পেঁচা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্বাস ও অবিশ্বাস গুলি কি কি ?.
পেঁচা কথাটি শুনলে আপনার মনে ভাল ও মন্দ দুই
ধরণের কথা মনে পড়ে যায় । কিছু পেঁচাকে সৌভাগ্যের চিহ্ন হিসাবে আবার কিছু পেঁচাকে
দুঃখের কারণ বলে মানুষ মনে করে । লক্ষ্মী পেঁচাকে আমরা সবাই সৌভাগ্যের প্রতীক ও
হুতুম পেঁচাকে অলক্ষ্মী বলে ভেবে থাকি । আদিম যুগে মানুষ পেঁচাকে শ্রদ্ধার চোখে
দেখেছেন ও তাঁর পুজো করেছেন । বাঙালিদের লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে পেঁচাকে স্থান দেওয়া
হয়েছে । মা লক্ষ্মীর বাহন হওয়ার আগে থেকেও পেঁচার পুজো করা হত ।
লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে পেঁচা এসেছে আলেকজান্ডারের পরে পশ্চিম সীমান্তবর্তী গ্রিক রাজাদের মুদ্রা থেকে । লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে পেঁচাকে ভাবার কারণ হল যে – পেঁচা শস্যক্ষেত্রে বিভিন্ন পোকামাকড়, ইঁদুর, ব্যাঙ ও বিভিন্ন শস্য নস্টকারী প্রাণীদের খেয়ে ধ্বংস করে বলে । একজোড়া পেঁচা পাঁচ বছরে প্রায় তিন হাজার ইঁদুর হত্যা করতে পারে । প্রাচীন রোমের দেবী ‘মিনার্ভা’র হাতে পেঁচা থাকে । তাঁকে জ্ঞানের ও জাদুর প্রতীক হিসাবে মনে করা হয় । আবার পেঁচা গ্রিসের শান্তি ও জ্ঞানের দেবী এথেনার বাহন হিসাবে দেখা যায় । খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে ইজিপ্টে একটি কাঠের কফিনে একটি অদ্ভুত দেখতে পেঁচার ছবি পাওয়া গিয়েছে । আবার মধ্য-পশ্চিম আমেরিকায় একটি পাহারের গুহায় প্যালিওসিন যুগের পেঁচার ফসিল পাওয়া গিয়েছে ।
পেঁচার বয়স কত ? আপনি বলবেন আবার কত হবে ।
মানুষের বয়সের থেকে হয়তো একটু বেশি আবার কি । কিন্তু না, তাহলে পৃথিবীতে পেঁচা কবে
থেকে এসেছে ? একদল গবেষকদের মতানুসারে – পেঁচা ডাইনোসরদের থেকে ৩৫০০ বছর আগে
পৃথিবীতে জন্ম হয়েছিল । পেঁচা নাকি ডাইনোসরদের থেকেও পুরনো । প্রত্নতাত্ত্বিকরা
পেঁচার জীবাশ্ম বিচার করে দাবি করেন যে – পেঁচার বয়স ৬ কোটি বা তাঁর থেকে বেশি হবে
। বিশেষজ্ঞদের মতে পেঁচার বয়স আরও বেশি হতে পারে বলে তাঁর মনে করেন ।
পাখিদের মধ্যে পেঁচা সবথেকে নিষ্ঠুর শিকারি
পাখি । ঈগলের মত শিকারি পাখিরা এতটা নিষ্ঠুর হয়না । শিকার করার পর শিকারের
হৃদপিণ্ড ও পাকস্থলী প্রথমে বার করে খায় । পেঁচারা আবার স্বজাতীয় মাংস খায় ।
পেঁচার যদি কোন দুর্বল সন্তান হয় তবে তাঁকে সুস্থ ও সবল সন্তানদের মধ্যে খাবার
হিসাবে ভাগ করে খেতে দেয় । পেঁচারা আবার ছদ্মবেশ ধরায় পাকা ওস্তাদ । আফ্রিকার
জঙ্গলে এমন এক ধরণের পেঁচার খোঁজ পাওয়া যারা নিজেদেরকে দিনের বেলায় লুকিয়ে রাখে ।
যাতে করে কোন শিকারি পাখি তার খোঁজ না পায় ।
আবার গাছের ডালে গা ঢাকা দিয়ে থাকে,
আবার কখন গাছের ছালের সঙ্গে মিশে যায় । গবেষকদের মতে – তাঁরা যদি আপনার চোখের
সামনে থাকে, তবুও তাঁদের চেনা খুব কঠিন কাজ হবে । বিশ্বের ক্ষুদ্রতম পেঁচার উচ্চতা
মাত্র ৬ ইঞ্চি ও ওজন মাত্র ৪০ গ্রাম । কানাডা ও আমেরিকার বিশেষকরে ক্যালিফোর্নিয়ার
কলোরাডো নদীর ধারে এই পেঁচা বেশি দেখা যায় ।
পেঁচা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্বাস ও অবিশ্বাস –
আমাদের দেশ কেন পৃথিবীর
বিভিন্ন দেশে পেঁচা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্বাস ও অবিশ্বাস প্রচলিত আছে । ভারতে কিছু
বিশ্বাস ও অবিশ্বাস এমন হল যে – ভারতের কোন কোন এলাকায় মানুষ এমন বিশ্বাস করেন যে
পেঁচা হল নাকি বাদুড়ের স্ত্রী । প্রাচীনকালে উত্তর ভারতের মানুষরা বিশ্বাস করতেন
যে কেউ যদি পেঁচার চোখ খেয়ে নেয় তবে সে রাত্রে ভাল দেখতে পাবে । প্রাচীনকালে বাতের
ব্যথা সারাতে ও হজমের ওষুধ হিসাবে পেঁচার মাংস ব্যবহার করা হয় । উত্তর ভারতে কাল
পেঁচাকে মৃত্যুর প্রতীক হিসাবে ধরা হয় ।
আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকাতে বিভিন্ন জাতি এদের কি
মনে করতেন । মধ্য আফ্রিকার বান্টু জাতির কাছে জাদুকরের প্রতীক ছিল পেঁচা । দক্ষিণ
আফ্রিকার জুলুক জাতির কাছে পেঁচা হল একটি জাদুকরী পাখি । পূর্ব আফ্রিকার সোয়া-হিলি
জাতির লোকেরা বিশ্বাস করতেন যে – ছোটো শিশুদের অসুস্থতার সংকেত পেঁচা বহন করে নিয়ে
আসে । পশ্চিম আফ্রিকায় পেঁচাকে জাদুকরী ও পিশাচিনীর বার্তা বাহক মনে করা হত ।
পেঁচা তাঁদের খারাপ সময়ের আগান অবস্থা জানাত ।
অস্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীরা বিশ্বাস করেন যে –
বাদুড় পুরুষ আত্মার বাহক আর পেঁচা নারী আত্মার বাহক । পোল্যান্ডের পোলিশ সভ্যতার
মানুষদের ধারণা ছিল যে – মৃত্যুর পর অবিবাহিত নারীরা পায়রা হয় ও বিবাহিত নারীরা
পেঁচা হয়ে জন্ম নেয় । ব্যাবিলনে এমন বিশ্বাস যে নারীর প্রসব হওয়ার সময় পেঁচা তাবিজ
হয়ে তাঁদেরকে রক্ষা করেন । জার্মানিতে বিশ্বাস – যদি সন্তান জন্মের সময় পেঁচা ডাকে
তবে সেই সন্তানের ভাগ্য ভাল হয়না । ফ্রান্সের লোকেরা বিশ্বাস করেন যে – অন্তঃসত্ত্বা
মহিলা যদি পেঁচার ডাক শোনেন তাহলে তাঁর কন্যা সন্তান হবে ।
বেলজিয়ামের মানুষরা বিশ্বাস করেন যে – গির্জায়
ইঁদুরের উৎপাত বন্ধ করার জন্য পেঁচাকে গির্জায় থাকার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন যিশুখ্রিস্ট । স্পেনে প্রাচীন কালে মানুষের
বিশ্বাস ছিল যে – যীশুকে ক্রুশের ওপর হত্যা হওয়ার দেখার আগে পর্যন্ত
পেঁচা একটি সুরেলা পাখি ছিল । কিন্তু, এই ঘটনার পর রাত্রে ডাকার সময় পেঁচার ডাক
বদলে গেছে ।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে যাওয়ার আগে যদি রাস্তাতে
কোন পেঁচাকে দেখে যায় তবে, সেই যুদ্ধের ফল হবে রক্তাক্ত । জাপানের এইনু প্রজাতির
মানুষরা যে কোন অভিযানে যাওয়ার আগে পেঁচাকে সুরা উৎসর্গ করতেন । তাঁদের বিশ্বাস
ছিল এর ফলে তাঁদের কোন বিপদ হলে তাঁরা সেই বিপদ থেকে বেঁচে যাবেন । এছাড়াও বিভিন্ন
দেশে পেঁচাকে নিয়ে বিভিন্ন কথা প্রচলিত রয়েছে, তাঁরা সেইসব ধারণা মেনে চলতেন ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনও প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট
করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জানা
অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো
পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
পেঁচার মাংস খেলে মানুষ পাগল হয়না এই কথাটি বুঝিয়ে বলা উচিত ছিল।কারণ বাংলাদেশে প্রচলিত কুসংস্কার হচ্ছে এটি যা আপনি লিখেন নি।
উত্তরমুছুনহঠাৎ করে একটা বাদামি কালারের পেঁচা প্রতিদিন রাতে আমার বাড়ির ওঠানে এসে বসে থাকছে কি করবো বুঝতেপারছিনা
উত্তরমুছুন