মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০২০

চীনের মহা প্রাচীর কবে, কেন তৈরি করা হয়েছিল ?.


পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি হল চীনের এই মহা প্রাচীর । এটি মানুষের হাতে তৈরি সবচেয়ে বড় স্থাপত্য । পাহাড় ঘেরা অপরূপ সবুজ আরণ্যক চীনের প্রাচীর পৃথিবীর জনবহুল দেশ চীনের বেইজিংয়ে অবস্থিত পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যগুলোর মধ্যে একটি । এই প্রাচীর প্রায় ৫ থেকে ৮ মিটার উঁচু এবং ৮৮৫২ কিলোমিটার লম্বা । এটি ইট আর পাথর দিয়ে তৈরি করা হয় । ২২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হওয়া কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ১৫ বছর । খ্রিস্টপূর্বাব্দ ২২০ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের অধীনে নির্মিত প্রাচীর টি সবচেয়ে বিখ্যাত । এটি শুরু হয়েছে সাংহাই পাস এবং শেষ হয়েছে লোপনুর নামক স্থানে ।
  ২৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীন বিভিন্ন খণ্ড খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত ছিল । তাদের মধ্যে একজন রাজা, যার নাম ছিল শি-হুয়াং-টি, তিনি অন্যান্য রাজাদের সংঘবদ্ধ করে নিজে সম্রাট হন । চীনের উত্তরে গোবি মরুভূমির পূর্বে দুর্ধর্ষ মঙ্গোলিয়াদের বাস, যাদের কাজ হল লুটতরাজ করা । সেই সময় মাঞ্চুরিয়া আর মঙ্গোলিয়ার যাযাবর দস্যুরা চীনের বিভিন্ন অংশে আক্রমণ করত এবং বিভিন্ন ক্ষতি সাধন করত । ফলে দস্যুদের হাত থেকে চীনকে রক্ষা করার জন্য এই প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল ।
  
তাদের হাত থেকে দেশকে বাচানোর জন্য সম্রাটের আদেশে চীনের প্রাচীর তৈরির কাজ আরম্ভ হয় । প্রাচীরটি নির্মাণে এক হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেছিল । চীনের অনেক রাজবংশ এ প্রাচীর নির্মাণে অপূরণীয় ভূমিকা রেখেছেন । পরবর্তিতে হান, সুই সহ আরো অনেক রাজবংশ এই দেয়ালের সংস্কার, পুনর্নির্মাণ এবং বিস্তার ঘটায় । পরে হান, সুই, উত্তরের ওয়েই, জিন, মিং সহ আরো অনেক রাজবংশ দুর্গগুলোর প্রাচীর পুননির্মাণ ও প্রসারিত করে ।

 প্রাচীর টি চীনের উত্তর সীমান্তের রাজ্য সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছিল । এরকম অনেক গুলি প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল, এর মূল অংশের নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০৮ সালের দিকে । চীনের প্রাচীরটি পাথর, ইট, কাঠ, খড়ি, চুন, মাটি এবং কঙ্করের মতো উপকরণ গুলোর সংমিশ্রণে তৈরি । প্রাচীর তৈরি হয়েছিল চিহলি-পুরনো নাম পোহাই উপসাগরের কূলে শানসীকুয়ান থেকে কানসু প্রদেশের চিয়াকুমান পর্যন্ত । চীনের প্রথম সম্রাট কিং সি হুয়াং এটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন এবং শত্রুর হাত থেকে নিজের সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন । এই প্রাচীর থেকে সীমান্ত রক্ষীরা সীমান্ত পাহারা দিত । সীমান্ত রক্ষীরা ভিন্ন ভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এই সীমান্ত পাহারা দিত ।
 কিন্তু, অনেক সময় মঙ্গল দস্যুরা প্রাচীর ভেঙ্গে চীনা লোকালয়ে ঢুকে লুটপাট করতো এত কিছুর পরেও চীনের ওপর মঙ্গোলদের আক্রমণ থামেনি । তারা নিয়মিত আক্রমণ চালিয়ে যেত । পরবর্তীতে তারা নির্মিত দেয়াল গুলোর অনেক ক্ষতি করেছিল । এসব ঘটনার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে প্রাচীরের অনেক জায়গায় এখনো কিছু কিছু ভাঙা অংশ রয়েছে চীনারা নিজেরা পাচিলের বাইরে চাষবাস আরম্ভ করেছে । ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো গ্রাম্য খেলার মাঠ এবং বাড়ি ও রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পাথরের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
 ধীরে ধীরে চীনের এই মহা প্রাচীর দর্শনার্থীদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে যায় । প্রতিদিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে চীনের এই মহা প্রাচীরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন লাখো দর্শনার্থী । প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় দর্শনার্থীদের পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার প্রতিযোগিতা । পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার এই প্রতিযোগিতা চলে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত । ব্যাপক পরিচিতির ফলে একে প্রতি নিয়ত সামলাতে হচ্ছে লাখ লাখ পর্যটকদের চাপ । উন্নত পর্যটন এলাকার কাছে মেরামত কৃত অংশ পর্যটন পণ্যের বিক্রয় স্থল হয়ে উঠেছে । মহা প্রাচীর দেখার সুবিধার জন্য পাহাড়সহ অন্যান্য উঁচু স্থানে সংকেত টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছিল । বহু কবিতা এবং সাহিত্যকর্মে চীনের মহা প্রাচীরটিকে দ্য আর্থ ড্রাগনবলা হয়েছে ।
 বিশ্বের গৌরব চীনের এই প্রাচীর অনেকটাই ধ্বংসের মুখোমুখি । বর্তমানে প্রাচীর টির অনেক অংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে । প্রাচীরটির প্রায় ১/৩ অংশ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে । এর কিছু অংশ আবার অনেক বেশি রকমের সংস্কারও করা হয়েছে । এই চীনের মহা প্রাচীরের যে অংশ গানসু প্রদেশে অবস্থিত তার ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশ আগামী ২০ বছরের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে । ২০১৪ সালে লাইয়াওনিং এবং হেবেই প্রদেশের বর্ডারের কাছের দেয়ালগুলো কনক্রিট দিয়ে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে । চীন সরকার যদি এর সংস্কারের প্রতি মনোযোগী হয়ে ওঠে তাহলে আরো বহুদিন এই বিশ্ব ঐতিহ্যকে এ পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে ।
 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । ইতিহাস ও জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে ইতিহাস ও জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । 

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

রবিবার, ২৯ মার্চ, ২০২০

তাজ মহল কে, কবে, কেন তৈরি করেন ?.


তাজ মহল কে, কবে, কেন তৈরি করেন ?.

তাজমহল হল ভালোবাসার অনন্য প্রতীক । মধ্যযুগীয় সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি আশ্চর্য । বিশ্ববাসী তাজমহলকে এক পলক দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে । তাজমহল মুঘল মুসলিম স্থাপত্য কীর্তি গুলোর মধ্যে গৌরবান্বিত অলঙ্কার, একটি অনন্য কীর্তি । তাজমহলকে ‘ভালোবাসার’ প্রতীক হিসেবে ধরা হয় । মুঘল সম্রাট শাহ জাহান তাঁর প্রিয় স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তাজমহল তৈরি করেছিলেন । 
স্ত্রী মমতাজ মহলের অকাল মৃত্যুতে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের মনে খুব আঘাত লাগে । সেই ভেঙ্গে পড়া মন নিয়ে তিনি স্ত্রীর কবরের উপর একটা সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন । সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের স্মৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা জানাতেই তাজমহল তৈরি করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান ভারতের উত্তর প্রদেশে আগ্রায় অবস্থিত এই রাজকীয় সমাধি ।

 আরজুমান আরা বেগমের সঙ্গে শাহ জাহানের প্রথম দেখা হয় ১৬০৭ সালে । আরজুমান আবার পিতৃকুল দিক থেকে ছিলেন পারস্যের বেশ সমৃদ্ধিশালী পরিবার । তাঁর বাপ-দাদারা মোগলদের দরবারে বেশ সম্মানজনক পেশায় নিযুক্ত ছিলেন । ১৪ বছরের ইরানী কিশোরী মমতাজের দৈহিক সৌন্দর্য শাহজাহানকে বিমোহিত করে ফেলেছিল । শাহজাহান পরে তাঁর নামকরণ করেন ‘মমতাজ মহল’ । তিনি এ কিশোরীর সাথে বাগদান সম্পন্ন করেন, কিন্তু তাকে বিয়ে করে ঘরে তুলে নেননি । বরং মমতাজকে ঝুলিয়ে রেখে শাহজাহান আরেক নারীকে বিয়ে করেন ।
 বাগদানের ৫ বছর পর ১৬১২ সালে মমতাজকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে প্রাসাদে নিয়ে আসেন শাহজাহান । মুঘল সম্রাট শাহ জাহান কে বিয়ে করার আগে মমতাজের অন্য এক জনের সাথে বিয়ে হয়েছিল। শাহ জাহান মমতাজের প্রথম স্বামী কে নির্মম ভাবে হত্যা করেন, তারপর মমতাজকে বিয়ে করেন । আবার ১৬১৭ সালে তিনি আরো এক নারীকে বিয়ে করেন মমতাজ সহ দুই স্ত্রী ঘরে থাকা সত্ত্বেও । এদিকে বিয়ের ১৯ বছরের মধ্যে মমতাজ শাহজাহানের ১৪ সন্তানের মা হন । ১৪তম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মমতাজ মারা যান, মাত্র ৩৮ বছর বয়সে । তাঁর মৃত্যুও হয় সন্তান প্রসবের সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ।

 মোগল সম্রাটদের মধ্যে শাহজাহান ছিলেন বেশ বিলাসী । যার ফলস্বরূপ ভারতবর্ষ জুড়ে গড়ে উঠেছিল এমন সব শৈল্পিক নিদর্শন, যা এখন পর্যন্ত ভ্রমণ প্রিয় মানুষের দৃষ্টিকে ভারতের দিকে ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে । তাজমহল বিশ্বের অপূর্ব সুন্দর স্মৃতিসৌধ ও মনোমুগ্ধকর নিদর্শন । তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৩২ সালে যমুনা নদীর তীরে এবং পুরোপুরি শেষ হয় ১৬৫৩ সালে । এ সময়কালে ২০,০০০ শ্রমিক ও কারিগর তাজমহল নির্মাণে দাসদের মতো ব্যবহৃত হয়েছিল । যারা ছিলেন শ্রমিক, স্টোন কাটার, চিত্রশিল্পী, সূচিকর্ম শিল্পী ও ক্যালিগ্রাফি । 
তাজমহল তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী নকশার উপর, বিশেষ করে পারস্য ও মুঘল স্থাপত্য অনুসারে । দরজাটির নকশা ও ধরন মুঘল সম্রাটদের স্থাপত্যের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় । তাজমহলের মূল হল তার সাদা মার্বেল পাথরের সমাধি । সমাধিটি একটি বর্গাকার বেদিকার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে । তাজমহলে ঢোকার প্রধান ফটক বা দরজাও তৈরি হয়েছে মার্বেল পাথরে ।

 সমাধির উপরের মার্বেল পাথরের গম্বুজই সমাধির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য । বড় গম্বুজটির গুরুত্বের কারণ এর চার কোণায় আরও চারটি ছোট গম্বুজ রয়েছে । ছোট গম্বুজগুলোও দেখতে বড় গম্বুজটির মত । বড় গম্বুজের উপর মুকুটের মত একটি পুরনো মোচাকার চূড়া রয়েছে । চূড়াটি ১৮০০ শতকের আগে স্বর্ণের নির্মিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরি ।
 তাজমহলের নির্মাণ সামগ্রী বহনের জন্য ১০০০ হাতি ব্যবহার করা হয়েছিলো । স্থাপত্যকলার এই বিশাল জাঁকজমক পূর্ণ কাজটি করার জন্য সম্রাট রাজস্থান, আফগানিস্তান, তিব্বত ও চীন থেকে মার্বেল পাথর আনিয়েছিলেন । এছাড়াও ২৮ ধরণের মূল্যবান ও আধা মূল্যবান পাথর সাদা মার্বেলের উপর বসানো হয়েছিলো । যার মধ্যে আকর্ষণীয় নীলকান্তমণি ও ছিল । এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন ।

 তাজমহলের উচ্চতা ১৭১ মিটার বা ৫৬১ ফুট দীর্ঘ যা কুতুবমিনারের চেয়েও বড় । তাজমহলের স্থাপত্যকলা ছিল বিশ্বব্যাপী অনুপ্রাণিত । এটি পারস্য, মধ্য এশিয়া ও ইসলামী স্থাপত্যের সমন্বয় করেছিলো । এই অনন্য স্থাপনাটির স্থপতি ছিলেন আহমেদ লাহোরি । কথিত আছে, তাজমহল নির্মাণ শেষে কারিগরদের হাতের আঙ্গুল কেটে দেয়া হয় যাতে তারা অন্য কোথাও আবার এ কাজ করতে না পারে, যদিও এ গল্পের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায় না ।
 তাজমহল নির্মাণে তখনকার সময়ের ৩২ মিলিয়ন রুপি খরচ করেছেন । তাত্ত্বিক হিসাব অনুযায়ী, এ পরিমাণ অর্থ বর্তমানের ৫২.৮ বিলিয়ন রুপি বা ৮২৭ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সমান, অর্থাৎ ৬,৪৩৮ কোটি টাকার সমান । এ পুরো টাকাটাই ছিল সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে আদায় করা খাজনা । শাহ জাহান এ টাকাই ব্যয় করেছেন নিজের মৃত স্ত্রীর কবরের উপর স্মৃতিসৌধ নির্মাণের মতো ব্যক্তিগত অভিলাষ পূরণের জন্য । এই বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করা আর সেই অর্থ আদায় করতে গিয়ে জনগণের উপর চালানো অত্যাচারের কুফল হিসেবে তাজমহল নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ।

শাহজাহানকে কি আদৌ প্রেমিক বলা যায়? মমতাজের প্রতি তাঁর যে অনুভূতি ছিল সেটাকে স্রেফ মোহ ছাড়া আর কিছু বলার উপায় নেই । মমতাজ কিন্তু শাহজাহানের একমাত্র স্ত্রী ছিলেন না । শাহজাহানের অন্তত আরও তিনজন স্ত্রী ছিলেন, এমনকি মমতাজের পরও তিনি আরও একটি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন । মমতাজের মৃত্যুর বছর পাঁচেক পর তাঁরই ছোট বোনের সঙ্গে নাকি বিবাহবহির্ভূত অন্তরঙ্গ এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ।
তাজমহলের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই শাহ জাহান তার পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রার কেল্লায় গৃহবন্দী হন । আওরঙ্গজেব শাহ জাহানকে জোর করে বন্দি করে নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষণা করেন । শাহজাহানকে তাঁর জীবনের শেষ ৮ বছর আগ্রার দুর্গে গৃহবন্দি হয়ে থেকেই কাটাতে হয় । মুকুটহীন বৃদ্ধ শাহজাহান বন্দিশালার এক ক্ষুদ্র জানালা দিয়ে মাঝেমধ্যে চেয়ে দেখতেন তাঁর সেই অমর কীর্তি । বন্দি জীবনে শাহজাহানের সঙ্গী ছিল জাহানারা, যার প্রেমিককে শাহজাহান নৃশংসভাবে খুন করেছিলেন । জাহানারা স্বেচ্ছায় পিতার সাথে বন্দি হয়ে দুঃসময়ে পিতাকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন । বন্দি অবস্থায়ই তিনি মারা যান । শাহ জাহানের মৃত্যুর পর আওরঙ্গজেব তাকে তাজমহলে তার স্ত্রীর পাশে সমাহিত করেন ।
 বর্তমানে, তাজমহলে ২ থেকে ৩ মিলিয়ন পর্যটক আসে যার মধ্যে ২,০০,০০০ পর্যটক বিদেশী, যা ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ।

আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । ইতিহাস ও জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে ইতিহাস ও জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।  
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০২০

দানবীর হাজী মহম্মদ মহসিন এর বাংলা জীবনী .


 যুগে যুগে আমাদের দেশে অনেক ধার্মিক ও দানবীর জন্মগ্রহণ করেছেন । হাজী মহম্মদ মহসিন হলেন এমনই একজন দানবীর মহাপুরুষ । একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি মুসলমান জনহিতৈষী । দানশীলতার জন্য তিনি দানবীর খেতাব পেয়েছিলেন । তিনি তাঁর দয়া ও দানশীলতার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন । হাজী মহম্মদ মহসিন ১৭৩২ খ্রিস্টাব্দে ৩ জানুয়ারি হুগলী শহরে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার ছিলেন পারস্য দেশীয় বণিক হাজী ফরজুল্লা, তিনি ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন । ফয়জুল্লাহ ছিলেন একজন ধনী জায়গিরদার । মা জয়নাব খানম । হাজি মহম্মদ মহসিনের পিতা হাজী ফয়জুল্লাহ অপর এক জমিদারের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করেন সেই জমিদারের নাম ছিল আগা মোতাহার তিনি ছিলেন নদীয়া ও যশোহরের জায়গীরের অধিকারী । মোতাহরের মৃত্যুর পর তিনি হাজী ফরজুল্লাকে বিবাহ করেন । হাজী ফরজুল্লার প্রথম কন্যা ছিলেন মন্নুজান খাতুন । তিনি মহসিনকে প্রচুর ভালবাসতেন ।


গৃহশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে মহসিন ও তার সৎ বোন মন্নুজান শিক্ষার্জন করেছেন । মহসিন ১০ বছর বয়সে আরবি ভাষাবিদ সিরাজির কাছে আরবি ও ফারসি ভাষা শেখেন । এরপর মহসিন আগা মির্জার কাছে শিক্ষালাভ করেন । মহম্মদ মহসিন অল্প বয়সের মধ্যে তিনি আরবি, ফারসি, উর্দু ভাষা শিখে ফেলেন । তিনি তীক্ষ্ণ মেধা সম্পন্ন ছিলেন । এরপর তিনি হুগলী থেকে মুর্শিদাবাদে গিয়ে সেখানে এক মৌলভীর কাছ থেকে কোরান অধ্যয়ন করেন । কোরানে ছিল তাঁর অসামান্য দখল । এছাড়াও বিভিন্ন গ্রন্থ পাঠ করে তিনি জ্ঞান আরোহণের মধ্য দিয়ে তাঁর বাল্য জীবন অতিবাহিত করেন ।


হাজী ফরজুল্লার মৃত্যুর পর তাঁর সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন তাঁর ভগিনী মন্নুজান । নবাবের নিযুক্ত হুগলীর ফৌজদার মির্জা সালাহউদ্দিনের সঙ্গে বোনকে বিয়ের ব্যবস্থা করলেন তিনি মন্নুজানের বিবাহ হয়ে গেলে সম্পত্তি ও পরিবারের পিছু টান না খাকার জন্য তিনি ১৭৬২ সালে দেশ ভ্রমণে ইচ্ছায় হুগলী ত্যাগ করেন । প্রথমে তিনি বাংলাদেশ ও পরে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন ।  ভারতের উত্তরের হিমালয় থেকে দক্ষিণের কন্যা কুমারী পর্যন্ত সমস্ত তীর্থস্থান তিনি ভ্রমণ করেন ।  মুসলমানদের দুটি পরম তীর্থস্থান হল মক্কা ও মদিনা ।  সেগুলি দর্শন করার জন্য তিনি প্রথমে গেলেন ইরানে । এরপর ইরান থেকে তিনি আসেন মক্কায় ।  তিনি মক্কা, মদিনা, কুফা, কারবালাসহ ইরান, ইরাক, আরব, তুরস্ক এমন নানা স্থান সফর করেছেন । হজ শেষ করে তিনি ১৭৮৯ সালে তিনি ভারতে ফিরে আসেন । হজ করে ফিরে আসার জন্য তিনি হাজী উপাধি লাভ করেন ।  দীর্ঘ ২৭ বছর দেশ ভ্রমণ করে তিনি প্রচুর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন ।

 বিদেশে থাকাকালীন তিনি সংবাদ পান যে – তার ভগিনী মন্নুজান বিধবা হয়েছেন । মন্নুজানের স্বামী মির্জা সালাহউদ্দিন ছিলেন হুগলীর নায়েব ফৌজদার । তিনি এরপর দেশে ফিরে আসেন । দেশে ফিরে তিনি তাঁর জীবন সন্ত- ফকিরের মত কাটাতে চেয়েছিলেন । কিন্তু, মন্নুজান যে বিরাট সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলেন সেই সমস্ত সম্পত্তি মন্নুজান মৃত্যুর আগে মহসিনের নামে লিখে রেখে যান । ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর ভগিনী মন্নুজানের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে মহসিন বোনের সম্পত্তির অধিকারী হন ।

 হাজী মুহাম্মদ মহসীন ছিলেন সংসারবিরাগী মানুষ । ঘর-সংসার, ধন -দৌলতের প্রতি তার কোন লোভ ছিল না এত সম্পত্তি নিয়ে তিনি কি করবেন, এই চিন্তায় তিনি পড়ে গেলেন । শেষে সিদ্ধান্ত নিলেন যে – এইসব সম্পত্তি তিনি সৎ কাজে, দান করে বাকি জীবন ধর্ম কর্ম ইত্যাদির মাধ্যমে কাটাবেন । সাধারণ মানুষের দুঃখ, কষ্ট অনুসন্ধান করার জন্য তিনি ছদ্মবেশে হুগলী শহরে অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াতেন । গোপনে দান করা তিনি বেশি পছন্দ করতেন । যারা দান গ্রহণ করতেন তারা জানতে পারতোনা কে এই মহান দাতা । তিনি রাতে সাথে টাকা নিয়ে ছদ্মবেশে শহরের অলি-গলিতে ঘুরে বেড়াতেন । দ্বীন-দুঃখী, অন্ধ, যাকে সামনে পেতেন তাকে মুক্ত হস্তে দান করতেন নিজ হাতে রান্না করে চাকর-বাকরদের নিয়ে এক সাথে বসে খেতেন ।
 ১৭৬৯-৭০ সালের সরকারি দলিল অনুযায়ী তৎকালীন দুর্ভিক্ষের সময় তিনি অনেক লঙ্গরখানা স্থাপন করেন এবং সরকারি তহবিলে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন । এইভাবে তিনি কত দরিদ্র, মেধাবী ছাত্র, অসুস্থ রোগীর সাহায্য করেছেন তার সঠিক হিসাব জানা যায় না । তার সম্পত্তির অধিকাংশই তিনি ব্যয় করেন শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শিক্ষানুরাগী এ দানবীর তার অর্থ দিয়ে বহু বিদ্যাপীঠ স্থাপন করে গেছেন । হুগলীতে হুগলী মহসিন কলেজচট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজপ্রতিষ্ঠার সময় মহসিনের অর্থ ব্যবহৃত হয় । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনাথদের জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন কয়েকটি দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র তিনি অনেক অভাবী পরিবারের যাবতীয় ব্যয় ভার বহন করতেন


 ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুসলমানদের শিক্ষার উন্নতির জন্য ১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা দামের সম্পত্তি দান করেন । তিনি সারা জীবন ধরে দান করেও মৃত্যুর আগে অনেক টাকা রেখে গিয়েছিলেন । মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি জন সেবায় ব্যয় করার জন্য উইল করে যান । সেই অর্থে ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে হুগলীর গঙ্গা নদীর তীরে ‘ইমামবাড়া’ নির্মাণ করা হয় । সেই টাকা দিয়ে একটি ধনভাণ্ডার গঠন করা হয় । ১৮০৬ সালে তিনি মহসিন ফান্ড নামক তহবিল প্রতিষ্ঠা করেন । এ তহবিল ধর্মীয় কর্মকাণ্ড, পেনশন, বৃত্তি ও দাতব্য কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ করা হয় । এই ধনভাণ্ডারের সুদের টাকা থেকে ইমামবাড়া চিকিৎসালয় ও অন্যান্য নানা জনকল্যাণ মূলক কাজে সেই টাকা ব্যয় করা হয় ।  কিছু সংখ্যক ছাত্র সেই টাকা থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকে । দানশীলতার কারণে তিনি কিংবদন্তীতে পরিণত হন এবং বর্তমানেও দানের ক্ষেত্রে তুলনা অর্থে তার দৃষ্টান্ত ব্যবহার হয়ে থাকে ।

 অনেক ধন সম্পৎ থাকলেও তিনি কখন বিলাসী ছিলেন না । সাধু সন্ন্যাসীদের মত তিনি সারা জীবন কাটিয়েছেন । তিনি ছিলেন পরদুঃখ কাতর, সরল, ধর্মপ্রাণ, সংযমী মানুষ । তাঁর মত উদার, ধর্মপ্রাণ, দানবীর মানুষ বর্তমান সময়ে খুব কম দেখা যায় । ইতিহাসে দাতা হাজী মহম্মদ মহসিনের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন । হাজি মহম্মদ মহসিন ১৮১২ সালে ২৯ নভেম্বর হুগলীতে মৃত্যুবরণ করেন । তাকে হুগলী ইমামবাড়ায় দাফন করা হয় । এই মহান পরোপকারী দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিনের প্রতি রইলো আমাদের অগণিত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জীবনী ও ইতিহাস বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জীবনী  ও ইতিহাস লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০২০

সুন্দরবনের নাম সুন্দরবন কিভাবে হল, এখানে কি আছে ?.


  সুন্দরবন হল সমুদ্র উপকূলবর্তী পৃথিবীর সবচেয়ে বড়  ম্যানগ্রোভ  বনভূমি বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন অবস্থিত । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্রে ভরপুর ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হওয়ায় ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে  ইউনেস্কো ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী  স্থান’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে আমাদের সুন্দরবন
 সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততা সহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে  এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে সুন্দরবন ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত । ভারতের সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও উত্তর ২৪ পরগণা নিয়ে গঠিত । সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশে

 সুন্দরি গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায় অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে "সমুদ্র বন" বা "চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)" (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী  গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি  এছাড়াও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেও এর নামকরণ এমন হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে । 
 পুরো পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের একটি হিসেবে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত সুন্দরবন । সুন্দরবনের নদীগুলো নোনা পানি ও মিঠা পানি মিলন স্থান সুতরাং গঙ্গা থেকে আসা নদীর মিঠা পানির, বঙ্গোপসাগরের নোনা পানি হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী স্থান হল এ এলাকাটি সমুদ্রসমতল থেকে সুন্দরবনের উচ্চতা স্থানভেদে ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার প্রত্যেক মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ঋতুতে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের পুরোটিই পানিতে ডুবে যায়, যার অধিকাংশই ডুবে থাকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্ঝার বিরুদ্ধে ম্যানগ্রোভের যে-অরণ্য সুন্দরবন-সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রাকৃতিক প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে বাঁচানোর যথেষ্ট উদ্যোগ না-থাকায় জাতীয় পরিবেশ আদালতও উদ্বিগ্ন
 সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গেওয়া, ঝামটি গরান এবং কেওড়া সুন্দরবনে নানা ধরনের প্রাণীর বাস ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫ টি প্রাণী এবং ৩৩৪ টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে এছাড়াও রয়েছে আড়াই শতাধিক প্রজাতির পাখি, দুই শতাধিক প্রজাতির মাছ, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণীসহ ৩২ প্রজাতির চিংড়ি, বানর, হরিণ, বনমোরগ, কুমির, ডলফিন, অজগর আর বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী লবণাক্ত প্রবণ এলাকাটির প্রধান বৃক্ষ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে গেওয়া অধিকাংশ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ চিরসবুজ, খাটো, গুল্মজাতীয় অথবা লম্বা বৃক্ষজাতীয় হয়
সুন্দরী ও গেওয়া এর প্রাধান্যের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ধুন্দল এবং কেওড়া ঘাস ও গুল্মের মধ্যে শন, নল খাগড়া, গোলপাতা রয়েছে সুন্দরবনের নাম শুনলেই সবার প্রথমে যেই জিনিসটা মাথায় আসে সেটা হচ্ছে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘ বিশ্ব বিখ্যাত ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসেব মতে সুন্দরবনে প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ ২০১১ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে সুন্দরবনে মোট বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩০০ টি
 সুন্দরবন, ঘূর্ণিঝড় প্রবণ ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জনসংখ্যা ও তাদের সম্পদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা বলয় হিসেবে ভূমিকা রাখে সৌন্দর্য, বনজ সম্পদ, কর্মসংস্থান, প্রাণী ও উদ্ভিদ বিচিত্রতা, মৎস্য সম্পদ, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল জোগান, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা, বিভিন্ন প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম । সুন্দরবনের বনসম্পদকে কেন্দ্র করে এখানে কয়েকটি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে
 এখানকার মানুষজন সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন অ-কাঠজাত সম্পদ এবং বনায়ন কমপক্ষে আধা মিলিয়ন উপকূলবর্তী জনসংখ্যার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই সুন্দরবন এখানকার স্থানীয়দের অধিকাংশই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে সুন্দরবনে বর্তমানে ১৩ ধরনের পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয় সমগ্র এলাকাতেই মাছ আহরণ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হয় বনবিভাগ কর্তৃক এই বনের মৌমাছিদের তৈরি মৌচাক থেকে প্রচুর মধু সংগ্রহ করা হয়সুন্দরবনের বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ১৬৪০-২০০০ মিমিবনের পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত তুলনামূলক ভাবে বেশি সুন্দরবনের তাপমাত্রা মোটামুটি থাকে ৩১° সে থেকে ২১° সে-এর মধ্যে
 আমোদ-প্রমোদ, ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান হল  সুন্দরবন ব্যস্ততম জীবনের ক্লান্তি দূর করতে প্রায় সারাবছরই ভ্রমণ পিপাসুরা ঘুরতে যায় সুন্দরবনে । অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় । এ সময়ই সবচেয়ে বেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন ভয়ংকর সুন্দর এই বনে । সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে । দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ । সুন্দরবনের ভেতরে যেতে হলে নৌপথই একমাত্র উপায় । শীতকাল সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় । পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখি বিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন এক স্বর্গ
 আমরা যারা সুন্দরবনে ঘুরতে যাই তাদের সতর্ক থাকা উচিত যে আমরা যেন মজার ছলে বা হেলা-ফেলা করে এর বনজ সম্পদ ও বন্য প্রাণীর জীবনের কোনো ক্ষতি না করি আমাদের ও আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য এ দেশের মানুষের উচিত সুন্দরবনের বনজ সম্পদ ও বন্য-প্রাণীদের সংরক্ষণের প্রতি আরও মনোযোগ দেয়া কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিরল হয়ে উঠেছে একুশ শতকের শুরু থেকে
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জানা অজানা ও ভূগোল বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা ও ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

রবিবার, ২২ মার্চ, ২০২০

করোনা ভাইরাস কি, এর প্রতিরোধের উপায় কি ?.


 চীন জুড়ে ছড়িয়ে পড়া রহস্যময় করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে । চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে গত ডিসেম্বরে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়এরপর তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে । করোনা ভাইরাস হল এমন একটি শ্রেণীভুক্ত ভাইরাস যারা  স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের আক্রান্ত করে করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে যার অর্থ মুকুট এর অঙ্গসংস্থান ভাইরাল স্পাইক পেপলোমারে দ্বারা তৈরি হয়েছে যেগুলো মূলত ভাইরাসের পৃষ্ঠে অবস্থিত প্রোটিন । ধারনা করা হয়, প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস প্রথম মানবদেহে প্রবেশ করে এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের ফলে শ্বাসকষ্টের গুরুতর সংক্রমণ দেখা দেয় । 

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক লক্ষণ –
 জ্বর, অবসাদ, শুষ্ক কাশি, বমি হওয়া, শ্বাস কষ্ট, গলা ব্যথা, অঙ্গ বিকল হওয়া, মাথা ব্যথা, পেটের সমস্যা, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপরোক্ত সকল উপসর্গ দেখা গেলেও জ্বর থাকেনা শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয় সাধারণত রোগের উপসর্গ গুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচদিন সময় নেয় বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের কোনও ধরণের অসুস্থতা রয়েছে তাদের মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে । এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায়

 করোনা ভাইরাস কতটা প্রাণঘাতী বা মারাত্মকতা আসলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি । হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে সৃষ্ট জল কণার ফলে আক্রান্তর সংস্পর্শে অপর ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে ২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনে নোভেল করোনাভাইরাসএর দেখা পাওয়া যায় করোনা ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ভাইরাসের ফলে শ্বাসকষ্টের গুরুতর সংক্রমণ দেখা দেয় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে তো বটেইহাঁচি-কাশি থেকে বাতাসের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে ।

 করোনা ভাইরাস ভাইরাসের একটি পরিবারের সদস্যযা শ্বাসযন্ত্রের প্রক্রিয়ায় সংক্রমণ ঘটায় । বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এই মারণ ভাইরাস ক্ষতির সম্ভাবনার দিক থেকে করোনাভাইরাস বেশ বৈচিত্র্যময় । এই রোগে নারীদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা সামান্য বেশি । আজ ২৩/০৩/২০২০ পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় আক্রান্ত ৩ লক্ষ ও মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার জন । ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে বৈশ্বিক বাজারে ভ্রমণ ও বাণিজ্যিকভাবে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ।


 করোনাভাইরাস ১৯৬০-এর দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয় সাধারণ সর্দি-হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এরকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায় মানুষের মধ্যে পাওয়া ভাইরাস দুটি মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ইএবং মনুষ্য করোনাভাইরাস ওসি৪৩নামে নামকরণ করা হয় এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য রোগটিকে এখন বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করেছে সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রজাতিটি এসএআরএস-সিওভিপ্রজাতির সাথে ৭০% জিনগত মিল পাওয়া যায় করোনা ভাইরাসে  মাত্র 2 থেকে 3 শতাংশ মানুষের প্রাণহানির তথ্য রয়েছে এমনটা নয় যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই সেই রোগীর মৃত্যু হবে ।

 ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রামণ দেখা দেয় অনেক সময়ই কোন একটি প্রাণী থেকে এসে নতুন নতুন ভাইরাস মানব শরীরে বাসা বাধতে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা সাম্প্রতিক ভাইরাসটির উৎস কোনও প্রাণী । অনেকেই অনুমান করছেন নতুন এ প্রজাতিটি সাপ থেকে এসেছে যদিও অনেক গবেষক এ মতের বিরোধিতা করেন গবেষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের একপ্রকার বাদুরের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে ।


 করোনা নিয়ে রাজ্যের এবং দেশের বহু মানুষ আজও আতঙ্কিত । রাজ্য ও  কেন্দ্রের তরফে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বারবার বলা হলেও করোনা আতঙ্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না  করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । এমনটা নয় যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই সেই রোগীর মৃত্যু হবে । এখন পর্যন্ত ২০১৯-এনসিওভি ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি । বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন কীভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে এবং কীভাবে ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায় । ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ভাইরাসটির বিস্তার সীমাবদ্ধ করতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে । অসুস্থ মানুষদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন ।

 সংক্রমণ ঠেকাতে কলকাতা বিমানবন্দর সহ গোটা দেশের বিমানবন্দরগুলিতে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ইতিমধ্যেই হেলথ স্ক্রিনিং ক্যাম্প চালু করা হয়েছে এই রোগ থেকে এখন পর্যন্ত রক্ষার একমাত্র উপায় হল অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন বিদেশ ফেরত যাত্রীরা হোম কোয়ারেন্টিন, সেল্ফ কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনের নিয়মকানুন মেনে চলেন । রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোন লক্ষণ ছাড়া ব্যক্তিরাও ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিতে পারেন এর ফলে ভাইরাসটি সংক্রমণ ঠেকানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে


 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও খবর বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান ও সময় লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ    

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।