পৃথিবীর সাদা মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা কথা গুলি কি ?.
পৃথিবীর মানচিত্রে সর্ব দক্ষিণে
সাদা রং-এর একটা মহাদেশ আমরা দেখতে পাই । সেই মহাদেশের নাম হল অ্যান্টার্কটিকা
মহাদেশ । ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম জানা যায় যে পৃথিবীর দক্ষিণে বরফে ঢাকা একটা
বিশাল মহাদেশ আছে । গ্রীক শব্দ Antarktika
- এর অর্থ হল উত্তরের বিপরীত । আয়তন ১
কোটি ৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার । পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ, ইউরোপ ও ওশিয়ানিয়ার থেকে বড়ো । দক্ষিণ মেরু বিন্দু থেকে ৬০ ডিগ্রি দক্ষিণ
অক্ষরেখার মধ্যে প্রায় গোলাকার,
কুমেরু মহাসাগর ও কুমেরু বৃত্তরেখা একে
ঘিরে রয়েছে । সারা বছর ১-২ কিমি পুরো বরফে ঢাকা থাকে । পৃথিবীর মানচিত্রে তাই একে
সাদা রং দিয়ে দেখানো হয় । অ্যান্টার্কটিকার অপর নাম তাই সাদা মহাদেশ ।
পৃথিবীর
শীতলতম, শুষ্কতম, উচ্চতম, দুর্গম
হল মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা । পুরো মহাদেশটি বিশাল বিশাল উঁচু মালভূমি অবস্থিত ।
মালভূমি গুলির উচ্চতা প্রায় ২০০০-৬০০০ মিটার । পূর্ব দিকের অংশ প্রশস্ত কিন্তু, পশ্চিম
দিকের অংশ সংকীর্ণ । অনেক উপসাগর, সাগর, দ্বীপপুঞ্জ
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে ঘিরে রেখেছে । রস উপসাগরের তীরে মাউন্ট এরোস জীবন্ত
আগ্নেয়গিরি । পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ ‘ল্যামবাট’ হিমবাহ এই মহাদেশে অবস্থান করে । ‘ভিনসন ম্যাসিফ’ অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ।
অ্যান্টার্কটিকা
পৃথিবীর শীতলতম মহাদেশ । সবসময় এখানে বরফে ঢাকা থাকে, সারা
বছর কনকনে ঠাণ্ডা ও তুষার ঝড় দেখা যায় । শীতকালে তাপমাত্রা -৪০ ডিগ্রি থেকে -৭৫
ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে যায় । অ্যান্টার্কটিকার ভস্তক জন মানবহীন স্থান, যেখানে
তাপমাত্রা -৮৯.২ ডিগ্রি পর্যন্ত হয় । ভস্তক হল পৃথিবীর শীতলতম স্থান । মে থেকে
আগস্ট মাস পর্যন্ত এখানে ২৪ ঘণ্টা অন্ধকার থাকে । আকাশে ২৪ ঘণ্টা সূর্য দেখা যায়
না । এই সময় আকাশে মাঝে মাঝে লাল, নীল, সবুজ
রামধনুর মত মেরুজ্যোতি দেখা যায় । নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আবহাওয়া
পরিবর্তন হয় । আকাশে ২৪ ঘণ্টা সূর্য দেখা যায় । তাপমাত্রা বেড়ে -২০ ডিগ্রি পর্যন্ত
হয়ে যায় । সূর্যের আলো এখানে বাঁকা ভাবে পড়ার জন্য বেশিরভাগ অংশ বরফে প্রতিফলিত
হয়ে ফিরে যায় ।
আবিষ্কার – ক্যাপ্টেন
স্কট, শ্যাকলটন, আমুন্ডসেন
এই মহাদেশ আবিষ্কারের চেষ্টা করেন । তারা এই মহাদেশের এক একটি অংশে পৌঁছতে
পেরেছিলেন । নরওয়ের অভিযাত্রী রোয়াল্ড আমুন্ডসেন এবং তাঁর সহযাত্রীরা ১৯ অক্টোবর
১৯১১ সালে দক্ষিণ মেরু বা অ্যান্টার্কটিকার কেন্দ্রবিন্দু (৯০ ডিগ্রি) পৌঁছতে
তাদের বেস ক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করলেন । তুষার ঝড়, ভয়ংকর প্রতিকূল আবহাওয়া পেরিয়ে, বরফের স্তরের বড়ো বড়ো ফাটল উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত তাঁরা ১৪
ডিসেম্বর ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছলেন । প্রচণ্ড বাধা বিপত্তি
মোকাবিলা করার পর সেখানে পৌঁছতে পেরেছিলেন । ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ৯ জানুয়ারি প্রথম
ভারতীয় অভিযাত্রী দল এখানে পৌঁছয় । সেখানে ভারতের প্রথম গবেষণা কেন্দ্র ‘দক্ষিণ
গঙ্গোত্রী’ স্থাপন
করা হয় । ১৯৮৮ সালে ২৬ মার্চ ভারতের অষ্টম অভিযাত্রী দল সেখান থেকে ৭০ কিমি দূরে ‘মৈত্রী’ নামে
আরেকটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেন ।
সারা
বছর বরফে ঢাকা থাকার জন্য এখানে কোন গাছপালা হয় না । গরমকালে সমুদ্রের ধারে
সামান্য পরিমাণ মস, শ্যাওলা, লাইকেন
ইত্যাদি জন্মায় । এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হল একমাত্র পেঙ্গুইন পাখি । এই পাখি
গুলি ভাল উড়তে পারেনা, ভাল
সাঁতার কাটতে পারে । প্রায় ১৭ রকমের পেঙ্গুইন পাখি অ্যান্টার্কটিকার পাওয়া যায় ।
এদের মধ্যে এম্পেরর পেঙ্গুইন সবথেকে বড়ো হয় । পেঙ্গুইনদের ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য
ত্বকের নীচে পুরু চর্বির স্তর থাকে । সারা শরীর চকচকে পালকে ঢাকা থাকে । সমুদ্রে
প্রচুর মাছ, তিমি, ক্রিল, সীল, সামুদ্রিক
পাখি ইত্যাদি দেখা যায় । ক্রিল জাতীয় চিংড়ি এখানকার সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া
যায় । পেঙ্গুইনদের প্রধান খাদ্য হল এই ক্রিল ।
অ্যান্টার্কটিকা
মহাদেশ কোন দেশের অধীন নয় । সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এই মহাদেশ নিয়ে গবেষণা করছেন
। পৃথিবীর প্রায় ৪০ টি দেশের ১০০ টির বেশি গবেষণা কেন্দ্র এখানে আছে । এই মহাদেশে
তামা, নিকেল, কয়লা, সোনা, প্রাকৃতিক
গ্যাস, খনিজ
তেল ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন । শান্তি রক্ষার জন্য
যেকোনো দেশ এখানে গবেষণা করতে পারেন ।
অ্যান্টার্কটিকার
ভবিষ্যতকে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বলে মনে করা হয় । এই মহাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রাকৃতিক
পরিবেশ পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে । কিন্তু, বর্তমানে বায়ু দূষণ, বিশ্ব উষ্ণায়ণ, ওজোন স্তর ক্ষয় ইত্যাদির কারণে সবকিছু এখন বিপদের মধ্যে রয়েছে ।
পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে বরফ গলে গিয়ে এখানের আয়তন কম হয়ে যাচ্ছে । ক্রিল, সীল, পেঙ্গুইনদের
সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে । অ্যান্টার্কটিকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, তার
ভবিষ্যৎ রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সকলের ।
আমাদের লেখা আপনার
কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার
বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জানা অজানা ও ভূগোল বিষয়ে
আরও পোস্ট পড়তে নিচে
জানা অজানা ও ভূগোল লেখাটির উপর ক্লিক করুন পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
ভালো।ধন্যবাদ
উত্তরমুছুন