ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি ?.
কৃষকরা মাঠে যে ফসল চাষ করে বা আমরা
টবে যে গাছ লাগাই সেগুলিকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলা হয় না । মানুষের বিনা চেষ্টায়
শুধুমাত্র প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, যে গাছপালা জন্মায় তাকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলে
। স্বাভাবিক উদ্ভিদ আমাদের জীবন ধারণের জন্য বিভিন্ন উপাদান সরবরাহ করে ।
বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে, বন্যা ও খরা নিয়ন্ত্রণ করে । কাঠশিল্প, কাগজ শিল্পের
জন্য কাঁচামাল আমরা অরণ্য থেকে পাই । কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করে, মাটি ক্ষয়রোধ
করে, বাতাসে অক্সিজেন জোগান দেয় । বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে । অরণ্য
বিভিন্ন প্রাণীর বাসস্থান । তাছাড়া অরণ্য থেকে আঠা, মধু, মোম, রজন, গঁদ, ইত্যাদি
আমরা পাই । বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে – বাসক পাতা সর্দিকাশি, সর্পগন্ধা উচ্চ-রক্ত
চাপের ওষুধ রেসার-পিন, তুলসী হাঁপানি, সর্দিকাশি ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয় ।
Pharmeasy.in
(তুলসী পাতার বিভিন্ন উপকারিতা কি
কি ? লেখাটি
পড়ার জন্য আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ দেখুন) । বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদের ওপর ভিত্তি করে
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা গড়ে ওঠে ।
ভারতে
স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈচিত্র্য বিশাল কারণ, ভারতে
প্রায় ৫০০০ রকমের মত গাছ দেখতে পাওয়া যায় । বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারতের স্বাভাবিক
উদ্ভিদকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় – ১)
ক্রান্তীয় চিরসবুজ অরণ্য, ২) ক্রান্তীয় পাতা ঝরা অরণ্য, ৩)
কাঁটাঝোপ ও গুল্ম জাতীয় অরণ্য, ৪) উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ
অরণ্য, ৫) পার্বত্য নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য ।
১) ক্রান্তীয়
চিরসবুজ অরণ্য – ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা যুক্ত
অঞ্চলে এবং ২০০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয় যে অঞ্চলে সেখানে আমরা ক্রান্তীয় চিরসবুজ
অরণ্য দেখতে পাই । এইসব উদ্ভিদের পাতা সারা বছর সবুজ থাকে বলে একে চিরসবুজ অরণ্য
বলা হয় । গাছগুলি দীর্ঘ, গুড়ি মোটা, কাঠ শক্ত ও ভারী হয় । এই অরণ্যের প্রধান প্রধান গাছগুলি হল – গর্জন, মেহগনি, বাঁশ, রবার, আয়রন
উড, চাপলাস, রোজউড, ইত্যাদি । পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চল, ভারতের
উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি, আন্দামান ও নিকবোর দ্বীপপুঞ্জ এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে এই
অরণ্য দেখা যায় ।
২) ক্রান্তীয়
পাতাঝরা অরণ্য – ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, ১০০-২০০
সেমি বৃষ্টিপাত যুক্ত এলাকাতে এই অরণ্য দেখা যায় । শুষ্ক ঋতুতে এই গাছ গুলির পাতা
ঝরে পড়ে । গাছের দৈর্ঘ্য চিরসবুজ গাছের থেকে সামান্য কম হয়ে থাকে । প্রধান প্রধান
গাছ গুলি হল – আম, জাম, বট, মহুয়া, পলাশ, সেগুন, শাল, চন্দন, শিমুল ইত্যাদি । ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমি, হিমালয়ের
পাদদেশিয় অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম ও সমগ্র গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে এই অরণ্য দেখা যায় ।
৩) কাঁটাঝোপ
ও গুল্ম জাতীয় অরণ্য – ৩৫-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা যুক্ত
চরমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চলে ২৫-৫০ সেমি বৃষ্টিপাত এলাকায় এই ধরনের গাছ দেখা যায় ।
অত্যাধিক বাষ্পীভবনের কারণে গাছ মাটি থেকে কম জল পায় । তখন গাছগুলি বাষ্পমোচন
কমানোর জন্য পাতা গুলো কাঁটাতে বা ছোট আকারে পরিণত করে নেয় । বাবুল, খেজুর, ফণীমনসা, অ্যাকোসিয়া
এই অঞ্চলের প্রধান উদ্ভিদ । হরিয়ানা, গুজরাত, রাজস্থান
ও পাঞ্জাবের উত্তর ও পশ্চিম অংশে এই গাছ দেখা যায় ।
৪) উপকূলীয়
ম্যানগ্রোভ অরণ্য – উপকূল অঞ্চলে যেখানে জোয়ারের জল মাটিকে লবণাক্ত
করে, সেইখানে এই ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায় । বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০
সেমির বেশি হয়, তাপমাত্রা থাকে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে । এখানকার প্রধান
প্রধান উদ্ভিদ হল – গরান, সুন্দরী, হোগলা, হেতাল, গোলপাতা ইত্যাদি । এই গাছ গুলিতে শ্বাসমূল ও ঠেশমূল দুই ধরনের মূল
দেখা যায় । পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন, অন্ধ্রপ্রদেশের
কলেরু, পুলিকট উপহ্রদ, ওড়িশার চিল্কা উপহ্রদ, গুজরাটের
কচ্ছ ও খাম্বাট উপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় এই ধরণের উদ্ভিদ দেখা যায় ।
৫) পার্বত্য
নাতিশীতোষ্ণ অরণ্য – বার্ষিক বৃষ্টিপাত বা তুষারপাত ৫০-১০০ সেমির
বেশি, তাপমাত্রা থাকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম । এই
অরণ্য ১৫০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতা অঞ্চলে দেখা
যায় । গাছ গুলিকে দেখতে লাগে মোচার মত, উপরে
সরু নিচে মোটা । সহজে পাতার উপর বরফ জমতে না পারে তার জন্য পাতাগুলি সূচলো হয় ।
সোজা হয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ওপরে উঠে যায় । কাণ্ড গুলো নরম হয় । এখানকার প্রধান
প্রধান গাছগুলি হল – পাইন, ফার, দেবদারু, বার্চ, ওক, সিডার, স্পুস, লারচ, উইলো, পপলার ইত্যাদি । হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল, হিমাচল
প্রদেশ, আনাইমালাই ও নীলগিরি পর্বতের উঁচু অংশ, দার্জিলিঙয়ে
এই অরণ্য দেখা যায় ।
ভারতের
বিভিন্ন অরণ্যে বিভিন্ন জীব জন্তু বাস করে । সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, কচ্ছের
রণ অঞ্চলে বুনো গাধা, দক্ষিণ ভারতে হাতি, হরিণ, রাজস্থানে
উট, পার্বত্য অঞ্চলে চিতা, রেডপাণ্ডা, ভালুক
ইত্যাদি । ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অরণ্যে এক শৃঙ্গ গণ্ডার, বাঁদর, ইত্যাদি
পাওয়া যায় ।
মানুষ
তাঁর নিত্য প্রয়োজনে ও বসতি নির্মাণের জন্য দিনের পর দিন অরণ্য ধ্বংস করে চলেছে ।
তারফলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হতে হচ্ছে । বন্য প্রাণীরা থাকার জায়গা
হারাচ্ছে, পশুদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে । বন্যা ও ভূমি ক্ষয় বাড়ছে । এরফলে
প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে । এগুলি রক্ষার জন্য অরণ্য সংরক্ষণ আজ খুব দরকারি ।
অরণ্য না থাকলে পশুপাখি ও মানুষের জীবন সুস্থভাবে চলবেনা । তাই আমাদের নিজেদের
বাঁচাতে, বন্যপ্রান রক্ষার জন্য বন বা অরণ্য সংরক্ষণ করা দরকার । অরণ্য
সংরক্ষণের জন্য আইন করে গাছ কাটা, বেশি করে চারা রোপণ, চোরাকারবারি
দের বনে ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে ।
আমাদের আরও পোস্ট পড়ুন -
পৃথিবীর সাদা মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা কথা গুলি কি ?.
ভারতের ভূগোলের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর গুলি কি কি ?.
পৃথিবীর ভূগোলের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর গুলি কি কি ?.
বিশ্ব উষ্ণায়ন কি, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীতে কি হতে পারে ?.
ম্যাপ বা মানচিত্রের সাহায্যে পৃথিবী চিনবেন কিভাবে ?.
পৃথিবীর সাদা মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা কথা গুলি কি ?.
ভারতের ভূগোলের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর গুলি কি কি ?.
পৃথিবীর ভূগোলের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর গুলি কি কি ?.
বিশ্ব উষ্ণায়ন কি, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীতে কি হতে পারে ?.
ম্যাপ বা মানচিত্রের সাহায্যে পৃথিবী চিনবেন কিভাবে ?.
আমাদের
লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান ।
আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । ভূগোল বিষয়ে আরও
পোস্ট পড়তে নিচে ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
খুব সুন্দর হয়েছে 😊।
উত্তরমুছুনআমি একজন কলেজ ছাএ এবং ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা করছি।
যথেষ্ট সুন্দর ও সরল ভাষায় লেখা আছে ।এই ভাবেই লিখতে থাকো😊😊
HAVE A NICE DAY
Very Nice Post
উত্তরমুছুনVery Nice Post
Very Nice Post