বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৯

পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ কি কি, আমাদের জীবনে তার কি প্রভাব ?.


 আমাদের এই পৃথিবী সব জায়গায় একই রকম সমান নয় । কোথাও উঁচু, আবার কোথাও ঢেউ খেলানো, আবার কোথাও সমতল বা নিচু । গঠন, উচ্চতা ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পৃথিবীতে প্রধানত তিন ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায় । ভূপৃষ্ঠের সবথেকে উঁচু অংশ হল পর্বত, মাঝারি মাপের উঁচু অংশকে মালভূমি ও সবথেকে নিচু বা সমতল অংশকে সমভূমি বলে ।
 এই সমস্ত ভূমিরূপ পৃথিবীর দু-ধরনের শক্তির জন্য তৈরি হয়েছে । আমরা যে মাটি বা ভূমির উপর দাঁড়িয়ে আছি সেটা কিন্তু স্থির নয় । ভূপৃষ্ঠ অনেক ছোটো ও বড়ো পাত দিয়ে গঠিত হয় । মহাদেশ ও মহাসাগর এই পাদ দিয়ে তৈরি । এগুলি একটা থকথকে(সান্দ্র) স্তরের উপর ভেসে বেড়ায় । ভাসতে ভাসতে এগুলো কখনও কাছে এসে ধাক্কা খায় বা দূরে সরে যায় । ধাক্কা খাওয়ার সময় ভূআলোড়নের সৃষ্টি হয় । এরফলে পর্বত, মালভূমি, সমভূমি বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ তৈরি হয় । এটা হল পৃথিবীর ভিতরের শক্তি । নদী, বায়ু, সমুদ্র তরঙ্গ, হিমবাহ এগুলি ভূমিরূপের উপর সব সময় কাজ করে ক্ষয় করে বা আবার অন্য স্থানে সঞ্চয় করে বিভিন্ন ভূমিরূপ তৈরি করে এটাই হল বাইরের শক্তি ।

 পৃথিবীর চারভাগের এক ভাগ হল পর্বত । সাধারণ ভাবে ৯০০ মিটার বা তার থেকে বেশি উঁচু, অনেকদূর বিস্তৃত, শিলাদ্বারা গঠিত ভূমিরূপকে পর্বত বলে । পর্বতের সবথেকে উপরের দিকে সূচালো, সরু অংশকে পর্বতের চূড়া বা পর্বত শৃঙ্গ বলে । অনেক পর্বতশৃঙ্গ একটি বিরাট উপত্যকা জুড়ে অবস্থান করলে তাকে পর্বতশ্রেণী বলে । এই ভাবে অনেক পর্বতশ্রেণী বিভিন্ন দিক থেকে এসে এক জায়গায় মিশে তাঁকে বলা হয় পর্বত গ্রন্থি ।

 উৎপত্তি অনুসারে পর্বত প্রধানত তিন প্রকার । ভূপৃষ্ঠের প্রবল চাপে পাতগুলি মাঝখানে ভাঁজ খেয়ে যে উঁচু পর্বত সৃষ্টি হয় তাঁকে ভঙ্গিল পর্বত বলে । হিমালয়, রকি, আলস, আন্দিজ ইত্যাদি হল ভঙ্গিল পর্বত । আবার  ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠে ফাটল তৈরি হয়ে মাঝের অংশ উঁচু হয়ে যায় বা পাশের অংশ নিচু হয়ে বসে যায় । মাঝের উঁচু অংশ স্তূপের মত পর্বত সৃষ্টি করে । একে স্তূপ পর্বত বলে । সাতপুরা, ভোজ, ব্ল্যাক ফরেস্ট ইত্যাদি হল স্তূপ পর্বত । আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় প্রচুর ছাই, লাভা, পাথর ইত্যাদি বেরিয়ে এসে চারিদিকে জমা হয়ে যে পর্বত তৈরি হয় তাকে আগ্নেয় পর্বত বলে । ফুজিয়ামা, কিলি-মাঞ্জারো, এটনা, ভিসুভিয়াস ইত্যাদি হল আগ্নেয় পর্বত ।


 সাধারণভাবে ৩০০ মিটারের বেশি উঁচু, চারিদিকে খাড়া ঢালযুক্ত, এরকম ভূমিভাগকে মালভূমি  বলে । পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশে রয়েছে মালভূমি । অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, এশিয়া, উত্তর আমেরিকাতে বড়ো বড়ো মালভূমি দেখা যায় । মালভূমিকে টেবিল ল্যান্ড বলা হয় । অবস্থান ও উৎপত্তির পার্থক্যের জন্য মালভূমি বিভিন্ন প্রকার হয় । পর্বতবেষ্টিত মালভূমি, যেমন – তিব্বত মালভূমি । মহাদেশীয় মালভূমি, যেমন – পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, দঃ আফ্রিকা, অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ড । লাভা গঠিত মালভূমি, যেমন – দাক্ষিণাত্য মালভূমি, মালব মালভূমি । ব্যবছিন্ন মালভূমি, যেমন – ছোটো নাগপুরের মালভূমি । তিব্বত মালভূমি হল পৃথিবীর সবথেকে বড়ো মালভূমি । পামীর মালভূমি (৪৮৭৩মিটার) হল পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি ।

 সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটারের কম উচ্চতা নিচু, সমতল, বিস্তীর্ণ ভূমিভাগ হল সমভূমি । সমভূমি উর্বর হয়, তাই পৃথিবীর বেশি মানুষ সমভূমিতে বাস করে । উত্তর আমেরিকার প্রেইরি, দঃ আমেরিকার পম্পাস, এশিয়ার গাঙ্গেয় সমভূমি ও আফ্রিকার নীলনদ সমভূমি হল বিশ্ববিখ্যাত সমভূমি । সমভূমি বিভিন্ন ধরনের হয় । সমুদ্র বা হ্রদের পলি জমে যে সমভূমি তৈরি হয় তাকে পলিগঠিত সমভূমি বলে । ভারতের সিন্ধু-গঙ্গা- ব্রহ্মপুত্রের সমভূমি পলি গঠিত সমভূমি । মরুভূমির বালি অনেক দুরে উড়ে গিয়ে সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমি তৈরি হয় তাকে লোয়েস সমভূমি বলে । আগ্নেয়গিরির লাভা জমে যে সমভূমির তৈরি হয় তাকে লাভা সমভূমি বলে । আইসল্যান্ডে লাভা সমভূমি দেখতে পাওয়া যায় ।

 ভূমিরূপের সাথে মানুষের জীবনের সম্পর্ক খুব নিবিড় । ভূমিরূপ মানুষের জীবিকা, জীবন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে । ভূমির প্রকৃতি অনুসারে মানুষ তার মানানসই জীবনযাত্রা গড়ে তুলেছে । পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলি থেকে সারাবছর জল পাওয়া যায় । এই নদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সাহায্য করে । নরম মূল্যবান কাঠ পার্বত্য অঞ্চলে পাওয়া যায় । পর্বতের ঢালে ধাপ চাষ ও পশুপালন করা হয় । এখানে আরামদায়ক আবহাওয়ার জন্য পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে ।

 মালভূমিতে খনিজ সম্পদ পাওয়া যায় । বড়ো এলাকা জুড়ে পশুচারণ করার ক্ষেত্র তৈরি হয় । এই অঞ্চলে খুব কম চাষ হয় । সমভূমিতে পলি থাকার জন্য সমভূমি উর্বর হয় । সমভূমিতে কৃষিকাজ খুব ভাল হয় । বেশিরভাগ শহর, জনপথ, নগর সমভূমিতে দেখা যায় । সমভূমিতে শিল্প, ব্যবসা –বাণিজ্য, পরিবহণ ব্যবস্থা সবকিছু সুবিধা বেশি পাওয়া যায় । তাই সমভূমি অঞ্চলে পৃথিবীর সবথেকে বেশি মানুষ বসবাস করে । 

 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনও প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । ভূগোল বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

আমাদের আরও পোস্ট পড়ুন - 
পৃথিবীর সাদা মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা কথা গুলি কি ?.
ভারতের ভূগোলের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর গুলি কি কি ?.
পৃথিবীর ভূগোলের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর গুলি কি কি ?.
বিশ্ব উষ্ণায়ন কি, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীতে কি হতে পারে ?.
বায়ুমণ্ডল কাকে বলে, বায়ুদূষণের কারণ ও ফলাফল কি ?.

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷