মানুষের জীবনে জলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গুলি কি কি ?
জলের
অপর নাম জীবন । জল না খেয়ে আপনি জীবনে বাঁচতে পারবেন না । কিন্তু, পৃথিবীতে কিভাবে জলের
সৃষ্টি হল । পৃথিবী সৃষ্টির সময় ছিল জ্বলন্ত আগুনের গোলা বা গ্যাসীয় পিণ্ড । বহু
কটি বছর পর পৃথিবীর বাইরের অংশ ঠাণ্ডা হয়ে আসে । তখন আকাশের রাশি রাশি জলীয় বাষ্প
ঠাণ্ডা হয়ে পৃথিবীতে বৃষ্টির আকারে নেমে আসে । হাজার হাজার বছর প্রবল বৃষ্টির জলে
পৃথিবীর নিচু জায়গা ভরাট হয়ে সাগর, মহাসাগর, ইত্যাদির সৃষ্টি হয় । জলকে আমারা
সাধারণ ভাবে তরল দেখলেও একে কঠিন(বরফ), গ্যাসীয়(জলীয়বাষ্প) এই তিন ভাগে থাকে ।
পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ জল । পৃথিবীর মোট জলের ৯৭ ভাগ আছে সমুদ্রে । বাকি ৩ ভাগ জল আছে নদী, হ্রদ, হিমবাহ, মাটির নিচে । পৃথিবী ছাড়া আর কোন গ্রহে জলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না । অনেক জল থাকার জন্য পৃথিবীকে মহাকাশ থেকে নীল দেখায় । সাগর, মহাসাগর গুলিতে যে জল থাকে তা নোনা হয় । যে ৯৭ ভাগ জল সাগর, মহাসাগরে থাকে তা বাদে ৩ ভাগ মিষ্টি জল পাওয়া যায় । এই মিষ্টি জলের ২/৩ ভাগ জল পর্বতের বরফ, হিমবাহ, মেরু অঞ্চলে সঞ্চিত আছে । বাকি জল মাটির নীচে ও অন্য স্থানে সঞ্চিত আছে । পৃথিবীর ৭৫ ভাগ জলে ঢাকা থাকলেও পান করা জলের পরিমাণ মাত্র ০.৩৭ ভাগ । উত্তর গোলার্ধে জল ভাগ ও স্থল ভাগ সমান হলেও দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের পরিমাণ ১৫ শতাংশ বেশি ।
দিনের
বেলে সূর্যের প্রচণ্ড তাপে নদী, সাগর, জলাশয়
থেকে জল জলীয় বাষ্প হয়ে বাতাসে মেশে । জলীয় বাষ্প হালকা হওয়ার জন্য বাতাসের ওপরে
উঠে যায় । ওপরে ঠাণ্ডা বায়ুর সংস্পর্শে এসে জলীয় বাষ্প ঠাণ্ডা হয়ে জলকণায় পরিণত হয়
। পরে বাতাসে থাকা ধূলিকণাকে আশ্রয় করে মেঘ হয়ে বাতাসের সাহায্যে ভেসে বেড়ায় ।
ছোটো ছোটো জলকণা জুড়ে বড়ো জলকণায় পরিণত হয় । বাতাসের থেকে বেশি ভারি হয়ে আর ভেসে
থাকতে না পেরে পৃথিবীর টানে বৃষ্টি আকারে পৃথিবীতে নেমে আসে । যদি আরও ওপরে উঠে
যায় তখন জলীয় বাষ্প ঠাণ্ডা হয়ে বরফ কণায় পরিণত হয় । তুষারের আকারে পৃথিবীতে নেমে
আসে, তাকে বলা হয় শিলা বৃষ্টি বা তুষার বৃষ্টি ।
পৃথিবীতে
জল ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয় । নদী, সমুদ্র, জলাশয়ে
মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বাস করে । সমুদ্র পৃথিবীর সব মহাদেশকে জলপথের দ্বারা
যুক্ত করেছে । এরফলরে পৃথিবীর সমস্ত জায়গার জল স্তর সমান হয় । এজন্য গভীরতা ও
উচ্চতা মাপার সময় গড় সমুদ্রতলের সাপেক্ষে মাপা হয় । আমাদের পৃথিবীতে পাঁচটি
মহাসাগর আছে । প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো মহাসাগর । পৃথিবীর প্রায়
অর্ধেক এর পরিসীমা । অ্যাটলান্টিক মহাসাগর দ্বিতীয় ও ভারত মহাসাগর তৃতীয় । সুমেরু
মহাসাগর হল ক্ষুদ্রতম মহাসাগর ।
আমারা
প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজে জল ব্যবহার করি । প্রধান কাজ হল পানীয় হিসাবে গ্রহণ করা ।
তাছাড়া রান্না করা, স্নান করা, জামাকাপড়, বাসনপত্র ধোয়া, আগুন নেভানো ইত্যাদি
নানা কাজে । জল যে কোনও বস্তুকে দ্রবীভূত করতে পারে । এজন্য জলকে সর্বজনীন দ্রাবক
বলা হয় । জলের নিজস্ব কোন বর্ণ নেই । বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে
সাহায্য করে । খাদ্য গ্রহণের পর খাদ্য হজম করতে, খাদ্যের
যে অংশ হজম হয়না তা মলরুপে শরীর থেকে বেরতে সাহায্য করে । বিভিন্ন বস্তু দেহের এক
প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয় । শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে জল বেরিয়ে
গিয়ে দেহ ঠাণ্ডা হয় । উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে জলের প্রয়োজন হয় । গাছ মূলের দ্বারা
জল শোষণ করে, সেই জল গাছের পাতায় যায় । পাতায় খাবার তৈরির সময় জল ভেঙ্গে অক্সিজেন
গ্যাস পাওয়া যায় । সেই অক্সিজেন গ্যাস আমরা ব্যবহার করি ।
বিভিন্ন
বস্তুতে জলের পরিমাণ বিভিন্ন রকম হয় । মানুষের শরীরে থাকে ৭০ ভাগ জল, জেলিফিশে
থাকে ৯৫ ভাগ, ডিমে থাকে ৭৪ ভাগ, শশাতে থাকে ৯৫ ভাগ, কাঠে
জল থাকে ১০ ভাগ, ভাত ও তরকারিতে জল থাকে ৪০-৬০ ভাগ । একজন সুস্থ ব্যাক্তি যদি
প্রতিদিন তাঁর দেহের ওজনে কেজি প্রতি ৫০ মিলিলিটার জল খান তাহলে তাঁর দেহে জলের
চাহিদা পূরণ হবে । এর মানে হল ১০ কেজি ওজন হলে জল খাবেন ৫০০ মিলিলিটার, ২০
কেজি হলে ১ লিটার, ৩০ কেজি হলে ১.৫ লিটার, ৪০
কেজি হলে ২ লিটার, ৫০ কেজি হলে ২.৫ লিটার, ৬০
কেজি হলে ৩ লিটার । আমাদের দেহ থেকে প্রতিদিন কিছু পরিমাণ জল বেরিয়ে যায় । চোখের
জল ৫০ মিলি, মলের মাধ্যমে ২০০ মিলি, মূত্রের
দ্বারা ১.৫-২ লিটার ।
বর্তমান
সময়ে প্রধান সমস্যা হল জল দূষণ ও জলের অপচয় । আমরা প্রতিদিন নানাভাবে জল দূষণ ও
জলের অপচয় করে চলেছি । নানারকম আবর্জনা, ময়লা
ইত্যাদি জলে ফেলে জল দূষণ করছি । চাষের জমিতে রাসায়নিক দেওয়ার ফলে জল দুষিত হচ্ছে
। বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র, কল কারখানার জল নদীতে মিশে নদীর জল দুষিত হয় । তেলবাহী জাহাজ সমুদ্রে
বা নদীতে ডুবেগিয়ে সেই তেল সমুদ্রে বা নদীতে দূষণ ঘটায় । তার থেকে বড়ো কথা হল
আমারা জলের অপচয় অনেক বেশি করি । আজও পৃথিবীর প্রায় ১০০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানীয়
জল থেকে বঞ্চিত । আজ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার মত ভারতেও জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে ।
পৃথিবীকে বাঁচাতে তারথেকে বলা ভাল নিজেকে বাঁচাতে আমাদের জল দূষণ ও জলের অপচয়
এখুনি বন্ধ করা দরকার । সবার মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা একান্ত জরুরি । তাই আসুন আমরা
সবাই মিলে জল দূষণ ও জলের অপচয় বন্ধ করি ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে
পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জানা অজানা ও বিজ্ঞান বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে
নিচে জানা অজানা ও বিজ্ঞান লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
অর্ডার করতে নীচের লিঙ্কে প্লিজ ক্লিক করুন।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷