শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৯

বিশ্বকবি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা জীবনী


'আগুনকে যে ভয় পায়, সে আগুনকে ব্যবহার করতে পারেনা'- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । ১২৬৮ সালের ২৫ বৈশাখ ( ইং ১৮৬১ সালের ৭ই মে ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে এক অসাধারণ প্রতিভাধর শিশুর জন্ম হয় । শুধু বাংলার বা বাঙালির নয় ভারতের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন । তিনি ছিলেন কবি, সংগীতকার, নাট্যকার, চিত্রকর, অভিনেতা, ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, প্রাবন্ধিক । পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতার নাম সারদা দেবী । রবীন্দ্রনাথ ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অষ্টম সন্তান । দেবেন্দ্রনাথ ধনী হওয়ার জন্য তাঁর পরিবারের আদব কায়দা ছিল ভিন্ন । ঠাকুর বাড়ি সেই সময় কলকাতার শ্রেষ্ঠ ধনী ও সংস্কৃতিবান পরিবার হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করে । 

  সে সময়কার দিনে ধনী পরিবারের সন্তানদের সময় কাটত আয়া দাস-দাসীদের দেখাশুনায় । শুধুমাত্র রাত্রে পিতা-মাতার সান্নিধ্য পেত । ছোট রবীন্দ্রনাথ কেও চাকরদের শাসন মেনে চলতে হত ।

 ছেলেবেলা থেকে বিদ্যালয়ের বাঁধা-ধরা নিয়ম তাঁর মোটেই ভাল লাগতনা । বাড়ির বড় দাদারা বিদ্যালয়ে যায় দেখে রবীন্দ্রনাথের বিদ্যালয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়েছিল কিন্তু, কিছুদিন যাওয়ার পর তাঁর বিদ্যালয় আর ভাল লাগেনা । ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুলে রবীন্দ্রনাথকে প্রথম ভর্তি করা হয়েছিল । এরপর  নর্মাল স্কুলে । তারপর বাড়িতে পড়াশুনা করতে আরম্ভ করলেন । পিতা ও গৃহ শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষালাভ করতে লাগলেন । ছোট রবি সাধারণত বারান্দাতে খেলা করতো । খেলার সময় তিনি একজন শিক্ষকের অভিনয় করতেন, জানালার গরাদ গুলিকে ছাত্র মনে করে পড়াতেন । তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও মনযোগী । নিজের চেষ্টায় ও নিজগৃহে শিক্ষার আদর্শ সুযোগ পেয়ে তিনি ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃত ভাষায় বিশেষ পাণ্ডিত্য লাভ করেন । তিনি ফরাসি ভাষাও শিখেছিলেন । স্কুলের বই ছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অনেক বই পরতেন । ছেলেবেলা থেকে তিনি শুধু লেখাপড়া নয়, ছবি আঁকতে ভালবাসতেন । রং তুলি নিয়ে তিনি মনের খেয়ালে ছবি আঁকতেন  তিনি সকালে ওঠে ব্যায়াম করতেন । তারপর পড়াশুনা, ছবি আঁকা, সংগীত চর্চা করতেন ।

   আট বছর বয়স থেকে তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন । মাত্র তের বছর বয়সে তাঁর কবিতা তত্ববোধিনীপত্রিকায় প্রকাশিত হয় । ষোলো বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ বনফুলপ্রকাশিত হয় । এরপর তিনি প্রকাশ করেছিলেন ভিখারিনী  ১৭ বছর বয়সে তিনি বিলেতে যান । সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি সাহিত্য সেবায় মন দেন  ২২ বছর বয়সে ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সাথে তাঁর বিবাহ হয় ।  তিনি অনেক কাব্য, উপন্যাস, নাটক, গান, প্রবন্ধ লিখে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেন । তিনি তাঁর গীতাঞ্জলীকাব্যটির ইংরেজি অনুবাদের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । নোবেল পুরস্কার লাভের পর নানা দেশ থেকে সাদর আহ্বান আসে । তিনি আমেরিকা, চিন, জাপান, ইরান, ইউরোপ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন । তাঁর কথাকাহিনি, সহজপাঠ, ছেলেবেলা, শিশু, ডাকঘর ইত্যাদি শিশু ও কিশোরদের মনে সাড়া জাগায় । তাঁর রচিত গানগুলি রবীন্দ্র সংগীত নামে পরিচিত ।


 ইংরেজ সরকারের ভারতীয়দের উপর অমানুষিক অত্যাচার  তিনি সহ্য করতে পারতেন না । ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের কারণে তিনি সক্রিয় অংশ নেন । এই পরি পেক্ষিতে তিনি বাংলার মাটি বাংলার জলগানটি রচনা করেন । সাড়া দেশ জুড়ে অরন্ধন পালিত হয় । রবীন্দ্রনাথ রাখি বন্ধনউৎসব পালন করেন । দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তিনি রচনা করেন । ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ইংরেজ সরকারের দেওয়া নাইটউপাধি ত্যাগ করেন ।

   বোলপুরে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে  কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথকে যথাক্রমে ১৯১৪ ও ১৯৫০ সালে ডি.লিট উপাধি প্রদান করেন ।

   বাংলা সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই যেখানে তিনি তাঁর অবদান রাখেননি । তিনি ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, এবং ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্য সংকলন রচনা করেন । 
  রবীন্দ্রনাথ রচিত বিভিন্ন গ্রন্থের নাম
   উপন্যাস করুণা, বৌঠাকুরানির হাট, রাজর্ষি, চোখের বালি, নৌকাডুবি, গোরা, যোগাযোগ, ঘরে বাইরে, চার অধ্যায়, শেষের কবিতা, দুইবোন, চতুরঙ্গ ইত্যাদি ।

  কাব্যগ্রন্থ - কড়ি ও কোমল, নৈবেদ্য, মানসী, সোনার তরী, গীতাঞ্জলী, খেয়া, বলাকা, পূরবী, সানাই, আরোগ্য ইত্যাদি ।  

    নাটক মায়ার খেলা, রাজা ও রানী, বাল্মীকি প্রতিভা, মালিনী, শ্যামা, নরকবাস, অচলায়তন, ডাকঘর, শোধবোধ, মুক্তধারা, বিসর্জন, গোড়ায় গলদ ইত্যাদি ।

   ছোটগল্প ঘাটের কথা, দিদি, ব্যবধান, কাবুলিওয়ালা, দান প্রতিদান, হালদার গোষ্ঠী, একরাত্রি, সমাপ্তি, মাল্যদান, রবিবার, শেষকথা, ইত্যাদি ।

   প্রবন্ধ প্রাচীন সাহিত্য, লোক সাহিত্য, আধুনিক সাহিত্য, কালান্তর, সমাজ, স্বদেশ, মানুষের ধর্ম, শিক্ষার বিকিরণ ইত্যাদি । রবীন্দ্রনাথের রচনা বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে ।

   ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট, বাংলার ১৩৪৮ সালের ২২ শে শ্রাবণ সর্বকালের সেরা কবির মহাপ্রয়াণ ঘটে । তাঁর রচিত কবিতা, নাটক, সাহিত্য, সংগীত প্রবন্ধের মধ্যে দিয়ে তিনি সারা জীবন আমাদের কাছে অমর হয়ে থাকবেন ।

   'আমরা সকলেই পৃথিবীতে কাহাকেও না কাহাকেও ভালোবাসি, কিন্তু ভালবাসিলেও বন্ধু হইবার শক্তি আমাদের সকলের নাই। বন্ধু হইতে গেলে সঙ্গ দান করিতে হয়। অন্যান্য সকল দানের মতো এ দানেরও একটা তহবিল দরকার, কেবলমাত্র ইচ্ছাই যথেষ্ট নহে' - বীন্দ্রনাথ ঠাকুর  ।
   
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জীবনী বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জীবনী লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । 

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷