পৃথিবীর জীব বৈচিত্র্য ও তার শ্রেণীবিভাগ গুলি কি কি ?.
আমাদের এই
পৃথিবী কত বিচিত্র, এর থেকে বেশি বিচিত্র পৃথিবীতে বাস করা জীব । বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন যে
এই পৃথিবীতে তিন কোটি বা তাঁর বেশি প্রজাতির জীব আছে । একই বৈশিষ্ট্য যুক্ত জীবকে
প্রজাতি বলে । এবার আমাদের মনে প্রশ্ন আসবে পৃথিবীর সব মানুষ কি একই প্রজাতির ? উত্তর হবে হ্যাঁ ।
সারা পৃথিবীতে যত মানুষ আছে সবাই আলাদা ভাষায় কথা, আলাদা ধর্ম এবং তাদের দেখতে আলাদা হলেও সবাই একই
প্রজাতির । মানুষ প্রজাতিকে বলা হয় হোমোসপিয়েন্স ।
বিজ্ঞানীরা
প্রত্যেক প্রজাতির একটি করে বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছেন । একই জীবকে বিভিন্ন স্থানে
আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয় । এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা এরকম নাম দিয়েছেন
। এইভাবে প্রত্যেক প্রজাতির একটি করে বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে । কিন্তু, বিজ্ঞানীরা
এখন পর্যন্ত সব প্রজাতির নাম দিয়ে উঠতে পারেননি । মাত্র উনিশ লক্ষ প্রজাতির নাম
দিতে পেরেছেন ।
তিন
কোটি জীব প্রজাতিকে বিজ্ঞানীরা ছটি ভাগে ভাগ করেছেন । এক একটি ভাগকে বলে জীবরাজ্য
। সমস্ত প্রাণীদের বলা হয় অ্যানিমালিয়া । গাছপালা, শ্যাওলা এবং মসদের
নিয়ে উদ্ভিদ রাজ্যকে বলে প্ল্যানটি । ছত্রাক ও ব্যাঙের ছাতাকে বলে ফানজাই । এককোষী
জীবদের বলে ব্যাকটেরিয়া অ্যামিবা, প্যারামসিয়াম, প্লাজমোডিয়াম, উইগ্লিনা
এদেরকে বলে প্রোটোজোয়া । এর এক ধরনের জীব আছে তাকে বলে ক্লোমিস্টা ।
যাদের
মেরুদণ্ড আছে তাঁদের মেরুদণ্ডী প্রাণী বলে । মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে যে সব
প্রাণীরা ডিম পাড়েনা, বাচ্চা
প্রসব করে, বাচ্চারা
দুধ খেয়ে বড় হয় তাঁদের স্তন্যপায়ী বলে । যারা জলে থাকে, গায়ে
আঁশ থাকে, ফুলকা
দিয়ে শ্বাস নেয়, পাখনা
নেড়ে চলে তাদের মাছ বলে । যাদের গা পালকে ঢাকা, ডিম পাড়ে, ডিম থেকে বাচ্চা হয়, ডানা
মেলে উড়ে তাদের পাখি বলে । ব্যাং জাতীয় প্রাণীর বাচ্চারা জলে থাকে, লেজ
থাকে, বড়
হলে ডাঙায় লাফিয়ে চলে । এদের উভচর বলে । সাপেরা ডাঙাতে ডিম পাড়ে, সেখানে
বড় হয় । চলার সময় বুক মাতিতে ঘষে যায় । এরকম প্রাণীদের সরীসৃপ প্রাণী বলে ।
যে
সব প্রাণীর মেরুদণ্ড নেই তাদের অমেরুদণ্ডী প্রাণী বলে । পোকা, চিংড়ি, কাঁকড়া, মাকড়সা
এদেরকে বলা হয় অর্থপোডা । এই সব প্রাণীদের শুঁড় ও পা গুলি খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত থাকে
। শামুক, ঝিনুক, অক্টোপাস
এই প্রাণীদের মোলাস্কা জাতীয় প্রাণী বলে । এদের গায়ের উপর এক ধরনের শক্ত খল থাকে, যেটি
চুন জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি । চলাফেরা করার জন্য এদের মাংসল পা থাকে । কেঁচো, জোঁক
এরাও অমেরুদণ্ডী প্রাণী । এদের বলে অ্যানিলিডা । গোল কৃমিকে বলে আস্কহেলমিনথেস, চ্যাপ্টা
কৃমিকে বলে প্ল্যাটিহেলমিনথেস । এরা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর পেটে বাস করে । তারা
মাছ, সি-আরচিন
এদের সারা গায়ের ত্বকে কাঁটা থাকে, মুখ থেকে দেহের নিজের দিকে । এদের বলা হয়
একানোডারমাটা ।
উদ্ভিদ
রাজ্যকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় – সপুষ্পক
ও অপুষ্পক । যেসব উদ্ভিদের ফুল হয় তারা সপুষ্পক ও যাদের ফুল হয় না তারা অপুষ্পক
উদ্ভিদ । সপুষ্পক উদ্ভিদ ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী দুই ভাগে বিভক্ত । যেসব গাছের বীজ
ফলের মধ্যে লুকানো থাকে যেমন ধান, গম, আম, জাম
ইত্যাদি এদের গুপ্তবীজী উদ্ভিদ বলে । ঝাউ, পাইন এদের ফল হয়না, বীজ
গুলি একসাথে গোল করে সাজানো থাকে । এদের বলে ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ ।
গুপ্তবীজী
আবার দুই ভাগে বিভক্ত – একবীজপত্রী
ও দ্বিবীজপত্রী । যে সব গাছের একটি বীজপত্র থাকে তাদেরকে বলে একবীজপত্রী উদ্ভিদ ।
যাদের দুটি বীজপত্র থাকে তাদেরকে বলে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ । অপুষ্পক উদ্ভিদকে আবার
তিন ভাগে ভাগ করা হয় – শ্যাওলা, মস
জাতীয়, ফার্ন
জাতীয় । শ্যাওলা হল এক ধরনের সবুজ গাছ । এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে
। এদের কোন কাণ্ড, পাতা, মূল
থাকেনা । এদের বলা থ্যালোফাইট । রাস্তা বা ইটের দেওয়ালে, মাটির
উপর স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় গোল চাকতির মত সবুজ গাছ দেখা যায়, এরা
হল মস । এদের বলা হয় ব্রায়োফাইট । জলের মধ্যে এক ধরনের শ্যাওলা জন্মায় যাদের গা
পিচ্ছিল হয়, চকচক
করে । এদের বলে জলের রেশম বা ওয়াটার সিল্ক । ফার্ন জাতীয় গাছকে বলে টেরিডোফাইট ।
বীরুৎ
জাতীয় গাছ গুলি ছোটো ছোটো হয় । ডালপালা দেখা যায় না । এই সব গাছ লতিয়ে লতিয়ে বা
পেঁচিয়ে চলে । গুল্ম জাতীয় গাছ গুলি হয় মাঝারি ঝোপের মত । গাছ গুলি তেমন লম্বা হয়
না । অল্প ডালপালা দেখা যায় । যে সব গাছ লম্বা হয়, অনেক
ডালপালা দেখা যায়, এদের মোটা কাঠের গুড়ি থাকে, তাদের
বৃক্ষ জাতীয় গাছ বলে ।
ব্যাঙের
ছাতাকে মাশরুম বলা হয় । এদের খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয় । কিন্তু, সব
মাশরুম খাদ্য নয় । এগুলি বেশির ভাগ গাদায় দেখা যায় । এরা হল ছত্রাক জাতীয় । অনেক
সময় আমাদের শরীরে যে চুলকানি, দাদ, খুসকি
হয় সেগুলি ছত্রাক । এরা গাছেদের মত সবুজ নয় বলে নিজেরা খাদ্য তৈরি করতে পারেনা ।
সব ছত্রাক জাতিকে ফানজাই বলে ।
প্রোটিস্টা
ব্যাকটেরিয়া একটি কোশ দিয়ে তৈরি ও দেহে কোশের মধ্যে নিউক্লিয়াস থাকে । আমাশা, ম্যালেরিয়া, প্যারামসিয়াম
ইত্যাদি হল প্রোটিস্টা ব্যাকটেরিয়া । দইয়ের সাজায় থাকা ব্যাকটেরিয়া, কলেরা
বা টাইফয়েড রোগের ব্যাকটেরিয়া, ইউগ্লিনা প্রভৃতি
মোনেরা রাজ্যের ব্যাকটেরিয়া । এদের দেহ মাত্র একটি কোশ দিয়ে তৈরি । সে কোশে কোন
নিউক্লিয়াস থাকেনা । পশুপাখি, গাছপালা ও আমাদের শরীর
অনেক ছোটো ছোটো ঘর বা কুঠুরি দিয়ে তৈরি, জা
আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা, এগুলি কোশ । এর মধ্যে
থাকা গোল বস্তুটাকে নিউক্লিয়াস বলে ।
এখন
পর্যন্ত সমস্ত জীব জগৎ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জেনে
শেষ করতে পারেনি । যতটুকু জানা গেছে সেই সম্পর্কে বলা হল ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে
কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন ।
বিজ্ঞান ও জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে বিজ্ঞান ও জানা অজানা লেখাটির উপর
ক্লিক করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
খুব ভাল লাগল । ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুন