রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯

বায়ুমণ্ডল কাকে বলে, বায়ুদূষণের কারণ ও ফলাফল কি ?.


   আমাদের সবার মনে প্রশ্ন – বায়ুমণ্ডল কি ? বায়ুমণ্ডল কি জানার আগে আসুন আপনি জেনে নিন বায়ু আসলে কি ? আজকের দিনে আমরা যে পৃথিবী দেখি বহু কোটি বছর আগে তার চেহারা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম । পৃথিবী সৃষ্টির সময় ছিল একটি প্রকাণ্ড উত্তপ্ত আগুনের পিণ্ড । ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করার ফলে ঠাণ্ডা হতে শুরু করে । এই সময় কিছু গ্যাস পৃথিবীর আকর্ষণে পৃথিবীর চারিদিকে ভাসতে থাকে । এই গ্যাস গুলি নিয়ে পৃথিবীর বায়ু মণ্ডল তৈরি হয় । পৃথিবীর গায়ে চাদরের মতো বায়ুস্তর লেগে আছে । একে বলা হয় বায়ু মণ্ডল ।
  
  ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ কিমি পর্যন্ত বাতাসের অস্তিত্ব থাকলেও ৯৭ ভাগ বাতাস আছে ২৭ কিমির মধ্যে । বায়ুমণ্ডলে যে গ্যাস গুলি আছে তার মধ্যে নাইট্রোজেন (৭৮%), অক্সিজেন (২১%), কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, হিলিয়াম, আর্গন, হাইড্রোজেন, ওজোন, নিয়ন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি ।


 পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে মোট পাঁচ টি ভাগে ভাগ করা হয় – ১) ট্রোপোস্ফিয়ার, ২) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, ৩) মেসস্ফিয়ার, ৪) থার্মোস্ফিয়ার, ৫) এক্সোফিয়ার । ট্রোপোস্ফিয়ার হল ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে ১৬ কিমি পর্যন্ত বায়ুস্তর । এখান থেকে যত ওপরে আমরা উঠবো লক্ষ করবো তাপমাত্রা তত কমে যাচ্ছে । এই স্তরটি মাটির সবথেকে কাছে অবস্থিত । মাটির কাছে থাকার জন্য এখানে ধুলো, ঝড়, মেঘ, বৃষ্টি এসব দেখা যায় ।

 ট্রোপোস্ফিয়ার উপরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫০ কিমি পর্যন্ত বায়ুর যে স্তর তার নাম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এখানে উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রাও বেড়ে যায় । বাতাসের পরিমাণ কম থাকে, ধুলকনা, জলকণা থাকেনা । এরফলে এখানে মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি হয়না । এখানে ২০-২৫ কিমি উচ্চতায় আছে ওজোন গ্যাসের স্তর । এই স্তর থাকার জন্য সূর্য থেকে আসা অতি বেগুনি রশ্মি পৃথিবীর কিছু ক্ষতি করতে পারেনা । এই স্তর দিয়ে জেট প্লেন চলাচল করে ।

  স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার উপরে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুর যে স্তর তার নাম মেসস্ফিয়ার । এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা কমে যায় ।

 
 মেসস্ফিয়ারের উপরের থেকে প্রায় ৩০০ কিমি পর্যন্ত বায়ুর যে বিস্তৃত স্তর রয়েছে তাকে বলে থার্মোস্ফিয়ার । এই স্তরের আরেক নাম আয়নোস্ফিয়ার । এখানে বাতাস নেই বলে আকাশ কালো দেখায় । অতি বেগুনি রশ্মির জন্য এখানে উষ্ণতা প্রায় ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে যায় । এই স্তরে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে । থার্মোস্ফিয়ার পর সীমাহীন মহাকাশের নাম হল এক্সোফিয়ার । কৃত্রিম উপগ্রহ, মহাকাশ স্টেশন এই স্তরে স্থাপন করা হয় ।

  আমরা আকাশকে সাধারণভাবে নীল দেখি, এর প্রধান কারণ হল বায়ুমণ্ডল । আকাশ হয় কালো রঙের । পৃথিবীকে ঘিরে যে বায়ুর স্তর আছে সেখানে প্রচুর ধুলকনা, জলের কণা ভেসে বেড়ায় । দিনের বেলে সূর্যের আলোর সাহায্যে এগুলো ধাক্কা লেগে সূর্যের আলো সাত রঙে ভেঙ্গে যায় । এর মধ্যে থেকে নীল রং আকাশে বেশি বিচ্ছুরিত হয় । তাই আমরা আকাশকে নীল দেখি । সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আকাশকে লালচে দেখায় তার জন্য বায়ুমণ্ডলের গুরত্ব রয়েছে । সূর্যের আলো সাতটি রঙে ভেঙ্গে তার মধ্যে লাল ও কমলা রশ্মির বিক্ষেপ কম হয় । অন্যান্য রশ্মি বিক্ষিপ্ত হয়ে নানা দিকে ছড়িয়ে পড়ে । লাল ও কমলা রং আমাদের চোখে এসে পড়ে । এরফলে আমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় আকাশকে লাল দেখি ।


 আমাদের মানব জীবনে বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব প্রচুর । আমাদের জীবন ধারণের জন্য অক্সিজেন তা আমরা বায়ুমণ্ডল থেকে নিয়ে বেঁচে আছি । পৃথিবীর চারিদিকে যদি বায়ুমণ্ডল না থাকত তাহলে, পৃথিবী অন্য গ্রহদের মত প্রাণহীন হয়ে যেত । বাতাস ছাড়া উদ্ভিদ প্রাণী কেউ বাঁচতে পারবেনা । দিনের বেলায় সূর্যের তাপে পৃথিবী গরম হয়, আবার রাতে ওই তাপ ধীরে ধীরে বেরিয়ে যায় । বায়ুমণ্ডল না থাকলে সূর্যোদয়ের পর পৃথিবী হঠাৎ করে প্রচুর গরম আবার সূর্যাস্তের পর হঠাৎ করে ঠাণ্ডা হয়ে যেত । বায়ুমণ্ডল পৃথিবীতে মানুষ অন্যান্য জীবের জীবন ধারণের জন্য উপযোগী তাপমাত্রা বজায় রাখে । বায়ুমণ্ডল আছে বলে এরোপ্লেন, বেলুন, পাখি ইত্যাদি আকাশে উড়তে পারে । বায়ুমণ্ডলের জন্য বৃষ্টিপাত হয় । প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার কোটি ছোটো ছোটো উল্কা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে । সেই উল্কাগুলি বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, পৃথিবী এরফলে সুরক্ষিত থাকে ।

  আমরা মানুষরা নানা ভাবে বায়ুদূষণ করে চলেছি । নানা রকম দূষিত পদার্থ ও সংক্রামক পদার্থ বায়ুতে প্রতিদিন মিশছে, এরফলে বায়ুর উপাদান গুলির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে । জীব জগৎ ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে । পৃথিবীতে প্রতিদিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়িঘর, চাষের জমি তৈরির জন্য বনজঙ্গল, গাছপালা কাটা হচ্ছে । এরফলে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে । চাষের জমিতে দেওয়া নানা কীটনাশক, রাসায়নিক সার, খড়কুটো, আবর্জনা, ছাই বাতাসে মিশে বাতাসকে দূষিত করছে । বর্তমানে গাড়ির সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে । বাস, লরি, প্রাইভেট গাড়ি, জাহাজ, এরোপ্লেন ইত্যাদির জ্বালানি পুড়ে বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড, সিসা ইত্যাদি মিশছে । কলকারখানা থেকে কার্বনের গুঁড়ো, ধোঁয়া, ধুলো, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সারফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি ক্ষতিকর গ্যাস বাতাসে মিশছে । পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রে বিস্ফোরণের ফলে বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ দূষণ ঘটায় ।

  বায়ুদূষণের ফলে আজ আমাদের বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে । সূর্যের তাপে পৃথিবী যে উত্তাপ পায় তা বিভিন্ন গ্যাসের জন্য যেমন – মিথেন, কার্বন  ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস শুষে নেয়, ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে । যে ওজোন স্তর আমাদের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে তা আজ বিপদের মুখে । ফ্রিজ, এ.সি রং, নানা রকম সুগন্ধি স্প্রে থেকে নির্গত ক্লোরোফ্লুরো কার্বন ওজোন স্তরের ক্ষতি করছে । এছাড়া জেট বিমান, পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইড ওজোন স্তরের ক্ষতির কারণ । তারফলে আমদের ত্বকের ক্যান্সার, চোখের সমস্যা, শস্য উৎপাদন কম হওয়ার মত সমস্যা দেখা দিয়েছে । কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সারফার ডাই অক্সাইড, বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প, অক্সিজেনের সাথে মিশে অ্যাসিড বৃষ্টি হচ্ছে । মাছ, গাছপালা, জলজ প্রাণী, মার্বেল পাথরের মূর্তি ও সৌধ ক্ষতি হচ্ছে । আমাদের জীবন ও পৃথিবীকে বাঁচাতে বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে সবাইকে একসাথে লড়াই করতে হবে । তবেই আমাদের পৃথিবী সুন্দর ও বসবাসের যোগ্য থাকবে ।


  আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জানা অজানা, ভূগোল ও বিজ্ঞান বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা, ভূগোল ও বিজ্ঞান  লেখাগুলির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷