শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৯

মানুষের জীবনে জলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গুলি কি কি ?


  জলের অপর নাম জীবন । জল না খেয়ে আপনি জীবনে বাঁচতে পারবেন না কিন্তু, পৃথিবীতে কিভাবে জলের সৃষ্টি হল । পৃথিবী সৃষ্টির সময় ছিল জ্বলন্ত আগুনের গোলা বা গ্যাসীয় পিণ্ড । বহু কটি বছর পর পৃথিবীর বাইরের অংশ ঠাণ্ডা হয়ে আসে । তখন আকাশের রাশি রাশি জলীয় বাষ্প ঠাণ্ডা হয়ে পৃথিবীতে বৃষ্টির আকারে নেমে আসে । হাজার হাজার বছর প্রবল বৃষ্টির জলে পৃথিবীর নিচু জায়গা ভরাট হয়ে সাগর, মহাসাগর, ইত্যাদির সৃষ্টি হয় । জলকে আমারা সাধারণ ভাবে তরল দেখলেও একে কঠিন(বরফ), গ্যাসীয়(জলীয়বাষ্প) এই তিন ভাগে থাকে ।


  পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ জল । পৃথিবীর মোট জলের ৯৭ ভাগ আছে সমুদ্রে । বাকি ৩ ভাগ জল আছে নদী, হ্রদ, হিমবাহ, মাটির নিচে । পৃথিবী ছাড়া আর কোন গ্রহে জলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না  অনেক জল থাকার জন্য পৃথিবীকে  মহাকাশ থেকে নীল দেখায় । সাগর, মহাসাগর গুলিতে যে জল থাকে তা নোনা হয় । যে ৯৭ ভাগ জল সাগর, মহাসাগরে থাকে তা বাদে ৩ ভাগ মিষ্টি জল পাওয়া যায় । এই মিষ্টি জলের ২/৩ ভাগ জল পর্বতের বরফ, হিমবাহ, মেরু অঞ্চলে সঞ্চিত আছে । বাকি জল মাটির নীচে ও অন্য স্থানে সঞ্চিত আছে । পৃথিবীর ৭৫ ভাগ জলে ঢাকা থাকলেও পান করা জলের পরিমাণ মাত্র ০.৩৭ ভাগ । উত্তর গোলার্ধে জল ভাগ ও স্থল ভাগ সমান হলেও দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের পরিমাণ ১৫ শতাংশ বেশি ।


  দিনের বেলে সূর্যের প্রচণ্ড তাপে নদী, সাগর, জলাশয় থেকে জল জলীয় বাষ্প হয়ে বাতাসে মেশে । জলীয় বাষ্প হালকা হওয়ার জন্য বাতাসের ওপরে উঠে যায় । ওপরে ঠাণ্ডা বায়ুর সংস্পর্শে এসে জলীয় বাষ্প ঠাণ্ডা হয়ে জলকণায় পরিণত হয় । পরে বাতাসে থাকা ধূলিকণাকে আশ্রয় করে মেঘ হয়ে বাতাসের সাহায্যে ভেসে বেড়ায় । ছোটো ছোটো জলকণা জুড়ে বড়ো জলকণায় পরিণত হয় । বাতাসের থেকে বেশি ভারি হয়ে আর ভেসে থাকতে না পেরে পৃথিবীর টানে বৃষ্টি আকারে পৃথিবীতে নেমে আসে । যদি আরও ওপরে উঠে যায় তখন জলীয় বাষ্প ঠাণ্ডা হয়ে বরফ কণায় পরিণত হয় । তুষারের আকারে পৃথিবীতে নেমে আসে, তাকে বলা হয় শিলা বৃষ্টি বা তুষার বৃষ্টি ।

 পৃথিবীতে জল ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয় । নদী, সমুদ্র, জলাশয়ে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বাস করে । সমুদ্র পৃথিবীর সব মহাদেশকে জলপথের দ্বারা যুক্ত করেছে । এরফলরে পৃথিবীর সমস্ত জায়গার জল স্তর সমান হয় । এজন্য গভীরতা ও উচ্চতা মাপার সময় গড় সমুদ্রতলের সাপেক্ষে মাপা হয় । আমাদের পৃথিবীতে পাঁচটি মহাসাগর আছে । প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো মহাসাগর । পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক এর পরিসীমা । অ্যাটলান্টিক মহাসাগর দ্বিতীয় ও ভারত মহাসাগর তৃতীয় । সুমেরু মহাসাগর হল ক্ষুদ্রতম মহাসাগর ।


  আমারা প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজে জল ব্যবহার করি । প্রধান কাজ হল পানীয় হিসাবে গ্রহণ করা । তাছাড়া রান্না করা, স্নান করা, জামাকাপড়, বাসনপত্র ধোয়া, আগুন নেভানো ইত্যাদি নানা কাজে । জল যে কোনও বস্তুকে দ্রবীভূত করতে পারে । এজন্য জলকে সর্বজনীন দ্রাবক বলা হয় । জলের নিজস্ব কোন বর্ণ নেই । বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে সাহায্য করে । খাদ্য গ্রহণের পর খাদ্য হজম করতে, খাদ্যের যে অংশ হজম হয়না তা মলরুপে শরীর থেকে বেরতে সাহায্য করে । বিভিন্ন বস্তু দেহের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয় । শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে জল বেরিয়ে গিয়ে দেহ ঠাণ্ডা হয় । উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে জলের প্রয়োজন হয় । গাছ মূলের দ্বারা জল শোষণ করে, সেই জল গাছের পাতায় যায় । পাতায় খাবার তৈরির সময় জল ভেঙ্গে অক্সিজেন গ্যাস পাওয়া যায় । সেই অক্সিজেন গ্যাস আমরা ব্যবহার করি ।

  বিভিন্ন বস্তুতে জলের পরিমাণ বিভিন্ন রকম হয় । মানুষের শরীরে থাকে ৭০ ভাগ জল, জেলিফিশে থাকে ৯৫ ভাগ, ডিমে থাকে ৭৪ ভাগ, শশাতে থাকে ৯৫ ভাগ, কাঠে জল থাকে ১০ ভাগ, ভাত ও তরকারিতে জল থাকে ৪০-৬০ ভাগ । একজন সুস্থ ব্যাক্তি যদি প্রতিদিন তাঁর দেহের ওজনে কেজি প্রতি ৫০ মিলিলিটার জল খান তাহলে তাঁর দেহে জলের চাহিদা পূরণ হবে । এর মানে হল ১০ কেজি ওজন হলে জল খাবেন ৫০০ মিলিলিটার, ২০ কেজি হলে ১ লিটার, ৩০ কেজি হলে ১.৫ লিটার, ৪০ কেজি হলে ২ লিটার, ৫০ কেজি হলে ২.৫ লিটার, ৬০ কেজি হলে ৩ লিটার । আমাদের দেহ থেকে প্রতিদিন কিছু পরিমাণ জল বেরিয়ে যায় । চোখের জল ৫০ মিলি, মলের মাধ্যমে ২০০ মিলি, মূত্রের দ্বারা ১.৫-২ লিটার ।


  বর্তমান সময়ে প্রধান সমস্যা হল জল দূষণ ও জলের অপচয় । আমরা প্রতিদিন নানাভাবে জল দূষণ ও জলের অপচয় করে চলেছি । নানারকম আবর্জনা, ময়লা ইত্যাদি জলে ফেলে জল দূষণ করছি । চাষের জমিতে রাসায়নিক দেওয়ার ফলে জল দুষিত হচ্ছে । বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র, কল কারখানার জল নদীতে মিশে নদীর জল দুষিত হয় । তেলবাহী জাহাজ সমুদ্রে বা নদীতে ডুবেগিয়ে সেই তেল সমুদ্রে বা নদীতে দূষণ ঘটায় । তার থেকে বড়ো কথা হল আমারা জলের অপচয় অনেক বেশি করি । আজও পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত । আজ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার মত ভারতেও জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে । পৃথিবীকে বাঁচাতে তারথেকে বলা ভাল নিজেকে বাঁচাতে আমাদের জল দূষণ ও জলের অপচয় এখুনি বন্ধ করা দরকার । সবার মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা একান্ত জরুরি । তাই আসুন আমরা সবাই মিলে জল দূষণ ও জলের অপচয় বন্ধ করি  

   আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জানা অজানা ও বিজ্ঞান বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা ও বিজ্ঞান লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ 


অর্ডার করতে নীচের লিঙ্কে প্লিজ ক্লিক করুন।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷