আমাদের পৃথিবীর মত কি আরও পৃথিবী আছে ?.
আকাশের বুক হাজারো লক্ষ কোটি গ্রহ, নীহারিকা আর গ্রহাণুপুঞ্জ নিয়ে তৈরি
। সুপ্রাচীন কাল থেকই আমরা জেনে এসেছি যে, আমাদের
পৃথিবী ব্রহ্মাণ্ডের একমাত্র স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে । কিন্তু, এই যে আমাদের এত পরিচিত বিশাল
মহাবিশ্ব, এর বাইরেও এমনি ধরনের
অসংখ্য মহাবিশ্ব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । প্রাচীন দার্শনিক
জিওর্দানো ব্রুনো বলেছিলেন - পৃথিবী সৌরজগতের কেন্দ্র নয়, এমনকি এই মহাবিশ্বের
সংখ্যাও একটি নয়, বরং এর সংখ্যা হতে পারে
অনন্ত অসীম । এই মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব । সেরকম প্রাণ
ওয়ালা একাধিক গ্রহ থাকতে পারে অন্য মহাবিশ্বেও । মাল্টিভার্স তত্ত্বের মধ্যে এই স্বতন্ত্র মহাবিশ্বকে সমান্তরাল মহাবিশ্ব বা প্যারালাল ইউনিভার্স বলা হয় । তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই মাল্টিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণাটি আসলে কি ?
অসংখ্য মহাবিশ্বের ভিড়ে আমাদের মহাবিশ্বও একটি । বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মনে করেন অনন্ত অসীম এই ব্রহ্মাণ্ডে এমন অনেক গ্রহ
থাকতে পারে যেখানে জীবন আছে । আর এই একমাত্র কারণে আমাদের পৃথিবীর মত গ্রহ
খোঁজার প্রচেষ্টা দিন দিন বেড়েই চলেছে । আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডে শুধু পৃথিবীর মতো নয় হুবহু পৃথিবীর প্রতিরূপ আছে । যেখানে এরকমই শহর, এরকমই সমুদ্র, এরকম সব পশু পাখি, এমনকি আপনারও প্রতিরূপও আছে । আমাদের শুধুমাত্র একটি ব্রহ্মাণ্ড নয় এরকম অনেক সমান্তরাল মহাবিশ্ব আছে । যেমন আপনি বর্তমানে বই পড়ছেন সমান্তরালভাবে
আপনি হয়তো বইটি পড়ে নিয়েছেন । আবার অন্য কোনও সমান্তরাল মহাবিশ্ব আপনি হয়তো এই বইটি সম্পর্কে কিছুই জানেন না অথবা কোনও সমান্তর মহাবিশ্বে এমনটাও তো হতে
পারে আপনি এখনও জন্মই হয় নি । এ ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্বের একটিতেই হয়ত আমরা
অবস্থান করছি । অন্য গুলোর অস্তিত্ব সম্বন্ধে একেবারেই জ্ঞাত
না হয়ে ।
সমমান্তরাল
মহাবিশ্বের কথা শুনতে হয়ত অনেকের কাছে আজগুবি মনে হতে পারে । মাল্টিভার্সের
ধারণা বিজ্ঞানীরা হাজির করার পর থেকেই একে বিভিন্ন সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে । তাহলে এটা কি শুধুমাত্র বিজ্ঞানীদের একটি পরিকল্পনা বা ধারণা । নাকি তার মধ্যে বৈজ্ঞানিক কোনও যুক্তি প্রমাণ আছে । বিজ্ঞানীরা গাণিতিক
সম্ভাবনার সাহায্যে হিসেব কষে দেখেছেন যে - এই অসীম মহাবিশ্বে আমাদের সৌরজগতের প্রতিরূপ
খুঁজে পাবার সম্ভাবনা বেশ প্রবল । আমাদের সৌর জগতের বাইরেও একাধিক সৌর জগত
রয়েছে । এভাবে
একাধিক সৌরজগতের সমন্বয়ে সৃষ্টি গ্যালাক্সি ।
সমস্ত মহাবিশ্ব এরকম আরও অনেক গ্যালাক্সি
রয়েছে, যাদের অস্তিত্ব আমরা এখনো জানিনা । মনে করা হয় এই
সমান্তরাল ব্রহ্মাণ্ড আমাদের দুনিয়াতেই মজুত আছে । আমদের জগতের পাশাপাশি সমান্তরাল জগতগুলি
অবস্থিত । কিন্তু আমরা এটাকে দেখতে পাই না । এই মহাবিশ্ব ঠিক আমাদের মহাবিশ্বের মতো 'বিগ
ব্যাং' থেকে সৃষ্টি হয়েছে । এক একটি বিগ-ব্যাং পরিশেষে জন্ম দিয়েছে এক একটি
মহাবিশ্বের । মহাবিশ্ব গুলোর প্রকৃতি কীরকম হবে তা নির্ভর করে
তাঁর অন্তঃ স্থানের বক্রতার
প্রকৃতির উপর । পদার্থবিজ্ঞানের
সাম্প্রতিক তত্ত্বগুলোর কোনটাই অসংখ্য মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে বাতিল করে দেয় না ।
মহাবিশ্ব স্থানটি এত বড়
যে কোনও না কোনও স্থানে ঠিক পৃথিবীর মতোই অন্য গ্রহ আছে । তাদের
মধ্যে যা ঘটবে সেগুলি আমাদের পৃথিবীর মতোই হবে বা পৃথিবীতেও তার অনুরূপ
ঘটনা ঘটবে । বিজ্ঞানীদের দ্বারা করা ক্যাল্কুলেশন এটাই বলে যে - এটা আমাদের থেকে অনেকটা দূরে । হয়তো ওইখান থেকে আলো আমাদের কাছে কোনদিন এসে পৌঁছবে না । সমান্তরাল মহাবিশ্ব
এতদূরে যে কোনও বার্তা তাদের কাছ থেকে আমাদের কাছে বা আমাদের কাছ থেকে তাদের
কাছে আসতে পারে না । যেখানে আমাদের
গ্যালাক্সি, আমাদের সূর্য, আমাদের পৃথিবী এমনকি আমাদের নিজেদেরও প্রতিরূপ হতে পারে । এর থেকে বোঝা যায় যদি এমনটা হয় তবে একের অধিক
ব্রহ্মাণ্ড অবশ্যই হবে । সমান্তরাল মহাবিশ্ব অন্যদের থেকে আলাদা, কারণ তারা আমাদের নিজস্ব মহাবিশ্বের মতো একই স্থান এবং সময়ে অবস্থান করে তবু আপনার কাছে এখনও সেখানে পৌঁছানো বা প্রবেশের কোন উপায় নেই ।
সমান্তরাল মহাবিশ্ব হল সবচে অদ্ভুত স্থান ,কারণ এটি আমাদের মহাবিশ্বের তুলনায় প্রকৃতির ভিন্ন গাণিতিক আইন অনুসরণ করে । প্রতিটি ব্রহ্মাণ্ড আলাদা আলাদা, তাই তাদের
ব্রহ্মাণ্ডের ভেতরের ভৌতিকের নিয়মও আলাদা আলাদা হবে । এ রকম আলাদা আলাদা
নিয়মের মহাবিশ্বগুলোর সবকিছুই আলাদা । আর এসব মিলে একটি বিশাল নদীতে
ভাসছে যেটাকে বলা হয় হাইপার স্পেস । ব্রহ্মাণ্ডের এই
স্থানটি অন্যস্থানের থেকে বেশ ঠাণ্ডা । বিজ্ঞানীদের মতে যদি দুটি ব্রহ্মাণ্ড ছুঁয়ে যায় তাহলে একটি বিশাল শক্তি
উৎপন্ন হবে । এরকম সংঘর্ষ কিন্তু কোন নির্দিষ্ট একটি স্থানে হয় না, বরং আমাদের মহাবিশ্বের
বাইরের শূন্যটায় এরকম সংঘর্ষ হয়েই চলেছে, ফলে সৃষ্টি হয়ে চলেছে অসংখ্য মহাবিশ্ব ।
প্যারালাল ইউনিভার্সের তত্ত্ব বলছে যে, ছড়িয়ে
ছিটিয়ে থাকা লক্ষ কোটি মহাবিশ্বের মধ্যে কোনটির
আকার, আয়তন আর বৈশিষ্ট্যে একদম ঠিক আমাদের মহাবিশ্বের মতই হবে না, এমন তো কোন গ্যারান্টি নেই । মনে করা হয়, আমাদের চারপাশে ১০৫০০ টির মতো
মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে, এবং প্রতিটির উপর কাজ করতে
পারে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক সূত্র । বিজ্ঞানীরা এটা সত্য
কিনা জানার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । বিজ্ঞানের অগ্রগতি দেখে এটাই মনে হচ্ছে যে সমান্তরাল মহাবিশ্বের রহস্য আমরা
খুব দ্রুত উন্মোচন করতে পারবো । বর্তমান প্রযুক্তির ধরা ছোঁয়ার বাইরে হলেও, ভবিষ্যতে কোন
দিন হয়ত আমরা এমন মহাবিশ্বের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হব ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট
টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা
অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷