ওজন বৃদ্ধির কারণ কি, ওজন কমানোর বিভিন্ন উপায় কি ?.
আমাদের
শরীরে যদি মেদের পরিমাণ অত্যধিক হয় ও অ্যাডিলোপ টিস্যুর বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হয় তখন
তাকে স্থূলত্ব বলা হয় । অতিরিক্ত মোটা বা বেশি ওজন আমাদের শরীরের সুস্বাস্থ্যের
লক্ষণ কখনোয় হয়না । আনুমানিক, একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ মানুষের ১৫ % এবং মহিলাদের ২৫
% মেদ শরীরে থাকে । আমাদের যদি এই মেদের পরিমাণ ৫ % বেশি হয়ে যায় তাহলে স্থূলত্বের
লক্ষণ দেখা যায় । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মত আজ ভারতে ও বাংলাদেশে এই সমস্যা দেখা
দিয়েছে । ওজন বৃদ্ধির ফলে রক্তের চাপ বাড়া, ডায়াবেটিস, হৃদপিণ্ডের নানা সমস্যা
দেখা দিতে পারে ।
খাদ্য – আমাদের শরীর বিভিন্ন কারণে মোটা বা ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকে । প্রধানত
খাদ্যের প্রভাবে আমদের শরীরে ওজন বৃদ্ধি হয় । খাদ্য শরীরের বিকাশ, বৃদ্ধি ও শক্তি
উৎপাদনের মূল কারণ । অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল ব্যক্তিরা তাঁদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক
বেশি খাদ্য গ্রহণ করে । এরফলে তাঁদের শরীরে মোটা হওয়ার লক্ষণ দেখ যায় । খাদ্যের
প্রধান উপাদান গুলি হল কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, খনিজ লবণ । কার্বোহাইড্রেট থেকে
শক্তি আসে ৬০-৭০ ভাগ, ফ্যাট থেকে আসে ২০-৩০ ভাগ, প্রোটিন থেকে আসে ১০-২৫ ভাগ শক্তি । আপনি যদি কার্বোহাইড্রেট ও
ফ্যাট জাতীয় খাবার খান, সেগুলি আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস হয় । কার্বোহাইড্রেট ফ্যাটের
তুলনায় সহজপাচ্য হয়ে থাকে । ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণ খেলে শরীর মোটা হওয়ার
সম্ভাবনা অনেক থাকে ।
বংশগত ধারা – অনেক মানুষ ধারণা করেন যে ওজন বৃদ্ধির আর একটি কারণ হল বংশগত ধারা ।
বংশগত ধারার সাথে ওজন বৃদ্ধির তেমন একটা সম্পর্ক নেই । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন হয়
যে সেই পরিবারে অনেক দিন ধরে তাঁদের খাদ্য তালিকায় বেশি তাপ-মূল্যের খাবার যেমন – ঘি, মাখন ও চিনি ইত্যাদি খাবার
খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে । এরফলে এই বংশের লোকেরা দীর্ঘদিন এরকম খাবার খাওয়ার ফলে মোটা হওয়া
এদের বংশগত পর্যায়ে পৌঁছে যায় । অধিক পরিমাণ তাপ মূল্যের খাদ্য দীর্ঘদিন বংশগত
ভাবে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করার ফলে একই বংশের লোকেরা একরকম মোটা হয় ।
শরীরচর্চা – শরীরচর্চা বা ব্যায়াম নিয়মিত না করার ফলে আমাদের শরীর মোটা হয়ে যায় ।
আমরা পার্বত্য এলাকায় মোটা মানুষ খুব কম দেখতে পাই । এর কারণ হল যে তাঁরা
প্রতিদিনের জীবনে কঠোর পরিশ্রম করেন । শরীরচর্চা বা ব্যায়াম না করার ফলে আমাদের
ক্যালোরি খরচ হয় না । তারফলে আমাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আবার যারা
পরিশ্রমের কাজ করেন তাঁদের ক্যালোরি খরচ বেশি হয়, আর যারা বসে বসে কাজ করেন তাঁদের ক্যালোরি খরচ কম হয় । ফলে যারা
পরিশ্রমের কাজ করেন না তাঁদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে ।
থাইরয়েড ও পিটুইটারি গ্রন্থি – অনেক সময় দেখা যায় যে
থাইরয়েড ও পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে উপযুক্ত হরমোন নিঃসৃত হয় না । এরফলে বিপাক ক্রিয়ায় সমস্যা দেখা যায় ।
তারফলে দেহের ওজন বৃদ্ধি পায় । এই কারণে মোটা হওয়া লোকের সংখ্যা প্রায় ৫ % এর কম
হয় । আবার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায় । আপনার বয়স যদি এখন ২৫ বছর
পার হয়ে যায় তাহলে প্রতি বছর আপনার ওজন ১ কিলোগ্রাম করে বাড়ার সম্ভাবনা আছে ।
এছাড়াও বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন কারণে ওজন বৃদ্ধি হয়ে থাকে ।
ওজন কমানোর বিভিন্ন উপায় কি -
১) ওজন কমানোর জন্য
আমাদের প্রধান কাজ হল খাবার খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । যখন তখন খাবার খাবেন না, খিদে পেলে তবে খাবার
খাবেন । খাদ্য তালিকায় অধিক পরিমাণ টাটকা শাকসবজি রাখতে হবে । ফ্যাট জাতীয় ও মাছ, মাংস যতটা সম্ভব কম
খাবেন । মিষ্টি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেল-ঝাল-মশলা যুক্ত খাবার না খাওয়া ভাল । মাছের কালিয়া মাসে
এক থেকে দুবার খাবেন । প্রতিদিনের রান্নাতে হালকা মশলা দিয়ে ঝোল রাঁধবেন । শর্করা
জাতীয়, ঠাণ্ডা পানীয় জাতীয়
খাবার কম খেতে হবে । মাঝে মাঝে যদি আপনার খিদে পায় তখন ফল, বাদাম, ছোলা সেদ্ধ, সেদ্ধ ডিম ইত্যাদি
খেতে পারেন । প্যাকেট জাত খাবার একদম খাওয়া নিষিদ্ধ । খাবার খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে
খাবার চিবিয়ে খাবেন । অনেকে আবার রোগা হওয়ার জন্য উপোষ করা শুরু করে দেন । এটা
প্রতিদিন করবেন না । খাবার খাওয়ার সময় আপনার যতটা খাদ্যের প্রয়োজন ততটা খান ।
প্রতিদিন আমরা খাদ্য থেকে যে পরিমাণ ক্যালোরি পাই তার থেকে বেশি পরিমাণ ক্যালোরি
বিভিন্ন কাজের দ্বারা খরচ করে হবে ।
২) খেলাধুলা বা ব্যায়াম বা শরীর চর্চার মাধ্যমে মেদের বাহুল্য দূর
করা যায় । প্রতিদিন নিয়মিত ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করতে পারেন । ব্যায়াম না করতে
পারলে প্রতিদিন সকাল বা সন্ধ্যায় ৪৫-৬০ মিনিট হাঁটুন । হাঁটার ফলে আপনার দেহে
ক্যালোরি খরচ হবে । চেষ্টা করবেন সকালে সূর্যোদয়ের আগে ও সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পরে
হাঁটার সময় নির্ধারণ করতে । সাঁতার কাটা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী । সাঁতার কাটার ফলে সারা দেহ সঞ্চালিত হয় । দেহকে সচল রাখতে সাহায্য
করে । সাঁতার কাটার ফলে আমাদের দেহের অনেক পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হয় । বাড়ি থেকে
বেরনোর সাথে সাথে গাড়িতে না গিয়ে হেঁটে রাস্তার মোড় বা স্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে
পারেন । সবসময় নিজেকে কোন পরিশ্রমের কাজের সাথে যুক্ত রাখুন ।
৩) যখন তখন ঘুমিয়ে পড়বেন না । খুব বেশি সময় ধরে ঘুমবেন না । বেশি সময়
ঘুমলে ওজন বৃদ্ধি পাবে । প্রতিদিন কম করে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমবেন । বেশি রাত করে ঘুমবেন না আর দেরি করে ঘুম থেকে উঠবেন না । যতটা সম্ভব
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমবেন ও সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করবেন । সারাদিন বসে থাকবেন না । বসে থাকার ফলে দেহে ক্যালোরি খরচ হয় না ।
এরফলে আপনার দেহের ওজন বৃদ্ধি পাবে । কাজের ফাঁকে ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টা অন্তর একটু সময়
নিয়ে কমকরে ৫ মিনিট হাঁটাচলা করবেন ।
৪) সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম জলের
মধ্যে মধু এবং লেবু মিশিয়ে খেতে পারেন । এছাড়া যদি আপনি
মধু লেবু মিশিয়ে গ্রিন টীও খেতে পারেন । রোগা হতে গ্রিন টির উপকারিতা মোটামুটি সবাই জানেন । এই খাবার খেলে অতিরিক্ত টক্সিন আপনার শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে । হলুদ, ধনে, জিরেগুঁরো ইত্যাদি মশলাগুলিকে কখনওই খাবার থেকে বের করে দেবেন না । কারণ এই মশলাই আপনাকে রোগা হতে সাহায্য করবে । খাবার খাওয়ার আগে সব সময় এক গ্লাস জল খান, জল খাওয়ার ফলে আপনার শরীর
থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেওয়া সম্ভব হবে । প্রচুর পরিমাণে জল খান । রাতের ডিনার হালকা করে করুন । পার্টির
মরশুমে কোনদিন খুব ফ্যাটি কিছু খাওয়া হলে, পরের দিন একদম হালকা খাবার খান । ওজন কমাতে
চিনিকে কিন্তু ভুলতেই হবে । চায়ে বা দুধে কখনওই চিনি দিয়ে খাবেন না । রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো খুবই দরকার ।
৫) উপরের কাজ গুলি করার সাথে সাথে এমনটা ভাববেন না যে, কেন আপনার ওজন কমছেনা
। এতদিন ধরে আপনার যে ওজন বেড়েছে তা একদিনে কি কমা সম্ভব । সময় দিন, তাড়াতাড়ি ফল পাওয়ার
আশায় ওলটো-পাল্টা কিছু করে বসবেন না । ধীরে ধীরে আপনার ওজন কমান, একসাথে বেশি ওজন কমলে
শরীর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে । এদিকে খেয়াল রাখবেন ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন
প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে
দয়া করে শেয়ার করুন । স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে স্বাস্থ্য
লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
অর্ডার করতে নীচের লিঙ্কে প্লিজ ক্লিক করুন।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
আমার সিস্ট হয়েছিলো এক বছর আগে আবার ঠিক হয়েগিয়েছিল। এর জন্য পেটের যন্ত্রণা হতো। মোটা হয়ে গিয়েছিলাম খুব শরীর টা বেখাপ্পা ভাবে বাড়ছিল। ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। সব ঠিক hoye giyechilo আবার শরীর খারাপ হচ্ছে সারাদিন পরিশ্রম করেও গ্রীন টি খেয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। বেখাপ্পা ভাবে মোটা হয়ে যাচ্ছি। গত বছর আমার ওজন ছিল 64। আমার boyos 20। এখন কত জানিনা। আমি কি করবো প্লিজ হেল্প।
উত্তরমুছুনযদি প্রতিদিন নিয়মিত সাইকেল করা হয়,তাহলে কি শরীরের ক্যালোরী কম হবে।
উত্তরমুছুনহ্যাঁ
উত্তরমুছুন