রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৯

ব্যান্ডেল চার্চ, পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম গির্জার জানা অজানা কথা কি ?.


 ব্যান্ডেল চার্চ পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম গিরজাগুলির মধ্যে হল একটি । বাংলায় পর্তুগীজ উপনিবেশের স্মৃতি হিসাবে একে দেখা হয় । ১৫৭১ সালে পর্তুগীজরা ব্যান্ডেলকে তাদের বন্দর হিসাবে ব্যবহার শুরু করে । মোঘল সম্রাট আকবর তাদের হুগলীতে একটি নগর তৈরির অনুমতি দিয়েছিলেন । ১৫৭৯ সালে পর্তুগীজরা হুগলী নদীর তীরে একটি বন্দর তৈরি করে । এরফলে এই স্থানটি একটি বাণিজ্য কেন্দ্র তৈরি হয় ।  ১৫৯৯ সালা ব্যান্ডেলে একটি গির্জা তৈরির জন্য গোয়া থেকে একজন অগাস্টিন পন্থী মঠবাসী সন্ন্যাসীকে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন । এখানে বসবাস শুরু করলে, তাদের পাদ্রিরা স্থানীয় লোকেদের ধর্মান্তরিত করতে শুরু করেন । 


 পর্তুগীজরা নিজেদের জন্য এখানে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন । ১৫৮০ সালে ক্যাপ্টেন পেড্রোড্রোভার সম্রাট আকবরের কাছে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার ও চার্চ প্রতিষ্ঠার জন্য অনুমতি পান । ১৫৯৯ সালে চার্চটি গঠিত হয় । এটি হল বাংলার মাটিতে প্রাচীনতম চার্চ ।


 কিন্তু, পর্তুগিজদের সুখের দিন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি হুগলীতে মোঘল আক্রমণ হলে পর্তুগিজরা চূড়ান্ত ভাবে পরাজিত হয় এবং তাদের গির্জা ও কেল্লা ধ্বংস হয়ে যায়। । ফাদার জন দ্য ক্রুজ নামে একজন পুরোহিত ও কয়েক হাজার খ্রিস্টানকে দিল্লিতে শাহজাহানের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় । তিনি তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেন ।  তাদেরকে ভয়ানক হাতির সামনে দাঁড় করানো হয় ।  কিন্তু, অবাক করা ঘটনা ঘটে ।  হাতিটি ফাদার জন দ্য ক্রুজ কে শুঁড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে সম্রাটের সামনে নতজানু হয়ে বসে পড়ে । এমন ভাবে যেন সে সম্রাটের কাছে ক্ষমা পার্থনা করছে । এই ঘটনায় সম্রাট শাহজাহান গভীরভাবে প্রভাবিত হলেন । তিনি বন্দীদের মুক্তি দিয়ে ব্যান্ডেলে ফেরত পাঠিয়ে দেন । সম্রাট শাহজাহান গির্জাটি আবার নতুন করে তৈরি করার জন্য ১৬৩৩ সালে অর্থ এবং ৭৭৭ বিঘা জমি দান করেন । এরপর থেকে এটি অনেকবার পরিবর্তিত হয়েছে ।

 এমন শোনা যায় যে – একদিন ঝড়ের রাতে ফাদার জন ডি ক্রুজ নদীর তীরে একটি আলো দেখেন, তাঁর এক পরিচিত বন্ধু  দিয়াগের গলার আওয়াজ শোনেন । দিয়াগ বলছেন – মা মেরি আমাদের জয় আনে দিয়েছে, তিমি ফিরে আসছেন । পরের দিন ফাদার  জন ডি ক্রুজ নদীর তীরে মা মেরির মূর্তি খুঁজে পান । মূর্তিটি এনে গির্জার মূল বেদিতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ।  ১৯৯০ সালে মূর্তিটি গির্জার ব্যালকনিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ।


 গির্জার সম্মুখে একটি জাহাজের মাস্তুল রয়েছে । একবার বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঝড়ে জাহাজডুবি থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন বলে জাহাজের ক্যাপ্টেন ও নাবিকরা একটি মাস্তুল দান করার অঙ্গীকার করেন । ব্যান্ডেল গির্জায় খ্রিষ্ট যজ্ঞে অংশ গ্রহনের পর ক্যাপ্টেন একটি মাস্তুল গির্জায় দান করেন । সেই মাস্তুলটি এখনও গির্জা প্রাঙ্গণে রাখা আছে  আজও সেটি গির্জায় দেখা যায় । মাস্তুলকে পর্তুগিজ ভাষায় ব্যান্ডেল বলা হয় 

 এই গির্জাটির কারুকার্য খুব সুন্দর । এখানে প্রার্থনা গৃহ, মাস্তুল, কবর স্থান, মা মেরির মূর্তি, চারমুখ বড়ো ঘড়ি, যীশুর দেওয়াল চিত্র বিখ্যাত । গির্জায় তিনটি পূজাবেদি, কয়েকটি সমাধিপ্রস্তর, একটি পাইপ অর্গ্যান ও মেরির একটি সিংহাসন রয়েছে ।


 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ   

আমাদের আরও পোস্ট পড়ুন- 

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷