বুধবার, ৩ জুলাই, ২০১৯

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি ?.


  কৃষকরা মাঠে যে ফসল চাষ করে বা আমরা টবে যে গাছ লাগাই সেগুলিকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলা হয় না । মানুষের বিনা চেষ্টায় শুধুমাত্র প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, যে গাছপালা জন্মায় তাকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলে । স্বাভাবিক উদ্ভিদ আমাদের জীবন ধারণের জন্য বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করে । বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে, বন্যা ও খরা নিয়ন্ত্রণ করে । কাঠশিল্প, কাগজ শিল্পের জন্য কাঁচামাল আমরা অরণ্য থেকে পাই । কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করে, মাটি ক্ষয়রোধ করে, বাতাসে অক্সিজেন জোগান দেয় । বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে । অরণ্য বিভিন্ন প্রাণীর বাসস্থান । তাছাড়া অরণ্য থেকে আঠা, মধু, মোম, রজন, গঁদ, ইত্যাদি আমরা পাই । বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে – বাসক পাতা সর্দিকাশি, সর্পগন্ধা উচ্চ-রক্ত চাপের ওষুধ রেসার-পিন, তুলসী হাঁপানি, সর্দিকাশি ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয় ।


 (তুলসী পাতার বিভিন্ন উপকারিতা কি কি ? লেখাটি পড়ার জন্য আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ দেখুন) । বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের ওপর ভিত্তি করে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা গড়ে ওঠে ।
  ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈচিত্র্য বিশাল কারণ, ভারতে প্রায় ৫০০০ রকমের মত গাছ দেখতে পাওয়া যায় । বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় –  ১) ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্য, ২) ক্রান্তীয় পাতা ঝরা অরণ্য, ৩) কাঁটাঝোপ ও গুল্ম জাতীয় অরণ্য, ৪) উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ অরণ্য, ৫) পার্বত্য নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য ।


১) ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্য – ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা যুক্ত অঞ্চলে এবং ২০০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয় যে অঞ্চলে সেখানে আমরা ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্য দেখতে পাই । এইসব উদ্ভিদের পাতা সারা বছর সবুজ থাকে বলে একে চিরসবুজ অরণ্য বলা হয় । গাছগুলি দীর্ঘ, গুড়ি মোটা, কাঠ শক্ত ও ভারী হয় । এই অরণ্যের প্রধান প্রধান গাছগুলি হল গর্জন, মেহগনি, বাঁশ, রবার, আয়রন উড, চাপলাস, রোজউড, ইত্যাদি । পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চল, ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি, আন্দামান ও নিকবোর দ্বীপপুঞ্জ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে এই অরণ্য দেখা যায় ।

২) ক্রান্তীয় পাতাঝরা অরণ্য – ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, ১০০-২০০ সেমি বৃষ্টিপাত যুক্ত এলাকাতে এই অরণ্য দেখা যায় । শুষ্ক ঋতুতে এই গাছ গুলির পাতা ঝরে পড়ে । গাছের দৈর্ঘ্য চিরসবুজ গাছের থেকে সামান্য কম হয়ে থাকে । প্রধান প্রধান গাছ গুলি হল আম, জাম, বট, মহুয়া, পলাশ, সেগুন, শাল, চন্দন, শিমুল ইত্যাদি । ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমি, হিমালয়ের পাদদেশিয় অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম ও সমগ্র গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে এই অরণ্য দেখা যায় ।  

৩) কাঁটাঝোপ ও গুল্ম জাতীয় অরণ্য – ৩৫-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা যুক্ত চরমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চলে ২৫-৫০ সেমি বৃষ্টিপাত এলাকায় এই ধরনের গাছ দেখা যায় । অত্যাধিক বাষ্পীভবনের কারণে গাছ মাটি থেকে কম জল পায় । তখন গাছগুলি বাষ্পমোচন কমানোর জন্য পাতা গুলো কাঁটাতে বা ছোট আকারে পরিণত করে নেয় । বাবুল, খেজুর, ফণীমনসা, অ্যাকোসিয়া এই অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ । হরিয়ানা, গুজরাত, রাজস্থান ও পাঞ্জাবের উত্তর ও পশ্চিম অংশে এই গাছ দেখা যায় ।


৪) উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ অরণ্য – উপকূল অঞ্চলে যেখানে জোয়ারের জল মাটিকে লবণাক্ত করে, সেইখানে এই ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায় । বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০ সেমির বেশি হয়, তাপমাত্রা থাকে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে । এখানকার প্রধান প্রধান উদ্ভিদ হল গরান, সুন্দরী, হোগলা, হেতাল, গোলপাতা ইত্যাদি । এই গাছ গুলিতে শ্বাসমূল ও ঠেশমূল দুই ধরনের মূল দেখা যায় । পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন, অন্ধ্রপ্রদেশের কলেরু, পুলিকট উপহ্রদ, ওড়িশার চিল্কা উপহ্রদ, গুজরাটের কচ্ছ ও খাম্বাট উপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় এই ধরণের উদ্ভিদ দেখা যায় । 

৫) পার্বত্য নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য – বার্ষিক বৃষ্টিপাত বা তুষারপাত ৫০-১০০ সেমির বেশি, তাপমাত্রা থাকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম  এই অরণ্য ১৫০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতা অঞ্চলে দেখা যায় । গাছ গুলিকে দেখতে লাগে মোচার মত, উপরে সরু নিচে মোটা । সহজে পাতার উপর বরফ জমতে না পারে তার জন্য পাতাগুলি সূচলো হয় । সোজা হয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ওপরে উঠে যায় । কাণ্ড গুলো নরম হয় । এখানকার প্রধান প্রধান গাছগুলি হল পাইন, ফার, দেবদারু, বার্চ, ওক, সিডার, স্পুস, লারচ, উইলো, পপলার ইত্যাদি । হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল, হিমাচল প্রদেশ, আনাইমালাই ও নীলগিরি পর্বতের উঁচু অংশ, দার্জিলিঙয়ে এই অরণ্য দেখা যায় ।


Pharmeasy.in

  ভারতের বিভিন্ন অরণ্যে বিভিন্ন জীব জন্তু বাস করে । সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, কচ্ছের রণ অঞ্চলে বুনো গাধা, দক্ষিণ ভারতে হাতি, হরিণ, রাজস্থানে উট, পার্বত্য অঞ্চলে চিতা, রেডপাণ্ডা, ভালুক ইত্যাদি । ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অরণ্যে এক শৃঙ্গ গণ্ডার, বাঁদর, ইত্যাদি পাওয়া যায় ।

  মানুষ তাঁর নিত্য প্রয়োজনে ও বসতি নির্মাণের জন্য দিনের পর দিন অরণ্য ধ্বংস করে চলেছে । তারফলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হতে হচ্ছে । বন্য প্রাণীরা থাকার জায়গা হারাচ্ছে, পশুদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে । বন্যা ও ভূমি ক্ষয় বাড়ছে । এরফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে । এগুলি রক্ষার জন্য অরণ্য সংরক্ষণ আজ খুব দরকারি । অরণ্য না থাকলে পশুপাখি ও মানুষের জীবন সুস্থভাবে চলবেনা । তাই আমাদের নিজেদের বাঁচাতে, বন্যপ্রান রক্ষার জন্য বন বা অরণ্য সংরক্ষণ করা দরকার । অরণ্য সংরক্ষণের জন্য আইন করে গাছ কাটা, বেশি করে চারা রোপণ, চোরাকারবারি দের বনে ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে ।

আমাদের আরও পোস্ট পড়ুন - 
পৃথিবীর সাদা মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা কথা গুলি কি ?.
ভারতের ভূগোলের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর গুলি কি কি ?.
পৃথিবীর ভূগোলের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর গুলি কি কি ?.
বিশ্ব উষ্ণায়ন কি, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীতে কি হতে পারে ?.
ম্যাপ বা মানচিত্রের সাহায্যে পৃথিবী চিনবেন কিভাবে ?.


   আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । ভূগোল বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে  ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

২টি মন্তব্য:

  1. খুব সুন্দর হয়েছে 😊।
    আমি একজন কলেজ ছাএ এবং ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা করছি।

    যথেষ্ট সুন্দর ও সরল ভাষায় লেখা আছে ।এই ভাবেই লিখতে থাকো😊😊

    HAVE A NICE DAY

    উত্তরমুছুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷