স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় সঠিক ভাবে ঘুমনোর উপায় গুলি কি কি ?.
আমরা প্রতিদিন সকাল থেকে
সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা কাজ করি । বিছানায় শুলে চোখ বন্ধ হয়ে আসে । নতুন সূর্যের
আকর্ষণে দেহ ও মনে নতুন শক্ত নিয়ে আমাদের ঘুম ভাঙ্গে । ঘুম মানুষের জীবনে একটি
স্বাভাবিক ঘটনা । কিন্তু, অনেক মানুষ আছেন যারা রাতে ভালকরে ঘুমতে পারেন না । যদি
আপনার রাতে সঠিক ঘুম না হয় তাহলে আপনার বিভিন্ন সমস্যা যেমন – হৃদপিণ্ডের,
ফুসফুসের ক্ষতি, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, মানসিক উৎকণ্ঠা বাড়া ইত্যাদি দেখা যায় ।
মেলাটোনিন কম তৈরি হওয়ার ফলে চোখের তলায় কালি পড়ে, গায়ের রং কালো হয়ে যায় ।
বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন কারণে ঘুম হয়না । মনে
যদি চিন্তা থাকে, রাতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত চা, কফি, সিগারেট খাওয়া,
মদ্যপান করা ইত্যাদি । আবার অনেকে অসুস্থ থাকেন যেমন – যক্ষ্মা, হাঁপানি,
শ্বাসকষ্ট, মাথার যন্ত্রণা ইত্যাদি । আবার অনেকের কোনও নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু বা
বিচ্ছেদ ঘটে থাকলে ।
ঘুম বলতে কি বোঝায় ? বিজ্ঞানীদের মতে – আমাদের
মস্তিষ্কে যদি রক্ত সরবরাহের ঘাটতি দেখা যায় তবে আমাদের ঘুম আসে । আধুনিক
বিজ্ঞানীদের মতে – আমাদের মস্তিষ্কে ‘হাইপোথ্যালামাস’ অংশের পিছনে বিশেষ স্নায়ুকোষ
থাকে । এই স্নায়ুকোষ গুলি থেকে এক প্রকার রাসায়নিক সংকেত পাঠায়, যার জন্য আমাদের
ঘুম আসে ।
সঠিক ভাবে ঘুমনোর উপায় কি
কি –
১) দুশ্চিন্তা দূর
করুন – বেশিরভাগ মানুষের ঘুম না হওয়ার প্রধান কারণ দুশ্চিন্তা করা । বিছানায়
শুলে পৃথিবীর যত চিন্তা মাথায় ভিড় করে । বিভিন্ন কথা চিন্তা করতে করতে অস্থির হয়ে
পড়েন । তখন ঘুম আসতে দেরি হয় । তাই, আপনার বিছানায় শুয়ে যে কথা ভাবলে মনে ভালোলাগা
তৈরি হয় শুধু সেই কথা ভাবুন । যা ভেবে আপনি কষ্ট পান সেই চিন্তা বাদ দিন । জীবনে
কোনও দুঃখের কথা বেশিদিন মনে রাখবেন না । তাতে আপনি কষ্ট ছাড়া আর কিছু পাবেন না ।
২) মনের ইচ্ছা –
অনেক মানুষের জীবনে বিভিন্ন ইচ্ছা থাকে, তা পূরণ করার চেষ্টা সে সবসময় করে ।
কিন্তু, যখন দেখা যায় যে তাঁর মনের ইচ্ছা পূরণ হয়না তখন উৎকণ্ঠা, উৎবেগে তাঁর ঘুম
আসেনা । তাই, স্বপ্ন দেখা ভাল, কিন্তু, যা পূরণ হওয়ার নয় তা পূরণ করতে গিয়ে নিজের
খাওয়া, ঘুম ছেঁড়ে নিজেকে কষ্ট দেবেন না । আপনি জীবনে ততটা পাবেন যতটা আপনার পাওয়ার
যোগ্যতা আছে ।
৩) সঠিক খাবার –
রাতে ঘুমনোর আগে খাবারের মধ্যে উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার খাবেন না, আপনার হজমে
সমস্যা হবে । রাতে খাবার পর চা, কফি খাবেন না । এগুলি আপনার শরীরে ক্যাফিনের
মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয় । এরফলে আমাদের ঘুম আসতে দেরি হয় । লঘু ও সহজপাচ্য খাবার
খাবেন । রাতে ঘুমনোর আগে পারলে এক গ্লাস দুধ বা জল খাবেন ।
৪) নির্দিষ্ট সময়
– আপনি কি বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন, সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন । তাহলে আজই
এই অভ্যাস বদলে ফেলুন । বেশি রাত পর্যন্ত জেগে কাজ না করে সকালে তাড়াতাড়ি ওঠে কাজ
করা উচিত । কারণ – আমাদের পূর্বপুরুষ যখন বনে-জঙ্গলে থাকত তখন তাঁরা সূর্য ডোবার
পর তাড়াতাড়ি ঘুমতে চলে যেতেন আর খুব সকালে উঠে পড়তেন । বর্তমানে আমরা আর ঠিক উল্টো
কাজ করছি । আপনি প্রতিদিন একটি সময় নির্দিষ্ট করুন । সেই নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমবেন ।
রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমবেন ও সকাল সকাল উঠে পরবেন । প্রতিদিন কম করে ৬-৮ ঘণ্টা
আমাদের ঘুমের প্রয়োজন । অসুস্থ, বাচ্চা ও বৃদ্ধ ছাড়া দুপুর বেলা আমাদের ঘুমের তেমন
প্রয়োজন হয় না । তবে কাজের ফাঁকে একটু অবসর নিলে আমাদের মস্তিষ্ক তরতাজা হয় । পড়াশুনা করার জন্য আমাদের উপযুক্ত সময় হল ঘুমনোর
আগে ও ঘুম থেকে ওঠার পর । কারণ – এই সময় আমাদের মস্তিষ্ক বিশেষ প্রভাবশালী হয় ।
৫) শরীর পরিচর্যা
– আপনি ঘুমের আগে আপনার শরীরের কিছু পরিচর্যা করতে পারেন । ঘুমের আগে মাথায় চিরুনি
করলে মস্তিষ্কের ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় । এরফলে আমাদের সহজে ঘুম আসে । প্রতি
সপ্তাহে একদিন ঘুমের আগে ত্বকের পুষ্টির জন্য আঙুর, স্টবেরি, দুধ, মুলতানি মাটি
ব্যবহার করতে পারেন । ঘুমের আগে অবশ্যই মুখের মেকআপ তুলে ফেলবেন ।
শোয়ার আগে যদি আপনার শরীর ম্যাসেজ করতে পারেন
তাহলে খুব ভাল হয় । হাত, পা ভাল করে জল দিয়ে ধুয়ে নেবেন । চোখে মুখে জলের ঝাপটা
দিতে পারেন । হালকা ও ঢিলেঢালা জামা কাপড় পরে ঘুমবেন । হালকা গরম জল দিয়ে ত্বক ও
শরীর পরিষ্কার করে নিলে খুব ভাল হয় ।
৬) বিছানা –
বিছানার সঙ্গে ঘুমের একটা সম্পর্ক আছে । শোয়ার আগে বিছানা গুছিয়ে নিয়ে ভালকরে দেখে
নিন । প্রতিদিন অবশ্যই মশারি ব্যবহার করবেন । মশারির মধ্যে মশা, পিঁপড়ে, পোকামাকড়
বা অন্য কোনও বস্তু আছে কিনা দেখে নেবেন । বিছানা সবসময় পরিষ্কার রাখবেন । বেশি
নরম বা বেশি শক্ত বিছানা ও বালিশ ব্যবহার করবেন না । ঘুমের সময় আপনার শিরদাঁড়া
সোজা রাখবেন । দুটো বালিশ ব্যবহার না করলে ভাল হয় ।
৭) ঘুমের পরিবেশ
– ঘুমনোর আগে ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন । বিছানায় শোয়ার প্রায় আধ ঘণ্টা আগে থেকে
মোবাইল, টিভি বা ইলেক্ট্রনিক বস্তু ব্যবহার বন্ধ করুন । ঘরটিতে যতটা সম্ভব অন্ধকার
বা হালকা আলো থাকে । শোয়ার আগে জোরে জোরে কথা বলা বা গান শুনবেন না । আপনার যাতে
সহজে ঘুম আসে ঘরটি যেন তেমন ঠাণ্ডা হয় । ডাক্তার ছাড়া অন্য কারোর ওষুধ খাবেন না ।
৮) শোয়ার ধরন –
ঘুমনোর জন্য চিত হয়ে শোওয়া সব থেকে ভাল । তবে সারারাত একই ভাবে শুয়ে থাকবেন না ।
আপনার যে ভাবে শুলে আরাম হয় আপনি সেভাবে শুবেন । সারা শরীর ছড়িয়ে, এলিয়ে বা টান
টান হয়ে শোবেন না । দুটি হাঁটুর তলায় একটি কোল বালিশ নিতে পারেন ।
আমাদের লেখা
আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার
বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও পোস্ট
পড়তে নিচে স্বাস্থ্য লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো
পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷