বিশ্ব উষ্ণায়ন কি, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীতে কি হতে পারে ?.
আমাদের পরিবেশে বিভিন্ন উৎস থেকে বেরোনো ধোঁয়ার
মধ্যে নানা রকমের গ্যাসীয় পদার্থ, ভাসমান কণা যেমন – মিথেন, কার্বনডাই অক্সাইড,
সালফারডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি থাকে । পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এইসব
গ্যাসীয় পদার্থ ছাড়া ওজোন ও জলীয় বাষ্প থাকে । এই পদার্থগুলো বায়ুমণ্ডলে গিয়ে জোমা
হয়ে পৃথিবীকে একটা চাদরের মতো করে মুড়ে রেখেছে । এই গ্যাসীয় পদার্থের চাদর পৃথিবীর
ছেড়ে দেওয়া তাপ শক্তির একটা অংশকে বায়ুমণ্ডলে ধরে রাখতে সাহায্য করে, পৃথিবীতে
প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে রাখতে সাহায্য করে ।
বায়ুমণ্ডলে যদি জলীয় বাষ্প, কার্বনডাই অক্সাইড না থাকে তাহলে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা -১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যেত । পৃথিবীতে প্রাণ থাকত না । আমাদের বিভিন্ন কাজকর্মের ফলে এই গ্যাসীয় পদার্থগুলির পরিমাণ পরিবেশে অনেক বেড়ে যায় । তখন এই গ্যাসগুলি দরকারের অতিরিক্ত তাপ পৃথিবীতে ধরে রাখে । এই কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার থেকে বেড়ে যায় । তাই একে বলা হয় ‘বিশ্ব উষ্ণায়ন’ ।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে বিশ্ব উষ্ণায়নের
যোগাযোগ রয়েছে । বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে । বিজ্ঞানীরা গবেষণার
মাধ্যমে জেনেছেন যে – এই গ্যাসগুলি পৃথিবীতে স্বাভাবিক অবস্থার থেকে অনেক বেড়ে
গেছে । ২০০৬ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বনডাই অক্সাইড এত বেশি বেড়েছে যে কয়েক হাজার বছরে
এতটা বাড়েনি । ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে এই গ্যাস প্রায় ৪০% পরিবেশে
প্রতিবছর মিশেছে । ২০০১ সালের প্রথম দিকে জানা যায় যে – গত ১০০ বছরে পৃথিবীর গড়
তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে । ১৯৮০ – ১৯৮৮ সালের মধ্যে ভারতে ১৮ টি
তাপ প্রবাহের ঘটনা ঘটে । এই তাপ প্রবাহের ফলে বহু মানুষের মৃত্যু হয় । মার্কিন
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা(NASA) জানায় যে – ২০০৫ সাল ছিল গত শতাব্দীর মধ্যে উষ্ণতম বছর ।
হিমবাহকে জমাট
বাঁধা বরফের নদী বলা হয় । হিমবাহ হল পৃথিবীর মিষ্টি জলের ভাণ্ডার । বিভিন্ন নদী এই
হিমবাহের জলে পুষ্ট হয় । পৃথিবীর ৯৯% হিমবাহের অবস্থান উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে,
হিমালয় পর্বতে, অন্যান্য পর্বতে । হিমালয়ের অন্যতম হিমবাহগুলি হল – গঙ্গোত্রী,
জেমু, জমুনেত্রী ইত্যাদি । গঙ্গা, যমুনা ইত্যাদি নদী এইসব হিমবাহের বরফ গলা জলে
পুষ্ট । বৃষ্টিপাত, বায়ুর উষ্ণতা প্রভৃতি আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তনের
ফলে পৃথিবীর হিমবাহ গুলির উপর গভীর প্রভাব পড়ে । পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বেড়ে গেলে
হিমবাহের বরফ বেশি মাত্রায় গলতে শুরু করবে ।
উত্তর মেরু সংলগ্ন আলাস্কা উপকূলে যে বরফের
স্তর আছে তা গত ৩০ বছরে প্রায় ৪০% কমে পাতলা হয়ে গিয়েছে । গঙ্গোত্রী হিমবাহ প্রতি
বছর একটু একটু করে কমে আসছে । যদি হিমবাহগুলি সম্পূর্ণ গলে যায় তবে ভবিষ্যতে এই
হিমবাহের জলে পুষ্ট নদীগুলির জল প্রথমে বেড়ে যাবে, পরে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা
যাবে । এরফলে প্রথমে বন্যা, পরে জলের তীব্র সংকট দেখা যাবে । হিমবাহ প্রায় ২০%
সূর্য রশ্মি শোষণ করে আর ৪০% সূর্য রশ্মি পতিফলিত করে । হিমবাহ যদি গলে যায় তবে এই
৪০% সূর্য রশ্মি ভূভাগ দ্বারা শোষিত হয়ে পৃথিবীর উষ্ণতা আরও অনেক বাড়িয়ে দেবে ।
হিমবাহ গলে গেলে সমুদ্রের জলের স্তর বেড়ে যাবে
। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ৩ মিমি(০.১ইঞ্চি) করে সমুদ্রের জলতল প্রতিবছর গড়ে বেড়েছে ।
পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় হিমবাহ গলে যাওয়ার প্রভাব পড়বে সমুদ্রের জলের তলের উপর ।
একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে – ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা ৭০ সেমি
বেড়ে যেতে পারে । ফলে সমুদ্র উপকূল এলাকাতে বন্যার সম্ভাবনা দেখা যাবে । এরফলে
পৃথিবীর সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে বসবাসকারী অসংখ্য মানুষের ক্ষতি হতে পারে । উপকূল
অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়বে
। আমাদের সুন্দরবন আজ এই বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । এখানে বসবাসকারী প্রায় ৪০
লক্ষ মানুষ ও বাঘের সকলের অস্তিত্ব সংকটের মুখে ।
প্রবাল বা কোরাল হল এক ধরণের সামুদ্রিক
অমেরুদণ্ডী প্রাণী । এরা নিডারিয়া পর্বের অন্তর্ভুক্ত । প্রবালরা তাদের দেহের
বাইরে ক্যালসিয়াম কার্বনেট-এর একটা বহিঃ কঙ্কাল তৈরি করে । এটি এদের দেহকে রক্ষা
করে । একসাথে বাসকরা অনেক প্রবালের দেহের বাইরে থাকা ক্যালসিয়াম কার্বনেট-এর বহিঃ কঙ্কাল একটা শক্ত
প্রাচীর গঠন করে প্রবাল প্রাচীর তৈরি করে । প্রবাল প্রাচীরে ২৫% সামুদ্রিক
প্রজাতির জীবের আশ্রয়স্থল । মাছ, মোলাস্কা, স্পঞ্জ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাণী প্রবাল
প্রাচীরে বাস করে । বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এই প্রবাল প্রাচীর বিপন্ন হয়ে পড়ছে । ১৯৮৮
সালে প্রায় ১৬% প্রবাল ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল । ভারত মহাসাগরে জলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার
ফলে প্রবাল প্রাচীর গুলিতে মাছেদের আদর্শ বাসস্থান আর থাকছেনা । আবার লোভী মানুষ
প্রবাল চুরি করে এদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে । মৃত প্রবালের সাদা বা রঙিন
কঙ্কালের সৌন্দর্য আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করে ।
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী
ছড়িয়ে আছে । আবার খালি চোখে আমরা দেখতে পাইনা এমন জীবরাও রয়েছে । পৃথিবীতে এরকম
অনেক অঞ্চল রয়েছে যেখানে খুব বেশি প্রজাতির জীব আছে । আমাদের ভারতবর্ষে
জীববৈচিত্র্যে এত বেশি যে ভারতবর্ষকে ‘অতি বৈচিত্র্যের’ দেশ বলা হয় । কিন্তু, বিশ্ব
উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাঁদের আজ ধ্বংসের মুখে পড়তে হয়েছে । গত ৫০০ বছরে
৭৮৪ টি প্রজাতি পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে । এদের মধ্যে রয়েছে ৩৩৮ টি
মেরুদণ্ডী, ৩৫৯ টি অমেরুদণ্ডী, ৮৭ টি উদ্ভিদ প্রজাতি । বর্তমান সময়ে প্রায় ১৫,০০০
টি প্রজাতি ধ্বংসের মুখে রয়েছে । গত ২০ বছরে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে ২৭ টি প্রজাতি । যে
জীব গুলি পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে
পারে – বাংলার শকুন, বাঘ, চিতা, গরিলা, শিম্পাঞ্জি, একশৃঙ্গ গণ্ডার ইত্যাদি ।
আমাদের সবার কর্তব্য হল পৃথিবীর জীব গুলিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো ।
আমাদের লেখা আপনার
কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার
বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । ভূগোল ও বিজ্ঞান বিষয়ে আরও
পোস্ট পড়তে নিচে ভূগোল ও বিজ্ঞান লেখাটির উপর
ক্লিক করুন । পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
অর্ডার করতে নীচের লিঙ্কে প্লিজ ক্লিক করুন।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
মানুষকে খুবই সচেতন হতে হবে
উত্তরমুছুন