শুক্রবার, ৭ জুন, ২০১৯

পৃথিবীর সাদা মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা কথা গুলি কি ?.


  পৃথিবীর মানচিত্রে সর্ব দক্ষিণে সাদা রং-এর একটা মহাদেশ আমরা দেখতে পাই । সেই মহাদেশের নাম হল অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ । ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম জানা যায় যে পৃথিবীর দক্ষিণে বরফে ঢাকা একটা বিশাল মহাদেশ আছে । গ্রীক শব্দ Antarktika -  এর অর্থ হল উত্তরের বিপরীত ।  আয়তন ১ কোটি ৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার । পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ, ইউরোপ ও ওশিয়ানিয়ার থেকে বড়ো । দক্ষিণ মেরু বিন্দু থেকে ৬০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে প্রায় গোলাকার, কুমেরু মহাসাগর ও কুমেরু বৃত্তরেখা একে ঘিরে রয়েছে । সারা বছর ১-২ কিমি পুরো বরফে ঢাকা থাকে । পৃথিবীর মানচিত্রে তাই একে সাদা রং দিয়ে দেখানো হয় । অ্যান্টার্কটিকার অপর নাম তাই সাদা মহাদেশ ।


  পৃথিবীর শীতলতমশুষ্কতমউচ্চতমদুর্গম হল মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা । পুরো মহাদেশটি বিশাল বিশাল উঁচু মালভূমি অবস্থিত । মালভূমি গুলির উচ্চতা প্রায় ২০০০-৬০০০ মিটার । পূর্ব দিকের অংশ প্রশস্ত কিন্তুপশ্চিম দিকের অংশ সংকীর্ণ । অনেক উপসাগরসাগরদ্বীপপুঞ্জ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে ঘিরে রেখেছে । রস উপসাগরের তীরে মাউন্ট এরোস জীবন্ত আগ্নেয়গিরি । পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ ‘ল্যামবাট’ হিমবাহ এই মহাদেশে অবস্থান করে । ‘ভিনসন ম্যাসিফ’ অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ।

 অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর শীতলতম মহাদেশ । সবসময় এখানে বরফে ঢাকা থাকেসারা বছর কনকনে ঠাণ্ডা ও তুষার ঝড় দেখা যায় । শীতকালে তাপমাত্রা -৪০ ডিগ্রি থেকে -৭৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে যায় । অ্যান্টার্কটিকার ভস্তক জন মানবহীন স্থানযেখানে তাপমাত্রা -৮৯.২ ডিগ্রি পর্যন্ত হয় । ভস্তক হল পৃথিবীর শীতলতম স্থান । মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এখানে ২৪ ঘণ্টা অন্ধকার থাকে । আকাশে ২৪ ঘণ্টা সূর্য দেখা যায় না । এই সময় আকাশে মাঝে মাঝে লালনীলসবুজ রামধনুর মত মেরুজ্যোতি দেখা যায় । নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আবহাওয়া পরিবর্তন হয় । আকাশে ২৪ ঘণ্টা সূর্য দেখা যায় । তাপমাত্রা বেড়ে -২০ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে যায় । সূর্যের আলো এখানে বাঁকা ভাবে পড়ার জন্য বেশিরভাগ অংশ বরফে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায় ।

 আবিষ্কার – ক্যাপ্টেন স্কটশ্যাকলটনআমুন্ডসেন এই মহাদেশ আবিষ্কারের চেষ্টা করেন । তারা এই মহাদেশের এক একটি অংশে পৌঁছতে পেরেছিলেন । নরওয়ের অভিযাত্রী রোয়াল্ড আমুন্ডসেন এবং তাঁর সহযাত্রীরা ১৯ অক্টোবর ১৯১১ সালে দক্ষিণ মেরু বা অ্যান্টার্কটিকার কেন্দ্রবিন্দু (৯০ ডিগ্রি) পৌঁছতে তাদের বেস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করলেন । তুষার ঝড়ভয়ংকর প্রতিকূল আবহাওয়া পেরিয়েবরফের স্তরের বড়ো বড়ো ফাটল উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত তাঁরা ১৪ ডিসেম্বর ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছলেন । প্রচণ্ড বাধা বিপত্তি মোকাবিলা করার পর সেখানে পৌঁছতে পেরেছিলেন । ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ৯ জানুয়ারি প্রথম ভারতীয় অভিযাত্রী দল এখানে পৌঁছয় । সেখানে ভারতের প্রথম গবেষণা কেন্দ্র ‘দক্ষিণ গঙ্গোত্রী’ স্থাপন করা হয় । ১৯৮৮ সালে ২৬ মার্চ ভারতের অষ্টম অভিযাত্রী দল সেখান থেকে ৭০ কিমি দূরে ‘মৈত্রী’ নামে আরেকটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেন ।


 সারা বছর বরফে ঢাকা থাকার জন্য এখানে কোন গাছপালা হয় না । গরমকালে সমুদ্রের ধারে সামান্য পরিমাণ মসশ্যাওলালাইকেন ইত্যাদি জন্মায় । এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হল একমাত্র পেঙ্গুইন পাখি । এই পাখি গুলি ভাল উড়তে পারেনাভাল সাঁতার কাটতে পারে । প্রায় ১৭ রকমের পেঙ্গুইন পাখি অ্যান্টার্কটিকার পাওয়া যায় । এদের মধ্যে এম্পেরর পেঙ্গুইন সবথেকে বড়ো হয় । পেঙ্গুইনদের ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য ত্বকের নীচে পুরু চর্বির স্তর থাকে । সারা শরীর চকচকে পালকে ঢাকা থাকে । সমুদ্রে প্রচুর মাছতিমিক্রিলসীলসামুদ্রিক পাখি ইত্যাদি দেখা যায় । ক্রিল জাতীয় চিংড়ি এখানকার সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় । পেঙ্গুইনদের প্রধান খাদ্য হল এই ক্রিল ।

   অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ কোন দেশের অধীন নয় । সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এই মহাদেশ নিয়ে গবেষণা করছেন । পৃথিবীর প্রায় ৪০ টি দেশের ১০০ টির বেশি গবেষণা কেন্দ্র এখানে আছে । এই মহাদেশে তামানিকেলকয়লাসোনাপ্রাকৃতিক গ্যাসখনিজ তেল ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন । শান্তি রক্ষার জন্য যেকোনো দেশ এখানে গবেষণা করতে পারেন ।

   অ্যান্টার্কটিকার ভবিষ্যতকে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বলে মনে করা হয় । এই মহাদেশের আবহাওয়াজলবায়ুপ্রাকৃতিক পরিবেশ পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে । কিন্তুবর্তমানে বায়ু দূষণবিশ্ব উষ্ণায়ণওজোন স্তর ক্ষয় ইত্যাদির কারণে সবকিছু এখন বিপদের মধ্যে রয়েছে । পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে বরফ গলে গিয়ে এখানের আয়তন কম হয়ে যাচ্ছে । ক্রিলসীলপেঙ্গুইনদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে । অ্যান্টার্কটিকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়াতার ভবিষ্যৎ  রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের ।


  আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জানা অজানা ও ভূগোল বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা ও ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুন পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

1 টি মন্তব্য:

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷