ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বাংলা জীবনী .
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের গৌরব । ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক কিংবদন্তি নেতা সুভাষচন্দ্র বসু, ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম নেতা, তিনি
নেতাজি নামে বিশেষভাবে অভিহিত । তিনি ১৮৯৭ সালে ২৩ শে জানুয়ারি ওড়িশায় কটক শহরে জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর পিতার
নাম জানকীনাথ বসু, জানকীনাথ বসু ছিলেন আইনজীবী । মাতার নাম প্রভাবতী দেবী । তিনি ছিলেন পিতামাতার চোদ্দ সন্তানের মধ্যে নবম । শিশুকাল থেকে তাঁর মনে স্বদেশ-প্রীতি জাগরিত ছিল । ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি তার দেশপ্রেমিক সত্তার জন্য পরিচিত ছিলেন ।
সুভাষচন্দ্র ছিলেন মেধাবী ছাত্র । ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত তিনি কটকের একটি ইংরেজি স্কুলে পড়াশোনা করেন । এরপর তিনি ভর্তি হন রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে । ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন । ১৯১৩ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি
হন । কিন্তু সেই কলেজের ইংরেজি অধ্যাপক ওডেন সাহেব
বাঙালিদের সম্পর্কে অশ্রদ্ধার কথা বলায় তেজস্বী সুভাসচন্দ্র তাঁর প্রতিবাদ করেন । কলেজ কর্তৃপক্ষ কয়েকজন ছাত্রসহ সুভাষ বসুকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে । এরফলে কলেজ থেকে তিনি বিতাড়িত হন । শেষে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন ।
সেখান থেকে দর্শনে সাম্মানিকসহ
বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । এরপর তিনি আই.সি.এস পরীক্ষার জন্য বিলেত যান । ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান লাভ করেন এবং মরাল সায়েন্স কেম্ব্রিজ ট্রাইপস অধিকার করেন । সিভিল
সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়ে যান ।
আ ই.সি.এস পরীক্ষায়
পাশ করে দেশে ফিরে এসে তিনি সরকারি চাকরি গ্রহণ করেননি । ভারতে ফিরে সুভাষচন্দ্র 'স্বরাজ'
নামক সংবাদপত্রে লেখালেখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচারের
দায়িত্বে নিযুক্ত হন । জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ঘটনার পর, সুভাষ তীব্র ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে উঠেন । তিনি ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন । ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাঁকেও বন্দী করা হয় এবং মান্দালয়ে নির্বাসিত করা হয় । ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান । ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে জানুয়ারি তাঁর ৯ মাসের জেল হয় । এই বৎসরেই ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন ।
তিনি বহুবার
ব্রিটিশের কারাবরণ করেন । বিশ বছরের মধ্যে সুভাষ চন্দ্র মোট ১১ বার গ্রেফতার
হয়েছিলেন । তাকে ভারত ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছিল । তিনি নিখিল ভারত কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন । ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন । ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । গান্ধীর বিরোধিতার মুখে পড়েও
ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন । ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দ্বিতীয় বারের
জন্য ত্রিপুরা অধিবেশনে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন । এই জয়লাভের পর,
ইংল্যান্ডের ডরচেস্টারের প্রবাসী ভারতীয় এবং ইংরেজ রাজনীতিবিদরা তাঁকে সম্বর্ধনা দেন । এরপর থেকে কংগ্রেসের সাথে ক্রমান্বয়ে তাঁর বিরোধ হতে থাকে । গান্ধীজীর সাথে মত পার্থক্য কারণে
তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ দল গঠন করেন ।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে বর্মার মান্দালয়ের জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় সুভাষচন্দ্র গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন । ব্রিটিশ সরকার তাকে এক শর্তে মুক্তি দিতে রাজি হন । সুভাষচন্দ্র ইউরোপে যাওয়া মনস্থ করেন ও ভিয়েনা পৌঁছান । ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে ভিয়েনাতে থাকার সময় তিনি একজন ইংরেজি জানা সেক্রেটারি খুঁজছিলেন । এই সময় তাঁর সাথে অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত এমিলি (Emilie Schenkl) - এর সাথে দেখা হয় । এই এমিলি শেংকেলের সঙ্গেই পরবর্তীকালে তার প্রণয় ও পরিণয় ঘটে । ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে নেতাজি তাঁর প্রেমিকা এমিলি-কে বিবাহ করেন এবং ইউরোপে তাঁর স্ত্রীর সাথে কাটান । ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রয়াত হন । তাদের এক কন্যাসন্তান অনিতা বসু পাফ । অনিতা বসু পাফ তার পিতার দেশ
ভারতে বহুবার এসেছেন । অনিতা বর্তমানে জার্মানির অগসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা । তার স্বামী মার্টিন পাফ জার্মান পার্লামেন্টের
প্রাক্তন সদস্য ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি গৃহবন্দি ছিলেন । ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গৃহবন্দি করে
রাখলেও তাদের চোখে ধুলে দিয়ে তিনি বিদেশে চলে যান । ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১ টা ২৫ মিনিটে পশ্চিমী মুসলমানি পোশাকে তিনি তাঁর এই গোপন যাত্রা শুরু করেন । প্রথমে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সেখান থেকে সুভাষ বসু মস্কো গমন করেন । মস্কো থেকে রোম হয়ে তিনি জার্মানি পৌঁছান । ভারতের স্বাধীনতার ব্যাপারে হিটলারের উদাসীনতা তার মনোবল ভেঙে দেয় । ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে সুভাষ বসু জার্মান ত্যাগ করেন । সেখান থেকে তিনি জাপান পৌঁছান । তিনি ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই সিঙ্গাপুরে পৌঁছান । ভারতীয় অপর একজন নেতা রাসবিহারী বসু, প্রবাসে একটি সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলে । সেখানে গিয়ে তিনি ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ এর দায়িত্ব নেন । ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে রাসবিহারী বসু
এই সেনাবাহিনীর দায়িত্ব সুভাষ চন্দ্র বসুকে হস্তান্তর করেন ।
তিনি বলতেন – ‘ তোমরা
আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’ । বার্মাতে এক র্যালিতে তিনি এই
উক্তি করেন । ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ ‘দিল্লি চল’ মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে
ভারতের পথে অগ্রসর হয় । ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মার্চ ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাজিত করে 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' ইম্ফল ও কোহিমার পথে অগ্রসর হয় । ২১ মার্চ 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' ভারতভূমির মনিপুরে প্রবেশ করে । শেষ পর্যন্ত নানা কারণে এই বাহিনী আত্ম সমর্পণ করতে বাধ্য হন । এই সময় জাপান থেকে অর্থের সরবরাহ কমে যায় । যুদ্ধের শেষ দিকে জাপান আত্মসমর্পণ করলে, পরে তিনি এই বাহিনী ভেঙে দেন । আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলেও, সুভাষ চন্দ্রের শৌর্য ও আপোষহীন রণনীতি তাকে ভারতব্যাপী জনপ্রিয়তা দান করে ।
শোনা যায় যে – ১৯৪৫ সালে ১৮ আগস্ট জাপানে এক বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর
মৃত্যু হয় । কিন্তু এ ব্যাপারটি
আজও স্পষ্ট নয় । এই তথাকথিত দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিরুদ্ধ প্রমাণও বিদ্যমান রয়েছে । ভারতীয় সরকার কখনো নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রকৃত মৃত্যুর কারণ জনসমক্ষে
আনেন নি । বর্তমানে রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজির চিতাভষ্ম পরীক্ষা
করে জানা গিয়েছে -ওই চিতাভষ্ম নেতাজির নয় । অনেকের মতে ফৈজাবাদের ভগবান জি ওরফে
গুমনামি বাবা ছিলেন নেতাজি । আরেকটি মতে নেতাজি নাকি আজও জীবিত আছেন ।
আমাদের
লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান ।
আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জীবনী ও ইতিহাস বিষয়ে
আরও পোস্ট পড়তে নিচে জীবনী ও ইতিহাস লেখাটির
উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷