পৃথিবী কি গোল ও পৃথিবীর সময় গণনার পদ্ধতি কি ?.
পৃথিবী কি গোল এই প্রশ্নটা আমাদের
সবার মনে একবার করে উকি দিয়ে যায় । যদি পৃথিবী সত্যি গোল হয় তার প্রমাণ কি ? আমরা
যখন কোন উঁচু জায়গায় দাড়িয়ে দেখি তখন মনে হয় যে – পৃথিবী যেন বিশাল বড় গোল রুটি,
আর ওপরের আকাশ গম্বুজের মত যেখানে আকাশ এসে মিশেছে সেই দিগন্তে এসে মিসে গেছে ।
পৃথিবী যে গোল তার প্রমাণ কি ? এখন আমি আপনাদের সেই প্রমাণ গুলি জানাবো । জানতে
হলে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন ।
প্রাচীন কালে মানুষ বিশ্বাস করতেন যে
পৃথিবী চ্যাপ্টা রুটির মত সমতল । সে সময় তেমন কোন
যানবাহন ছিল না । তবুও, পৃথিবীর শেষ কথায় তা দেখার জন্য মানুষ বড় বড় নৌকায় চেপে,
উঠের পিঠে চেপে তাঁরা অভিযান শুরু করেন । বিখ্যাত ভূ-পর্যটক ম্যাগেলন ১৫২২ সালে
৫টি বড় বড় জাহাজ নিয়ে পৃথিবী অভিযান শুরু করেছিলেন । তিনি ক্রমাগত পশ্চিম দিকে
যাত্রা করতে করতে শেষ পর্যন্ত একই বন্দরে ফিরে এলেন । যদি পৃথিবী গোল না হত
তাহলে এরকম ঘটনা হতনা ।
গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল চন্দ্র
গ্রহণের সময় দেখেন যে – চাঁদের ওপর পৃথিবীর গোলাকার ছায়া পড়েছে । গোলাকার বস্তুর
ছায়া গোলাকার হয় । গ্রীক ভূগোলবিদ এরাটোসথেনিস, ভারতীয় বিজ্ঞানী আর্যভট্ট এই
ধারণাকে সমর্থন করেছিলেন । এর থেকে বোঝা যায় যে পৃথিবী গোলাকার । আবার পৃথিবীর সব স্থানে
একই সময় সূর্য ওঠেনা বা অস্ত যায়না । পৃথিবী যদি চ্যাপটা হত তাহলে পৃথিবীর সব
স্থানে একই সময় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হত ।
সমুদ্রে আর একটা বিষয় দেখা যায় । কোন
জাহাজ যখন সমুদ্রের দিকে যায় তখন তীর থেকে দেখলে প্রথমে গোটা জাহাজ, তারপর শুধু
জাহাজের পাল । এরপর জাহাজের মাস্তুলের মাথাটুকু শুধু দেখা যায় । তখন মনে হয় যে –
জাহাজটি যেন কোন ঢাল বেয়ে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে । পৃথিবী যদি গোল না হত তাহলে
এরকম ঘটনা হতনা ।
মহাকাশে মহাকাশচারীরা পৃথিবীকে
মহাশূন্য থেকে উজ্জ্বল নীল গোলকের মত দেখেছেন । মহাকাশ থেকে পৃথিবীর যে সমস্ত ছবি
তোলা হয়েছে তাতে পৃথিবীকে গোলাকার দেখা গেছে । ইউরি গ্যাগরিন, নীল আর্মস্ট্রং,
এডুইন অলড্রিন এরা মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে নীল গোলাকার দেখেছেন । বর্তমানে কৃত্রিম
উপগ্রহের মাধ্যমে পৃথিবীর যে ছবি তোলা হয়েছে তাতে পৃথিবী গোলাকার প্রমাণ পাওয়া
গিয়েছে । পৃথিবীর গড় ব্যাসার্ধ প্রায় ৬৪০০ কিলোমিটার । একটা এত বড় বৃত্তের উপর
দাঁড়িয়ে আমরা খুব সামান্য দেখতে পাই । তাই পৃথিবীকে চ্যাপ্টা বা সমতল বলে মনে হয় ।
আমাদের পৃথিবীর আকৃতি উপর-নিচ কিছুটা
চ্যাপটা । পৃথিবীর মেরু ব্যাস ১২৭১৪ কিলোমিটার আর নিরক্ষীয় ব্যাস ১২৭৫৬ কিলোমিটার
। পৃথিবী মাঝ বরাবর ৪২ কিলোমিটার স্ফীত বা মোটা । পৃথিবীর আকৃতি অনেকটা কমলালেবু বা নাসপাতির
মত । তবে আমরা শেষে একথা বলতে পারি যে পৃথিবীর আকৃতি পৃথিবীর মত, ইংরেজিতে একে
‘জিওড’ বলে ।
এবার আপনার মনে এই প্রশ্ন আসছে যে –
আমরা পৃথিবী থেকে পড়ে যায় না কেন ? পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর ঘোরে আবার সূর্যকে
প্রদক্ষিণ করে । পৃথিবী তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা সমস্ত বস্তুকে নিজের দিকে
আকর্ষণ করে । এরফলে সমস্ত বস্তু পৃথিবীতে আটকে থাকে । তাই, পৃথিবী গোল হলেও আমরা
পড়ে যাই না । পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও তার ঘনত্বের একটা পারস্পরিক সম্পর্ক
রয়েছে । নিউটনের সূত্র অনুসারে – দূরত্ব বৃদ্ধি পেলে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব কমে যায়
। পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চল মেরু অঞ্চলের থেকে দূরবর্তী তাই, পৃথিবীর আকর্ষণ মেরু
অঞ্চলে বেশি দেখা যায় ।
পৃথিবীর সময় গণনার পদ্ধতি কি –
পৃথিবীর সময় গণনা করার জন্য পৃথিবীর
উপর অনেক গুলি কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে । দুই মেরু থেকে সমান দূরত্বে পৃথিবীর মাঝ
বরাবর পূর্ব-পশ্চিম যে কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে তাকে নিরক্ষীয় বা বিষুবরেখা বলা
হয় । আবার পৃথিবীর মাঝ বরাবর উত্তর-দক্ষিণে যে কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে তাকে
মূলমধ্য রেখা বলে । পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণে যে অর্ধ-গোলাকার কাল্পনিক রেখা টানা
হয়েছে তাকে দ্রাঘিমা রেখা ও পূর্ব-পশ্চিম
যে গোলাকার কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে তাকে অক্ষ রেখা বলে । মূলমধ্য রেখার বিপরীত
দিকে ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা রেখা অনুসরণ করে একটি কাল্পনিক রেখা টানা হয়েছে । সেই
রেখাটির নাম হল ‘আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা’ । এখান থেকে পৃথিবীর নতুন তারিখ শুরু হয় ।
কোথাও কোথাও এই রেখাকে বাকিয়ে দেওয়া হয়েছে । এই রেখা পেরিয়ে পশ্চিম দিকে গেলে
একদিন কমিয়ে নিতে হয় । আর পূর্ব দিকে গেলে একদিন যোগ করতে হয় ।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধার জন্য কোন
দেশের মাঝখানে দ্রাঘিমা রেখাকে স্থানীয় সময় ধরা হয় । একে সেই দেশের ‘প্রমাণ সময়’
বা ‘স্ট্যান্ডার্ড টাইম’ বলে । যখন কোন দ্রাঘিমা রেখার উপর সূর্য আসে তখন সেই
দ্রাঘিমা রেখার উপর অবস্থিত প্রতিটি স্থানের সময় ১২ টা বলে ধরা হয় । দুপুর ১২ টার
আগের সময় কে am, রাত ১২ টার আগের
সময় কে pm বলে । বেশির ভাগ রেল স্টেশন, বিমান বন্দরে 24 ঘণ্টার ঘড়ি ব্যবহার করা হয় । সেখানে সকাল 5 টায় 5:00, বিকেল 5 টায়
17:00 এই ভাবে দেখা যায় ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট
করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ ।
জানা অজানা ও ভূগোল বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা ও ভূগোল লেখাটির উপর
ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷