুন্দরকে তার সাথে তার জমিদারিতে নিয়ে যান। যশোদলে জমিজমা, ঘরবাড়ি দিয়ে তিনি রামসুন্দরকে তাঁর জামাতা বানান। সেই থেকে রামসুন্দর যশোদলে বসবাস শুরু করেন। তাঁর বংশধররা সেখান থেকে সরে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ধারে মসুয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন।

প্রাথমিক জীবন –

  সত্যজিৎ রায়ের বংশানুক্রম প্রায় দশ প্রজন্ম অতীত পর্যন্ত বের করা সম্ভব। তার আদি পৈত্রিক ভিটা বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে অবস্থিত। সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং বাবা সুকুমার রায় দুজনেরই জন্ম হয়েছিল এখানে।

  উপেন্দ্রকিশোরের সময়েই সত্যজিতের পরিবারের ইতিহাস এক নতুন দিকে মোড় নেয়। লেখক, চিত্রকর, দার্শনিক, প্রকাশক ও শখের জ্যোতির্বিদ উপেন্দ্রকিশোরের মূল পরিচিতি ১৯শ শতকের বাংলার এক ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলন ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম নেতা হিসেবে। উপেন্দ্রকিশোরের ছেলে সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের ননসেন্স ও শিশু সাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন। দক্ষ চিত্রকর ও সমালোচক হিসেবেও সুকুমারের খ্যাতি ছিল। ১৯২১ সালে কলকাতায় জন্ম নেন সুকুমারের একমাত্র সন্তান সত্যজিৎ রায়। সত্যজিতের মাত্র তিন বছর বয়সেই বাবা সুকুমারের মৃত্যু ঘটে। মা সুপ্রভা দেবী বহু কষ্টে তাকে বড় করেন।

   সত্যজিৎ বড় হয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি পড়তে যান, যদিও চারুকলার প্রতি সবসময়েই তার দুর্বলতা ছিল। ১৯৪০ সালে সত্যজিতের মা তাকে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। কলকাতাপ্রেমী সত্যজিৎ শান্তিনিকেতনের শিক্ষার পরিবেশ সম্বন্ধে খুব উঁচু ধারণা পোষণ করতেন না, কিন্তু শেষে মায়ের প্ররোচনা ও রবিঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধার ফলে রাজি হন। শান্তিনিকেতনে গিয়ে সত্যজিৎ প্রাচ্যের শিল্পের মর্যাদা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। পরে তিনি স্বীকার করেন যে, সেখানকার বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু এবং বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছিলেন। সত্যজিৎ বিনোদবিহারীর ওপর পরবর্তীকালে একটি প্রামাণ্যচিত্রও বানান। অজন্তা, ইলোরা এবং এলিফ্যান্টায় ভ্রমণের পর ভারতীয় শিল্পের ওপর সত্যজিতের গভীর শ্রদ্ধা ও অনুরাগ জন্মায়।

  ১৯৪৩ সালে ২২ বছর বয়সী সত্যজিৎ নিয়মানুযায়ী বিশ্বভারতীতে পাঁচ বছর পড়াশোনা করার কথা থাকলেও তার আগেই ১৯৪৩ সালে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনের বিনিময়ে “জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার” হিসেবে যোগ দেন। চিত্রসজ্জা বা ভিজুয়াল ডিজাইন সত্যজিতের পছন্দের একটি বিষয় ছিল ও সংস্থাটিতে তিনি ভালো সমাদরেই ছিলেন, কিন্তু সংস্থাটির ইংরেজ ও ভারতীয় কর্মচারীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল (ইংরেজ কর্মচারীদেরকে অনেক বেশি বেতন দেয়া হত), আর সত্যজিতের মনে হত প্রতিষ্ঠানটির "ক্লায়েন্টরা ছিলেন মূলত বোকা।"

   ১৯৪৩ সালের দিকে সত্যজিৎ ডি কে গুপ্তের প্রকাশনা সংস্থা 'সিগনেট প্রেস'-এর সাথে জড়িয়ে পড়েন। ডি কে গুপ্ত তাকে সিগনেট প্রেস থেকে ছাপা বইগুলোর প্রচ্ছদ আঁকার অনুরোধ করেন ও এ ব্যাপারে তাকে সম্পূর্ণ শৈল্পিক স্বাধীনতা দেন। এখানে সত্যজিৎ প্রচুর বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করেন, যার মধ্যে জিম করবেটের 'ম্যানইটার্স অব কুমায়ুন' ও জওহরলাল নেহেরুর 'দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া' উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী বাংলা উপন্যাস 'পথের পাঁচালী'র একটি শিশুতোষ সংস্করণ 'আম আঁটির ভেঁপু'-র ওপরেও কাজ করেন। বিভূতিভূষণের লেখা এ উপন্যাসটি সত্যজিৎকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে এবং এটিকেই পরবর্তীকালে সত্যজিৎ তার প্রথম চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু হিসেবে নির্বাচন করেন। বইটির প্রচ্ছদ আঁকা ছাড়াও তিনি এর ভেতরের বিভিন্ন ছবিগুলোও এঁকে দেন। এই ছবিগুলোই পরে দৃশ্য বা শট হিসেবে তার সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রে স্থান পায়।

  ১৯৪৭ সালে সত্যজিৎ চিদানন্দ দাসগুপ্ত ও অন্যান্যদের সাথে মিলে 'কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি' প্রতিষ্ঠা করেন। সোসাইটির সদস্য হবার সুবাদে তার অনেক বিদেশী চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ হয়। এ সময় তিনি প্রচুর ছবি গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন । তিনি তাদের কাছ থেকে শহরে আসা নতুন মার্কিন চলচ্চিত্রগুলোর খবর নিতেন। এ সময় তিনি নরম্যান ক্লেয়ার নামের রয়েল এয়ার ফোর্সের এক কর্মচারীর সংস্পর্শে আসেন, যিনি সত্যজিতের মতোই চলচ্চিত্র, দাবা ও পাশ্চাত্যের ধ্রুপদী সঙ্গীত পছন্দ করতেন। ১৯৪৯ সালে সত্যজিৎ তার দূরসম্পর্কের বোন ও বহুদিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন। সত্যজিৎ দম্পতির ঘরে ছেলে সন্দীপ রায়ের জন্ম হয়, যিনি নিজেও বর্তমানে একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক। 

  ১৯৫০ সালে ডি জে কিমার সত্যজিৎকে লন্ডনে তাদের প্রধান কার্যালয়ে কাজ করতে পাঠান। লন্ডনে তিন মাস থাকাকালীন অবস্থায় সত্যজিৎ প্রায় ৯৯টি চলচ্চিত্র দেখেন। এদের মধ্যে ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি 'লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে' (ইতালীয়: Ladri di biciclette, "সাইকেল চোর") তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরে সত্যজিৎ বলেছেন যে ঐ ছবিটি দেখে সিনেমা হল থেকে বের হওয়ার সময়েই তিনি ঠিক করেন যে তিনি একজন চলচ্চিত্রকার হবেন।

কর্মজীবন –

  সত্যজিৎ ঠিক করেন যে, বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদী 'পথের পাঁচালী'-ই হবে তার প্রথম চলচ্চিত্রের প্রতিপাদ্য। ১৯২৮ সালে প্রকাশিত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই প্রায়-আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসটিতে বাংলার এক গ্রামের ছেলে অপু’র বেড়ে ওঠার কাহিনী বিধৃত হয়েছে। ছবি বানানোর জন্য সত্যজিৎ কিছু পূর্ব অভিজ্ঞতাবিহীন কুশলীকে একত্রিত করেন, যদিও তাঁর ক্যামেরাম্যান সুব্রত মিত্র ও শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্ত দুজনেই পরবর্তীকালে নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতিলাভ করেন। এ ছাড়া ছবির বেশির ভাগ অভিনেতাই ছিলেন শৌখিন।

  ১৯৫২ সালের শেষ দিকে সত্যজিৎ তাঁর নিজের জমানো পয়সা খরচ করে দৃশ্যগ্রহণ শুরু করেন। তিনি ভেবেছিলেন প্রাথমিক দৃশ্যগুলো দেখার পরে হয়ত কেউ ছবিটিতে অর্থলগ্নি করবেন। কিন্তু সে ধরনের আর্থিক সহায়তা মিলছিল না। পথের পাঁচালী-র দৃশ্যগ্রহণ তাই থেমে থেমে অস্বাভাবিকভাবে প্রায় দীর্ঘ তিন বছর ধরে সম্পন্ন হয়। কেবল তখনই দৃশ্যগ্রহণ করা সম্ভব হত যখন সত্যজিৎ বা নির্মাণ ব্যবস্থাপক অনিল চৌধুরী প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান করতে পারতেন। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে ঋণ নিয়ে ১৯৫৫ সালে ছবিটি নির্মাণ সম্পন্ন হয় ও সে বছরই এটি মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার পর পরই ছবিটি দর্শক-সমালোচক সবার অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করে ও বহু পুরস্কার জিতে নেয়। ছবিটি বহুদিন ধরে ভারতে ও ভারতের বাইরে প্রদর্শিত হয়। 

  ভারতে ছবিটির প্রতিক্রিয়া ছিল উৎসাহসঞ্চারী। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া-তে লেখা হয়,  “একে অন্য যেকোনও ভারতীয় চলচ্চিত্রের সাথে তুলনা করা অবাস্তব... পথের পাঁচালী হল বিশুদ্ধ চলচ্চিত্র”। যুক্তরাজ্যে লিন্‌জি অ্যান্ডারসন চলচ্চিত্রটির অত্যন্ত ইতিবাচক একটি সমালোচনা লেখেন। তবে ছবিটির সব সমালোচনাই এ রকম ইতিবাচক ছিল না। বলা হয় যে ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো ছবিটি দেখে মন্তব্য করেছিলেন: “কৃষকেরা হাত দিয়ে খাচ্ছে - এরকম দৃশ্যসম্বলিত ছবি আমি দেখতে চাই না” । দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সবচেয়ে প্রভাবশালী সমালোচক বসলি ক্রাউদার ছবিটির একটি কঠোর সমালোচনা লেখেন এবং সেটি পড়ে মনে করা হয়েছিল যে ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেলেও ভাল করবে না। কিন্তু এর বদলে ছবিটি সেখানে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি দিন ধরে প্রদর্শিত হয়।

  সত্যজিতের পরবর্তী ছবি "অপরাজিত"-এর সাফল্য তাকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও পরিচিত করে তোলে। এই ছবিটিতে তরুণ অপুর উচ্চাভিলাষ ও তার মায়ের ভালবাসার মধ্যকার চিরন্তন সংঘাতকে মর্মভেদী রূপে ফুটিয়ে তোলা হয়। বহু সমালোচক, যাদের মধ্যে মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটক অন্যতম, ছবিটিকে সত্যজিতের প্রথম ছবিটির চেয়েও ওপরে স্থান দেন। অপরাজিত ভেনিসে গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার জেতে। অপু ত্রয়ী শেষ করার আগে সত্যজিৎ আরও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ সমাপ্ত করেন। প্রথমটি ছিল 'পরশ পাথর' নামের একটি হাস্যরসাত্মক ছবি। আর পরেরটি ছিল জমিদারী প্রথার অবক্ষয়ের ওপর নির্মিত 'জলসাঘর', যেটিকে তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়।

  সত্যজিৎ 'অপরাজিত' নির্মাণের সময় একটি ত্রয়ী সম্পন্ন করার কথা ভাবেননি, কিন্তু ভেনিসে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা শুনে তার মাথায় এটি বাস্তবায়নের ধারণা আসে। অপু সিরিজের শেষ ছবি 'অপুর সংসার' ১৯৫৯ সালে নির্মাণ করা হয়। আগের দুটি ছবির মত এটিকেও বহু সমালোচক সিরিজের সেরা ছবি হিসেবে আখ্যা দেন (রবিন উড, অপর্ণা সেন)। এ ছবির মাধ্যমেই সত্যজিতের দুই প্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শর্মিলা ঠাকুরের চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে। ছবিটিতে অপুকে দেখানো হয় কলকাতার এক জীর্ণ বাড়িতে প্রায়-দরিদ্র অবস্থায় বসবাস করতে। এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অপর্ণার সাথে অপুর বিয়ে হয়। তাদের জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যে “বিবাহিত জীবন সম্পর্কে ছবিটির ধ্রুপদী ইতিবাচকতা ফুটে ওঠে”,কিন্তু শীঘ্রই এক বিয়োগান্তক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। একজন বাঙালি সমালোচক অপুর সংসার-এর একটি কঠোর সমালোচনা লেখেন এবং সত্যজিৎ এর উত্তরে ছবিটির পক্ষে একটি সুলিখিত নিবন্ধ লেখেন - যা ছিল সত্যজিতের কর্মজীবনে একটি দুর্লভ ঘটনা (সত্যজিতের প্রত্যুত্তরের এরকম ঘটনা আরেকবার ঘটে তার পছন্দের চারুলতা ছবিটি নিয়ে)।

  সত্যজিতের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর তার কর্মজীবনের সাফল্যের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। সত্যজিতের নিজস্ব কোন বাড়ি ছিল না; তিনি তার মা, মামা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে এক ভাড়া বাড়িতেই সারা জীবন কাটিয়ে দেন। তার স্ত্রী ও ছেলে দুজনেই তার কাজের সাথে জড়িয়ে ছিলেন। বেশির ভাগ চিত্রনাট্য বিজয়াই প্রথমে পড়তেন এবং ছবির সঙ্গীতের সুর তৈরীতেও তিনি স্বামীকে সাহায্য করতেন। আয়ের পরিমাণ কম হলেও সত্যজিৎ নিজেকে বিত্তশালীই মনে করতেন, কেননা পছন্দের বই বা সঙ্গীতের অ্যালবাম কিনতে কখনোই তার কষ্ট হয়নি।

  কর্মজীবনের এই পর্বে সত্যজিৎ নির্মাণ করেন রাজ পর্বের ওপর চলচ্চিত্র (যেমন দেবী), রবীন্দ্রনাথের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র, একটি হাস্যরসাত্মক ছবি (‘‘মহাপুরুষ’’) এবং মৌলিক চিত্রনাট্যের ওপর ভিত্তি করে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র (কাঞ্চনজঙ্ঘা)। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, সমালোচকদের মতে যেগুলোর মত করে ছবির পর্দায় ভারতীয় নারীদের এত অনুভূতি দিয়ে এর আগে কেউ ফুটিয়ে তোলেনি।

  অপুর সংসার নির্মাণের পরে সত্যজিৎ 'দেবী' ছবির কাজে হাত দেন। হিন্দু সমাজের বিভিন্ন মজ্জাগত কুসংস্কার ছিল ছবিটির বিষয়। ছবিটিতে শর্মিলা ঠাকুর দয়াময়ী নামের এক তরুণ বধূর চরিত্রে অভিনয় করেন, যাকে তার শ্বশুর কালী বলে পূজা করতেন। শর্মিলা পরে এই ছবিতে তাঁর অভিনয় নিয়ে মন্তব্য করেন যে দেবীতে তিনি নিজের থেকে কিছু করেননি, বরং এক জিনিয়াস তাঁকে দিয়ে সেটা করিয়ে নিয়েছিলেন। সত্যজিৎ আশঙ্কা করেছিলেন যে ভারতীয় সেন্সর বোর্ড হয়ত ছবিটি প্রদর্শনে বাধা দেবে, বা হয়ত তাঁকে ছবিটি পুনরায় সম্পাদনা করতে বলবে, কিন্তু সেরকম কিছু ঘটে নি। 

  ১৯৬১ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর প্ররোচনায় সত্যজিৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কবিগুরুর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। রবীন্দ্রনাথের ভিডিও ফুটেজের অভাবে সত্যজিৎকে মূলত স্থিরচিত্র দিয়েই ছবিটি বানানোর চ্যালেঞ্জ হাতে নিতে হয় এবং তিনি পরে মন্তব্য করেন যে ছবিটি বানাতে তাঁর সাধারণের চেয়ে তিন গুণ বেশি সময় লেগেছিল। 

  একই বছরে সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্যের সাথে মিলে সত্যজিৎ 'সন্দেশ' নামের শিশুদের পত্রিকাটি - যেটি তাঁর পিতামহ একসময় প্রকাশ করতেন - পুনরায় প্রকাশ করা শুরু করেন। সত্যজিৎ এ জন্য বহুদিন ধরে অর্থসঞ্চয় করেছিলেন। পত্রিকাটি ছিল একাধারে শিক্ষামূলক ও বিনোদনধর্মী, এবং “সন্দেশ” নামটিতে (শব্দটির দুটি অর্থ হয়: “খবর” ও “মিষ্টি”) এই দ্বিত্বতার প্রতিফলন ঘটেছে। সত্যজিৎ পত্রিকাটির ভেতরের ছবি আঁকতেন ও শিশুদের জন্য গল্প ও প্রবন্ধ লিখতেন। পরবর্তী বছর গুলোতে লেখালেখি করা তার আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত হয়।

  ১৯৬২ সালে সত্যজিৎ 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' ছবিটি পরিচালনা করেন। এটি ছিল তার বানানো প্রথম মৌলিক চিত্রনাট্যনির্ভর রঙিন চলচ্চিত্র। দার্জিলিং নামের এক পাহাড়ী রিসোর্টে একটি উচ্চবিত্ত পরিবারের কাটানো এক বিকেলের কাহিনী নিয়ে এই জটিল ও সঙ্গীত নির্ভর ছবিটি বানানো হয়, যে বিকেলে পরিবারের সদস্যরা হঠাৎ করেই পরিবারের দণ্ডমুণ্ড কর্তা ইন্দ্রনাথ রায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ছবিটি প্রথমে একটি বিরাট ম্যানশনে চিত্রায়িত করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পরে সত্যজিৎ সেই বিখ্যাত রিসোর্টেই দৃশ্যগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন, যাতে তিনি চিত্রনাট্যটির উত্তেজনা আলো-আঁধারের খেলা ও কুয়াশাকে ব্যবহার করে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। 

  এসময় সত্যজিৎ একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, যদিও তিনি অনুযোগ করতেন যে কলকাতার বাইরে তার নিজেকে সৃষ্টিশীল মনে হত না। ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। ষাটের দশকে জাপান সফরের সময় তার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন। দেশে অবস্থানকালে কলকাতার ব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে তিনি মাঝে মাঝে দার্জিলিং বা পুরি-তে চলে যেতেন ও সেখানে নির্জনে চিত্রনাট্য লিখতেন।

  ১৯৬৪ সালে সত্যজিৎ 'চারুলতা' ছবিটি নির্মাণ করেন, যেটি ছিল তার কর্মজীবনের এই পর্বের শেষ ছবি এবং অনেক সমালোচকের মতে তার সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প নষ্টনীড় অবলম্বনে নির্মিত ছবিটিতে ১৯শ শতকের এক নিঃসঙ্গ বাঙালি বধূ চারু ও ঠাকুরপো অমলের প্রতি তার অনুভূতির কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। সত্যজিৎ নিজে বলেছেন যে এই ছবিটিতে তার ভুলের সংখ্যা সবচেয়ে কম এবং এটিই তার নির্মিত একমাত্র ছবি, যেটি আবার সুযোগ পেলে তিনি ঠিক একইভাবে বানাতেন। 

  কাছের মানুষদের কাছে সত্যজিতের ডাকনাম ছিল “মানিক”। তিনি তার সমসাময়িক চলচ্চিত্রকারদের চেয়ে সাধারণ জনগণের সাথে অনেক বেশি মিশেছেন। অচেনা লোকদের তিনি প্রায়ই সাক্ষাৎ দিতেন। কিন্তু সাক্ষাৎকারীদের অনেকেই সত্যজিৎ ও তাদের মাঝে একটা দূরত্ব অনুভব করতেন। বাঙালিরা এটাকে ভাবতেন তার ইংরেজ মানসিকতার প্রকাশ, আর পশ্চিমীরা ভাবতেন তার শীতল ও গম্ভীর আচরণ ছিল ব্রাহ্মণদের মত। অভিনেতাদের প্রতি তার অগাধ আস্থা ছিল, কিন্তু তাদের অযোগ্যতায় বিরূপভাবও কখনো কখনো প্রকাশ করতেন। তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কখনোই তেমন আলোকপাত করা হয়নি।

  চারুলতা-পরবর্তী বছর গুলোতে সত্যজিৎ ছিলেন বৈচিত্র্যের সন্ধানী; এসময় কল্পকাহিনী ও গোয়েন্দা কাহিনী থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক ছবিও তিনি বানান। এ পর্বে তিনি তার ছবি গুলোতে প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান এবং সমকালীন ভারতীয় জীবনের বিভিন্ন দিকগুলো তার ছবিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন। এ পর্বে তার প্রথম প্রধান চলচ্চিত্র ছিল 'নায়ক', যার বিষয় ছিল এক চলচ্চিত্র তারকার সাথে এক সহানুভূতিশীল তরুণী সাংবাদিকের রেলযাত্রার সময়কার সাক্ষাৎ ও সংলাপ। উত্তম কুমার ও শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত এই ছবিতে ট্রেন যাত্রার ২৪ ঘণ্টার পরিসরে এক আপাতসফল চলচ্চিত্র তারকার মনের অন্তর্সংঘাতগুলো উন্মোচন করা হয়। ছবিটি বার্লিনে সমালোচকদের পুরস্কার জিতলেও এটি নিয়ে তেমন আর কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। 

    সত্যজিতের ছেলে সন্দ্বীপের অনুযোগ ছিল -তিনি সবসময় বড়দের জন্য গম্ভীর মেজাজের ছবি বানান। এর উত্তরে ও নতুনত্বের সন্ধানে সত্যজিৎ ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করেন তার সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'। এটি ছিল সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোরের লেখা ছোটদের জন্য একটি গল্পের ওপর ভিত্তি করে বানানো সঙ্গীতধর্মী রূপকথা। গায়ক গুপী ও ঢোলবাদক বাঘা ভুতের রাজার তিন বর পেয়ে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে ও দুই প্রতিবেশী রাজ্যের মধ্যে আসন্ন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করে। ছবিটির নির্মাণকাজ ছিল ব্যয়বহুল, এবং অর্থাভাবে সত্যজিৎ ছবিটি সাদা-কালোয় ধারণ করেন। 

  যদিও তার কাছে বলিউডের এক অভিনেতাকে ছবিতে নেয়ার বিনিময়ে অর্থের প্রস্তাব এসেছিল, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরে সত্যজিৎ তরুণ কবি ও লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা একটি উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিটি নির্মাণ করেন। বলা হয় এই ছবিটির সঙ্গীত-কাঠামো চারুলতার চেয়েও বেশি জটিল ছিল। ছবিটিতে চার শহুরে তরুণ ছুটিতে বনে ঘুরতে যায় এবং একজন বাদে সকলেই নারীদের সাথে বিভিন্ন ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে যা তাদের মধ্যবিত্ত চরিত্রের নানা দিক প্রকাশ করে।  এ ছবিতে সত্যজিৎ মুম্বাই-ভিত্তিক অভিনেত্রী সিমি গারেওয়াল-কে এক আদিবাসী মহিলা হিসেবে চরিত্রায়ণ করেন; তাঁর মত শহুরে নারীকে সত্যজিৎ চরিত্রটির জন্য নির্বাচন করেছেন শুনে সিমি অবাক হয়েছিলেন।

  অরণ্যের দিনরাত্রি-তে নির্মাণকুশলতা প্রদর্শনশেষে সত্যজিৎ মনোযোগ দেন তৎকালীন বাঙালি বাস্তবতার মর্মমূলে, যখন বামপন্থী নকশাল আন্দোলনের তীব্রতা সর্বত্র অনুভূত হচ্ছিল। সত্যজিৎকে প্রায়ই বলা হত তিনি সমসাময়িক ভারতীয় শহুরে অভিজ্ঞতার ব্যাপারে উদাসীন। এর জবাবে ১৯৭০-এর দশকে তিনি কলকাতাকে কেন্দ্র করে তিনটি ছবি বানান যেগুলো ‘‘কলকাতা ত্রয়ী’’ নামেও পরিচিত: প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০), সীমাবদ্ধ (১৯৭১), এবং জন অরণ্য (১৯৭৫)। চলচ্চিত্র তিনটি আলাদাভাবে পরিকল্পনা করা হলেও বিষয়বস্তুর মিলের কারণে এগুলোকে একটি দুর্বল ত্রয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া ৭০-এর দশকে সত্যজিৎ তার নিজের লেখা জনপ্রিয় গোয়েন্দা কাহিনীর নায়ক ফেলুদার ওপর ভিত্তি করে সোনার কেল্লা ও জয় বাবা ফেলুনাথ ছবি দুটিও নির্মাণ করেন।

  সত্যজিৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে একটি ছবি তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু পরে এ পরিকল্পনা ত্যাগ করেন, এই মন্তব্য করে যে -একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবে তিনি শরণার্থীদের বেদনা ও জীবন-অভিযাত্রার প্রতিই বেশি আগ্রহী ছিলেন, তাদের নিয়ে রাজনীতির প্রতি নয়। ১৯৭৭ সালে সত্যজিৎ 'শতরঞ্জ কে খিলাড়ি' নামের একটি হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ছবিটি মুন্সি প্রেমচাঁদ-এর একটি গল্প অবলম্বনে তৈরি করা হয়; ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিপ্লবের এক বছর আগে অযোধ্যা রাজ্যের লক্ষ্ণৌ ছিল গল্পটির পটভূমি। ছবিটিতে ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সূত্রপাতের ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়েছে। এটিই ছিল বাংলা ভাষার বাইরে অন্য ভাষায় নির্মিত সত্যজিতের প্রথম চলচ্চিত্র। এটি আরও ছিল তার সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও তারকাসমৃদ্ধ ছবি, যাতে সঞ্জীব কুমার, সাইদ জাফরি, আমজাদ খান, শাবানা আজমি, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ও রিচার্ড অ্যাটনবারা-র মত অভিনেতারা অংশ নেন। 

  পরবর্তীকালে সত্যজিৎ প্রেমচাঁদের গল্পের ওপর ভিত্তি করে হিন্দি ভাষায় এক-ঘণ্টা দীর্ঘ 'সদগতি" নামের একটি ছবি নির্মাণ করেন। ছবিটিতে ভারতে বিদ্যমান অস্পৃশ্যতার ক্রূর বাস্তবতাকে তুলে ধরা হয়। ১৯৮০ সালে সত্যজিৎ 'গুপী গাইন বাঘা বাইন' ছবির পরবর্তী পর্ব 'হীরক রাজার দেশে' নির্মাণ করেন, যেটিতে তার রাজনৈতিক মতামতের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ছবিটির চরিত্র হীরক রাজা ছিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণাকালীন সরকারের প্রতিফলন। বহুল প্রশংসাপ্রাপ্ত স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র 'পিকু' নির্মাণের মধ্য দিয়ে সত্যজিতের কর্মজীবনের এই পর্বের সমাপ্তি ঘটে।

শেষ পর্যায় –

  ১৯৮৩ সালে 'ঘরে বাইরে' ছবির কাজ করার সময় সত্যজিতের হার্ট অ্যাটাক ঘটে এবং এ ঘটনার ফলে জীবনের অবশিষ্ট নয় বছরে তার কাজের পরিমাণ ছিল অত্যন্ত সীমিত। স্বাস্থ্যের অবনতির ফলে ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের সহায়তায় সত্যজিৎ ১৯৮৪ সালে 'ঘরে বাইরে' নির্মাণ সমাপ্ত করেন। এরপর থেকে তার ছেলেই তার হয়ে ক্যামেরার কাজ করতেন। অন্ধ জাতীয়তাবাদের ওপর লেখা রবীন্দ্রনাথের এই উপন্যাসটি চলচ্চিত্রে রূপদানের ইচ্ছা সত্যজিতের অনেকদিন ধরেই ছিল এবং তিনি ৪০-এর দশকে ছবিটির একটি চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন। যদিও ছবিটিতে সত্যজিতের অসুস্থতা জনিত ভুলের ছাপ দেখা যায়, তা সত্ত্বেও ছবিটি কিছু সমালোচকের প্রশংসা কুড়ায় এবং এই ছবিতেই সত্যজিৎ প্রথমবারের মত একটি চুম্বনদৃশ্য যোগ করেন। ১৯৮৭ সালে সত্যজিৎ তার বাবা সুকুমার রায়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন।

  শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সত্যজিৎ তার শেষ তিনটি ছবি অভ্যন্তরীণ মঞ্চে নির্মাণ করেন। এগুলি তার আগের ছবিগুলির চেয়ে আলাদা ও অনেক বেশি সংলাপনির্ভর। ১৯৮৯ সালে নির্মিত '' 'গন শত্রু ' ছবিটিতে তার পরিচালনা তুলনামূলক ভাবে দুর্বল এবং এটিকে দীর্ঘদিনের অসুস্থতাশেষে ফিরে আসার পর সত্যজিতের চলচ্চিত্র নির্মাণের পুনঃপ্রচেষ্টা হিসেবেই গণ্য করা হয়। ১৯৯০ সালে নির্মিত 'শাখা প্রশাখা' সে তুলনায় উন্নততর ছবি হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছবিতে এক আজীবন সততার সাথে কাটানো বৃদ্ধ ব্যক্তি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তার তিন ছেলের দুর্নীতির কথা জানতে পারেন। ছবির শেষ দৃশ্যে তিনি তার মানসিকভাবে অসুস্থ কিন্তু দুর্নীতিমুক্ত চতুর্থ সন্তানের সান্নিধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পান। 

  সত্যজিতের শেষ ছবি 'আগন্তুক' ছিল হালকা আবহের। এ ছবিতে বহুদিনের হারিয়ে যাওয়া মামার পরিচয় দিয়ে একজন আগন্তুক এক পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তার এই সাক্ষাতের অভিজ্ঞতার (যেখানে পরিবারের ছোট ছেলেটি আগন্তুকটিকে আগ্রহভরে স্বাগত জানায়, কিন্তু পরিবারের বড়রা তাকে অনীহা ও সন্দেহের চোখে দেখেন) ভেতর দিয়ে সত্যজিৎ দর্শকের কাছে মানুষের পরিচয়, স্বভাব-প্রকৃতি ও সভ্যতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জাল বোনেন। সত্যজিতের ছবি গভীর মানবিক আবেদন সমৃদ্ধ।

  ১৯৯২ সালে হৃদযন্ত্রের জটিলতা নিয়ে অসুস্থ সত্যজিৎ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সে অবস্থা থেকে তার স্বাস্থ্য আর ভালো হয়নি। মৃত্যুর কিছু সপ্তাহ আগে অত্যন্ত অসুস্থ ও শয্যাশায়ী অবস্থায় তিনি তার জীবনের শেষ পুরস্কার একটি সম্মানসূচক অস্কার গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ রায় মৃত্যুবরণ করেন।

  সত্যজিতের প্রথম দিকের চলচ্চিত্রগুলোর ক্যামেরার কাজ করতেন সুব্রত মিত্র, যিনি পরবর্তীকালে তিক্ততার মধ্য দিয়ে সত্যজিতের কর্মীদল থেকে বেরিয়ে যান। কিছু সমালোচকের মতে সুব্রতের প্রস্থানের কারণে সত্যজিতের চলচ্চিত্রের চিত্রধারণের মান নেমে যায়। বাইরে সুব্রতের প্রশংসা করলেও চারুলতা-র সময় থেকেই ক্যামেরার কাজে সত্যজিৎ নিজের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করতে থাকেন, এবং এর পরিণতিতে ১৯৬৬ সালের পর থেকে সুব্রত আর সত্যজিতের হয়ে কাজ করেননি। 

  সত্যজিতের চলচ্চিত্র নিয়মিত সম্পাদনা করতেন দুলাল দত্ত, তবে বেশীর ভাগ সময় সত্যজিৎ-ই দুলালকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিতেন। আর্থিক অসচ্ছলতা এবং সত্যজিতের অনুপুঙ্খ পরিকল্পনা ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের কারণে তার বেশীর ভাগ চলচ্চিত্রের সম্পাদনা প্রকৃতপক্ষে ক্যামেরাতে দৃশ্যধারণের সময়েই সম্পন্ন হয়ে যেত (পথের পাঁচালী বাদে)। কর্মজীবনের শুরুতেই রবি শংকর, বেলায়েত খান ও আলি আকবর খানের মত প্রতিভাবান ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞদের সাথে সত্যজিতের কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু তার এ অভিজ্ঞতা ছিল মূলত বেদনাদায়ক। তিনি বুঝতে পারেন যে সঙ্গীতজ্ঞেরা তার চলচ্চিত্রের চেয়ে তাদের নিজেদের সাঙ্গীতিক ধারার প্রতিই বেশি অনুগত। সত্যজিৎ পাশ্চাত্য ধারার ধ্রুপদী সঙ্গীতের ব্যবহার পছন্দ করতেন, বিশেষত তার শহুরে পটভূমিতে বানানো ছবিগুলোর জন্য। এ জন্য পরবর্তীকালে 'তিন কন্যা' ছবিটির সময় থেকে তিনি নিজেই নিজের চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা করতেন। 

    সত্যজিতের চলচ্চিত্রগুলোর বিষয়বস্তু ছিল বহুমুখী। এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭৫ সালে বলেন যে - সমালোচকেরা প্রায়ই তার বিরুদ্ধে এক বিষয় থেকে আরেক বিষয়ে, এক ধরন থেকে অন্য ধরনে ঘাসফড়িঙের মতো লাফ দেয়ার প্রবণতা প্রদর্শনের অভিযোগ করেন ও তার ছবিতে চেনাজানা কোন ধরন খুঁজে পান না যাতে তার গায়ে কোন একটি বিশেষ তকমা এঁটে দেয়া যায়। এ ব্যাপারে আত্ম-সমর্থন করে তিনি বলেন যে এই বহুমুখীতা তার নিজের চরিত্রেরই প্রতিফলন, এবং তার প্রতিটি ছবির পেছনে ঠাণ্ডা মাথায় নেয়া সিদ্ধান্ত কাজ করেছে। 

সাহিত্যকর্ম–

  সত্যজিৎ বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি চরিত্রের স্রষ্টা। একটি হল বিখ্যাত গোয়েন্দা ফেলুদা, অন্যটি বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কু। এছাড়া তিনি প্রচুর ছোটগল্প লিখেছেন যেগুলো বারটির সংকলনে প্রকাশ পেত এবং সংকলনগুলোর শিরোনামে “বার” শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হত (যেমন ‘‘একের পিঠে দুই”, “এক ডজন গপ্পো”, ইত্যাদি)। ধাঁধা ও শব্দ-কৌতুক (pun)-এর প্রতি তার আগ্রহ এ গল্পগুলোতে প্রকাশ পায়। অনেক সময় ফেলুদাকে ধাঁধাঁর সমাধান বের করে কোন কেসের রহস্য উন্মোচন করতে হত। ফেলুদার বিভিন্ন গল্পে তার সঙ্গী উপন্যাস-লেখক জটায়ু (লালমোহন গাঙ্গুলি), আর তার খুড়তুতো ভাই তপেশরঞ্জন মিত্র ওরফে তোপসে হচ্ছে গল্পের বর্ণনাকারী, যার ভূমিকা অনেকটা শার্লক হোমসের পার্শ্বচরিত্র ডক্টর ওয়াটসনের মত। 

  প্রফেসর শঙ্কুর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলো ডায়েরী আকারে লেখা, যে ডায়েরী বিজ্ঞানীটির রহস্যময় অন্তর্ধানের পর খুঁজে পাওয়া যায়। সত্যজিতের ছোটগল্প গুলোতে অনিশ্চিত উৎকণ্ঠা, ভয় ও অন্যান্য বিষয়ে সত্যজিতের আগ্রহের ছাপ পড়ে, যে ব্যাপারগুলো তিনি চলচ্চিত্রে এড়িয়ে চলতেন।  সত্যজিতের অধিকাংশ রচনাই ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে এবং বর্তমানে তার বইগুলোর দ্বিতীয় প্রজন্মের পাঠকসমাজ গড়ে উঠেছে।

  ১৯৮০-র শুরুর দিকে ভারতীয় লোকসভা সদস্য ও প্রাক্তন অভিনেত্রী নার্গিস দত্ত তার বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ আনেন যে তিনি "দারিদ্র্য রফতানি" করছেন, এবং সত্যজিতের কাছে “আধুনিক ভারত”-এর প্রতিনিধিত্ব করে এমন ছবি বানানোর দাবি করেন। অন্যদিকে ভারতজুড়ে সমাজতন্ত্রের প্রবক্তারা মনে করতেন সত্যজিৎ জাতির নিপীড়িত শ্রেণীর প্রতি "প্রত্যয়ী" ছিলেন না, বরং তিনি ‘‘পথের পাঁচালী’’ ও ‘’অশনি সংকেত’’ ছবিতে বর্ণনাভঙ্গি ও নান্দনিকতার মাধ্যমে দারিদ্র্যকে মহৎ করে দেখিয়েছেন। তাঁরা আরও অভিযোগ করে যে সত্যজিৎ তাঁর ‘‘বুর্জোয়া’’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে এসে তার ছবির সংঘাতগুলোর কোন সমাধান দেখাতে পারেন নি। 

  ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ভারতীয় ডাকটিকিট ভারতে ও বিশ্বব্যাপী বাঙালি সম্প্রদায়ের কাছে সত্যজিৎ রায় একজন সাংস্কৃতিক প্রতিভূ। তাঁর মৃত্যুর পর কলকাতার জীবনযাত্রা থেমে পড়ে। হাজার হাজার লোক শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়িতে আসেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ গভীর প্রভাব ফেলেন। সত্যজিতের চলচ্চিত্র কৌশল অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষ এবং বাংলাদেশের তারেক মাসুদ ও তানভীর মোকাম্মেল-কে অনুপ্রাণিত করেছে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, মৃণাল সেন ও আদুর গোপালকৃষ্ণন-এর মত চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভারতীয় চলচ্চিত্রে সত্যজিতের অসামান্য অবদান স্বীকার করেছেন। ভারতের বাইরে মার্টিন স্কোরসেজি, জেমস আইভরি, আব্বাস কিয়ারোস্তামি ও এলিয়া কাজান-এর মত চিত্রনির্মাতারা তাঁর কাজ দেখে প্রভাবিত হয়েছেন বলে ধারণা করে হয়। 

   বহু প্রতিষ্ঠান সত্যজিতকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। এদের মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র দ্বিতীয় চলচ্চিত্রকার হিসেবে (চ্যাপলিনের পর) তাকে এই ডিগ্রী প্রদান করে। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে "লেজিওঁ দনর' পুরস্কার প্রদান করেন। তার মৃত্যুর অল্প কিছু দিন আগে ভারত সরকার তাকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক পদক ' ভারতরত্ন ' প্রদান করেন। ১৯৯৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্টা ক্রুজ সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড স্টাডি কালেকশন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯৫ সালে ভারত সরকার চলচ্চিত্র বিষয়ে গবেষণার জন্য সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।

  ২০০৭ সালে ব্রিটিশ ব্রডক্যাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) ঘোষণা দেয় যে, ফেলুদা সিরিজের দুটি গল্প নিয়ে রেডিও অনুষ্ঠান নির্মাণ করা হবে। লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবের সময় থেকে "সত্যজিৎ রায় পুরস্কার" নামে একটি নিয়মিত পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রথম সারির পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পরিচালক যাদের চলচ্চিত্রের শিল্পগুণ, সহানুভূতি এবং মানবতার দিকটি সত্যজিতের মত তাদেরকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ওয়েস অ্যান্ডারসন দাবী করেছেন যে তার চলচ্চিত্রে সত্যজিতের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। তার সাম্প্রতিক ছবি দ্য দার্জিলিং লিমিটেড সত্যজিৎ রায়কে উৎসর্গ করেছেন।

  সত্যজিৎ রায় তার জীবদ্দশায় প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনিই দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যাঁকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। প্রথম চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে অক্সফোর্ডের ডিলিট পেয়েছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের সরকার তাকে সেদেশের বিশেষ সম্মনসূচক পুরস্কার লেজিওঁ দনরে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালে পান ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার 'দাদাসাহেব ফালকে ' পুরস্কার। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে একাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সাইন্সেস তাকে আজীবন সম্মাননাস্বরূপ একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করে। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেই ভারত সরকার তাকে প্রদান করেন দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন। সেই বছরেই মৃত্যুর পরে তাকে মরণোত্তর আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রয়াত পরিচালকের পক্ষে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন শর্মিলা ঠাকুর।

  
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপণের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিস কিনুন তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।


সোমবার, ২৩ মে, ২০২২

বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর বাংলা জীবনী।


বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর বাংলা জীবনী।

  জগদীশচন্দ্র বসু (৩০ নভেম্বর ১৮৫৮ – ২৩ নভেম্বর ১৯৩৭) একজন বাঙালি পদার্থবিদ, জীববিজ্ঞানী এবং কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা ছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহারিক এবং গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানের সূচনা হয় তার হাত ধরে হয় বলে মনে করা হয়। ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স তাঁকে রেডিও বিজ্ঞানের একজন জনক হিসেবে অভিহিত করে।

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা –

  জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি (বর্তমান বাংলাদেশ) অঞ্চলের মুন্সীগঞ্জ জন্মগ্রহণ করেন। বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে তাঁর পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল। তাঁর পিতা ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ভগবানচন্দ্র বসু তখন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। এর পূর্বে তিনি ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভগবান চন্দ্র এই স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বর্ধমান ও অন্যান্য কিছু অঞ্চলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেছেন।

  ইংরেজ সরকারের অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও ভগবান চন্দ্র নিজের ছেলেকে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করান নি। জগদীশ চন্দ্রের প্রথম স্কুল ছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। বাংলা স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে তার নিজস্ব যুক্তি ছিল। তিনি মনে করতেন ইংরেজি শেখার আগে এদেশীয় ছেলে-মেয়েদের মাতৃভাষা আয়ত্ত্ব করা উচিত। বাংলা স্কুলে পড়ার ব্যাপারটি জগদীশ চন্দ্রের জীবনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে, তেমনি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতেও সাহায্য করেছে। এর প্রমাণ বাংলা ভাষায় রচিত জগদীশের বিজ্ঞান প্রবন্ধগুলো। ভাষার প্রতি বিশেষ মমত্ববোধ ছাড়াও ভগবান চন্দ্র চেয়েছিলেন তাঁর পুত্র দেশের আপামর জন সাধারণের সাথে মিলেমিশে মানুষ হোক এবং তাঁর মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হোক। জগদীশ চন্দ্রের পরবর্তী জীবনে তাঁর প্রথম বাংলা স্কুলের অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ছাপ ফেলেছিল।

  জগদীশ কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে পড়াশোনা করে ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এই কলেজে ইউজিন ল্যাফন্ট নামক একজন খ্রিষ্টান যাজক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ওপর তাঁর আগ্রহ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর তিনি আইসিএস পরীক্ষায় বসার জন্য ইংল্যান্ডে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও ভগবান চন্দ্র এতে রাজি হন নি, কারণ তিনি চেয়েছিলেন তাঁর পুত্র একজন বিদ্বান হোক।

  বাবার ইচ্ছা ও তাঁর আগ্রহে তিনি ১৮৮০ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠের উদ্দেশ্যেই লন্ডনের উদ্দেশে পাড়ি জমান, কিন্তু অসুস্থতার কারণে বেশিদিন এই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন নি। তাঁর ভগ্নিপতি আনন্দমোহন বসুর আনুকূল্যে জগদীশ চন্দ্র প্রকৃতিবিজ্ঞান সম্বন্ধে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে ট্রাইপস পাশ করেন। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাঠ সম্পন্ন করেন। কেম্ব্রিজে জন উইলিয়াম স্ট্রাট, ৩য় ব্যারন রেলি, মাইকেল ফস্টার, জেমস ডেওয়ার, ফ্রান্সিস ডারউইন, ফ্রান্সিস মেটল্যান্ড বালফুর, সিডনি ভাইনসের মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানসাধকেরা তাঁর শিক্ষক ছিলেন।

প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগদান –

  ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে জগদীশ চন্দ্র ভারতে ফিরে আসেন। তৎকালীন ভারতের গভর্নর-জেনারেল জর্জ রবিনসন, প্রথম মার্কুইস অব রিপনের অনুরোধে স্যার অ্যালফ্রেড ক্রফট বসুকে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক নিযুক্ত করেন। কলেজের অধ্যক্ষ চার্লস হেনরি টনি এই নিয়োগের বিপক্ষে ছিলেন। শুধু যে তাকে গবেষণার জন্য কোন রকম সুবিধা দেওয়া হত না তাই নয়, তিনি ইউরোপীয় অধ্যাপকদের অর্ধেক বেতনেরও কম অর্থ লাভ করতেন। এর প্রতিবাদে বসু বেতন নেওয়া বন্ধ করে দেন এবং তিন বছর অবৈতনিক ভাবেই অধ্যাপনা চালিয়ে যান। দীর্ঘকাল ধরে এই প্রতিবাদের ফলে তার বেতন ইউরোপীয়দের সমতুল্য করা হয়। প্রেসিডেন্সি কলেজে গবেষণার কোন রকম উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা না থাকায় ২৪-বর্গফুট একটি ছোট ঘরে তাকে গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে হত। পদে পদে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তার বিজ্ঞান সাধনার প্রতি আগ্রহ ভগিনী নিবেদিতাকে বিস্মিত করেছিল। কলেজে যোগ দেওয়ার এক দশকের মধ্যে তিনি বেতার গবেষণার একজন দিকপাল হিসেবে উঠে আসেন।

  প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার প্রথম আঠারো মাসে জগদীশ যে সকল গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছিলেন তা লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র ধরেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে তাকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে। এই গবেষণাগুলো একটু ভিন্ন আঙ্গিকে বিচার করতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত ৪ ঘণ্টা শিক্ষকতার পর যেটুকু সময় পেতেন তখন তিনি এই গবেষণার কাজ করতেন। তার উপর প্রেসিডেন্সি কলেজে কোন উন্নতমানের গবেষণাগার ছিলনা, অর্থ সংকটও ছিল প্রকট। সীমিত ব্যয়ে স্থানীয় মিস্ত্রিদেরকে শিখিয়ে পড়িয়ে তিনি পরীক্ষণের জন্য উপকরণ প্রস্তুত করতেন। তার এই গবেষণা কর্মগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করেই ইংল্যান্ডের লিভারপুলে বক্তৃতা দেয়ার জন্য ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই বক্তৃতার সাফল্যের পর তিনি বহু স্থান থেকে বক্তৃতার নিমন্ত্রণ পান। এর মধ্যে ছিল রয়েল ইন্সটিটিউশন, ফ্রান্স এবং জার্মানি। সফল বক্তৃতা শেষে ১৮৯৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি সস্ত্রীক দেশে ফিরে এসেছিলেন।

বিবাহ –

  ১৮৮৭ সালে জগদীশচন্দ্র বসুর সাথে অবলার বিয়ে হয়। অবলা ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের বিখ্যাত সংস্কারক দুর্গামোহন দাশের কন্যা। বিয়ের আগে অবলা বসু কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে চাইলেও তাকে ভর্তি হতে দেয়া হয়নি, কারণ সেখানে তখন মেয়েদের পড়ানো নিষেধ ছিল। ১৮৮২ সালে বঙ্গ সরকারের বৃত্তি নিয়ে অবলা মাদ্রাজে যান পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। সেখানে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়ন শুরু করলেও অসুস্থতার কারণে আবার ফিরে আসতে বাধ্য হন। তাদের বিয়ের সময় জগদীশচন্দ্র বসু আর্থিক কষ্টের মধ্যে ছিলেন। এর মধ্যে আবার তিনি তখন কলেজ থেকে বেতন নিতেন না। এছাড়া জগদীশের বাবার কিছু ঋণ ছিল যার কারণে তার পরিবারকে পথে বসতে হয়। এর মধ্য থেকে অবলা ও জগদীশ অনেক কষ্টে বেরিয়ে আসেন এবং সব ঋণ পরিশোধ করতে সমর্থ হন। সব ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কিছুদিন মাত্র বসুর পিতা-মাতা জীবিত ছিলেন।

গবেষণা কর্ম –

 অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি ও প্রেরণ। জগদীশের আঠারো মাসের সেই গবেষণার মধ্যে মুখ্য ছিল অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা। ১৮৯৫ সালে তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সৃষ্টি এবং কোন তার ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা প্রেরণে সফলতা পান। ১৮৮৭ সালে বিজ্ঞনী হের্‌ৎস প্রত্যক্ষভাবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। এ নিয়ে আরও গবেষণা করার জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন যদিও শেষ করার আগেই তিনি মারা যান। জগদীশচন্দ্র তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ তৈরি করেন। এ ধরনের তরঙ্গকেই বলা হয়ে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ। আধুনিক রাডার, টেলিভিশন এবং মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলত এর মাধ্যমেই বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান প্রদান ঘটে থাকে।

বক্তৃতাসমূহ –

  ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনে তার বক্তৃতার বিষয় ছিল "অন ইলেকট্রিক ওয়েভ্‌স"। মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে করা পরীক্ষণগুলোর উপর ভিত্তি করেই তিনি বক্তৃতা করেন যা ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের চমৎকৃত ও আশ্চর্যান্বিত করে। অশীতিপর বৃদ্ধ বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন বক্তৃতা শোনার পর লাঠিতে ভর দিয়ে এসে জগদীশের স্ত্রী অবলা বসুকে তার স্বামীর সফলতার জন্য অভিবাদন জানান। জগদীশ এবং অবলা দু’জনকেই তিনি তার বাসায় নিমন্ত্রণ করেছিলেন। এই বিষয়ের উপর বিখ্যাত সাময়িকী "টাইম্‌স"-এ একটি রিপোর্ট ছাপা হয় যাতে বলা হয়, "এ বছর ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনের সম্মিলনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বিদ্যুৎ-তরঙ্গ সম্পর্কে অধ্যাপক বসুর বক্তৃতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, কেমব্রিজের এম.এ. এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অফ সাইন্স এই বিজ্ঞানী বিদ্যুৎরশ্মির সমাবর্তন সম্পর্কে যে মৌলিক গবেষণা করেছেন, তার প্রতি ইউরোপীয় বিজ্ঞানী মহলে আগ্রহ জন্মেছে। রয়্যাল সোসাইটি বিদ্যুৎরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও প্রতিসরাঙ্ক নির্ণয়ের গবেষণাপত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছে”।

রয়্যাল ইন্সটিটিউশনে সান্ধ্য বক্তৃতা –

  লিভারপুলে বক্তৃতার পর তার আরও সাফল্য আসে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রয়্যাল ইন্সটিটিউশনে সান্ধ্য বক্তৃতা দেয়ার নিমন্ত্রণ। এই বক্তৃতাটি আনুষ্ঠানিকভাবে "ফ্রাইডে ইভনিং ডিসকোর্স" নামে সুপরিচিত ছিল। এই ডিসকোর্সগুলোতে আমন্ত্রিত হতেন একেবারে প্রথম সারির কোন আবিষ্কারক। সে হিসেবে এটি জগদীশচন্দ্রের জন্য একটি দুর্লভ সম্মাননা ছিল। ১৮৯৮ সালের জানুয়ারি ১৯ তারিখে প্রদত্ত তার এই বক্তৃতার বিষয় ছিল "অন দ্য পোলারাইজেশন অফ ইলেকট্রিক রেইস" তথা বিদ্যুৎরশ্মির সমাবর্তন। এই বক্তৃতার সফলতা ছিল সবচেয়ে বেশি। বায়ুতে উপস্থিত বেশ কিছু বিরল গ্যাসের আবিষ্কারক হিসেবে খ্যাত বিজ্ঞানী লর্ড র‌্যালে তার বক্তৃতা শুনে এবং পরীক্ষাগুলো দেখে এতোটাই বিস্মিত হয়েছিলেন তার কাছে সবকিছু অলৌকিক মনে হয়েছিল। তিনি এ সম্পর্কে বলেছিলেন, "এমন নির্ভুল পরীক্ষা এর আগে কখনও দেখিনি- এ যেন মায়াজাল"। এই বক্তৃতার সূত্র ধরেই বিজ্ঞানী জেমস ডিউয়ার-এর সাথে জগদীশচন্দ্রের বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। ডিউয়ার গ্যাসের তরলীকরণের পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত। 

 এই বক্তৃতার পর ফ্রান্স এবং জার্মানি থেকে আমন্ত্রণ আসে এবং তিনি সেখানে কয়েকটি বক্তৃতা দেন। সবখানেই বিশেষ প্রশংসিত হন। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক কর্ন তার বন্ধু হয়ে যায় এবং তিনি ফ্রান্সের বিখ্যাত বিজ্ঞান সমিতি Société de Physique-এর সদস্য মনোনীত হন।

স্বদেশপ্রেম –

  আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, এই ভারতীয় বাঙালি বৈজ্ঞানিক ছিলেন পরাধীন ভারতবর্ষে জন্ম নেওয়া শত শত স্বদেশ প্রেমিকদের মধ্যে অন্যতম৷ তার বিভিন্ন বক্তৃতায় বারবার তার এই স্বদেশ প্রেমের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে৷ আমাদের সৌভাগ্য যে পরাধীন ভারতবাসীর স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং রাজনৈতিক সীমানা ছাড়িয়ে তৎকালীন ভারতবর্ষের বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রেই তা সমভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছিল৷    

সুখ্যাতি –

  বিজ্ঞান শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে জগদীশ চন্দ্রের সফলতার কথা কর্মজীবন অংশেই উল্লিখিত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিজ্ঞান গবেষণায়ও প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছিলেন যার জন্য তার সুখ্যাতি তখনই ছড়িয়ে পড়েছিল। বাঙালিরাও বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে নিউটন-আইনস্টাইনের চেয়ে কম যায়না তিনি তা প্রমাণ করেন। জগদীশ চন্দ্র যে গ্যালিলিও-নিউটনের সমকক্ষ বিজ্ঞানী তার স্বীকৃতি দিয়েছিল লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা, ১৯২৭ সালে। আর আইনস্টাইন তার সম্পর্কে নিজেই বলেছেন:

“জগদীশচন্দ্র যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে কোনটির জন্য বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিত"।

  ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড তাদের ৫০ পাউন্ডের নোটে নতুন কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির মুখ যুক্ত করার জন্য নমিনেশন দিয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটের হিসাবে গত ২৬ নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত প্রায় ১,৭৫,০০০ নমিনেশন গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে তারা ১,১৪,০০০ নমিনেশন প্রকাশ করে যেখানে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে সেরা তালিকায় রাখা হয়েছে। মূলত তারবিহীন প্রযুক্তিতে তিনি যে অবদান রেখেছেন সেটার কল্যাণেই আজকে আমরা ওয়াইফাই, ব্লুটুথ বা স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ খুব সহজে ব্যবহার করতে পারছি। যদিও আমরা আধুনিক রেডিও-র জনক হিসেবে জি.মার্কনিকে বিবেচনা করে থাকি ১৯০১ সালে তার আবিষ্কারের জন্য, কিন্তু তার কয়েক বছর আগেই স্যার জগদীশচন্দ্র বসু তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তাই, যদি নির্বাচিত হয় তাহলে ২০২০ সালে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের ৫০ পাউন্ডের নোটে দেখা যাবে এ মহান বিজ্ঞানীর নাম।

সম্মাননা –

নাইটহুড, ১৯১৬

রয়েল সোসাইটির ফেলো, ১৯২০

ভিয়েনা একাডেমি অফ সাইন্স-এর সদস্য, ১৯২৮

ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস-এর ১৪তম অধিবেশনের সভাপতি, ১৯২৭

লিগ অফ ন্যাশন্‌স কমিটি ফর ইনটেলেকচুয়াল কো-অপারেশন -এর সদস্য

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সেস অফ ইন্ডিয়া-এর প্রতিষ্ঠাতা ফেলো। এর বর্তমান নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সাইন্স একাডেমি।

বিবিসি জরিপে তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির তালিকায় সপ্তম স্থান লাভ করেন।

মৃত্যু –

  ১৯৩৭ সালের ২৩শে নভেম্বর ভারতের ঝাড়খন্ডের গিরিডিতে এই বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানীর জীবনাবসান ঘটে। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে তার আজীবন সঞ্চিত ১৭ লক্ষ টাকার মধ্যে ১৩ লক্ষ টাকা 'বসু বিজ্ঞান মন্দির'কে দান করেন। ১৯৫৮ সালে জগদীশ চন্দ্রের শততম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার "JBNSTS" নামে একটি বৃত্তি প্রদান আরম্ভ করেন।

সূত্র - বাংলা উইকিপিডিয়া।

 আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপণের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিস কিনুন তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

 

মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২

ভারতের সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তি কে ছিলেন ?.


ভারতের সর্বকালের সেরা ধনী ব্যক্তি কে ছিলেন ?.

  টাটা, বিড়লা, আম্বানি, আদনি এদের নাম আপনি নিশ্চয় শুনেছেন। ভাবেন এরা হয়তো ভারতের সবথেকে সেরা ধনী মানুষ । কিন্তু না, আপনার ধারণা ভুল। টাটা, বিড়লা, আম্বানি, আদনি এরা ভারতের সর্ব কালের সেরা ধনী মানুষ নয়। তাহলে ভারতের সর্ব কালের সেরা ধনী মানুষ কে, তিনি হলেন -

 নিজাম স্যার মীর উসমান আলি খান সিদ্দিকি সপ্তম আসাফ জাহ, জন্মনাম মীর উসমান আলি খান বাহাদুর ( ৬ এপ্রিল ১৮৮৬ – ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭) ছিলেন হায়দ্রাবাদ ও বেরার রাজ্যের শেষ নিজাম। তিনি ১৯১১ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত হায়দ্রাবাদ শাসন করেছেন। এরপর অপারেশন পোলোর ফলে হায়দ্রাবাদ ভারতের অংশ হয়। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি তাকে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের রাজপ্রমুখ করা হয়। ১৯৫৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। এসময় রাজ্যকে ভাষার ভিত্তিতে ভাগ করে অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রের অংশ করা হয়।

শাসনকাল –

  উসমান আলি খান তার পিতার মৃত্যুর পর ১৯১১ সালে নিজাম হন। ভারতের স্বাধীনতার পূর্বে হায়দ্রাবাদ রাজ্য ছিল দেশীয় রাজ্যসমূহের মধ্যে সর্ববৃহৎ। এর আয়তন ছিল ৮৬,০০০ বর্গ মাইল (২,২৩,০০০ বর্গ কিমি) যা বর্তমান যুক্তরাজ্যের প্রায় সমান। হায়দ্রাবাদের শাসককে ভারতে সবচেয়ে উচু মর্যাদা সম্পন্ন রাজন্য হিসেবে গণ্য করা হত। যে পাঁচজন দেশীয় রাজা ২১টি গান স্যালুট পেতেন হায়দ্রাবাদের শাসক ছিলেন তাদের অন্যতম। তার নিজাম উপাধি ছিল অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের অর্থনৈতিক ভাবে সহায়তা করায় তাকে ব্রিটিশ সিংহাসনের বিশ্বস্ত মিত্র বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।

ধন সম্পত্তি – 

  নিজাম থাকাকালীন সময় তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হত। ১৯৪০ এর দশকের শুরুর দিকে তার ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ ছিল বলে জানা যায়। সে সময় নবগঠিত ভারতীয় ইউনিয়ন সরকারের কোষাগারের রিপোর্ট মোতাবেক বার্ষিক রাজস্ব ছিল এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯৩৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি টাইম ম্যাগাজিনে পৃথিবীর সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি বর্ণনা করে প্রচ্ছদে তার ছবি ছাপা হয়। সে সময় তার সম্পদ এক বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে কারণ এটি বেশিরভাগই ভারত সরকার দ্বারা সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। এটি গোলকোন্ডা খনি যা নিজামের বিশাল সম্পদ রাজস্বের মূল উৎস ছিল। হাইদ্রাবাদ এবং বেরার এই রাজত্ব ছিল 19ম শতাব্দীতে। বিশ্বের বাজারে হীরাগুলির একমাত্র সরবরাহকারী ছিলেন।

সোনার অনুদান ভারত সরকারকে –

  সালটা ছিল ১৯৬২। সময়টা ছিল ভারত-চিন যুদ্ধের, চিন হঠাৎ করেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর হামলা করে । ভারত সরকার কিছু বুঝতে পারার আগেই চিন হামলার গতি বাড়িয়ে দেয়। যুদ্ধের সময় ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের থেকেও বেশি খারাপ হয়ে যায়। ঠিক তার ৩ বছর পর  মানে- ১৯৬৫ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাাস্ত্রী হায়দ্রাবাদের নিজাম মীর উসমান আলির কাছে অর্থনৈতিক সাহায্য চায়।

 তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে ভারতের পরিস্থিতি খারাপ দেখে হায়দ্রাবাদের নিজাম মীর উসমান আলি তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চাঁদা ভারত সরকারকে দান করেন- ১৯৬৫ সালে! সেই চাঁদার পরিমাণ শুনলে অবাক হবেন, তৎকালীন সময়ে সেই চাঁদার পরিমাণ ছিল নগদ "৫০০০ (পাঁচ হাজার) কেজি স্বর্ণ ও ৭৫ লক্ষ টাকা।

প্রধান উন্নয়ন এবং সমাজে অবদান –

  রাজা সউদের সাথে হায়দ্রাবাদের নিজামউ সমান আলি খান রাজ্যের সার্বভৌম শাসক ছিলেন। তাকে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও উন্নয়নের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেখা হয়। তার ৩৭ বছরের শাসনাকালে বিদ্যুত, রেলপথ, সড়ক ও বিমান ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। রাজ্যের নিজামসাগর হ্রদ খনন করা হয় এবং তুঙ্গাভদ্রা নদীতে কিছু সেচ প্রকল্প চালু করা হয়।

  হায়দ্রাবাদ শহরের প্রায় সকল সরকারি ভবন যেমন উসমানিয়া জেনারেল হাসপাতাল, হায়দ্রাবাদ উচ্চ আদালত, আসাফিয়া লাইব্রেরী (বর্তমানে স্টেট সেন্ট্রাল লাইব্রেরী), টাউন হল (বর্তমানে এসেম্বলি হল), জুবিলি হল, হায়দ্রাবাদ জাদুঘর (বর্তমানে স্টেট মিউজিয়াম), নিজামিয়া অবজারভেটরি এবং অন্যান্য অনেক স্মৃতিস্থাপনা তার শাসনামলে নির্মিত হয়।

  বাজেটের ১১% শিক্ষায় ব্যয় হত। এসময় উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য স্কুল, কলেজ ও একটি অনুবাদ বিভাগ চালু করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় এবং দরিদ্রদের জন্য তা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। তিনি দিল্লিতে হায়দ্রাবাদ হাউস প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে এটি ভারত সরকারের কূটনৈতিক বৈঠকের জন্য ব্যবহৃত হয়। তিনি অস্ট্রেলীয় নৌবাহিনীর জন্যও অর্থ প্রদান করেছেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার –

  ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট কলেজের উদ্বোধনকালে নিজাম মারাঠওয়াডা অঞ্চলে কৃষি গবেষণা তিনি চালু করেছিলেন। ভারতের স্বাধীনতার পর ভারত সরকার তার চালু করা এসব সুযোগ সুবিধাকে আরো উন্নত করে।

 উসমান আলি খান ভারতে ও ভারতের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠানে অর্থ দান করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জামিয়া নিজামিয়া, দারুল উলুম দেওবন্দ, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়।

উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়    –

 উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তিনি তার শাসনামলে শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার সাধন করেন। তিনি উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা।

স্টেট ব্যাংক অফ হায়দ্রাবাদ প্রতিষ্ঠা -

1941 সালে তিনি রাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে নিজের ব্যাংক, "হায়দ্রাবাদ স্টেট ব্যাংক" (পরে 2017 সালে ভারতের স্টেট ব্যাংকের সাথে মিলিত) তৈরি করেন। এটি হায়দ্রাবাদ স্টেট ব্যাংক অ্যাক্টের অধীনে 8 আগস্ট, 1941 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ব্যাংকটি ওসমানিয়া মুদ্রায় হায়দ্রাবাদের মুদ্রা পরিচালিত করে। এটি ভারতের একমাত্র রাজ্য ছিল যার সাথে মুদ্রা ছিল - হায়দ্রাবাদ রুপি। 

  অপারেশন পোলো ও ক্ষমতাত্যাগ –

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগের সময় দেশীয় রাজ্যসমূহ ভারত বা পাকিস্তানের যেকোনো একটিতে যোগ দেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়। এসময় নিজামের শাসনাধীনে প্রায় ১৬ মিলিয়ন জনগণ এবং ৮২,৬৯৮ বর্গ মাইলের অঞ্চল ছিল। নিজাম ভারত বা পাকিস্তান কোনো রাষ্ট্রেই যোগ দেয়ার পক্ষে ছিলেন না। তিনি ব্রিটিশ কমনওয়েলথের মধ্যে হায়দ্রাবাদকে একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে রাখতে চেয়েছিলেন।

  শেষপর্যন্ত ১৯৪৮ সালে ভারত সরকার হায়দ্রাবাদ দখলের সিদ্ধান্ত নেয়। এ উদ্দেশ্যে পরিচালিত অভিযানের নাম দেয়া হয় অপারেশন পোলো। মেজর জেনারেল জয়ন্ত নাথ চৌধুরীর অধীনে এক ডিভিশন ভারতীয় সেনা ও একটি ট্যাঙ্ক ব্রিগেড হায়দ্রাবাদে আক্রমণ চালায়। আগ্রাসী ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধে নিজামের বাহিনী ও নিজামের সরকারী বাহিনীর সহায়তাকারী গণ মুক্তিফৌজকে পরাজিত করে।

রানী এলিজাবেথ উপহার    –

 ১৯৪৭ সালে নিজাম প্রিন্সেস এলিজাবেথকে তার  বিয়ে উপলক্ষে হীরা, টায়রা খচিত একটি হার উপহার দেন। এটি হায়দ্রাবাদের নিজামের হার নামে পরিচিত।

ব্যক্তিগত জীবন    –

তিনি তার ১৩ বছর বয়স থেকে শুরু করে বাকি জীবন কিং কোঠি প্রাসাদে কাটিয়েছেন। সিংহাসনে আরোহণের পরও তিনি চৌমহল্লা প্রাসাদে যাননি।

পারিবারিক জীবন -

  ১৯২০ সালের ১৪ এপ্রিল উসমান আলি খানের সাথে তার প্রথম স্ত্রী আজমাতুন্নিসা বেগমের বিয়ে হয়।  আজম জাহ ও মুয়াজ্জাম জাহ তাদের পুত্র। তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন ইকবাল বেগম। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র আজম জাহর সাথে শেষ উসমানীয় খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মজিদের কন্যা দুররু শেহভারের বিয়ে হয়। মুয়াজ্জাম শাহ উসমানীয় রাজকুমারি নিলুফারকে বিয়ে করেন।

পরবর্তী জীবন –

 উসমান আলি খান ১৯৬৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তার জানাজা ভারতের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জানাজা সমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল। আনুমানিক 10 লাখ মানুষ নিজাম বন্দুক-কার্ট মিছিলের অংশ হয়ে উঠেছে। নিযামের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ছিল ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অ-ধর্মীয়, অ-রাজনৈতিক সমাবেশ

সম্মাননা –

  তার সম্মাননার মধ্যে রয়েছে, দিল্লি দরবার স্বর্ণ পদক, ১৯১১।

 জিসিএসআই: নাইট গ্র্যান্ড কমান্ডার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য স্টার অফ ইন্ডিয়া, ১৯১১।

জিসিএসটিজে: বেইলিফ গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ সেইন্ট জন, ১৯১১।

জিবিই: নাইট গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার, ১৯১৭।

উসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। 


সূত্র-- বাংলা উইকিপিডিয়া।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপণের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিস কিনুন তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।


বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

Youtube, Facebook, Instagram থেকে ভিডিও ডাউনলোড কিভাবে করবেন ?.


Youtube, Facebook, Instagram থেকে ভিডিও ডাউনলোড কিভাবে করবেন ?.

আজ আমি আপনাদের একটা নতুন জিনিস শেখাবো। আমরা প্রতিদিন ইউটিউব, ফেসবুকে অনেক ভিডিও দেখি। সেই ভিডিও যদি আপনি আপনার মোবাইলে গ্যালারিতে সেভ করে রাখতে চান, কিন্তু কিভাবে করবেন তার উপায় আপনি জানেন না। এখন আমি আপনাদের জানাবো কিভাবে ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এর ভিডিও ডাউলোড করে আপনি আপনার ফোনে গ্যালারিতে সেভ করবেন।

 প্রথমে বলব আপনি Youtube থেকে কিভাবে ভিডিও ডাউনলোড করবেন। তার জন্য আপনাকে যেকোন ব্রাউজার থেকে Youtube খুলতে হবে। Google Chrome হল সেরা ব্রাউজার। Youtube অ্যাপ থেকে খুললে হবে না। যে ভিডিওটি ডাউলোড করতে চান সেটা বার করুন। এবার আপনাকে ওই ভিডিওর লিঙ্ক কপি করতে হবে। তার জন্য ব্রাউজারের একেবারে উপরের দিকে ক্লিক করে লিঙ্ক কপি করে নিন। কপি করার পর কি করবেন সেটা একটু পরে বলছি।

 এবারে Facebook, Instagram থেকে যদি ভিডিও ডাউনলোড করতে চান তাহলে আপনি ওই অ্যাপ গুলো ওপেন করুন। যে ভিডিও ডাউনলোড করতে চান সেটা বার করুন। এবার দেখবেন ভিডিওর ডান দিকে তিনটি ডট চিহ্ন আছে ওখানে ক্লিক করুন। বিভিন্ন অপশন আসবে আপনি সেখানে, Coppy Link' অপশনে ক্লিক করুন।

 Youtube, Facebook, Instagram থেকে লিঙ্ক কপি তো করলেন, এবার কি করবেন। আপনাকে একটা নতুন ওয়েবসাইট খুলতে হবে, তারপর সেখানে আপনার কপি লিঙ্ক পোষ্ট করতে হবে, মানে লিঙ্ক তা সেখানে দিতে হবে । সেই ওয়েবসাইট টি হল SaveFrom.Net, এখানে ক্লিক করে খুলতে পারেন। 

 এই সাইটে ভিজিট করার পর দেখতে পাবেন এই রকম একটা ঘর। আপনি ওই ঘরের ভিতর আপনার কপি করা লিঙ্ক দিয়ে দিন। তরপর ডানদিকে অপশনে ক্লিক করুন। কিছুক্ষন পর সেই ভিডিও ডাউনলোড করার অপশন আসবে। আপনি এবার ডাউনলোড অপশনে ক্লিক করে ভিডিও ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

  তার আগে ফরম্যাট ঠিক করে নিতে হবে। মানে আপনি কি ধরনের ভিডিওর কোয়ালিটি চান। HD, Standard, না সাধারণ কোয়ালিটি। যে কোয়ালিটি চান সেখানে ক্লিক করে Download অপশনে ক্লিক করুন। দেখবেন কিছুক্ষন পর আপনার ভিডিও ডাউনলোড হয়ে যাবে। 

 এবার আপনি আপনার মোবাইলে গ্যালারিতে সেই ভিডিও দেখতে পারেন। আপনি যদি চান তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের কাছে সেই ভিডিও শেয়ার করে দিতে পারবেন । এভাবে সেভ করলে ভিডিওটি গ্যালারীতে সব সময়ের জন্য থেকে যাবে, যতদিন পর্যন্ত আপনি একে ডিলিট না করবেন ।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব

রবিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২১

বিনা ইন্টারনেটে ইউটিউব ভিডিও দেখবেন কিভাবে ?.


বিনা ইন্টারনেটে ইউটিউব ভিডিও দেখবেন কিভাবে ?.

 বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি এক দুর্দান্ত উপায়, যায় সাহায্যে আমি বিনা ইন্টারনেটে ইউটিউব ভিডিও দেখতে পারেন। আপনার কথাটা শুনে প্রথমে অসম্ভব মনে হতে পারে, কিন্তু না, এটা সম্ভব। কিন্তু কিভাবে এটা করবেন তা জানতে হলে পুরো লেখাটা পড়তে থাকুন।

  আগে বলে রাখি যে প্রথমে আপনাদের একটু ইন্টারনেট খরচ করতে হবে । তারপর আপনি বিনা ইন্টারনেটে ইউটিউব ভিডিও আপনি আপনার ফোনে দেখতে পারবেন, যখন খুশি যেখানে খুশি । প্রক্রিয়াটা ভালো করে দেখুন।

 প্রথমে আপনি আপনার ইউটিউব অ্যাপটি খুলুন। তারপর আপনি আপনার পছন্দ মতন ভিডিও বা সিনেমা টি ওপেন করুন । তারপর নিচের দিকে দেখবেন ডাউনলোড বলে একটা অপশন আছে । যে ভিডিও আপনি দেখতে চান নিজের ডাউনলোড অপশনে ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর ভিডিও টি ডাউনলোড হয়ে যাবে।

  ডাউনলোড হয়ে যাওয়ার পরে ভিডিও টি কোথায় খুঁজে পাবেন। তার জন্য আপনাকে নিচের ডান দিকে কোনে লাইব্রেরিতে অপশনে ক্লিক করতে হবে। এখানে ক্লিক করার পর আপনি দেখতে পাবেন বিভিন্ন অপশন। সেই বিভিন্ন অপশন গুলির মধ্যে আপনাকে বেছে নিতে হবে ডাউনলোড অপশন। সেখানে ক্লিক করুন, ক্লিক করে আপনি দেখতে পাবেন যতগুলো ভিডিও ডাউনলোড করেছেন সব ভিডিও সাজানো আছে ।

  এবার আপনি যে ভিডিওটা চালাতে চাইছেন সেটি চালাতে পারেন । তার আগে আপনি এবার ডাটা বন্ধ করে দিন । দেখবেন এবার বিনা ইন্টারনেটে ইউটিউব ভিডিও চলছে।

 তাহলে দেখলেন তো কিভাবে বিনা ইন্টারনেটে ইউটিউবে ভিডিও চালানো যায়। এর ফলে আপনি আপনার অনেক মোবাইলের ইন্টারনেট ডাটা বাঁচাতে পারবেন। একটা সিনেমা বা গান আপনি যতবার দেখবেন ততবার আপনার ডাটা খরচ হতো, কিন্তু আপনি ভিডিও ডাউনলোড করে দেখার পর আপনার একবারে ডাটা খরচ হবে । বারবারা ডাটা খরচ হবে না। তবে একটা কথা বলে রাখি সব ভিডিও ডাউনলোড অপশন আসবে না । কিছুই ভিডিও প্রিমিয়াম ভিডিও যেগুলো টাকা দিয়ে ডাউনলোড করতে হয়। আপনি চাইলে টাকা দিয়ে করতে পারেন, না হলে ওগুলো প্লে করে দেখতে পারেন।

 এরকম ব্যবস্থা শুধু ইউটিউব না আরো বিভিন্ন অ্যাপ এ পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে Hotstar, zee5, Voot, Sony LIV, Gaana.com, MX Player ইত্যাদি অ্যাপ। যেখানে আপনাকে ভিডিও ডাউনলোড করার জন্য আগে রিচার্জ করতে হয় । তারপর আপনি সেখানে ভিডিও ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন এবং যখন খুশি দেখতে তে পারবেন। 

  আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানান। আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টে পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন। বিজ্ঞান ও ইন্টারনেট বিষয়ে আরো পোষ্ট পড়তে নীচে বিজ্ঞান ইন্টারনেট লেখার উপর ক্লিক করুন। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। 

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১

এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর কি কি ?.


এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন প্রশ্ন এবং উত্তর।
১) আমাদের মহাদেশের নাম কি - এশিয়া।
২) এশিয়া মহাদেশের আয়তন কত - ৪ কোটি ৪৫ লক্ষ, ৭৯ হাজার বর্গ মাইল।
৩) এশিয়া মহাদেশে কত মানুষ বাস করে - পৃথিবীর ৬০ শতাংশ বা ৪৩০ কোটি।
৪) এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের মাঝে কোন সাগর আছে - লোহিত সাগর।
৫) এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশ কোন নদী ও পর্বত দিয়ে আলাদা - উরাল নদী ও উরাল পর্বত ।

৬) এশিয়া মহাদেশের আয়তন আফ্রিকা থেকে কত গুন বেশি - দেড় গুন।
৭) এশিয়া মহাদেশের পূর্ব প্রান্ত কোন সাগর আছে - প্রশান্ত মহাসাগর।
৮) এশিয়া মহাদেশ ও ইউরোপ কে এক সাথে কি বলা হয় - ইউরেশিয়া।
৯) এশিয়া মহাদেশের লবণাক্ত হ্রদের নাম কি - মরু সাগর।
১০) এশিয়া মহাদেশের মধ্য দিয়ে কোন রেখা অতিক্রম করে - ৯০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা ।
১১) এশিয়া মহাদেশে পৃথিবীর আয়তনের কত শতাংশ - প্রায় এক তৃতীয়াংশ ।
১২) এশিয়া মহাদেশের বড় মালভূমির নাম কি - তিব্বত মালভূমি। 

১৩) এশিয়া মহাদেশের উষ্ণতম স্থানের নাম কি - জেকোবাবাদ।
১৪) এশিয়ার চির গোধূলি কাকে বলে - নিরক্ষীয় চিরহরিৎ বনভূমিকে।
১৫) পৃথিবীর ছাদ কোন মালভূমিকে বলে – পামীর মালভূমিকে ।
১৬) এশিয়ার শীতল অরণ্য অঞ্চলের নাম কি - তৈগা ।
১৭) সরলবর্গীয় বনভূমির পাতা কেমন হয় – ছুঁচালো হয় ।
১৮) নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে সূর্যরশ্মি কেমন ভাবে পতিত হয় – লম্বভাবে ।
১৯) পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমির নাম কি – গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ব-দ্বীপ সমভূমি ।
২০) এশিয়া মহাদেশের দীর্ঘতম পূর্ব বাহিনী নদীর নাম কি – ইয়াং-সি নদী ।
২১) পৃথিবীর ফলের ঝুড়ি কোন জলবায়ু অঞ্চলকে বলা হয় – ভূমধ্য সাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলকে ।
২২) এশিয়া মহাদেশে হিমালয় ও কুয়েনুল পর্বতের মাঝে কোন মালভূমি অবস্থিত - তিব্বত মালভূমি ।
২৩) টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মিলিত প্রবাহের নাম কি – সাত-এল-আরব ।
২৪) এশিয়া মহাদেশ প্রায় সম্পূর্ণ কোন গোলার্ধে অবস্থিত – উত্তর গোলার্ধে ।
২৫) এশিয়া মহাদেশের ওব নদী কোথা থেকে উৎপন্ন হয়েছে – আলতাই পর্বত থেকে ।
২৬) এশিয়ার সর্ব পশ্চিম বিন্দু কোনটি - বেবা অন্তরীপ ।
২৭) জাপানের প্রধান দ্বীপের সংখ্যা কটি – ৪ টি ।
২৮) সুমেরীয় সভ্যতা কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল - টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল ।
২৯) কোন বনভূমির গাছ শঙ্কু আকৃতির হয় – সরলবর্গীয় বনভূমির ।
৩০) চিনের বৃহত্তম শিল্প কেন্দ্র কথায় অবস্থিত – সাংহাইতে অবস্থিত । 
৩১) তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত একটি হ্রদের নাম কি – মানস সরবর ।
৩২) এশিয়ার দক্ষিণ বাহিনী নদীগুলির মধ্যে দীর্ঘতম নদীর নাম কি – মেকং নদী ।
৩৩) এশিয়ার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত কত - ২৫০ সেন্টিমিটার ।
৩৪) চিনের দীর্ঘতম নদীর নাম কি – ইয়াং সি নদী ।
৩৫) এশিয়া মহাদেশের কোন জলবায়ু অঞ্চলে বার্ষিক উষ্ণতার প্রসার সবথেকে কম – তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলে ।
৩৬) আরব উপদ্বীপের বৃহত্তম দেশের নাম কি – সৌদি আরব ।
৩৭) ভারত ও পাকিস্তানে যে মরুভূমি আছে তার নাম কি – থর মরুভূমি ।
৩৮) বিশ্বের বৃহত্তম খনিজ তেল উত্তোলন কেন্দ্রের নাম কি – ঘাওয়ার ।
৩৯) বিশ্বের বৃহত্তম সামুদ্রিক তৈল খনির নাম কি – সাফানিয়া ।
৪০) সৌদি আরবের রাজধানীর নাম কি – রিয়াধ ।

৪১) এশিয়া মহাদেশের কোন নদীকে স্বর্ণ রেণুর নদী বলে - ইয়াং সি নদীকে ।
৪২) ব্রহ্মপুত্র নদ কোন দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে - চীনের তিব্বত, ভারত ও বাংলাদেশ ।
৪৩) এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গের নাম কি - গডউইন অস্টিন
৪৪) এশিয়া মহাদেশের কোন জলবায়ু অঞ্চলে বার্ষিক উষ্ণতার প্রসার সবথেকে বেশি – নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে ।
৪৫) দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ কোনটি - ভারত ।
৪৬) এশিয়া মহাদেশের গভীরতম হ্রদের নাম কি – বৈকাল হ্রদ ।
৪৭) এশিয়া পৃথিবীর মোট আয়তনের কত - প্রায় এক তৃতীয়াংশ ।
৪৮) পীত নদী কাকে বলে – হোয়াং-হো নদীকে ।
৪৯) এশিয়ার সবচেয়ে খরস্রোতা নদী কোনটি - সালউইন ।
৫০) ব্রহ্মপুত্র নদী তিব্বতে কি নামে পরিচিত - সানপো ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । ভূগোল বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ    

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।