মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯

পৃথিবীর জীব বৈচিত্র্য ও তার শ্রেণীবিভাগ গুলি কি কি ?.


 আমাদের এই পৃথিবী কত বিচিত্র, এর থেকে বেশি বিচিত্র পৃথিবীতে বাস করা জীব । বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন যে এই পৃথিবীতে তিন কোটি বা তাঁর বেশি প্রজাতির জীব আছে । একই বৈশিষ্ট্য যুক্ত জীবকে প্রজাতি বলে । এবার আমাদের মনে প্রশ্ন আসবে পৃথিবীর সব মানুষ কি একই প্রজাতির ? উত্তর হবে হ্যাঁ । সারা পৃথিবীতে যত মানুষ আছে সবাই আলাদা ভাষায় কথা, আলাদা ধর্ম এবং তাদের দেখতে আলাদা হলেও সবাই একই প্রজাতির । মানুষ প্রজাতিকে বলা হয় হোমোসপিয়েন্স ।

 বিজ্ঞানীরা প্রত্যেক প্রজাতির একটি করে বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছেন । একই জীবকে বিভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয় । এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা এরকম নাম দিয়েছেন । এইভাবে প্রত্যেক প্রজাতির একটি করে বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে । কিন্তুবিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত সব প্রজাতির নাম দিয়ে উঠতে পারেননি । মাত্র উনিশ লক্ষ প্রজাতির নাম দিতে পেরেছেন ।

   তিন কোটি জীব প্রজাতিকে বিজ্ঞানীরা ছটি ভাগে ভাগ করেছেন । এক একটি ভাগকে বলে জীবরাজ্য । সমস্ত প্রাণীদের বলা হয় অ্যানিমালিয়া । গাছপালাশ্যাওলা এবং মসদের নিয়ে উদ্ভিদ রাজ্যকে বলে প্ল্যানটি । ছত্রাক ও ব্যাঙের ছাতাকে বলে ফানজাই । এককোষী জীবদের বলে ব্যাকটেরিয়া অ্যামিবাপ্যারামসিয়ামপ্লাজমোডিয়ামউইগ্লিনা এদেরকে বলে প্রোটোজোয়া । এর এক ধরনের জীব আছে তাকে বলে ক্লোমিস্টা ।

   যাদের মেরুদণ্ড আছে তাঁদের মেরুদণ্ডী প্রাণী বলে । মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে যে সব প্রাণীরা ডিম পাড়েনাবাচ্চা প্রসব করেবাচ্চারা দুধ খেয়ে বড় হয় তাঁদের স্তন্যপায়ী বলে  যারা জলে থাকেগায়ে আঁশ থাকেফুলকা দিয়ে শ্বাস নেয়পাখনা নেড়ে চলে তাদের মাছ বলে । যাদের গা পালকে ঢাকাডিম পাড়েডিম থেকে বাচ্চা হয়ডানা মেলে উড়ে তাদের পাখি বলে । ব্যাং জাতীয় প্রাণীর বাচ্চারা জলে থাকেলেজ থাকেবড় হলে ডাঙায় লাফিয়ে চলে । এদের উভচর বলে  সাপেরা ডাঙাতে ডিম পাড়েসেখানে বড় হয় । চলার সময় বুক মাতিতে ঘষে যায় । এরকম প্রাণীদের সরীসৃপ প্রাণী বলে ।

   যে সব প্রাণীর মেরুদণ্ড নেই তাদের অমেরুদণ্ডী প্রাণী বলে । পোকাচিংড়িকাঁকড়ামাকড়সা এদেরকে বলা হয় অর্থপোডা । এই সব প্রাণীদের শুঁড় ও পা গুলি খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত থাকে । শামুকঝিনুকঅক্টোপাস এই প্রাণীদের মোলাস্কা জাতীয় প্রাণী বলে । এদের গায়ের উপর এক ধরনের শক্ত খল থাকেযেটি চুন জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি । চলাফেরা করার জন্য এদের মাংসল পা থাকে । কেঁচোজোঁক এরাও অমেরুদণ্ডী প্রাণী । এদের বলে অ্যানিলিডা । গোল কৃমিকে বলে আস্কহেলমিনথেসচ্যাপ্টা কৃমিকে বলে প্ল্যাটিহেলমিনথেস । এরা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর পেটে বাস করে । তারা মাছসি-আরচিন এদের সারা গায়ের ত্বকে কাঁটা থাকেমুখ থেকে দেহের নিজের দিকে । এদের বলা হয় একানোডারমাটা ।


   উদ্ভিদ রাজ্যকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় – সপুষ্পক ও অপুষ্পক । যেসব উদ্ভিদের ফুল হয় তারা সপুষ্পক ও যাদের ফুল হয় না তারা অপুষ্পক উদ্ভিদ । সপুষ্পক উদ্ভিদ ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী দুই ভাগে বিভক্ত । যেসব গাছের বীজ ফলের মধ্যে লুকানো থাকে যেমন ধানগমআমজাম ইত্যাদি এদের গুপ্তবীজী উদ্ভিদ বলে । ঝাউপাইন এদের ফল হয়নাবীজ গুলি একসাথে গোল করে সাজানো থাকে । এদের বলে ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ ।

   গুপ্তবীজী আবার দুই ভাগে বিভক্ত – একবীজপত্রী ও দ্বিবীজপত্রী । যে সব গাছের একটি বীজপত্র থাকে তাদেরকে বলে একবীজপত্রী উদ্ভিদ । যাদের দুটি বীজপত্র থাকে তাদেরকে বলে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ । অপুষ্পক উদ্ভিদকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয় – শ্যাওলামস জাতীয়ফার্ন জাতীয় । শ্যাওলা হল এক ধরনের সবুজ গাছ । এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে । এদের কোন কাণ্ডপাতামূল থাকেনা । এদের বলা থ্যালোফাইট । রাস্তা বা ইটের দেওয়ালেমাটির উপর স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় গোল চাকতির মত সবুজ গাছ দেখা যায়এরা হল মস । এদের বলা হয় ব্রায়োফাইট । জলের মধ্যে এক ধরনের শ্যাওলা জন্মায় যাদের গা পিচ্ছিল হয়চকচক করে । এদের বলে জলের রেশম বা ওয়াটার সিল্ক । ফার্ন জাতীয় গাছকে বলে টেরিডোফাইট ।  

   বীরুৎ জাতীয় গাছ গুলি ছোটো ছোটো হয় । ডালপালা দেখা যায় না । এই সব গাছ লতিয়ে লতিয়ে বা পেঁচিয়ে চলে । গুল্ম জাতীয় গাছ গুলি হয় মাঝারি ঝোপের মত । গাছ গুলি তেমন লম্বা হয় না । অল্প ডালপালা দেখা যায় । যে সব গাছ লম্বা হয়, অনেক ডালপালা দেখা যায়, এদের মোটা কাঠের গুড়ি থাকে, তাদের বৃক্ষ জাতীয় গাছ বলে ।

   ব্যাঙের ছাতাকে মাশরুম বলা হয় । এদের খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয় । কিন্তু, সব মাশরুম খাদ্য নয় । এগুলি বেশির ভাগ গাদায় দেখা যায় । এরা হল ছত্রাক জাতীয় । অনেক সময় আমাদের শরীরে যে চুলকানি, দাদ, খুসকি হয় সেগুলি ছত্রাক । এরা গাছেদের মত সবুজ নয় বলে নিজেরা খাদ্য তৈরি করতে পারেনা । সব ছত্রাক জাতিকে ফানজাই বলে ।

   প্রোটিস্টা ব্যাকটেরিয়া একটি কোশ দিয়ে তৈরি ও দেহে কোশের মধ্যে নিউক্লিয়াস থাকে । আমাশা, ম্যালেরিয়া, প্যারামসিয়াম ইত্যাদি হল প্রোটিস্টা ব্যাকটেরিয়া । দইয়ের সাজায় থাকা ব্যাকটেরিয়া, কলেরা বা টাইফয়েড রোগের ব্যাকটেরিয়া, ইউগ্লিনা প্রভৃতি মোনেরা রাজ্যের ব্যাকটেরিয়া । এদের দেহ মাত্র একটি কোশ দিয়ে তৈরি । সে কোশে কোন নিউক্লিয়াস থাকেনা । পশুপাখি, গাছপালা ও আমাদের শরীর অনেক ছোটো ছোটো ঘর বা কুঠুরি দিয়ে তৈরি, জা আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা, এগুলি কোশ । এর মধ্যে থাকা গোল বস্তুটাকে নিউক্লিয়াস বলে ।

 এখন পর্যন্ত সমস্ত জীব জগৎ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জেনে শেষ করতে পারেনি । যতটুকু জানা গেছে সেই সম্পর্কে বলা হল ।

   
 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । বিজ্ঞান ও জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে বিজ্ঞান ও জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

1 টি মন্তব্য:

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷