সুন্দরবনের নাম সুন্দরবন কিভাবে হল, এখানে কি আছে ?.
সুন্দরবন হল সমুদ্র উপকূলবর্তী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি । বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে
অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম । গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের
অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন অবস্থিত । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্রে ভরপুর ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হওয়ায় ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো ‘বিশ্ব
ঐতিহ্যবাহী স্থান’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে আমাদের সুন্দরবন ।
সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ
অখণ্ড বনভূমি । সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক
স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির
লবণাক্ততা সহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা । ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে । সুন্দরবন ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত । ভারতের সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও উত্তর ২৪ পরগণা নিয়ে গঠিত ।
সাতক্ষীরা, খুলনা,
বাগেরহাট, পটুয়াখালী অঞ্চল জুড়ে রয়েছে
বাংলাদেশে ।
সুন্দরি গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে
পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায় । অন্যান্য
সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর
নামকরণ হয়তো হয়েছে "সমুদ্র বন" বা "চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)"
(প্রাচীন আদিবাসী) থেকে ।
তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী
গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে । বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি । এছাড়াও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেও এর নামকরণ এমন হতে পারে বলে
মনে করেন অনেকে ।
পুরো পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ম্যানগ্রোভ
বনাঞ্চলের একটি হিসেবে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত সুন্দরবন । সুন্দরবনের নদীগুলো
নোনা পানি ও মিঠা পানি মিলন স্থান । সুতরাং গঙ্গা থেকে আসা নদীর মিঠা পানির, বঙ্গোপসাগরের
নোনা পানি হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী স্থান হল এ এলাকাটি । সমুদ্রসমতল থেকে সুন্দরবনের
উচ্চতা স্থানভেদে ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার । প্রত্যেক মৌসুমি বৃষ্টিপাতের
ঋতুতে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের পুরোটিই পানিতে ডুবে যায়, যার অধিকাংশই
ডুবে থাকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে । সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্ঝার বিরুদ্ধে
ম্যানগ্রোভের যে-অরণ্য সুন্দরবন-সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রাকৃতিক প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে
আছে, তাকে বাঁচানোর যথেষ্ট উদ্যোগ না-থাকায় জাতীয় পরিবেশ আদালতও উদ্বিগ্ন ।
সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে
প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গেওয়া, ঝামটি
গরান এবং কেওড়া ।
সুন্দরবনে নানা ধরনের প্রাণীর বাস । ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫ টি প্রাণী এবং
৩৩৪ টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে । এছাড়াও রয়েছে আড়াই শতাধিক প্রজাতির পাখি, দুই
শতাধিক প্রজাতির মাছ, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণীসহ ৩২ প্রজাতির চিংড়ি, বানর,
হরিণ, বনমোরগ, কুমির,
ডলফিন, অজগর আর বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী । লবণাক্ত প্রবণ এলাকাটির প্রধান বৃক্ষ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে গেওয়া
। অধিকাংশ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ চিরসবুজ, খাটো, গুল্মজাতীয়
অথবা লম্বা বৃক্ষজাতীয় হয় ।
সুন্দরী ও গেওয়া এর প্রাধান্যের
পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ধুন্দল এবং কেওড়া । ঘাস
ও গুল্মের মধ্যে শন, নল খাগড়া, গোলপাতা
রয়েছে । সুন্দরবনের নাম শুনলেই সবার প্রথমে যেই জিনিসটা মাথায় আসে সেটা হচ্ছে
সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার । সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘ বিশ্ব বিখ্যাত । ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসেব মতে সুন্দরবনে প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল
টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ । ২০১১ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে সুন্দরবনে মোট বাঘের
সংখ্যা প্রায় ৩০০ টি ।
সুন্দরবন, ঘূর্ণিঝড় প্রবণ ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জনসংখ্যা
ও তাদের সম্পদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা বলয় হিসেবে ভূমিকা রাখে । সৌন্দর্য, বনজ সম্পদ, কর্মসংস্থান,
প্রাণী ও উদ্ভিদ বিচিত্রতা, মৎস্য সম্পদ,
বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল জোগান, প্রাকৃতিক
ভারসাম্য বজায় রাখা, বিভিন্ন প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা
করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম । সুন্দরবনের বনসম্পদকে কেন্দ্র করে এখানে কয়েকটি শিল্প-কারখানা
গড়ে উঠেছে ।
এখানকার মানুষজন সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল । বিভিন্ন
অ-কাঠজাত সম্পদ এবং বনায়ন কমপক্ষে আধা মিলিয়ন । উপকূলবর্তী
জনসংখ্যার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই
সুন্দরবন । এখানকার স্থানীয়দের অধিকাংশই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে । সুন্দরবনে বর্তমানে ১৩ ধরনের পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয় । সমগ্র এলাকাতেই মাছ আহরণ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হয় বনবিভাগ কর্তৃক
। এই বনের মৌমাছিদের তৈরি মৌচাক থেকে প্রচুর মধু সংগ্রহ করা
হয় । সুন্দরবনের বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ১৬৪০-২০০০ মিমি । বনের
পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত তুলনামূলক ভাবে বেশি । সুন্দরবনের তাপমাত্রা মোটামুটি থাকে ৩১° সে থেকে ২১° সে-এর মধ্যে ।
আমোদ-প্রমোদ, ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান হল সুন্দরবন । ব্যস্ততম জীবনের ক্লান্তি দূর করতে প্রায় সারাবছরই ভ্রমণ পিপাসুরা
ঘুরতে যায় সুন্দরবনে । অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়
পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় । এ সময়ই সবচেয়ে বেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন
ভয়ংকর সুন্দর এই বনে । সুন্দরবনে প্রতি বছর
হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে । দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ
সৌন্দর্যে মুগ্ধ । সুন্দরবনের ভেতরে যেতে হলে নৌপথই একমাত্র উপায় । শীতকাল
সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় । পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখি বিজ্ঞানীদের জন্য
সুন্দরবন এক স্বর্গ ।
আমরা যারা সুন্দরবনে
ঘুরতে যাই তাদের সতর্ক থাকা উচিত যে আমরা যেন মজার ছলে বা হেলা-ফেলা করে এর বনজ সম্পদ ও বন্য প্রাণীর জীবনের কোনো
ক্ষতি না করি । আমাদের ও আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য এ দেশের মানুষের
উচিত সুন্দরবনের বনজ সম্পদ ও বন্য-প্রাণীদের
সংরক্ষণের প্রতি আরও মনোযোগ দেয়া । কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিরল হয়ে উঠেছে একুশ শতকের শুরু থেকে ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন
লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের
কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জানা অজানা ও ভূগোল বিষয়ে আরও পোস্ট
পড়তে নিচে জানা অজানা ও ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে
অনেক ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷