বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯

বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম ও তাদের উপকারিতা কি কি ?


  যোগ শব্দটি ভারতীয় সভ্যতায় বহু প্রাচীন । ব্যায়াম কথার অর্থ নিয়মিত অঙ্গ চালনা । একটি বিশেষ ভঙ্গিতে মনঃ সংযোগ করে কিছু সময়ের জন্য স্থির ভাবে অবস্থান করাকে বলে আসন বা যোগাসন । শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম আভ্যাস করার প্রয়োজন । প্রাচীনকালে আশ্রমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের বেদ আভ্যাসের সাথে সাথে শরীর গঠনের জন্য যোগাসন অনুশীলন করতে হত ।  যোগাসন অনুশীলন করলে দেহ সুগঠিত হয়, শরীর ও মনের বিকাশের জন্য সহায়তা করে । নীচে আপনি অভ্যাস করতে পারেন এমন কয়েকটি যোগাসনের প্রনালি ও উপকারিতা দেওয়া হল । সব গুলোর প্রনালি ও উপকারিতা জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন 


১) পদ্মাসন – পদ্মাসন আভ্যাসের সময় পা দুটি এমন ভাবে একটির উপর অপরটি থাকে, যাতে পায়ের অবস্থান পদ্মের পাপড়ির মত দেখায় । বাম উরুর উপর ডান পা, ডান উরুর উপর বান পা রাখতে হবে । এই অবস্থায় দু হাঁটু মাটিতে ঠেকে থাকবে । মেরুদণ্ড সোজা রেখে বাম হা ত ডান উরুর উপর, ডান হাত বাম উরুর উপর রাখতে হবে । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে ।

উপকারিতা ধ্যান ধারনা অভ্যাসের জন্য এই আসন গুরুত্বপূর্ণ । এই আসনে পায়ের বাত দূর হয় । মেরুদণ্ড সরল  ও নমনীয় হয় । পায়ের পেশি সবল হয় । মানসিক একাগ্রতা ও ধৈর্য বৃদ্ধি পায় । পড়াশুনায় মনোযোগ বৃদ্ধি পায় ।
২) ভুজাঙ্গসন – এই আসন করার সময় কোমর থেকে দেহের উপরের অংশকে উপরে তুলতে হয় । এই আসন করার সময় শরীর ভুজঙ্গ বা সাপের ফনা তুললে যেমন হয় সেভাবে দেখায় । পা দুটি জোড়া ও সোজা রাখা অবস্থায় চিবুক মাটিতে রেখে উপুড় হয়ে শুতে হবে । দু হাতের তালু বুকের দুপাশে এমন ভাবে রাখতে হবে যেন আঙুল কাঁধের সমান ও কনুই কোমরের সঙ্গে লেগে থাকে । এবার হাতে ভর না দিয়ে কোমরের জোরে বুক ও নাভির উপর অংশ উপরে তোলার চেষ্টা করুন । এই অবস্থান ৪০-৬০ সেকেন্ড পর্যন্ত করবেন । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে ।
উপকারিতা – এই আসনের দ্বারা কোমর, বুক, পীঠ, শিরদাঁড়া, পাকস্থলীর কাজ ভাল হয় । মেরুদণ্ডের বক্রতা দূর হয়  মেরুদণ্ডের সামনের অংশে স্নায়ুতন্ত্র গুলি সলরতর হয় ।
৩) শবাসন – এই আসন অভ্যাসের সময় শব বা মড়ার মত নিঃশব্দে শুয়ে থাকে, তাই একে শবাসন বলে । পা দুটি সোজা সরল রেখে দেহ শিথিল করে চিত হয়ে শুয়ে পড়তে হবে । পা দুটো যেন লম্বা লম্বি ভাবে শরীরের দুপাশে থাকে ।শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে । এমন ভাবে শুয়ে থাকতে হবে যেন আপনার মনে কোন চিন্তা ভাবনা নেই । অন্যান্য আসন করার শেষে শবাসন করা যায় । উপুড় হয়ে শবাসন করা ঠিক না ।
উপকারিতা - শবাসন করার ফলে শরীরের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায় । শরীরে নতুন কর্ম শক্তি আসে । মানসিক উত্তেজনা, চঞ্চলতা, অনিদ্রা, অবসাদ প্রভৃতি  এই আসনের দ্বারা দূর হয় ।
৪) বজ্রাসন পা দুটি পিছনের দিকে মুড়ে গোড়ালি দুটো কিছুটা ফাঁক রেখে তার উপর বসতে হবে । মেরুদণ্ড সোজা রেখে হাত দুটি দুই উরুর উপর সোজা ভাবে রাখতে হবে । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে । প্রথম দিকে কিছুটা অসুবিধা হলেও অভ্যাস করতে পারলে পরে আর কোনো অসুবিধা হবে না ।
উপকারিতা  অম্বল, বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য ইত্যাদি পেটের রোগ ভাল হয় । নিয়মিত আভ্যাস করলে সায়টিকা বাত, পায়ের বাত ইত্যাদি হয় না । পায়ের পেশি ও স্নায়ু সবল হয় ।
৫) ধনুরাসন – ধনুরাসন করার সময় অনেকটা ধনুকের মতো দেখতে লাগে । শরীর শিথিল করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন ।পা দুটি হাঁটুর কাছ থেকে নিয়ে পিঠের দিকে এনে দু হাত দিয়ে গোড়ালি শক্ত করে ধরুন । পা ও হাঁটু জোড়া রাখার চেষ্টা করুন । এখন হাত দিয়ে গোড়ালি টেনে ধীরে ধীরে মাথা, বুক ও পা মাটি থেকে তুলুন  ঘাড় যতটা পারেন পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন । শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে ।
উপকারিতা – এই আসন অভ্যাসের ফলে লিভারের সমস্যা, কোষ্টকাঠিন্য, পেটে ও কোমরে চর্বি জমা হওয়া থেকে মুক্তি দেয় । মেরুদণ্ড নমনীয়, কুঁজো ভাব দূর হয় । বুকের বেষ্টনী বাড়াতে সাহায্য করে ।
৬) সূর্য নমস্কার – প্রাচীন কালে মুনি ঋষিরা যোগ ব্যায়াম অভ্যাস করার আগে শরীরকে যোগ ব্যায়াম অভ্যাসের উপযোগী করে তোলার জন্য এই আসনটি করতেন । ভঙ্গি গুলি একটা ছন্দময়য় গতিতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত করতে হয় ।
উপকারিতা –  অল্প সময়য়ের মধ্যে দেহের জড়তা কেটে যায় । দেহ যেকোনো কাজের উপযোগী হয়ে ওঠে । বুকের, কোমরের, পীঠের, হাতের, কাঁধের ও পায়ের পেশি সুগঠিত হয় । শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, শ্বাসযন্ত্র  সবল হয় ।
 ৭) সহজ প্রানায়ন – আমাদের শ্বাসকার্যে প্রধান ভূমিকা নেয় ফুসফুস । ফুসফুসের ক্ষমতার অর্ধেকের কম অংশ ব্যবহার হয় । সহজ প্রানায়নের উদ্দেশ্য হল যে ফুসফুসের সম্পূর্ণ অংশকে ব্যবহার করে দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানো । যে কোন আসনে বসে মেরুদণ্ড সোজা রেখে গভীর ভাবে শ্বাস নিতে হবে । যখন আর শ্বাস নেওয়া যাচ্ছেনা তখন আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে । যতটা সময় নিয়ে শ্বাস নেবেন তার থেকে বেশি সময় নিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে ।
 উপকারিতা -  ফুসফুসের জন্য খুব উপকারী । মানসিক একাগ্রতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে । দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে । সর্দি, কাশি হাঁপানি ভালো হয় । দেহের বাইরে দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যায় ।
  আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে স্বাস্থ্য লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ 

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।


৩টি মন্তব্য:

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷