সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯

ভারতের মিসাইল ম্যান ডঃ এ. পি. জে আব্দুল কালামের বাংলা জীবনী


 তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে শেখো’ এ.পি.জে আব্দুল কালাম ।  
 ভারতের এক উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক হলেন আমাদের এই মহা মানব যিনি একাধিক গুনের অধিকারী তিনি ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, লেখক ও সমাজচিন্তক, ছিলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি (২০০২ - ২০০৭)। যার উন্নত চিন্তাধারা আমদের চলার পথকে পাথেয় করে তুলবে তিনি আধুনিক যুগের নবীন প্রজন্মের প্রতীকক্ষেপণাস্ত্র বিজ্ঞানীদের অনুপ্রেরণা অনাথ শিশুদের ভগবান অসহায়ের শেষ সম্বল বাঙালি না হয়েও বাংলা সমগ্র ভারতের পরম প্রিয় অধ্যাপকবিজ্ঞানীরাষ্ট্রপতি আবুল পকির জয়নুল আবেদিন  আব্দুল কালাম


 ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর তামিলনাড়ুর রামেশ্বরম দ্বীপ সাগরের এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম ছিল জয়নুল আবেদিন ও মা ছিলেন আসিয়ানা । বাবা মৎস্যজীবী ছিলেন । খুব বেশি শিক্ষিত ছিলেন না । একজন সৎ ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ ছিলেন । মা ছিলেন সংসারীসারাদিন সংসারের কাজ নিয়ে থাকতেন । আর ছিল তিন ভাই ও এক বোন । তাঁর পিতা ছিলেন বিদ্যানুরাগী ও মাকে তিনি ভীষণ শ্রদ্ধা ভক্তি করতেন । ছেলের প্রতি মায়ের ছিল অগাধ আস্থা । লেখাপড়া শিখে ছেলে যে অনেকদূর যাবে মা ঠিক জানতেন । মায়ের সেই স্বপ্ন সত্যি করতে পেরেছিলেন আব্দুল । কিন্তুতাঁর জীবনের রাস্তাটা সহজ ছিল না ।

  কালামের পরিবার ছিল অত্যন্ত গরিব । অল্প বয়স থেকেই পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তাকে কাজ করা শুরু করতে হয় । স্কুলে পড়ার সময় রোজগারের জন্য খবরের কাগজ বিক্রি করতে হয়েছে । তিনি ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও কঠোর পরিশ্রমী ছাত্র । প্রায় তীর্থযাত্রীরা ভিড় করতেন রামেশ্বরম শিব মন্দিরে । তীর্থযাত্রীদের পরিবহনের  কাজ শুরু করলেন । এক ঘূর্ণিঝড়ে কালামের পিতা যে নৌকো তৈরি করেছিলেন ধ্বংস হয়ে যায় । শিক্ষকদের তিনি মান্য করতেন । তাঁর এক শিক্ষক ছিলেন ইয়াদুরাই সলেমানযার আদর্শের কথা তিনি মনে প্রাণে সযত্নে লালন পালন করে এসেছেন ।

  তিনি রামনাথপুরম স্কোয়াৎজ হাইস্কুলপরে ১৯৫০ সালে তিরুচিরাপল্লির সেন্ট জোসেফ কলেজে পদার্থ বিদ্যায় ভর্তি হন । এরপর তিনি মাদ্রাজ ইনস্টিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তি হন । সবসময় দুটি এরোপ্লেন সামনে থাকতআর থাকত উড়ার যন্ত্রপাতি ।   মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট থেকে প্রযুক্তিবিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা করেন । ১৯৫৪ সালে কালাম সম্মানের সাথে বি. এস. সি পাশ করেন । পদার্থ বিজ্ঞানের তরুণ গবেষক হলেন । শুধু পদার্থ বিজ্ঞানে পণ্ডিত হয়ে উঠলেই চলবেনাইঞ্জিনিয়ারিংটা ভাল করে শিখতে হবে । বাবার টাকা না থাকার জন্য তাঁর বোন গহনা বিক্রি করে দাদার হাতে টাকা তুলে দিয়েছিল ।  

 তাঁর স্কুলজীবন থেকেই স্বপ্ন ছিলো, ভারতীয় বায়ু সেনার একজন বিমান পাইলট হওয়ার কিন্তু সেই স্বপ্নকে তিনি ভবিষ্যতে পূরণ করতে একটুর জন্য ব্যর্থ হন  কালাম তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন বিজ্ঞানী হিসেবে । পরে গণপ্রজাতন্ত্রী ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন । রকেট উন্নয়নের কাজে অবদানের জন্য তাকে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানববা মিসাইল ম্যান অব ইন্ডিয়াবলা হয় । চল্লিশ বছর তিনি প্রধানত রক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন (ডিআরডিও) ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন ISRO-তে কাজ করার সময় তিনি দেশ-বিদেশে অনেক খ্যাতি অর্জন করেন । তিনি প্রখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানি ডঃ বিক্রম সারাভাই এর অধীনে কাজ করতেন ।
১৯৯৮ সালে পোখরানে পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ পরীক্ষার প্রধান সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক ভুমিকা তিনি পালন করেছিলেন ।  বিশ্বের মহাশক্তিধর দেশ গুলিকে বুঝিয়ে দিলেন  ভারতবর্ষও বিশাল শক্তি ধারণ করতে পারে ।  
  
 ২০০২ সালে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত হলেন । তিনি ছোট বাচ্চাদের খুবই ভালোবাসতেন । তিনি তাঁর বেতনের টাকা দিয়ে অনাথ শিশুদের ব্যয়ভার ও আহার তুলে দিতেন । তিনি কর্মক্ষেত্রে কোনদিন বন্ধ করতেন নাছুটির দিনেও কাজ করতেন । ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন ।

 এ.পি.জে আব্দুল কালামের মহামূল্যবান বাণী তার মধ্যে কিছু -
১. একটি ভালো বই একশ ভালো বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান
. স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও
স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না
. মানুষ তার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারে না, কিন্তু অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে।
অভ্যাসই মানুষের ভবিষ্যত পরিবর্তন করে দেয়।
. জীবন ও সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক জীবন শেখায় সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে
. কঠিন কাজে আনন্দ বেশি পাওয়া যায় তাই সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ কঠিন হওয়া উচিত
. যারা মন থেকে কাজ করে না, তারা আসলে কিছুই পায় না আর পেলেও সেটা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়
. তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার বার্তা হলো - তাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করবার সাহস থাকতে হবে
মনের ভেতর আবিষ্কারের তাড়না থাকতে হবে
নিজের সমস্যা নিজে মেটাবার মানসিকতা থাকতে হবে
. কাউকে হারিয়ে দেয়াটা খুব সহজ, কিন্তু কঠিন হলো কারো মন জয় করা
. তুমি যদি তোমার কাজকে স্যালুট করো, দেখো তোমাকে আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না
কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান করো, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমার সবাইকে স্যালুট করতে হবে
১০. জীবনে সমস্যার প্রয়োজন আছে
সমস্যা আছে বলেই সাফল্যে এতো আনন্দ
১১. যে হৃদয় দিয়ে কাজ করে না, শূন্যতা ছাড়া সে কিছুই অর্জন করতে পারে না
১২. ফেল করে হতাশ হয়ো না। ইংরেজি শব্দ ফেল ‘Fail’ মানে ‘First Attempt in Learning’ অর্থাৎ শেখার প্রথম ধাপ
বিফলতাই তোমাকে সফল হবার রাস্তা দেখিয়ে দেবে
১৩. সেই ভালো শিক্ষার্থী যে প্রশ্ন করে প্রশ্ন না করলে কেউ শিখতে পারে না শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে
১৪. সমাপ্তি মানেই শেষ নয় ‘END’ শব্দটির মানে হচ্ছে ‘Effort Never Dies’ অর্থাৎ প্রচেষ্টার মৃত্যু নেই
১৫. একজন খারাপ ছাত্র একজন দক্ষ শিক্ষকের কাছ থেকে যা শিখতে পারে তার চেয়ে একজন ভালো ছাত্র একজন খারাপ শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেশি শিখতে পারে
  ২০১৫ সালে ২৭ জুলাই শিলং  ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে ‘বসবাসযোগ্য পৃথিবী’ বিষয়ে ভাষণরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন  জীবনের শেষদিন পর্যন্ত শিক্ষামূলক কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন তাঁর মৃত্যুতে ভারত সরকার ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেন ।   তিনি স্কুলকলেজ  সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলিকে ছুটি না দেওয়ার নির্দেশ দেন  তাঁর অনন্য কীর্তি ও দেশত্বভাব প্রত্যেকটা মানুষের কাছে আজও এক মহান অনুপ্রেরণা তাঁর কর্মময় জীবনের অবসান ঘটেছিল ঠিকই কিন্তুআমরা তাঁর চলার পথকে অনুসরণ করার পথ প্রদর্শন করি  

   আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোনও প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জীবনী বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জীবনী লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
লেখিকা - শ্রীমতী সুজাতা মাইতি. (শিক্ষিকা).

অর্ডার করতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।


0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷