মহাভারতের যোদ্ধা অশ্বত্থামা কি এখনও বেঁচে আছে ?.
ভারতের দুই মহাকাব্য নিয়ে রহস্য যেন শেষই হতে চায় না । কখন রাম সেতু নিয়ে বিতর্ক, কখনও বা জতুগৃহ । বিতর্ক ঘিরে রয়েছে ভারতের চেনা-অচেনা নানা অংশ । এমনই এক অদ্ভুত ও বিতর্কিত তথ্যের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে । মধ্য প্রদেশের একটি গ্রামে এক চিকিৎসক নাকি দেখা পেয়েছেন মহাভারতের কৌরব বাহিনীর সেনানায়ক অশ্বত্থামার । অশ্বত্থামা আচার্য দ্রোণাচার্য ও তাঁর স্ত্রী কৃপীর একমাত্র সন্তান । ভারতীয় পরম্পরায় বেশ কিছু পৌরাণিক চরিত্রকে অমর বলে মনে করা হয় । তাঁরা হলেন— হনুমান, বলিরাজ, ব্যাস দেব, বিভীষণ, কৃপাচার্য, পরশুরাম, মার্কণ্ডেয় এবং অশ্বত্থামা । মহাকাব্যের এমন সাত জন পুরুষ যারা নাকি এখনও বেঁচে রয়েছেন । কলি যুগের সঙ্গেই শেষ হবে তাঁদের জীবন ।
এই অমরবৃন্দ সম্পর্কে বহু কাহিনীই প্রচলিত রয়েছে । মহাকাব্যের অশ্বত্থামা জন্মেছিলেন মহাদেবের কৃপায় । জন্মলগ্ন থেকেই তাঁর কপালে একটি মণি ছিল, যার জন্য এই মহারথীর খিদে, তৃষ্ণা বা কোনও ক্লান্তি আসত না । এ দেশের একটা বিরাট অংশের মানুষের বিশ্বাস, অশ্বত্থামা আজও জীবিত, এবং তাঁকে দেখাও যায় । শোনা যেতে থাকে, অশ্বত্থামাকে দেশেই দেখা গিয়েছে । সাম্প্রতিক সময়েও বেশ কিছু মানুষ দাবি করেছেন যে, তাঁরা অশ্বত্থামার সাক্ষাৎ পেয়েছেন । মধ্য প্রদেশের একটি গ্রামে এক চিকিৎসক নাকি দেখা পেয়েছেন মহাভারতের কৌরব বাহিনীর সেনানায়ক অশ্বত্থামার । মধ্যপ্রদেশের ওই চিকিৎসকের কথাও একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না । অনেকের মতে, তাঁকে সবাই দেখতে পাবেন না । কারণ, কাকে তিনি দেখা দেবেন আর কাকে দেবেন না, সেটা তাঁর নিজের বিচারের উপরেই নির্ভর করে ।
এই কিংবদন্তির পিছনে কি কারণ থাকতে পারে ? মহাকাব্যের প্রায় অন্তিম লগ্নে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অভিশাপ বর্ষণ করেছিলেন অশ্বত্থামার উপরে । কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শেষ দিকে কৌরব পক্ষের সেনাপতি হন অশ্বত্থামা । কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় পিতা দ্রোণাচার্যের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ চলাকালীন
এক রাতে অশ্বত্থামা
পাণ্ডবদের পাঁচ পুত্রকে
হত্যা করেন ।
শুধু তাই নয়,
ব্রহ্মাস্ত্র ছুড়ে অভিমন্যুর
স্ত্রীর উত্তরার গর্ভের
সন্তানকে নষ্ট করেন । অনতিবিলম্বে তাঁকে বাঁচিয়ে তোলেন শ্রীকৃষ্ণ । এর পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে
শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে অভিশাপ
দেন । শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন – ‘সমগ্র মানবজাতির ভার বহন করতে হবে দ্রোণপুত্রকে | তাঁর কোনও মুক্তি নেই | মৃত্যু হবে না | আগামী ৩০০০ বছর দীর্ণ-জরাগ্রস্ত অবস্থায় বেঁচে থাকবেন তিনি । তথাপি ভূতের মতো বিচরণ করবেন তিনি | সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ ও একাকী | মানব সভ্যতার কোনও প্রেম বা স্নেহ স্পর্শ করবে না তাঁকে | জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি পড়ে থাকবেন উন্মাদ প্রায় | দগদগে ঘা ও ক্ষতে ভরা দেহ নিয়ে দুর্বিষহ তম জীবন যাপন করবেন তিনি’ |
অশ্বত্থামার কপালে ছিল একটি বহুমূল্য মণি | সেটি নিয়ে নেন শ্রীকৃষ্ণ | মণি খুলে নেওয়ায় ওই যে ক্ষত তৈরি হল‚ তা রয়ে যায় | অনর্গল পুঁজ ও রক্ত বেরোতে থাকে সেখান থেকে । কৃষ্ণের অভিশাপে কুষ্ঠ রোগে বিধ্বস্ত, সহায়হীন, সম্বলহীন, অস্ত্রের গৌরবহীন একা বীর পরিভ্রমণ করে চলেছেন পথের পরে পথ, তাঁর ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই, নিদ্রা নেই । প্রচলিত বিশ্বাস‚ অশ্বত্থামা এখনও আছেন এই ধরায় | ৩০০০ বছর ধরে নাকি জীবিত রয়েছেন মহাভারতের এই যোদ্ধা ।
কখনও মানুষের ধারণা হয়, তিনি ভারতবর্ষের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন । আবার কখনও শোনা যেতে থাকে, অশ্বত্থামাকে দেশেই দেখা গিয়েছে । মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সাতপুরা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত আসিরগড় ফোর্ট । এই কেল্লাতেই নাকি আজও বাস করেন অশ্বত্থামা । এই কেল্লার শিবমন্দিরে প্রতিদিন নাকি পূজো করেন অশ্বত্থামা । প্রতি ভোরে একটি করে গোলাপ ফুল তিনি উৎসর্গ করেন মহাকাল মন্দিরে মহাদেবের পায়ে | কারণ একমাত্র তাঁর দয়া হলেই শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবেন দ্রোণাচার্য পুত্র অশ্বত্থামা | রোজ সকালে এই
মন্দিরে দেখা যায়
টাটকা ফুল আর
আবির শিবলিঙ্গের কাছ
রাখা । কে
সবার আগে রোজ
এখানে পূজো করে
যান,
তা কেউ প্রত্যক্ষ
করেনি । সেখানে নর্মদা নদী তীরে তিনি ঘুরে বেড়ান ।
হিমালয়ের পাদদেশে এক দীর্ঘকায় ব্যক্তির কথা প্রায়শই শোনা যায়, যার কপালের মাঝখানে ক্ষত । হিমালয়ের এই রহস্যজনক ব্যক্তি লম্বায় ১২ ফুট বা তারও বেশি হবে । হিমালয়ের পাদদেশে তাঁকে দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন এক সাধক । স্থানীয়দের মতে, বছরে নাকি একবার সেই ব্যক্তিকে দেখা যায় । প্রচুর পরিমাণে খাবার খেয়ে এবং জল পান করে আবারও তিনি মিলিয়ে যান পাহাড়ের কোলে । স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, তিনি বছরে একবারই আহার করেন । বেশ কিছু তথ্য ইঙ্গিত করছে যে, শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপ সত্য হলেও হতে পারে । শ্রীকৃষ্ণের অভিশাপের কথা হিসেব করলে অশ্বত্থামা হয়তো এখনও বেঁচে রয়েছেন । কলি যুগের সঙ্গেই শেষ হবে তাঁর জীবন । তখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে বিষ্ণুর শেষ অবতার কল্কি দেবের সঙ্গে |
আমাদের লেখা আপনার কেমন
লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের
কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট
পড়তে নিচে জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক
ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷