সোমবার, ৮ জুন, ২০২০

পৃথিবী কি গোল ও পৃথিবীর সময় গণনার পদ্ধতি কি ?.


 পৃথিবী কি গোল এই প্রশ্নটা আমাদের সবার মনে একবার করে উকি দিয়ে যায় । যদি পৃথিবী সত্যি গোল হয় তার প্রমাণ কি ? আমরা যখন কোন উঁচু জায়গায় দাড়িয়ে দেখি তখন মনে হয় যে – পৃথিবী যেন বিশাল বড় গোল রুটি, আর ওপরের আকাশ গম্বুজের মত যেখানে আকাশ এসে মিশেছে সেই দিগন্তে এসে মিসে গেছে । পৃথিবী যে গোল তার প্রমাণ কি ? এখন আমি আপনাদের সেই প্রমাণ গুলি জানাবো । জানতে হলে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন ।


 প্রাচীন কালে মানুষ বিশ্বাস করতেন যে পৃথিবী চ্যাপ্টা রুটির মত সমতল সে সময় তেমন কোন যানবাহন ছিল না । তবুও, পৃথিবীর শেষ কথায় তা দেখার জন্য মানুষ বড় বড় নৌকায় চেপে, উঠের পিঠে চেপে তাঁরা অভিযান শুরু করেন । বিখ্যাত ভূ-পর্যটক ম্যাগেলন ১৫২২ সালে ৫টি বড় বড় জাহাজ নিয়ে পৃথিবী অভিযান শুরু করেছিলেন । তিনি ক্রমাগত পশ্চিম দিকে যাত্রা করতে করতে শেষ পর্যন্ত একই বন্দরে ফিরে এলেনযদি পৃথিবী গোল না হত তাহলে এরকম ঘটনা হতনা


 গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল চন্দ্র গ্রহণের সময় দেখেন যে – চাঁদের ওপর পৃথিবীর গোলাকার ছায়া পড়েছে । গোলাকার বস্তুর ছায়া গোলাকার হয় । গ্রীক ভূগোলবিদ এরাটোসথেনিস, ভারতীয় বিজ্ঞানী আর্যভট্ট এই ধারণাকে সমর্থন করেছিলেন । এর থেকে বোঝা যায় যে পৃথিবী গোলাকার । আবার পৃথিবীর সব স্থানে একই সময় সূর্য ওঠেনা বা অস্ত যায়না । পৃথিবী যদি চ্যাপটা হত তাহলে পৃথিবীর সব স্থানে একই সময় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হত ।
 
   সমুদ্রে আর একটা বিষয় দেখা যায় । কোন জাহাজ যখন সমুদ্রের দিকে যায় তখন তীর থেকে দেখলে প্রথমে গোটা জাহাজ, তারপর শুধু জাহাজের পাল । এরপর জাহাজের মাস্তুলের মাথাটুকু শুধু দেখা যায় । তখন মনে হয় যে – জাহাজটি যেন কোন ঢাল বেয়ে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে । পৃথিবী যদি গোল না হত তাহলে এরকম ঘটনা হতনা

 মহাকাশে মহাকাশচারীরা পৃথিবীকে মহাশূন্য থেকে উজ্জ্বল নীল গোলকের মত দেখেছেন । মহাকাশ থেকে পৃথিবীর যে সমস্ত ছবি তোলা হয়েছে তাতে পৃথিবীকে গোলাকার দেখা গেছে । ইউরি গ্যাগরিন, নীল আর্মস্ট্রং, এডুইন অলড্রিন এরা মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে নীল গোলাকার দেখেছেন । বর্তমানে কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীর যে ছবি তোলা হয়েছে তাতে পৃথিবী গোলাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে । পৃথিবীর গড় ব্যাসার্ধ প্রায় ৬৪০০ কিলোমিটার । একটা এত বড় বৃত্তের উপর দাঁড়িয়ে আমরা খুব সামান্য দেখতে পাই । তাই পৃথিবীকে চ্যাপ্টা বা সমতল বলে মনে হয় ।

 আমাদের পৃথিবীর আকৃতি উপর-নিচ কিছুটা চ্যাপটা । পৃথিবীর মেরু ব্যাস ১২৭১৪ কিলোমিটার আর নিরক্ষীয় ব্যাস ১২৭৫৬ কিলোমিটার । পৃথিবী মাঝ বরাবর ৪২ কিলোমিটার স্ফীত বা মোটা পৃথিবীর আকৃতি অনেকটা কমলালেবু বা নাসপাতির মত । তবে আমরা শেষে একথা বলতে পারি যে পৃথিবীর আকৃতি পৃথিবীর মত, ইংরেজিতে একে ‘জিওড’ বলে ।

এবার আপনার মনে এই প্রশ্ন আসছে যে – আমরা পৃথিবী থেকে পড়ে যায় না কেন ? পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর ঘোরে আবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে । পৃথিবী তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা সমস্ত বস্তুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে । এরফলে সমস্ত বস্তু পৃথিবীতে আটকে থাকে । তাই, পৃথিবী গোল হলেও আমরা পড়ে যাই না । পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও তার ঘনত্বের একটা পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে । নিউটনের সূত্র অনুসারে – দূরত্ব বৃদ্ধি পেলে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব কমে যায় । পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চল মেরু অঞ্চলের থেকে দূরবর্তী তাই, পৃথিবীর আকর্ষণ মেরু অঞ্চলে বেশি দেখা যায় ।

 পৃথিবীর সময় গণনার পদ্ধতি কি –

 পৃথিবীর সময় গণনা করার জন্য পৃথিবীর উপর অনেক গুলি কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে । দুই মেরু থেকে সমান দূরত্বে পৃথিবীর মাঝ বরাবর পূর্ব-পশ্চিম যে কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে তাকে নিরক্ষীয় বা বিষুবরেখা বলা হয় । আবার পৃথিবীর মাঝ বরাবর উত্তর-দক্ষিণে যে কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে তাকে মূলমধ্য রেখা বলে । পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণে যে অর্ধ-গোলাকার কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে তাকে দ্রাঘিমা রেখা ও  পূর্ব-পশ্চিম যে গোলাকার কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে তাকে অক্ষ রেখা বলে । মূলমধ্য রেখার বিপরীত দিকে ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা রেখা অনুসরণ করে একটি কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে । সেই রেখাটির নাম হল ‘আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা’ । এখান থেকে পৃথিবীর নতুন তারিখ শুরু হয় । কোথাও কোথাও এই রেখাকে বাকিয়ে দেওয়া হয়েছে । এই রেখা পেরিয়ে পশ্চিম দিকে গেলে একদিন কমিয়ে নিতে হয় । আর পূর্ব দিকে গেলে একদিন যোগ করতে হয় ।

 যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধার জন্য কোন দেশের মাঝখানে দ্রাঘিমা রেখাকে স্থানীয় সময় ধরা হয় । একে সেই দেশের ‘প্রমাণ সময়’ বা ‘স্ট্যান্ডার্ড টাইম’ বলে । যখন কোন দ্রাঘিমা রেখার উপর সূর্য আসে তখন সেই দ্রাঘিমা রেখার উপর অবস্থিত প্রতিটি স্থানের সময় ১২ টা বলে ধরা হয় । দুপুর ১২ টার আগের সময় কে am, রাত ১২ টার আগের সময় কে pm বলে বেশির ভাগ রেল স্টেশন, বিমান বন্দরে 24 ঘণ্টার ঘড়ি ব্যবহার করা হয় । সেখানে সকাল 5 টায় 5:00, বিকেল 5 টায় 17:00 এই ভাবে দেখা যায় ।

 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জানা অজানা ও ভূগোল বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা ও ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ   
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।


গুপ্ত সম্রাট সমুদ্র গুপ্তের জীবনী, শাসন, রাজ্য জয় ও গুরুত্ব কি কি ?.


 ভারতে গুপ্ত সম্রাটদের মধ্যে প্রধান ও শ্রেষ্ঠ গুপ্ত শাসক হলেন সমুদ্র গুপ্ত । শুধু গুপ্ত বংশেরই নন, তিনি ছিলেন ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামরিক শাসক । সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন গুপ্তসম্রাট প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ও লিচ্ছবি রাজকন্যা কুমারদেবীর সন্তান । সমুদ্র গুপ্ত সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায় কিছু ঐতিহাসিক উপাদানের সাহায্যে । আর্য-মঞ্জুশ্রী মুলকল্প ও তন্ত্রি-কামান্ডকে তাঁর উল্লেখ পাওয়া যায় । এছাড়া সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রা থেকে তার রাজত্বের বহু তথ্য জানা যায় । সমুদ্র গুপ্তের পাঁচটি বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা পাওয়া গেছে । প্রথম মুদ্রাতে তিনি তীর ধনুক সহ দণ্ডায়মান, দ্বিতীয়টিতে তাঁর হাতে একটি কুঠার, পরেরটিতে তাঁর পদদলিত একটি বাঘ, এর পরেরটিতে তিনি বীণা বাদনরত, শেষ মুদ্রাটিতে অশ্বমেধের স্মারক হিসাবে তাঁকে দেখা যায় ।




 এই মুদ্রাগুলির সাহায্যে তাঁর সর্বতোমুখী প্রতিভার কথা বলা হয়েছে । সমুদ্র গুপ্তের জন্য দুটি লেখ মূল্যবান, সেগুলি হল – মধ্য প্রদেশে এরাণ লেখ ও এলাহাবাদে হরিষেণ প্রশস্তি । হরিষেণ প্রশস্তি অশোক স্তম্ভের উপর রচিত । সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিষেণ রচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে তার ও তার রাজ্যজয় ও রাজত্বকাল সম্পর্কে বহু তথ্য জানা যায় । সমগ্র গুপ্ত যুগের ইতিহাস জানার জন্য এই লেখাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । হরিষেণ প্রশস্তির সপ্তম স্তবক থেকে সমুদ্র গুপ্তের সামরিক সাফল্যের বর্ণনা পাওয়া যায় ।


 সমুদ্র গুপ্ত কবে সিংহাসন আরোহণ করেছিলেম. । তার সিংহাসনারোহণের বছর কোনটি – এই প্রশ্নে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে । ড. রায়চৌধুরি ৩২৫ খৃষ্টাব্দকে সমুদ্র গুপ্তের সিংহাসন লাভের তারিখ বলেছেন । আবার ড. মজুমদার মনে করেন- ৩৫০ খৃষ্টাব্দ বা তাঁর কাছাকাছি সময়ের আগে সমুদ্র গুপ্ত সিংহাসন লাভ করেননি । ডক্টর আর কে মুখোপাধ্যায়ের মতে, সমুদ্রগুপ্ত ৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে বসেন ।

 তার রাজ্যজয়ের বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে । এলাহাবাদ প্রশস্তির দশম থেকে দ্বাদশ স্তবক পর্যন্ত সমুদ্রগুপ্তের বিভিন্ন রাজ্য বিজয়ের সংবাদ পাওয়া যায় । সমুদ্র গুপ্ত অচ্যুত, নাগসেন, গণপতি নাগ ও কোটা পরিবারের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন । এরপর তিনি বাকাটকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন । অনুমান করা হয় যে এই যুদ্ধ মধ্যপ্রদেশের এরাণে হয়েছিল । তিনি এখানে যুদ্ধ জয়ের স্মারক হিসাবে একটি শিব মন্দির স্থাপন করেন । তিনি মহা ক্ষত্রপ তৃতীয় রুদ্র সেন কে পরাজিত করেছিলেন । এরপর তিনি গঙ্গা ও দোয়াব অঞ্চলের সমভূমির উপর তাঁর অধিকার সুদৃঢ় করেন । দক্ষিণ ভারতের বারো জন রাজা তাঁর গ্রহণ-মোক্ষ-অনুগ্রহ নীতি গ্রহণ করেন ।

 সমুদ্র গুপ্ত উত্তর ভারতের নয়জন রাজাকে পরাজিত করে তাঁদের সাম্রাজ্য তিনি নিজের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন । তিনি ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য সাধন করে নিজেকে ‘একরাট’ রূপে প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে ভিন্ন নীতি গ্রহণ করেন । উত্তর ভারতের বিজিত রাজ্যগুলি তিনি সরাসরি তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন । কিন্তু, দক্ষিণ ভারতে তিনি গ্রহণ-মোক্ষ-অনুগ্রহ নীতি গ্রহণ করেন । পাটলিপুত্র থেকে দাক্ষিণাত্যে শাসন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না । এর থেকে তাঁর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায় । এই নয় জন রাজার পরিচয় থেকে বলা যায় – উত্তর প্রদেশের অধিকাংশ, মধ্যপ্রদেশের বিশেষ অংশ ও বঙ্গ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল ।

 আর্যাবর্ত জয়ের পর সমুদ্র গুপ্ত আটবিক রাজ্যগুলি জয় করেন । তাঁর দক্ষিণাপথ অভিযানের পথ সুগম করেন । তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের পাঁচটি সীমান্ত রাজ্য জয় করেন । সেগুলি হল – সমতট, কামরূপ, নেপাল, দবক ও কর্তৃপুরা । তিনি উপজাতি রাজ্যগুলি জয় করে নিজে গ্রাস না করে তাদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করেন । পশ্চিমের নাগগণ ছিলেন আর্যাবর্তের গুপ্তদের প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বী । আবার নাগদের সাথে সেই সময় বাকাটকদের মৈত্রীর সম্পর্ক ছিল ।

 সমুদ্র গুপ্ত দক্ষিণ ভারত অভিযানের মাধ্যমে তাঁর সাম্রাজ্যের সীমা সম্প্রসারিত করেননি । পল্লব সেনা বাহিনী ধ্বংস করা এই অভিযানের মূল লক্ষ ছিল । এই অঞ্চলের অপরিমিত সম্পদ তাঁকে প্রলুব্ধ করেছিল । মনে করা হয় যে – তিনি একবার দক্ষিণ ভারত অভিযান করেন । যদিও, এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি । দক্ষিণ ভারতের রাজাদের সবাইকে কর দিতে হত । সেই করের সাহায্যে গুপ্ত সম্রাটগণ একটি আড়ম্বরপূর্ণ, মার্জিত রাজসভা, একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করেছিলেন ।
  সমুদ্র গুপ্ত আর্যাবর্তের রাজ্য গুলি জয় করে দুর্গম দাক্ষিণাত্যে অভিযান পরিচালনা করে তাঁর সামরিক প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন । উত্তর ভারতের বিরাট অংশ তিনি প্রত্যক্ষ শাসন করেছেন । শুধুমাত্র দক্ষিণ দিক বাদ দিয়ে বাকি তিন দিক এই অঞ্চলকে কয়েকটি করদ রাজ্য দিয়ে ঘিরে রেখেছিলেন ।

 সমুদ্র গুপ্তের রাজত্বের সূচনা সম্পর্কে মতভেদ থাকলেও তাঁর শাসনের সমাপ্তি বিষয়ে ততটা মতভেদ নেই । পরবর্তী সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্র গুপ্তের প্রথম লেখ ৩৮০ খ্রিষ্টাব্দে মথুরায় পাওয়া গেছে । এর থেকে জানা যায় যে – ৩৭৫-৩৭৬ খ্রিস্টাব্দে সমুদ্র গুপ্তের রাজত্ব শেষ হয়েছিল । তিনি শুধু যোদ্ধা বা রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি মানবিক গুনের অধিকারী ছিলেন । তিনি বিদ্বান ও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন । শাস্ত্রতত্ত্বে পারদর্শী ছিলেন, তিনি বহু কবিতা রচনা করেন ।

 আবার তিনি সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন । তাঁর বিনা বাদনরত মুদ্রায় প্রমাণ পাওয়া যায় । তার বীণা বাদনরত মূর্তি দেখে অনুমিত হয় যে তিনি ছিলেন সংগীত রসিক । ব্রাহ্মণ্য ধর্মের গৌরব পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয় সমুদ্র গুপ্তের আমলে । অনেকে আবার তাঁকে সম্রাট অশোকের সাথে তুলনা করেছেন । শিল্প মণ্ডিত সুবর্ণ মুদ্রা গুপ্ত যুগের গৌরব । তিনি সাধারণত ‘পরাক্রম’ উপাধি ও তাঁর রাজত্বের শেষ দিকে বিক্রম অভিধা গ্রহণ করেন । ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষক হলেও সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন পরমতসহিষ্ণু । সমুদ্র গুপ্ত হিন্দু রাজচক্রবর্তী আদর্শের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ জয়ের শেষে তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেছিলেন । এই যজ্ঞানুষ্ঠানের স্মৃতিকে রক্ষা করার জন্য তিনি ‘অশ্বমেধ পরাক্রম’ এই দুটি শব্দ দিয়ে বিশেষ মুদ্রা প্রচলন করেন ।
 

গুপ্ত পূর্ব যুগে ও গুপ্ত যুগের প্রথম দিকে ভারতের সাথে সিংহলের ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্য বিশেষ বৃদ্ধি পেয়েছিল । ভারতের সামুদ্রিক বাণিজ্যের জন্য সিংহল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল । উত্তর ভারতের বৃহত্তম বন্দর তাম্রলিপ্তের সঙ্গে সিংহলের বিশেষ বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল । ভারতের মসলিন চীনে বিশেষ পরিচিত ছিল । চীনের রেশম ভারতীয়দের কাছে বিশেষ কদর ছিল । এই বাণিজ্য সমুদ্র গুপ্তের বৈদেশিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছিল ।

 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । ইতিহাস বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে ইতিহাস লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের নামের তালিকা .


 ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নামের তালিকা –

১) জহরলাল নেহরু – ১৯৪৭ – ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ ।
২) গুলজারিলাল নন্দ – ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ, (অস্থায়ী) ।
৩) লালবাহাদুর শাস্ত্রী – ১৯৬৪ - ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ ।
৪) গুলজারিলাল নন্দ - ১৯৬৬ - ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ, (অস্থায়ী) ।
৫) ইন্দিরা গান্ধি – ১৯৬৬ – ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ ।
৬) মোরারজি দেশাই – ১৯৭৭ – ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ ।
৭) চরণ সিং – ১৯৭৯ – ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ ।
৮) ইন্দিরা গান্ধি – ১৯৮০ – ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ ।
৯) রাজীব গান্ধি – ১৯৮৪ – ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ ।
১০) বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং – ১৯৮৯ – ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ ।


১১) চন্দ্র শেখর – ১৯৯০ – ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ, (অস্থায়ী) ।
১২) পি.ভি নরসিমা রাও – ১৯৯১ – ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ ।
১৩) অটল বিহারি বাজপেয়ী - ১৯৯৬ (অস্থায়ী) ।
১৪) এইচ.ডি দেবেগৌড়া -  ১৯৯৬ – ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ ।
১৫) ইন্দ্রকুমার গুজরাল – ১৯৯৭ – ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ ।


১৬) অটল বিহারি বাজপেয়ী – ১৯৯৮ – ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ ।
১৭) ডঃ মনমোহন সিং – ২০০৪ – ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ ।
১৮) নরেন্দ্র দামোদর মোদী – ২০১৪ – বর্তমান ।

ভারতের রাষ্ট্রপতির নামের তালিকা –

১) ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ – ১৯৫০ – ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ ।
২) ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন – ১৯৬২ – ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ ।
৩) ডঃ জাকির হোসেন – ১৯৬৭ – ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ ।
৪) মহম্মদ হিদায়তুল্লা – ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ, (অস্থায়ী) ।
৫) বরাহগিরি ভেঙ্কটগিরি - ১৯৬৯ – ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ ।
৬) ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ - ১৯৭৪ – ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ ।
৭) বি.ডি জাত্তি - ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ, (অস্থায়ী) ।
৮) নীলম সঞ্জীব রেড্ডি – ১৯৭৭ – ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ ।
৯) জৈল সিংহ – ১৯৮২ – ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ ।
১০) আর. ভেঙ্কটরমন – ১৯৮৭ – ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ ।

১১) ডঃ শঙ্করদয়াল শর্মা – ১৯৯২ – ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দ ।
১২) কে.আর নারায়ণ – ১৯৯৭ – ২০০২ খ্রিস্টাব্দ ।
১৩) এ.পি.জে আব্দুল কালাম – ২০০২ – ২০০৭ খ্রিস্টাব্দ ।
১৪) প্রতিভা দেবী সিং পাটিল – ২০০৭ – ২০১২ খ্রিস্টাব্দ ।
১৫) প্রণব মুখোপাধ্যায় – ২০১২ – ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ ।
১৬) রামনাথ কোবিন্দ – ২০১৭ - বর্তমান ।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নামের তালিকা –

১) ডঃ প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ – ১৯৪৭ – ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ ।
২) ডঃ বিধানচন্দ্র রায় – ১৯৪৮ – ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ । 
৩) প্রফুল্লচন্দ্র সেন – ১৯৬২ – ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ ।
৪) অজয় কুমার মুখার্জি – ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ ।
৫) ডঃ প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ – ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ ।
৬) অজয় কুমার মুখার্জি – ১৯৬৯ – ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ ।
৭) ডঃ প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ – ১৯৭০ -১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ ।
৮) সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় – ১৯৭২ – ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ ।
৯) জ্যোতি বসু – ১৯৭৭ – ২০০০  খ্রিস্টাব্দ ।
১০) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য – ২০০০ – ২০১১ খ্রিস্টাব্দ ।
১১) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – ২০১১ – বর্তমান । 


পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের নামের তালিকা –

১) চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারি – ১৯৪৭ – ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ ।
২) বি.এল মিত্র – ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ, (অস্থায়ী) ।
৩) কৈলাসনাথ কাটুজ – ১৯৪৮ – ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ ।
৪) হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায় – ১৯৫১ – ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ ।
৫) সুরজিত লাহিড়ী – ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ, (অস্থায়ী) ।
৬) পদ্মজা নাইডু – ১৯৫৬ – ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ ।
৭) ধর্মবীর – ১৯৬৭ – ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ ।
৮) দীপনারায়ণ সিং – ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ, (অস্থায়ী) ।
৯) শান্তিস্বরুপ ধাওয়ান – ১৯৬৯ – ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ ।
১০) এ.এল ডায়াস – ১৯৭১ – ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ ।
১১) ত্রিভুবন নারায়ণ সিংহ – ১৯৭৭ – ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ ।
১২) ভৈরব দত্ত পাণ্ডে – ১৯৮১ – ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ ।
১৩) এ.পি শর্মা – ১৯৮৩ – ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ ।
১৪) উমাশঙ্কর দীক্ষিত – ১৯৮৪ – ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ ।
১৫) সৈয়দ নুরুল হাসান – ১৯৮৬ – ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ ।
১৬) থঙ্গ ভেল্লু রাজেশ্বর – ১৯৮৯ – ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ ।
১৭) সৈয়দ নুরুল হাসান – ১৯৯০ – ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ ।
১৯) কে.ভি রঘুনাথ রেড্ডি – ১৯৯৩ – ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ ।
২০) এ.আর কিদওয়াই – ১৯৯৮ – ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ ।


২১) শ্যামল কুমার সেন – ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ,(অস্থায়ী) ।
২২) বীরেন জে. শাহ – ১৯৯৯ – ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ ।
২৩) গোপালকৃষ্ণ গান্ধি – ২০০৪ – ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ ।
২৪) এম.কে নারায়ণ – ২০০৯ – ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ ।
২৫) কেশরিনাথ ত্রিপাঠি – ২০১৪ – ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ ।
২৬) জগদীশ ধনকড় – ২০১৯ – বর্তমান ।

 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জানা অজানা  বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ  
 

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।


নদী কাকে বলে, নদীর বিভিন্ন কাজ ও মানুষের জীবনে নদীর গুরুত্ব কি কি ?.


আমরা প্রতিদিন কোন না কোন নদী দেখি, কারণ ভারত বা বাংলাদেশে প্রচুর নদী অবস্থিত । নদী হল স্বাভাবিক প্রবহমান জলধারা, যা পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পৃথিবীর অভিকর্ষের টানে ভূমির ঢাল অনুসারে উঁচু থেকে নিচু বা উৎস থেকে মোহনার দিকে বয়ে যায় । তখন তাকে নদী বলে । সাধারণ ভাবে নদী কোন পাহাড়, পর্বত, মালভূমির উঁচু অংশ থেকে সৃষ্টি হয় । নদী গুলি প্রথমে পাহাড়, পর্বতের বরফ গলা জল বা বৃষ্টির ছোট ছোট জলধারা থেকে শুরু হয়ে অনেক জলধারা মিশে একটা বড় জলধারা বা নদী গঠন করে ।

 এই সমস্ত নদী যে অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তাকে ধারণ অববাহিকা বলে । উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী যে খাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তাকে নদীর উপত্যকা বলে । নদী যেখানে সৃষ্টি হয় তাকে নদীর উৎস, আবার নদী কোন সাগর, উপসাগর, জলাশয় বা হ্রদে গিয়ে শেষ হলে তাকে নদীর মোহনা বলে । যখন অনেক গুলো ছোট ছোট নদী অন্য কোন নদীতে এসে মিশে তখন তাকে উপনদী বলে । যেসব নদী কোন নদী থেকে বেরিয়ে অন্য কোন জলাশয়ে বা নদীতে মিশে তাদের শাখানদী বলে ।


 নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত, উপনদী, শাখানদী যে স্থানের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ষে বিস্তীর্ণ স্থানকে নদীর অববাহিকা বলে । যে নদী কোন দেশের মধ্যে উৎপন্ন হয়ে সেই দেশের কোন সাগর, হ্রদ, জলাশয়ে মিশে তাকে অন্তর বাহিনী নদী বলে । যে নদী বিভিন্ন দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তাকে আন্তর্জাতিক নদী বলে ।

 দুটি নদী যখন পাশাপাশি প্রবাহিত হয় তাদের মধ্যবর্তী স্থানকে দোয়াব বলা হয় । পার্বত্য অঞ্চল বা উঁচু কোন অঞ্চলে তৈরি হওয়া নদীর জলের উৎস হয় বরফ গলা জল । এই সমস্ত নদীতে সারা বছর জল থাকে, তাই এদের নিত্যবহ নদী বলে । মালভূমি বা কম উঁচু অংশে তৈরি হওয়া নদীর জলের উৎস শুধুমাত্র বর্ষাকালের বৃষ্টির জল । এই সমস্ত নদীতে সারা বছর জল থাকে না, তাই এদের অনিত্যবহ নদী বলে ।

 নদী প্রধানত তিনটি কাজ করে – ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় । ক্ষয়জাত পদার্থ বহন করে, বাহিত পদার্থ সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন ঘটানো । নদীর তিনটি প্রবাহ দেখা যায় । উৎস থেকে সমভূমির আগে পর্যন্ত নদীর উচ্চ প্রবাহ দেখা যায় । এই প্রবাহে ভূমির ঢাল বেশি থাকার জন্য নদীর শক্তি বেশি হয় । এরফলে বড় বড় পাথর ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় । নদী নরম পদার্থকে বেশি ক্ষয় করে । ফলে শক্ত ও নরম পাথরের মাঝে ধাপ সৃষ্টি হয় । এভাবে নদী শক্ত পাথর থেকে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ে জল প্রপাত সৃষ্টি করে ।

 
 উৎসের পর মালভূমি বা সমভূমি এলাকা হল নদীর মধ্য প্রবাহ । এই প্রবাহে নদী প্রধানত বহন ও সঞ্চয় কাজ করে । ভূমির ঢাল কমে যাওয়া ও জলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে নদী বেশি আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয় । আবার কখনও নদী দ্বীপ তৈরি করে । এই প্রবাহে অশ্বখুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায় ।

 নদীর নিম্ন প্রবাহে নদীর গতি ও শক্তি অনেক কমে যায় । ফলে নদী আর ক্ষয় কাজ করতে পারেনা । সামান্য বহনের কাজ করলেও তখন মূল কাজ হল সঞ্চয় করা । নদীর মধ্যে পলি, বালি, কাঁকর ইত্যাদি জমে নদী অগভীর হয়ে যায় । এরফলে বর্ষার সময় বন্যা সৃষ্টি হয় । বেশির ভাগ নদীর এই সময় গতি ও শক্তি অনেক কমে যাওয়ার জন্য মোহনায় ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে । এই সময় নদী শাখানদী তৈরি করে ।

 আমাদের ভারত বা বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ । এখানে আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সাথে নদী বিভিন্ন ভাবে জড়িয়ে রয়েছে । মানুষের প্রাচীনতম সভ্যতা গুলি গড়ে উঠেছিল নদীর ধারে । বর্তমানে গঙ্গা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও পৃথিবীর অন্যান্য বহু নদীর উপত্যকায় অন্যতম জনবহুল বিভিন্ন শহর গুলি গড়ে উঠেছে । নদীর জল উদ্ভিদ, প্রাণীর বিকাশ, মাটির নীচে জলের ভারসাম্য রক্ষা করে । বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি বিভিন্ন কৃত্রিম বাঁধ বিভিন্ন কাজে লাগানো হচ্ছে । নদী আমাদের বিভিন্ন কৃষিজ ফসল চাষের জন্য জলের জোগান দেয় । জল বিদ্যুৎ উৎপাদন, নদী পথে পরিবহণ ইত্যাদি নদীর মাধ্যমে হয় । বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন কাজের ফলে নদী নষ্ট হচ্ছে, সেই অপকর্ম কাজ না করার জন্য আমাদের দায়িত্ববান ও সচেতন হতে হবে ।


 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । ভূগোল বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । আপনার ইমেল দিয়ে আমাদের ওয়েবসাইট টি সাবস্ক্রাইব করুন ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের জীবনী, শাসন, সাম্রাজ্য ব্যবস্থা কেমন ছিল ?.


  খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর শেষদিকে মৌর্যদের আবির্ভাবের সাথে ভারতের ইতিহাসে অন্ধকার পার হয়ে আলোয় উত্তীর্ণ হয় । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩২৪-৩০০) ছিলেন মৌর্য বংশের প্রথম সম্রাট । পূর্বে নন্দ রাজাগণ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন । সেই সময় সাম্রাজ্য সঠিক ভাবে চালানোর গুরু দায়িত্ব পালনের জন্য ভারতের ইতিহাসে একজন বীরপুরুষের প্রয়োজন ছিল । এই যুগ সন্ধিক্ষণে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে সিংহাসনে আরোহণ করে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সিংহাসনে আরোহণের সঠিক তারিখ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে ।

 জৈন পরিশিষ্ট পার্বণ অনুসারে – তিনি মহাবীরের সিদ্ধিলাভের ১৫৫ বছর পরে সিংহাসন আরোহণ করেন । অপর জৈন লেখক মেরু তুঙ্গের মতে – তিনি মহাবীরের সিদ্ধিলাভের ৬০ বছর পরে সিংহাসন আরোহণ করেন । এর থেকে বোঝা যায় যে এইসব উপাদান নির্ভরযোগ্য নয় । প্রাচীন গ্রীক ও ল্যাটিন লেখকদের থেকে জানা যায় যে – তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৩২৪ অব্দ নাগাদ সিংহাসন আরোহণ করেন ।
 চন্দ্রগুপ্তের পূর্বপুরুষ ও কৈশোর সম্বন্ধে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায় ।  চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের বংশ পরিচয় সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ আছে । মৌর্য শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে আবার সকলে একমত নয় । মনে করা হয় যে – এই মুরা ছিলেন কোন শূদ্র বংশীয় ও কোন নন্দ রাজার পত্নী । পুরাণে মুরা নামের কোন উল্লেখ নেই । মৌর্যদের সাথে তাঁদের কোন পারিবারিক সম্পর্কের কথা জানা যায় না । তাই এই মতামত সমর্থন যোগ্য নয় । ঐতিহাসিক জাস্টিন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে সামান্য বংশজাত বলেছেন । বৌদ্ধ লেখক গন মৌর্য শব্দটি একটি সামান্য গোষ্ঠীর নাম হিসাবে ব্যবহার করেছেন । মহাবংশটীকা অনুসারে, তাকে শাক্য ক্ষত্রিয় গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে । বৌদ্ধ গ্রন্থ মহাবংশে চন্দ্রগুপ্তকে মোরিয় নামক একটি ক্ষত্রিয় গোষ্ঠীর সন্তান বলে উল্লেখ করা হয়েছে । 
 চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সম্বন্ধে জানতে আমরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানের সাহায্য নিয়ে থাকি । সে গুলি হল – সাহিত্য উপাদান, অশোকের লেখ, মহীশূর লেখ, জুনাগড় স্তম্ভ লেখবিদেশি সাহিত্যিকদের মধ্যে – নিয়ারকাস, ওনেসিক্রিটাস ও এরিসটোবুলাসের লেখা থেকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সম্বন্ধে জানা যায় । মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থ থেকে আমারা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সম্বন্ধে অনেক তথ্য জানতে পারি । মেগাস্থিনিসের মূল গ্রন্থ ‘ইন্ডিকা’ পাওয়া যায়নি । এছাড়াও স্ট্রাবো, প্লিনি, ডায়ডোরাস, অ্যারিয়ান ও জাস্টিনের নাম উল্লেখযোগ্য । বিদেশি সাহিত্য ছাড়া ভারতীয় বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্য থেকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সম্বন্ধে অনেক তথ্য পাওয়া যায় ।
 বৌদ্ধ সাহিত্য অনুসারে - চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের পিতা একজন মোরিয় গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন । সীমান্ত সংঘর্ষে তাঁর মৃত্যু হয় । তখন তাঁর স্ত্রী অসহায় অবস্থায় পাটলিপুত্রে চলে আসেন । এখানে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের জন্ম হয় । চাণক্য বা কৌটিল্যের সাহায্যে তিনি তক্ষশীলায় গিয়ে শিক্ষালাভ করেন । দুইজনে মিলে নন্দ সম্রাট ধননন্দকে সিংহাসনচ্যুত করার পরিকল্পনা করেন । তিনি আলেকজান্ডারের কাছে নন্দ বংশ উচ্ছেদ করার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেন । কিন্তু, আলেকজান্ডার তাঁকে সাহায্য না করে চন্দ্রগুপ্তকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন । চন্দ্রগুপ্ত সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে বনাঞ্চল ও অন্যান্য স্থান থেকে লোকজন সংগ্রহ করে একটি সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী গঠন করেন । জৈন পরিশিষ্ট পার্বণ অনুসারে - চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য নন্দবংশ উচ্ছেদ করার জন্য তাঁর সৈন্যদল গঠন করেছিলেন ।
 চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কিভাবে নন্দবংশ উচ্ছেদ করেছিলেন সমসাময়িক বিবরণ থেকে তাঁর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না । পাটলিপুত্র নগরী অবরোধ করে ৩২১ খ্রিটপূর্বাব্দে মাত্র কুড়ি বছর বয়সে নন্দ সাম্রাজ্য অধিকার করেন বলে জানা যায় । উত্তর-পশ্চিম ভারতে আলেকজান্ডারের সেনাপতিদের পরাজিত করে পাঞ্জাব ও সিন্ধুর স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করা চন্দ্রগুপ্তের দ্বিতীয় সাফল্য । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজত্বকালের শেষ দিকে সেলুকাসের সাথে তাঁর যুদ্ধ হয় । সেলুকাস প্রথমে আলেকজান্ডারে সেনাপতি ছিলেন । উভয়ের মধ্যে সন্ধি ও বিবাহ সম্পর্কিত চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধ সমাপ্ত হয় । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সেলুকাসকে ৫০০ হাতি উপহার দেন । সেলুকাস চন্দ্রগুপ্তকে হেরাত, কান্দাহার, কাবুল ও দক্ষিণ বেলুচিস্তান হস্তান্তরিত করেন । সেলুকাস মেগাস্থিনিস কে পাটলিপুত্রে দূত হিসাবে পাঠান । যুদ্ধের শেষে বিবাহ সম্পর্কিত চুক্তি ও অঞ্চল গুলি হস্তান্তর সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে । চন্দ্রগুপ্ত ও সেলুকাসের মধ্যে প্রকৃত বিবাহ চুক্তি হয়েছিল কিনা তা সঠিক ভাবে বলা যায় না ।
 চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য জৈন ঐতিহ্য অনুসারে শেষ জীবনে সংসার ত্যাগ করেন । জৈন আচার্য্য ভদ্রবাহুর নিকট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করেন, ভদ্র বাহুর নেতৃত্বে তিনি জৈন অভিপ্রায়ে অংশ নিয়ে মহীশূরের শ্রাবণ জেলায় আসেন । সে সময়ের প্রচলিত জৈন রীতি অনুসারে অনশনে তিনি প্রাণ ত্যাগ (খ্রিস্টপূর্ব-৩০০) করেন । মেগাস্থিনিসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে – তিনি গোঁড়া ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন । অন্যান্য সম্রাটদের মত তিনি পূজা বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন ।
 চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসন ব্যবস্থা জানার জন্য আমরা প্রধানত মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’ ও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র এর উপর নির্ভর করি । এছাড়াও অশোকের লেখ, জুনাগড় শিলালেখ, মুদ্রারাক্ষস, বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থের গুরুত্ব রয়েছে । পাটলিপুত্র নগরীর রাজপ্রাসাদ গ্রীকদের প্রশংসা অর্জন করেছিল । এই প্রাসাদটি ছিল কাঠ দিয়ে তৈরি । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এই প্রাসাদের অভ্যন্তরে রণরঙ্গিণী নারী দেহরক্ষী পরিবৃত হয়ে বিলাসী জীবন যাপন করতেন । মেগাস্থিনিস গঙ্গা ও শোন নদীর সংগম স্থলে অবস্থিত পাটলিপুত্রকে ভারতের বৃহত্তম নগর বলে উল্লেখ করেছেন । সমুদ্র বা নদীর তীরে অবস্থিত শহর গুলি কাঠের তৈরি, ও দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত শহর গুলি ইটের তৈরি ছিল ।
 চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য প্রাদেশিক শাসনের উপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করার বিশেষ ব্যবস্থা করেন । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময় প্রদেশগুলির সংখ্যা কত ছিল, সঠিক জানা যায় না । অশোকের সময় মৌর্য সাম্রাজ্য - উত্তরাপথ, অবন্তীপথ, দক্ষিণাপথ, কলিঙ্গ ও প্রাচ্য এই পাঁচটি প্রদেশে বিভক্ত ছিল । শাসন ক্ষমতায় তিনি সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত ছিলেন । শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করার জন্য রাজার একটি ছোট উপদেষ্টা ছিল । এরা রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজাকে সাহায্য করতেন । তাঁরা প্রাদেশিক শাসন কর্তা, সেনাপতি, বিচারক, কোষাধ্যক্ষ, নৌবাহিনীর অধিনায়ক ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ রাজ কর্মচারীদের নির্বাচন করতেন । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময় কৃষি ও ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণে ছিল । মেগাস্থিনিস ও কৌটিল্যের মতে – সামান্য অপরাধে অনেক জরিমানা আদায় করা হত । শাস্তি হিসাবে অঙ্গছেদ ও কারাবাসের ব্যবস্থা ছিল । ব্রাহ্মণদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত না । কিন্তু, রাজদ্রোহের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত ।
 বিচার ব্যবস্থার শীর্ষে রাজা নিজে থাকতেন । রাজকীয় বিচারালয় ছিল সবার উপরে । সেখানে রাজা নিজে বিচার করতেন । এছাড়াও শহর ও গ্রামাঞ্চলে দুই ধরনের বিচারালয় ছিল । শহরের বিচারালয়ে মহামাত্ররা বিচার করতেন । গ্রামাঞ্চলে বিচার করতেন রজুকগন । ‘গ্রামিক’ গ্রামের বৃদ্ধদের সাহায্যে ছোট ছোট মোকদ্দমার বিচার করতেন । শাসন ব্যবস্থায় সর্বনিম্ন ও ক্ষুদ্রতম একক ছিল গ্রাম । গ্রামবাসীরা নতুন দিঘী, নষ্ট পুকুর বা দিঘী পুনরুদ্ধার করলে তাঁদের কর মকুব করা হত । গ্রামের উদ্বৃত্ত জমি ‘গ্রামভৃতক’ দের সাহায্যে চাষ করা হত । ডঃ রায়চৌধুরির মতে – এরা ছিলেন গ্রামে নিযুক্ত সরকারের বেতনভুক কর্মচারী । আবার অনেকে এদেরকে গ্রামের ক্রীতদাস বলে থাকেন।

 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । ইতিহাস বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে ইতিহাস লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর বাংলা জীবনী .


  নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী   হলেন ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী । তিনি ২৬শে মে ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন  এর আগে তিনি গুজরাটের চতুর্দশ মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন নরেন্দ্র মোদী ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই সেপ্টেম্বর বম্বে প্রেসিডেন্সির  (বর্তমান গুজরাট রাজ্যের) মহেসানা জেলার বড়নগর নামক স্থানে এক নিম্নবর্গের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম দামোদারদাস মূলচাঁদ মোদী ও মায়ের নাম হীরাবেন মোদী । তিনি তার পিতামাতার চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন । যে পরিবারের একটি টাকা বাড়তি খরচ করার সাধ্য ছিলনা । বড়নগর রেলস্টেশনে তিনি তার পিতাকে চা বিক্রি করতে সহায়তা করতেন । তিনি এই শহরেই একজন সাধারণ মানের ছাত্র হিসেবে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করেন । তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূর শিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন ।

মোদীর পিতা মাতা কৈশোর অবস্থায় তার বিবাহ স্থির করেন । তেরো বছর বয়সে যশোদাবেন চিমনলাল নামক এক মেয়ের সঙ্গে তার বিবাহ স্থির হয় এবং আঠারো বছর বয়সে তাদের মধ্য বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় । সতেরো বছর বয়সে তিনি ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিনি রাজকোট শহরে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন ও তারপর বেলুড় মঠ যাত্রা করেন । এরপর তিনি আলমোড়া শহরে স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে যোগ দেন দুই বছর পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন । আমেদাবাদ শহরে নিজের কাকার চায়ের দোকানে যোগ দেন । এরপর তিনি গুজরাট রাজ্য মার্গ বাহন ব্যবহার নিগমের ক্যান্টিনের কর্মচারী হিসেবে যোগ ।

  ছোট বেলায় স্বামী বিবেকানন্দের জীবন তাকে বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত করে । কম বয়স থেকেই মানুষ ও জাতির সেবায় কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে । আট বছর বয়সে মোদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের স্থানীয় শাখায়  সঙ্ঘের বাল স্বয়ং সেবক হিসেবে দলে যোগ দেন । তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের একজন পূর্ণ সময়ের প্রচারক হিসেবে যোগ দেন । ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধ শেষ হলে মোদী আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘে যোগ দেন । নাগপুর শহরে প্রশিক্ষণের পর তাকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
 ১৯৭৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক ঘোষিত জরুরী কালীন অবস্থায় বিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হলে তিনি জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে জরুরী কালীন অবস্থা আন্দোলনে সামিল হন । ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ মোদীকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করায় । ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির গুজরাট শাখার কার্যনির্বাহী সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন । ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে মোদী ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন । জাতীয় স্তরে কাজ করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেন |
 ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে কেশুভাই প্যাটেলের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ভূজ ভূমিকম্পে প্রশাসনিক দুর্বলতার অভিযোগ ওঠে ।  ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই অক্টোবর মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । রেকর্ড সংখ্যক চারবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জনসেবার কাজ করে গিয়েছেন | মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সরকারীকরণ ও বিশ্বায়ন বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে বেসরকারিকরণের নীতি গ্রহণ করেন ।
 ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে ফেব্রুয়ারি গোধরা শহরের নিকটে বহু হিন্দু তীর্থযাত্রী ও শতশত যাত্রীসহ একটি ট্রেন আগুনে পুড়ে গেলে প্রায় ৬০ জন্মের মৃত্যু ঘটে । গুজরাট জুড়ে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়ে যায় । মোদীর নির্দেশে দাঙ্গায় উস্কানিমূলক পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করা হয় । জাকিয়া জাফরি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মামলা করলে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় বিশেষ তদন্তকারী দলকে এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় । দাঙ্গার কারণে রাজ্যের ভেতর ও বাইরে থেকে মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য চাপ বাড়তে থাকে । অর্থনৈতিক দিকে মোদীর নজর থাকলেও বিভিন্ন সময়ে তাকে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য সমালোচিত হতে হয় ।
 গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি গুজরাটকে শিল্পে বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত করেন । তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে মোদী ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণের ব্যাপারে নজর দে ন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ১১৩,৭৩৮টি ছোট বাঁধ নির্মাণ করা হয়  । এই সময়কালে মোদী সরকার গুজরাটের সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে সক্ষম হন । মোদীর তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রীত্বের কালে গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স টেক-সিটি প্রকল্পে অগ্রগতি ঘটে ।
 ২০১৪ ও ২০১৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে শ্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ২১শে মে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন । ২৬শে মে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেন । তিনিই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যার জন্ম ভারতের স্বাধীনতালাভের পর ।
 ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি সার্বিক ও সর্বজনের উন্নয়নের অভিযাত্রা শুরু করেছেন । ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছ ভারত মিশননামে পরিচ্ছন্নতার জন্য দেশজুড়ে এক গণ আন্দোলন শুরু করেন ।  ২০১৫ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের উদ্বোধন করেছেন যার মূল লক্ষ্য এমন ডিজিটাল ইন্ডিয়া সৃষ্টি করা । ভারত সরকার দেশের জনগণের জন্য তিনটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প চালু করেছে এবং বয়স্কদের পেনসন ও গরীবদের বীমার আওতায় নিয়ে আসার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে । বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচি ও পরিষেবাগুলির সুবিধা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী দ্রুততার ও দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছেন অগ্রণী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে প্রকাশ - প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত রেকর্ড গতিতে দারিদ্র্য মুক্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে ।
 সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শ্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রসংঘ, ব্রিকস, সার্ক, জি-২০ প্রভৃতি শীর্ষ বৈঠকে-এ অংশ নিয়েছেন, যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নানা ক্ষেত্রের বিবিধ সমস্যা নিয়ে ভারতের মধ্যস্থতা, ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ ভাবে সমাদৃত হয়েছে । রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর ভাষণ সারা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে । বছরের একটা দিনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে পালন করার জন্য শ্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে রাষ্ট্রসংঘ ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবসহিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাবে সম্মতি দেয় |
 রাজনীতির বাইরে নরেন্দ্র শ্রী মোদি নানারকম লেখালেখির কাজও উপভোগ করেন । তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, এরমধ্যে আছে কবিতার বই । কবিতা রচনার পাশাপাশি, বহু গ্রন্থ তিনি লিখেছেন । ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শান্তি ও উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য মর্যাদাপূর্ণ সিওল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন । এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মোদী একাধিক সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছেন ।
  আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জীবনী ও সংবাদ বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জীবনী ও সময় লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।