বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০২০

সুন্দরবনের নাম সুন্দরবন কিভাবে হল, এখানে কি আছে ?.


  সুন্দরবন হল সমুদ্র উপকূলবর্তী পৃথিবীর সবচেয়ে বড়  ম্যানগ্রোভ  বনভূমি বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন অবস্থিত । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্রে ভরপুর ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হওয়ায় ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে  ইউনেস্কো ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী  স্থান’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে আমাদের সুন্দরবন
 সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততা সহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে  এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে সুন্দরবন ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত । ভারতের সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও উত্তর ২৪ পরগণা নিয়ে গঠিত । সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশে

 সুন্দরি গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায় অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে "সমুদ্র বন" বা "চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)" (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী  গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি  এছাড়াও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেও এর নামকরণ এমন হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে । 
 পুরো পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের একটি হিসেবে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত সুন্দরবন । সুন্দরবনের নদীগুলো নোনা পানি ও মিঠা পানি মিলন স্থান সুতরাং গঙ্গা থেকে আসা নদীর মিঠা পানির, বঙ্গোপসাগরের নোনা পানি হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী স্থান হল এ এলাকাটি সমুদ্রসমতল থেকে সুন্দরবনের উচ্চতা স্থানভেদে ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার প্রত্যেক মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ঋতুতে বঙ্গীয় ব-দ্বীপের পুরোটিই পানিতে ডুবে যায়, যার অধিকাংশই ডুবে থাকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় জুড়ে সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্ঝার বিরুদ্ধে ম্যানগ্রোভের যে-অরণ্য সুন্দরবন-সহ দক্ষিণবঙ্গের প্রাকৃতিক প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাকে বাঁচানোর যথেষ্ট উদ্যোগ না-থাকায় জাতীয় পরিবেশ আদালতও উদ্বিগ্ন
 সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী, গেওয়া, ঝামটি গরান এবং কেওড়া সুন্দরবনে নানা ধরনের প্রাণীর বাস ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫ টি প্রাণী এবং ৩৩৪ টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে এছাড়াও রয়েছে আড়াই শতাধিক প্রজাতির পাখি, দুই শতাধিক প্রজাতির মাছ, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণীসহ ৩২ প্রজাতির চিংড়ি, বানর, হরিণ, বনমোরগ, কুমির, ডলফিন, অজগর আর বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী লবণাক্ত প্রবণ এলাকাটির প্রধান বৃক্ষ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে গেওয়া অধিকাংশ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ চিরসবুজ, খাটো, গুল্মজাতীয় অথবা লম্বা বৃক্ষজাতীয় হয়
সুন্দরী ও গেওয়া এর প্রাধান্যের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে ধুন্দল এবং কেওড়া ঘাস ও গুল্মের মধ্যে শন, নল খাগড়া, গোলপাতা রয়েছে সুন্দরবনের নাম শুনলেই সবার প্রথমে যেই জিনিসটা মাথায় আসে সেটা হচ্ছে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘ বিশ্ব বিখ্যাত ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসেব মতে সুন্দরবনে প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ ২০১১ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে সুন্দরবনে মোট বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩০০ টি
 সুন্দরবন, ঘূর্ণিঝড় প্রবণ ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জনসংখ্যা ও তাদের সম্পদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা বলয় হিসেবে ভূমিকা রাখে সৌন্দর্য, বনজ সম্পদ, কর্মসংস্থান, প্রাণী ও উদ্ভিদ বিচিত্রতা, মৎস্য সম্পদ, বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল জোগান, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা, বিভিন্ন প্রতিকূল আবহাওয়া থেকে রক্ষা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম । সুন্দরবনের বনসম্পদকে কেন্দ্র করে এখানে কয়েকটি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে
 এখানকার মানুষজন সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন অ-কাঠজাত সম্পদ এবং বনায়ন কমপক্ষে আধা মিলিয়ন উপকূলবর্তী জনসংখ্যার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই সুন্দরবন এখানকার স্থানীয়দের অধিকাংশই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে সুন্দরবনে বর্তমানে ১৩ ধরনের পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয় সমগ্র এলাকাতেই মাছ আহরণ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হয় বনবিভাগ কর্তৃক এই বনের মৌমাছিদের তৈরি মৌচাক থেকে প্রচুর মধু সংগ্রহ করা হয়সুন্দরবনের বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ১৬৪০-২০০০ মিমিবনের পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত তুলনামূলক ভাবে বেশি সুন্দরবনের তাপমাত্রা মোটামুটি থাকে ৩১° সে থেকে ২১° সে-এর মধ্যে
 আমোদ-প্রমোদ, ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান হল  সুন্দরবন ব্যস্ততম জীবনের ক্লান্তি দূর করতে প্রায় সারাবছরই ভ্রমণ পিপাসুরা ঘুরতে যায় সুন্দরবনে । অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় । এ সময়ই সবচেয়ে বেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন ভয়ংকর সুন্দর এই বনে । সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে । দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ । সুন্দরবনের ভেতরে যেতে হলে নৌপথই একমাত্র উপায় । শীতকাল সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময় । পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখি বিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন এক স্বর্গ
 আমরা যারা সুন্দরবনে ঘুরতে যাই তাদের সতর্ক থাকা উচিত যে আমরা যেন মজার ছলে বা হেলা-ফেলা করে এর বনজ সম্পদ ও বন্য প্রাণীর জীবনের কোনো ক্ষতি না করি আমাদের ও আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য এ দেশের মানুষের উচিত সুন্দরবনের বনজ সম্পদ ও বন্য-প্রাণীদের সংরক্ষণের প্রতি আরও মনোযোগ দেয়া কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিরল হয়ে উঠেছে একুশ শতকের শুরু থেকে
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জানা অজানা ও ভূগোল বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা ও ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷