চুলের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের উপায় কি ?
আমরা সবাই
চাই নরম, পরিষ্কার, সুন্দর, সজীব, নীরোগ, ঝলমলে চুল । তা পাওয়ার জন্য
আমাদের চুলের নিয়মিত যত্ন নেওয়া খুব দরকার । চুল পাতলা ও মোটা দুই ধরনের হয়, তার কারণ নির্ভর করে জিনের গঠনের
উপর । একটি চুল দু বছর আপনার মাথায় থাকার পর ঝরে পড়ে, আর নতুন চুল মাথায় তৈরি হয় । বর্ণ
কোষের জন্য আমাদের চুলের রং কালো, সাদা, খয়েরি রঙের
হয়ে যায় । যদি আপনার শরীর খারাপ হয় বা বয়স হলে চুলের রং পরিবর্তন হয় । ঝলমলে, সজীব, নীরোগ, নরম, পরিষ্কার চুল পেতে হলে আমি
আপনাদের এখন যে উপায় গুলি বলছি সেগুলি পালন করে দেখুন ।
চুল
আঁচড়ানো - চুল আঁচড়ানোর সময় এই
দিক গুলি আপনি খেয়াল করবেন । চুলের জট ছাড়ানোর পর চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান । জোরে
জোরে বা ভিজে অবস্থায় চুল আঁচড়াবেন না । সকাল সন্ধ্যা ব্রাশ দিয়ে চুল আঁচড়ান ।
রাতে শোবার আগে চুল আঁচড়ান, চিরুনি উপর থেকে নীচে এভাবে চালান । ব্রাশ ও চিরুনি ব্যবহারের আগে
দেখে নেবেন সেটি যেন ভাল জাতের হয় । ব্রাশ ও চিরুনি সবসময় পরিষ্কার রাখবেন । সরু
দাঁড়া চিরুনি হলে চুল ঝরঝরে পরিষ্কার হয় । যাদের চুল কম বা পাতলা তাঁরা ব্রাশ
ব্যবহার করবেন ।
চুলের
যত্ন - চুলের যত্ন নেওয়ার
জন্য আপনাকে প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন – মাছ, মাংস, ডিম, ফল, দুধ, এবং
সবুজ শাকসবজি খেতে হবে । এদের সাথে রাখতে হবে আয়োডিন ও আয়রন যুক্ত খাবার । নিয়মিত
স্নান করতে হবে, জলে শুধু মাথা পরিষ্কার হয়না তাই সপ্তাহে কমকরে একবার বা চার পাঁচ
দিন পর পর মাথায় শ্যাম্পু করবেন । অতিরিক্ত শ্যাম্পু করলে চুলের ক্ষতি হয় । শুষ্ক
চুলে শ্যাম্পু করার পর তেল লাগাতে পারেন । শ্যাম্পু করার পর ১ লিটার জলে একটা
পাতিলেবুর রস দিয়ে মাথা ধুতে পারেন ।
মেহেন্দি
পাতা চুল পরিচর্যার কাজে লাগে যেমন- চুলের রং করা, চুলের
পুষ্টি সাধন । ভিটামিন ‘কে’ এই পাতায় পাওয়া যায় । ৩ চামচ মেহেন্দি পাতার সাথে ২ চামচ কফি পাউডার
ও পাতিলেবুর রস বা টক দই মিশিয়ে মাথায় মাখুন । পাতা গুলিকে গুড় করে জলে গুলে মাসে
দু বার ব্যবহার করবেন । হেয়ার ডাইতে বিভিন্ন রাসায়নিক
রং থাকে, এতে আপনার চুল দুর্বল হয়ে যেতে পারে । কম ব্যবহার
করা ভাল ।
চুলের
বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের উপায় –
১) লাল
চুল – আপনার মাথা যদি না আঁচড়ান তাহলে নোংরা, বালি, ধুলো
জমে চুল লাল হয়ে যায় । দীর্ঘদিন অসুস্থ হলে বা চুলে তেল জল না লাগালে চুল লাল হয়ে
যায় । খুব ঠাণ্ডা বা গরম, আলো বাতাস ঠিকভাবে না লাগলে চুল লাল হয় । যদি জলে ক্লোরিন বেশি থাকে
তাতে চুল লাল হয়ে যায় । চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, ভিটামিন
সি জাতীয় খাবার খাবেন । নোনা ও ক্লোরিন জল থেকে দূরে থাকুন । চুলে রোদ লাগাবেন না
। জবা ফুলের রস চুলে লাগান ।
২) ডগা
ফাটা – চুল না আঁচড়ালে বা অযত্নে চুলের ডগা ফেটে যায়
। ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেতে হবে । ১ চামচ
ভিনিগারের সাথে ১ চামচ গ্লিসারিন, ১ টা ডিম, ২
চামচ ক্যাস্টর ওয়েল মিশিয়ে মাথায় লাগাতে হবে । ১ ঘণ্টা রাখার পর ধুয়ে ফেলুন ।
শোয়ার আগে হালকা গরম নারকেল তেল আঙুলের ডগা দিয়ে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন । গরম জলে
ভেজানো টাওয়েল নিংড়ে নিয়ে ১০ মিনিট মাথায় জড়িয়ে রাখবেন । এর পরের দিন ১০০ গ্রাম টক
দই, ১ টি পাতিলেবুর রস, ১ টি ডিম মিশিয়ে লাগান
। ২ ঘণ্টা রাখার পর ভাল করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন ।
৩) খুসকি –
খুসকি হল এক ধরনের মাথায় থাকা ত্বকের সমস্যা । ত্বকের ওপরে পাতলা
চামড়া শুষ্ক ও সাদা হয়ে মাথায় আটকে থাকতে দেখা যায় । চুল আঁচড়ালে বা ঘষলে এগুলি
ওঠে আসে । এরকম হওয়ার প্রধান কারন হল আমাদের ভিটামিন ‘এ’ আর
‘ডি’ অভাব । চুলে নোংরা লাগা , আলো
বাতাস না লাগা, মানসিক চিন্তা, শীতকালে এগুলি হয় ।
ভাল শ্যাম্পু বা ওষুধ লাগাতে পারেন । শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবার কম খাবেন ।
কয়েকটি পেঁয়াজ নিয়ে সেগুলি থেঁতো করে রস মাথায় আধঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন । শিউলি ফুলের
বীজ বেটে হালকা করে লাগান । পরে শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করুন ।
৪) উকুন –
বেশিরভাগ মানুষের চুলের সমস্যা হয় উকুন কে নিয়ে । উকুন মাথার ত্বকের
রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে । মাথা সব সময় পরিষ্কার রাখবেন । তুলসী পাতার রস মাথার লাগালে
উকুন মারা যায় । দিনে বেশ কয়েকবার ও রাতে শোবার আগে সরু চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান ।
সপ্তাহে ২-৩ বার শ্যাম্পু করবেন । নারকেল তেলের সাথে ন্যাপথালিন গুঁড়ো মিশিয়ে
লাগান, চোখে না যেন লাগে । পরে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নেবেন ।
৫) চুল
পাকা ও ঝরে পড়া – বয়স বাড়ার সাথে আমাদের চুল স্বাভাবিক ভাবে
পেকে যায় ও ঝরে পড়ে । স্বাভাবিক ভাবে যে চুল পড়ে তা আবার গজায় । প্রত্যেক দিন
আমাদের ১০-১৫ টা করে চুল পড়ে, যদি দেখেন তার থেকে
বেশি চুল পড়ছে তাহলে মাথার চুল কমে যাবে । প্রতিকারের ব্যবস্থা না কলে টাক দেখা
যাবে । মাথার যেখানে চুল উঠছে সেখানে নতুন চুল গজানোর জন্য দূর্বা ঘাস থেঁতো ও
নারকেল তেল মিশিয়ে মাখুন । আমলকী থেঁতো রস লাগান । যদি ডিমের কুসুম মাখেন তাহলে
আপনার চুল ঘন হবে । বড় ২ চামচ দই, কয়েক ফোটা আমলকীর রস, কয়েক
ফোটা পাতিলেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে ভাল করে পুরো চুলে লাগান । পরের দিন হারবাল
শ্যাম্পু ও মধু দিয়ে ধুয়ে নিন ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন
থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে
শেয়ার করুন । স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে স্বাস্থ্য লেখাটির উপর ক্লিক
করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷