ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর বাংলা জীবনী .
নরেন্দ্র
দামোদরদাস মোদী হলেন ভারতের
পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী । তিনি ২৬শে মে ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন । এর আগে
তিনি গুজরাটের
চতুর্দশ মুখ্যমন্ত্রী পদে
অধিষ্ঠিত ছিলেন । নরেন্দ্র মোদী ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই সেপ্টেম্বর বম্বে প্রেসিডেন্সির
(বর্তমান গুজরাট রাজ্যের) মহেসানা জেলার বড়নগর নামক স্থানে এক নিম্নবর্গের পরিবারে জন্মগ্রহণ
করেন । তার পিতার নাম দামোদারদাস মূলচাঁদ মোদী ও মায়ের নাম হীরাবেন মোদী । তিনি
তার পিতামাতার চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন । যে পরিবারের একটি টাকা বাড়তি খরচ
করার সাধ্য ছিলনা । বড়নগর রেলস্টেশনে তিনি তার পিতাকে চা বিক্রি করতে সহায়তা
করতেন । তিনি এই শহরেই একজন সাধারণ মানের ছাত্র হিসেবে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করেন
। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূর শিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং গুজরাট
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন ।
মোদীর
পিতা মাতা কৈশোর অবস্থায় তার বিবাহ স্থির করেন । তেরো বছর বয়সে যশোদাবেন চিমনলাল
নামক এক মেয়ের সঙ্গে তার বিবাহ স্থির হয় এবং আঠারো বছর বয়সে তাদের মধ্য বিবাহ
অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় । সতেরো বছর বয়সে তিনি ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিনি রাজকোট শহরে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন ও তারপর বেলুড় মঠ যাত্রা করেন । এরপর তিনি আলমোড়া শহরে স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে যোগ দেন । দুই
বছর পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন । আমেদাবাদ শহরে নিজের কাকার চায়ের দোকানে যোগ দেন । এরপর
তিনি গুজরাট
রাজ্য মার্গ বাহন ব্যবহার নিগমের ক্যান্টিনের
কর্মচারী হিসেবে যোগ ।
ছোট বেলায় স্বামী বিবেকানন্দের জীবন তাকে বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত করে । কম বয়স থেকেই
মানুষ ও জাতির সেবায় কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে । আট বছর বয়সে মোদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের স্থানীয় শাখায়
সঙ্ঘের বাল স্বয়ং সেবক হিসেবে দলে যোগ দেন । তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের একজন পূর্ণ সময়ের প্রচারক হিসেবে যোগ দেন । ১৯৭১
খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধ শেষ হলে মোদী আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘে যোগ দেন । নাগপুর শহরে প্রশিক্ষণের পর তাকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন অখিল
ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের দায়িত্ব
দেওয়া হয় ।
১৯৭৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক ঘোষিত জরুরী
কালীন অবস্থায় বিরোধীদের
গ্রেপ্তার করা হলে তিনি জয়প্রকাশ
নারায়ণের নেতৃত্বে জরুরী
কালীন অবস্থা আন্দোলনে সামিল হন
। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ মোদীকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করায় । ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির গুজরাট শাখার কার্যনির্বাহী সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত
হন । ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে মোদী ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন । জাতীয় স্তরে
কাজ করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেন |
২০০১ খ্রিষ্টাব্দে কেশুভাই প্যাটেলের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার
অপব্যবহার, দুর্নীতি ও ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ভূজ ভূমিকম্পে প্রশাসনিক দুর্বলতার অভিযোগ ওঠে । ২০০১
খ্রিষ্টাব্দের ৭ই অক্টোবর মোদী গুজরাটের
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব
গ্রহণ করেন । রেকর্ড সংখ্যক চারবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জনসেবার কাজ করে গিয়েছেন | মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সরকারীকরণ ও বিশ্বায়ন বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে বেসরকারিকরণের
নীতি গ্রহণ করেন ।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে ফেব্রুয়ারি গোধরা শহরের নিকটে বহু হিন্দু তীর্থযাত্রী ও শতশত যাত্রীসহ
একটি ট্রেন আগুনে
পুড়ে গেলে প্রায় ৬০ জন্মের
মৃত্যু ঘটে । গুজরাট জুড়ে মুসলিম
বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়ে যায় ।
মোদীর নির্দেশে দাঙ্গায় উস্কানিমূলক পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করা হয় । জাকিয়া
জাফরি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মামলা করলে সর্বোচ্চ
ন্যায়ালয় বিশেষ তদন্তকারী দলকে এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় । দাঙ্গার
কারণে রাজ্যের ভেতর ও বাইরে থেকে মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য
চাপ বাড়তে থাকে । অর্থনৈতিক দিকে মোদীর নজর থাকলেও বিভিন্ন সময়ে তাকে মুসলিম
সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য সমালোচিত হতে হয় ।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি গুজরাটকে
শিল্পে বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত করেন । তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে
মোদী ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণের ব্যাপারে নজর দে ন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে
১১৩,৭৩৮টি ছোট বাঁধ নির্মাণ করা হয় । এই
সময়কালে মোদী সরকার গুজরাটের সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে সক্ষম হন । মোদীর
তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রীত্বের কালে গুজরাট
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স টেক-সিটি প্রকল্পে অগ্রগতি ঘটে ।
২০১৪ ও ২০১৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে শ্রী মোদীর নেতৃত্বে
ভারতীয় জনতা পার্টি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে । ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ভারতের
লোকসভা নির্বাচনে একক
সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ২১শে মে
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন । ২৬শে মে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী
ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেন । তিনিই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যার জন্ম ভারতের স্বাধীনতালাভের পর ।
২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের
পর থেকেই তিনি সার্বিক ও সর্বজনের উন্নয়নের অভিযাত্রা শুরু করেছেন । ২০১৪ সালের ২
অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ নামে পরিচ্ছন্নতার জন্য দেশজুড়ে এক গণ আন্দোলন শুরু করেন । ২০১৫ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল
ইন্ডিয়া মিশনের উদ্বোধন করেছেন যার মূল লক্ষ্য এমন ডিজিটাল ইন্ডিয়া সৃষ্টি করা । ভারত
সরকার দেশের জনগণের জন্য তিনটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প চালু করেছে এবং বয়স্কদের
পেনসন ও গরীবদের বীমার আওতায় নিয়ে আসার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে । বিভিন্ন সরকারি
কর্মসূচি ও পরিষেবাগুলির সুবিধা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী
দ্রুততার ও দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছেন । অগ্রণী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির পক্ষ
থেকে প্রকাশ - প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত রেকর্ড গতিতে
দারিদ্র্য মুক্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে ।
সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শ্রী নরেন্দ্র
মোদি রাষ্ট্রসংঘ, ব্রিকস, সার্ক, জি-২০
প্রভৃতি শীর্ষ বৈঠকে-এ অংশ
নিয়েছেন,
যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নানা ক্ষেত্রের বিবিধ
সমস্যা নিয়ে ভারতের মধ্যস্থতা, ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ ভাবে সমাদৃত হয়েছে । রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর ভাষণ সারা বিশ্বে
প্রশংসা কুড়িয়েছে । বছরের একটা দিনকে
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে পালন করার জন্য শ্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে
রাষ্ট্রসংঘ ‘২১ জুন
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাবে সম্মতি দেয় |
রাজনীতির বাইরে নরেন্দ্র শ্রী মোদি নানারকম
লেখালেখির কাজও উপভোগ করেন । তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, এরমধ্যে আছে কবিতার বই । কবিতা রচনার পাশাপাশি, বহু গ্রন্থ তিনি লিখেছেন । ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শান্তি
ও উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য মর্যাদাপূর্ণ সিওল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন ।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মোদী একাধিক সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছেন ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা
আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট
টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জীবনী ও সংবাদ বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে
জীবনী ও সময় লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক
ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷