বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে কি রহস্য লুকিয়ে আছে ?.
আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত বারমুডা ট্রায়াঙ্গল যাকে
আবার শয়তানের ট্রায়াঙ্গল বলা হয়, সেখানে কি রহস্য লুকিয়ে রয়েছে ? যেখানে জাহাজ বা
উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় । কাজ করা বন্ধ করে দেয় চুম্বক । কারণ হিসাবে অনেকে মনে করেন
স্বাভাবিক দুর্ঘটনা, আবার অনেকে মনে করেন যে আর জন্য দায়ী কোনও অতিপ্রাকৃতিক শক্তি বা ভিনগ্রহের প্রাণীর
উপস্থিতি । এর পিছনে কি কারণ রয়েছে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি । নেই কোন
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা । বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন অতিরঞ্জিত লেখাতে জায়গাটিকে আরও
রহস্যময় করে তুলেছে ।
বারমুডা দ্বীপদেশটি গঠিত ১৪৫ টি দ্বীপ নিয়ে । সব দ্বীপগুলি কোরাল দিয়ে তৈরি । মোট আয়তন ২১ বর্গমাইল । এই দ্বীপগুলির মধ্যে ১২০ টির নাম করণ করা হয়েছে । এর মধ্যে মাত্র ২০ টি দ্বীপে জনবসতি গড়ে উঠেছে । এদের মধ্যে সবার বড়ো দ্বীপটির নাম বারমুডা, যার রাজধানী হ্যামিলটন । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বাধিক উচ্চতা ২৬০ ফুট । স্পেনের এক সমুদ্র সন্ধানী ব্যক্তি যার নাম জুয়ান বারমুডেজ তিনি ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে এই দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কার করেছিলেন । তাঁর নাম অনুসারে এই দ্বীপপুঞ্জের নাম রাখা হয়েছে । বর্তমানে ব্রিটিশ উপনিবেশ হলেও বারমুডার স্বায়ত্ত শাসনের অধিকার আছে ।
এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের
অবস্থান আটলান্টিক মহাসাগরের ঠিক কোথায় তা নিয়ে অনেক মতভেদ আছে । এক মতানুসারে - আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অ্যাটলান্টিক
মহাসাগরের উপর একটি ত্রিভুজাকৃতি অঞ্চল কল্পনা করা হয় । যাকে বলা হয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গল । ফ্লোরিডা বন্দরের
শেষ প্রান্তকে একটা বিন্দু ধরে সেই বিন্দুর সাথে বারমুডা আর পুয়ের্তো রিকো দ্বীপ দুটোকে যোগ করা হলে যে ত্রিভুজ তৈরি হয় তাকেই বলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল । এর মধ্যে পড়ে পুয়ের্তো রিকো, বাহামাস আর বারমুডা । অন্য মতানুসারে – ফ্লোরিডা প্রণালী, বাহামাস ও
সমগ্র ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ সহ পূর্ব অ্যাটলান্টিক অঞ্চল পর্যন্ত এর অবস্থান ।
১৯৪৫
সালের ৫ ডিসেম্বর ১৪ জন বিমান শিক্ষানবিশ তাঁরা প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর ফ্লোরিডা
থেকে রওনা দিয়েছিল । কিন্তু দেড় ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পর পাইলট বুঝতে পারেন কোনও একটা
সমস্যা দেখা দিয়েছে । কিন্তু কি সেই সমস্যা তিনি বুঝতে পারলেন না । একসাথে তিনটি
কম্পাস কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । পশ্চিম দিকে যাওয়ার কথা হলেও পশ্চিম দিক কোনটা
তিনি বুঝতে পারছেন না । স্রোত যেন এখানে থেমে গিয়েছে । বিমান যত এগোচ্ছে সামনে
অল্প আলো দেখা যাচ্ছে । কিন্তু কি সেই আলো বোঝা যাচ্ছেনা । বিমান চালাতে খুব
সমস্যা হচ্ছে । এই বিমানটি আর ফিরে আসেনি । তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি । সেইদিন এই
বিমানটিকে খোঁজার জন্য আরও একটি বিমান পাঠানো হয় । ১৩ জন মানুষ সমেত সেই বিমানটি
রওনা দেওয়ার ২৭ মিনিট পর হারিয়ে যায় । কোথায় হারিয়ে গেল পর পর দুটি বিমান, তার
উত্তর এখন অজানা । বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে নিয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশিত হয় ১৯৫০
সালের ১৬ সেপ্টেম্বর The Associated Press পত্রিকায় ।
এইরকম ঘটনা প্রথম নজরে আসে ক্রিস্টোফার
কলম্বাসের, তিনি যখন আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন । তিনি এক জায়গায় গিয়ে দেখলেন যে –
এখানে কিছু আলো চকচক করছে । সমুদ্র একেবারে স্থির হয়ে আছে । কিন্তু সেগুলি কিসের
আলো সেটা বোঝা যাচ্ছেনা । যেন মনে হয় রাস্তা এখানে শেষ হয়ে গিয়েছে । কম্পাস ও চুম্বক
সব কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । জাহাজ আর এগোবেনা ।
১৮৭২ সালে ‘মারি সেলেস্ত’ নামের একটি মালবাহী জাহাজ নিউইয়র্ক বন্দর থেকে রওনা হয়ে অনেকদিন কেটে যাওয়ার পর যখন সেটি গন্তব্যে পৌঁছায়নি, তখন তার খোঁজ শুরু করা হয় । সেই জাহাজটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কাছে পাওয়া যায় । সবকিছু অক্ষত ছিল কিন্তু, জাহাজের ১১ জন কর্মীকে পাওয়া যায়নি ।
১৯১৮ সালে এরকম ‘ইউএসএস সাইক্লোপস’ নামক একটি জাহাজ আমেরিকা যাচ্ছিল, সেই
জাহাজ আর ফিরে আসেনি । ৩০৯ জন যাত্রীসহ কোথায় গেল তার হিসাব পাওয়া যায় না । ১৯৩৬ সালে ‘মেরিন সালফার কুইন’ নামে একটি জাহাজ ১৫ হাজার টন গলিত সালফার ও ৩৯
জন নাবিক নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় ।
১৯৩৭
সালে
একটি
উড়োজাহাজ
ফ্লোরিডার
উপকূলের
আকাশে
উধাও
হয়ে
গিয়েছিল
। কিন্তু, তাঁর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়না । কোনও
স্থানীয়
খবরের
কাগজে
এই
ঘটনার
উল্লেখ
পাওয়া
যায়না
। ১৯৪১ সালে ‘ইউএসএস প্রটিয়াস’ ও ‘ইউএসএস নিরিয়াস’ নামের দুটি
জাহাজ নিখোঁজ হয়ে যায় ।
১৯৫৮ সালে ফ্লোরিডাতে একটি ঘটনা ঘটে । হার্ভি কোনভার নামে এক ব্যবসায়ী তার ইয়াচ নিয়ে প্রচণ্ড ঝড়ের মুখে পড়ে ঝড়ের উল্টো দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন । তাকে ও তাঁর ইয়াচকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি ।
১৯৬৭ সালের একটা ঘটনা, উইচক্র্যাফট নামে একটি জাহাজের ক্যাপ্টেন যখন জানালেন যে ইঞ্জিনের
গোলমাল দেখা দিয়েছে, তখন সেই জাহাজটি নোঙর করা থেকে মাত্র ১ মাইল দূরে ছিল । কিন্তু,
কোস্ট গার্ড যখন সেখানে পৌঁছল সেই জাহাজকে সেখানে পাওয়া গেলনা ।
অ্যালাম অস্টিন তিনি জাহাজ নিয়ে গিয়েছিলেন
এখানে কি আছে তা নিয়ে গবেষণা করার জন্য । তিনি দেখেন সেখানে একটি ছোট জাহাজ আছে ।
ছোট জাহাজের লোকেরা অস্টিনকে চিনতেন । কিন্তু, রহস্য সমাধান করার আগে সেই ছোটো
জাহাজটি হারিয়ে যায় । অস্টিনরা সেই জাহাজের আর কোনও নাগাল পাননি ।
এই রহস্য সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করেছেন ও এখনো চেষ্টা চালাচ্ছেন । প্রচুর গবেষণার পর ২০১৬ সালের ৪ মার্চ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে, তাতে জানা যায় যে প্রায় ৩০০ টির মত জাহাজ আর ৭৫ টির মত বিমান নিখোঁজ হয়েছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে ।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যের কারন -
বারমুডাতে এত রহস্যের কারন হিসাবে বিভিন্ন
ব্যাখ্যা রয়েছে । সমুদ্রের প্রচণ্ড ঝড়ের জন্য এমন ঘটনা হতে পারে । ক্যারিবিয়ান
হ্যারিকেন প্রচণ্ড শক্তিশালী, বহু মালবাহী জাহাজ এই ঝড়ে ডুবে গেছে । এরফলে কত প্রাণহানি
হয়েছে । এখানে এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে ।
সমুদ্রের স্রোতের জন্য এরকম হতে পারে । মেক্সিকো
উপসাগরে এই স্রোতের গতি সেকেন্ডে ২.৫ মিটার । ছোটো প্লেন বা নৌকার যদি গোলমাল দেখা
যায় তবে এই স্রোত তাকে অনেক দূরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ।
এখানে রয়েছে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক, যার ফলে এখানে কোনও কম্পাস ও চুম্বক কাজ করে না । এখানে রয়েছে ইলেক্ট্রনিক কুয়াশা । এরফলে বিমান বা জাহাজের চালকরা দিক ভুল করেন । এভাবে তাঁরা রাস্তা হারিয়ে ফেলে । এখানে রয়েছে একটি গুপ্ত নদী, সেটি সধারন অবস্থায় শান্ত থাকে । যখন কোনও জাহাজ সেখান দিয়ে যায় তখন তাঁর ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ডে পড়ে সেগুলি হারিয়ে যায় ।
সাগরের অগভীর অংশে প্রাকৃতিক গ্যাস থাকে, তার
থেকে অনেক সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে । তারপর ধ্বংসাবশেষ ভেসে
ওঠে সেগুলি অনেক দূরে ভেসে যায় । আবার জলদস্যুরা জাহাজ লুটকরে জাহাজ ডুবিয়ে দেয় ।
ড্রাগ পাচারকারীরা ছোটো ছোটো ইয়াচ চুরি করে ।
অনেকে মনে করেন এখানে রয়েছে অ্যালিয়ান । তাঁরা
এখানে স্পেস যানে করে এসেছিল । আবার অনেকের মতে এখান থেকে কোনও অন্য দুনিয়াতে বা
অন্য কোনও গ্রহে পৌঁছনো যায় । যদিও এর কোনও বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনও প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷