শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৯

পৃথিবীর বৃহত্তম সাহারা মরুভূমির জানা অজানা কাহিনি কি ?


   পৃথিবীর  সবচেয়ে বড়, উষ্ণতম মরুভূমি হল আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি । সাহারা শব্দের অর্থ হল বিজন বা মরুভূমি । সাহারা  মরুভূমি এত বড় যে এর মধ্যে আড়াই খানা ভারতবর্ষ বা গোটা ইউরোপ মহাদেশ ঢুকে যাবে । সাহারা মরুভূমি আয়তন হল ৯,২০০,০০০ স্কোয়ার কিলো মিটার । সাহারা মরুভূমির সীমা হল উত্তরে আটলাস পর্বত, ভূমধ্য সাগর । দক্ষিণে সাহেল তৃণভূমি । পূর্বে লোহিত সাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর । দিগন্ত বিস্তৃত ধু ধু বালির প্রান্তর, পাথুরে পাহাড়, মাঝে মাঝে মরুদ্যান ও কাঁটা গাছ এগুলি নিয়ে সাহারা মরুভূমি ।

  উচ্চতা ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে সাহারা হল একটি ক্ষয়প্রাপ্ত মালভূমি । বাতাস এখানে  দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হওয়ার ফলে গাছ পালাহীন প্রান্তরে পাথরের গায়ে ধাক্কা লেগে নানা নকসা তৈরি হয় । সাহারাতে বিভিন্ন ভূমিরূপ দেখা যায় । যেখানে শক্ত পাথরে ভরতি, কোনও বালির কণা চোখে পড়েনা, সেই স্থান কে হামাদা বলে । আবার যে সব স্থানে বালির সাথে পাথরের টুকরো দেখা যায় তাকে রেগ বলে । এখানে যে সব শুকনো নদী দেখা যায়, তাদের খাত গুলোকে ওয়াদি বলে । যে সব জায়গায় বালির স্তূপ জমা হয়ে ছোট ছোট পাহাড়ের মতো তৈরি হয় তাকে আর্গ বলে । সাহারা মরুভূমিতে বিক্ষিপ্ত গাছপালা বিশিষ্ট অঞ্চল কে মরূদ্যান বলে । এখানে অনেক মরুদ্যান আছে । যেমন কুফরা, টিমিমন, বাহারিয়া, ঘারজাইয়া  সিউয়া ইত্যাদি ।

   সাহারাতে দিনের বেলায় ভীষণ গরম পড়ে, তাপমাত্রা প্রায় ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে যায় । রাতে আবার প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তাপমাত্রা কমে প্রায় ৪ ডিগ্রিতে নেমে আসে । সাহারাতে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি । বাতাসে কোন জলীয় বাষ্প না থাকায় বৃষ্টি হয় না । গরম কালের দিনের বেলায় মাঝে মাঝে বালির ঝড় হয় । একে স্থানীয় ভাষায় সাইমুম বলে । গরম কালে সাহারাতে  এক রকম শুকনো আর গরম বাতাস বয়, স্থানীয় ভাষায় একে খামসিন বলে । গিনি উপকূল অঞ্চলে একে খারমাটান বলে । তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য এখানে বাস করা কঠিন ।

   এখানে তেমন গাছপালা দেখা যায় না । তবে কিছু কিছু ক্যাকটাস জাতীয় গাছ, খেজুর গাছ , ঘাস দেখা যায় । চাষবাস তেমন ভাল হয়না । মরুদ্যানের জল দিয়ে জোয়ার, বাজরা, ভুট্টা ইত্যাদি চাষ হয় । পশুর দুধ ও মাংস সাহারার বাসিন্দাদের খাদ্য । সাহারা মরুভূমির প্রধান একটি উপজাতি হল তুয়ারেগ  যারা এখানে খাবার ও জলের জন্য পশুর দল নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাদের যাযাবর বলে ।

   সাহারার অধিবাসীদের প্রধান যাতায়াতের মাধ্যম উট । সেই জন্য উটকে মরুভূমির জাহাজ বলে । মরুভূমিতে যখন দল বেঁধে উট যায় তখন তাকে ক্যারাভান বলে ।
  
 লিবিয়া, আলজেরিয়াতে খনিজ তেল, গ্যাস ইত্যাদি পাওয়া যায় । এছাড়াও কয়লা, লোহা, আকরিক, লবণ ইত্যাদিও পাওয়া যায় । তবে অনুকূল অবস্থা না থাকার জন্য খনিজ সম্পদ আরোহণ করা সহজ নয় ।

   সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে এখন সাহারাতে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে । পুরনো উট চলার রাস্তার উপর পাকা চওড়া রাস্তা তৈরি করা হয়েছে । উঁচু বাড়ি, মসজিদ তৈরি করা হয়েছে । বিভিন্ন জায়গায় ঘাস লাগানো হয়েছে । খনি এলাকার সুবিধার জন্য বিমান বন্দর তৈরি করা হয়েছে । উটের বদলে ট্রাকে করে বাণিজ্য করা হচ্ছে । পশু পালক ও যাযাবর গোষ্ঠীর মানুষরা তেল, গ্যাস উত্তোলনে, বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ গাইড হিসাবে কাজ করছে 

  সাহারা মরুভূমিতে পাথরের উপর কিছু জলজ প্রাণীর ও উদ্ভিদের জীবাশ্ব পাওয়া গেছে । তা থেকে অনুমান করা হয় যে সাহারাতে আগে কোনো সময় বৃষ্টি বহুল অঞ্চল ছিল । তাহলে এখানে মরুভূমি সৃষ্টি হল কিভাবে ? জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য ধীরে ধীরে সাহারা মরুভূমি বৃষ্টিহীন, শুষ্ক এলাকাতে পরিণত হয়েছে । এখন দিন দিন পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, সাহারাতে গরমও বাড়ছে  সাহারার আয়তন দিন দিন তাই বাড়ছে । আশে পাশের গ্রাম গুলি এর মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে । কিন্তু, এখন আবার সাহারাতে বৃষ্টি হচ্ছে । পশুপালন, কৃষিকাজ হচ্ছে । ভবিষ্যতে জলবায়ুর পরিবর্তন ও মানুষের চেষ্টায় সাহারাতে হয়তো  পরিবর্তন আসতে পারে । আমরা তাই আশা করি ।
   আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনও প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।



0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷