বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

প্রাচীন বাংলার ভৌগলিক অবস্থান কেমন ছিল ?.


   আমরা বর্তমানে যে অংশে বাস করি তাঁর নাম পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশ । এই স্থানের নাম আগে কি ছিল ? এর সীমা বিভাগ কি ছিল ? আমাদের মনে রাখা দরকার যে এটি হল প্রায় এক-দেড় হাজার বছর আগের দিনের কথা । আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশ আলাদা আলাদা সময় বিভিন্ন ভৌগলিক বিভাগের অন্তর্গত ছিল । এখন আমরা প্রাচীন বাংলার প্রধান প্রধান ভৌগলিক বিভাগ গুলি সম্বন্ধে জানবো । সেই সময় এই এলাকাগুলি আজকের তুলনায় অনেক আলাদা ছিল  । 

  বঙ্গ নামটি প্রথম আমরা উল্লেখ পাই ঋকবেদের ঐতরেয় আরণ্যকে । সেই সময় প্রাচীন বাংলা বলতে যে অঞ্চলটিকে বোঝানো হত তা  ভৌগলিক দিক দিয়ে কোন বড়ো অঞ্চল ছিলনা । প্রাচীন বাংলার জনপথ গুলির মধ্যে বঙ্গ একটি বিভাগ ছিল । মহাভারতে উল্লেখ করা হয়েছে যে বঙ্গ, পুণ্ড্র, সুহ্ম, তাম্রলিপ্ত ইত্যাদি এক একটি আলাদা রাজ্য ছিল । কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এর উল্লেখ পাওয়া যায় । কালিদাসের রঘুবংশম কাব্যে বঙ্গ ও সুহ্ম নাম দুটির উল্লেখ আছে । খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকের ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজের লেখাতে বঙ্গ রাজ্যের কথা পাওয়া যায় । মুঘল যুগের ঐতিহাসিক আবুল ফজল ‘আইন-ই-আকবরি’তে এই এলাকাকে সুবা বাংলা বলেছেন ।


এরপর ষোড়শ, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের ভ্রমনকারী ও অন্যান্যরা এখানে আসেন । তাঁরা নাম দেন বেঙ্গালা । স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত এই বিরাট অঞ্চল বাংলা বা বাংলাদেশ নামে পরিচিত ছিল । ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় বাংলার পশ্চিম অংশের নাম হয় পশ্চিমবঙ্গ । আর পূর্ব ভাগ চলে যায় পাকিস্তানের অংশে । তাঁর নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান । ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন দেশের মর্যাদা লাভ করে । তাঁর নতুন নাম হয় বাংলাদেশ ।

  প্রাচীন বাংলার সীমা তিনটি নদী ভাগীরথী, পদ্মা, মেঘনা দিয়ে তৈরি ছিল । এর এক একটি অঞ্চল দীর্ঘকাল স্বাধীন ছিল, আবার কয়েকটি অঞ্চল অন্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে । যখন কোন রাজ্যের শাসন কর্তা রাজ্য বিস্তার করতেন তখন এই অঞ্চলের সীমা পরিবর্তন হয়ে যেত । প্রাচীন বাংলার প্রধান প্রধান অঞ্চল গুলি হল – পুণ্ড্রবর্ধন, বরেন্দ্র, বঙ্গ, গৌড়, সমতট, হরিকেল, রাঢ়, বঙ্গাল । এদের মধ্যে বঙ্গ, গৌড়, পুণ্ড্র ইত্যাদি হল এক একটি জনগোষ্ঠীর নাম । তাঁরা যেসব অঞ্চলে বাস করতেন সেই অঞ্চলটির নাম তাদের(জনগোষ্ঠীর) নাম অনুসারে হয় ।

  পুণ্ড্রবর্ধন ছিল প্রাচীন বাংলার বড়ো অঞ্চল । এই অঞ্চলটি বর্তমানে বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর ও পাবনা এলাকায় ছিল । গুপ্ত যুগে এই এলাকাটি একটি ভুক্তি বা শাসন এলাকা ছিল । বরেন্দ্র অঞ্চলটি ভাগীরথী ও করতোয়া নদীর মধ্যের অংশে ছিল । বঙ্গাল এলাকাটি দক্ষিণ সীমান্তবর্তী বঙ্গোপ সাগরের উপকূল অঞ্চলে ছিল ।


 প্রাচীনকালে ভাগীরথী ও পদ্মা নদীর মাঝে ত্রিভুজাকৃতি বদ্বীপ অঞ্চলকে বঙ্গ বলা হয় । মনে করা হয়- ভাগীরথীর পশ্চিমদিকের অঞ্চল এর মধ্যে ছিল । পরে ভাগীরথীর পশ্চিমদিকে রাঢ় ও সুহ্ম নামে দুটি আলাদা অঞ্চলের উৎপত্তি হলে বঙ্গের সীমানা পরিবর্তন হয়ে যায় । ঢাকা, বিক্রমপুর, বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলকে সেই সময় বঙ্গ অঞ্চল বলে মানা হয়ে থাকে ।

  প্রাচীন ও মধ্য যুগে গৌড় বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল । গৌড় বলতে একটি জনগোষ্ঠীর নাম বোঝায় । মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম নিয়ে গৌড় তৈরি হয়েছিল । রাজা শশাঙ্কের আমলে গৌড়ের সীমানা বেড়ে যায় ।  মুর্শিদাবাদ ছিল গৌড়ের প্রধান এলাকা । শশাঙ্কের আমলে পুণ্ড্রবর্ধন থেকে ওড়িশার উপকূল পর্যন্ত গৌড়ের অন্তর্ভুক্ত হয় । অষ্টম ও নবম শতকে সমগ্র পাল সাম্রাজ্যকে গৌড় বলে বোঝানো হত ।

  রাঢ় অঞ্চলের দুটি ভাগ ছিল, উত্তর রাঢ় আর দক্ষিণ রাঢ় । উত্তর রাঢ় আর দক্ষিণ রাঢ়ের সীমানা অজয় নদ ছিল । উত্তর রাঢ় অঞ্চলটি ছিল মুর্শিদাবাদের পশ্চিম ভাগ, বীরভূম, সাঁওতাল পরগনার একাংশ, বর্ধমানের কাটোয়া । দক্ষিণ রাঢ় অঞ্চল ছিল হাওড়া, হুগলী, বর্ধমানের বাকি অংশ । অজয় ও দামোদরের মধ্যবর্তী এলাকা । দক্ষিণ রাঢ় বঙ্গোপ সাগরের কাছাকাছি ছিল ।


  প্রাচীন সমতট অঞ্চলটি ছিল মেঘনা নদীর পূর্ব দিকে । বাংলাদেশের নোয়াখালী, কুমিল্লা ছিল প্রাচীন সমতট অঞ্চল । মেঘনা নদীর জন্য সমতট বাকি অংশের থেকে আলাদা ছিল । তাই সমতটকে প্রাচীন বাংলায় সীমান্তবর্তী এলাকা বলে মনে করা হয় । সমতটের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চট্টগ্রাম, উপকূল অঞ্চল প্রাচীন বাংলায় হরিকেল নামে পরিচিত ছিল ।

  আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । ইতিহাস বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে ইতিহাস লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

২টি মন্তব্য:

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷