মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০

ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ রাজা রামমোহন রায়ের বাংলা জীবনী .


 রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২/৭৪-১৮৩৩ ) ছিলেন বাংলা তথা ভারতের হিন্দুধর্মের মহান সমাজ সংস্কারক । পশ্চিম বাংলার রাধানগর গ্রামে এক রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম । বাংলার নবজাগরণের পথিকৃৎ রাজা রামমোহন রায়কেই বলা হয় ভারতের প্রথম আধুনিক পুরুষ বা আধুনিক ভারতের জনক রামমোহন রায়ের যখন মাত্র পাঁচ বছর বয়স সে সময় তিনি বাংলা ও ফার্সি ভাষাতে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন । আরবি ভাষার মাধ্যমে প্রাচীন গ্রিক দর্শনশাস্ত্র ও বিজ্ঞান যেমন অ্যারিস্টটলের যুক্তিবিদ্যা ও ইউক্লিডের মূলনীতিসমূহের প্রাথমিক পর্যায়ের সাথে রামমোহনের পরিচয় ঘটে । এছাড়াও তিনি আরও কয়েকটি ভাষাতে সুপণ্ডিত ছিলেন । অল্প বয়সে তিনি পণ্ডিতদের কাছে বেদান্ত, দর্শন, পুরাণ, ব্যাকরণ, চণ্ডী, গীতা, স্মৃতি শিক্ষা লাভ করেন । মৌলভীদের কাছে কোরান, হিব্রু শিক্ষকদের কাছ থেকে মূল বাইবেল পড়ে ফেলেন । রামমোহন রায়ের মত এমন নিঃস্বার্থ, নির্ভীক, প্রতিভাধর পুরুষ এ পৃথিবীতে কম জন্ম গ্রহণ করেছেন ।

 ১৮১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি কলকাতায় বসতি স্থাপন করেন এবং তাঁর জীবনের নতুন এক পর্ব শুরু হয় । রামমোহন হিন্দুদের সনাতন প্রতিমা পূজা মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং প্রায়শ যুগ যুগ ধরে চলে আসা হিন্দু প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি সমালোচনা মুখর ছিলেন । বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করার পর তিনি অনুভব করেন যে - বিভিন্ন ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান বাইরে থেকে পার্থক্য থাকলেও সকল ধর্মের মূল কথা হল – ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় ।  রামমোহন প্রতিমা পূজাকেও দৃঢ়ভাবে বর্জন করেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে, হিন্দুধর্ম এক সর্বজনীন ঈশ্বরের পূজা করতে নির্দেশ দেয় ।
 বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিভিন্ন ভাষা ও পদ্ধতির মাধ্যমে সেই পরম ঈশ্বরের স্তব করে চলেছেন । ধর্মের নামে কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন প্রকার অর্থহীন প্রথা প্রচলিত করে সমাজকে ও ধর্মকে পঙ্গু করে রেখেছে । দেশের মানুষরা সেই কুসংস্কারে ডুবে রয়েছে । তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন যে – কুসংস্কার কোন ধর্ম নয় । এর দ্বারা কোন পূর্ণ অর্জন করা যায় না ।
 তিনি সামাজিক অনাচার ও ধর্মীয় কুসংস্কার নির্মূল করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন । এর জন্য তাঁকে গোঁড়া হিন্দুদের অজস্র নিন্দা ও কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল । এমনকি তাঁকে লোকে বিধর্মী বলে গালাগালি দিতেও দ্বিধা বোধ করেন নি । তিনি এসমস্ত বিষয়কে গুরুত্ব দিলেন না । দৃঢ় বিশ্বাস ও অটুট মনোবল নিয়ে তিনি একাই সমাজের কুসংস্কার, আচার-সংস্কারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলেন । রামমোহনের ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা মৌলিক হলেও তা ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম দ্বারা খানিকটা প্রভাবিত হয়েছিল । উপমহাদেশে জাতীয় চেতনার উন্মেষেও রামমোহন রায়ের প্রভূত অবদান ছিল । ১৮১৪ সালে তিনি গড়ে তোলেন 'আত্মীয়সভা' ১৮২৮ সালে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে 'ব্রাহ্মসমাজ' স্থাপন করেন রাম মোহন রায় যা হিন্দুধর্মের নতুন একটি শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । পরবর্তীকালে এই ব্রাহ্মসমাজ এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন এবং বাংলার পুনর্জাগরণের পুরোধা হিসেবে কাজ করে ।
 রাম মোহন রায়ের আমলে বাংলা ডুবে গিয়েছিল কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা এবং অশিক্ষার অন্ধকারে ৷ রামমোহন হিন্দু সংস্কারের এক মহান যুগের সূত্রপাত করেন । সে সময় ধর্মের দোহাই দিয়ে, সতীত্বের দোহাই দিয়ে বিধবা নারীদের জোর করে পুড়িয়ে মারা হত । কোন প্রথা বা ব্যবস্থা সমাজে অনেক দিন ধরে চলে আসছে বলে যে চিরকাল ধরে চলবে, তিনি এই মতের ঘোর বিরোধী ছিলেন । একদিন তিনি নিজের চোখে সতীদাহের নামে জ্যান্ত নারীকে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য দেখলেন । এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে রামমোহন রায়ের হৃদয় কেঁদে উঠল । তিনি ‘সতীদাহ’ প্রথা বন্ধ করার জন্য প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হলেন । তিনি তাঁর জীবনকে সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করবেন । বহু দিনের চেষ্টায়, বহু মানুষের সমালোচনা সহ্য করে তদানীন্তন বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের এর সাহায্যে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে আইন করে ‘সতীদাহ’ প্রথা নিষিদ্ধ করেন ।
 উপমহাদেশে জাতীয় চেতনার উন্মেষেও রামমোহন রায়ের প্রভূত অবদান ছিল । রাজা রামমোহন রায় স্বদেশ ও স্বজাতিকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন । দেশের উন্নতির জন্য তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে উৎসর্গ করেছিলেন । রামমোহনের প্রথম দিকের রচনাসমূহ ছিল আরবি ও ফারসি ভাষায় । তিনি বুঝেছিলেন যে – ইংরেজি না জানলে ইংরেজদের দরবারে কোন কাজ পাওয়া যাবেনা । সে জন্য তিনি শিক্ষাবিদ ডেভিড হেয়ারের সাহায্যে এদেশে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগী হন । ১৮৩০ সালে মোগল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং তাঁর পক্ষে ব্রিটিশ রাজ ও পার্লামেন্টে ইংল্যান্ডে পাঠান । ১৮৩৩ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডে ব্রিস্টল শহরে তিনি মৃত্যু বরণ করেন ।
 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জীবনী বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জীবনী লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।


অর্ডার করতে লিঙ্কে ক্লিক করুন।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

1 টি মন্তব্য:

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷