সোমবার, ৮ জুন, ২০২০

ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর বাংলা জীবনী .


  নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী   হলেন ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী । তিনি ২৬শে মে ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন  এর আগে তিনি গুজরাটের চতুর্দশ মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন নরেন্দ্র মোদী ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই সেপ্টেম্বর বম্বে প্রেসিডেন্সির  (বর্তমান গুজরাট রাজ্যের) মহেসানা জেলার বড়নগর নামক স্থানে এক নিম্নবর্গের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতার নাম দামোদারদাস মূলচাঁদ মোদী ও মায়ের নাম হীরাবেন মোদী । তিনি তার পিতামাতার চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন । যে পরিবারের একটি টাকা বাড়তি খরচ করার সাধ্য ছিলনা । বড়নগর রেলস্টেশনে তিনি তার পিতাকে চা বিক্রি করতে সহায়তা করতেন । তিনি এই শহরেই একজন সাধারণ মানের ছাত্র হিসেবে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করেন । তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূর শিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন ।

মোদীর পিতা মাতা কৈশোর অবস্থায় তার বিবাহ স্থির করেন । তেরো বছর বয়সে যশোদাবেন চিমনলাল নামক এক মেয়ের সঙ্গে তার বিবাহ স্থির হয় এবং আঠারো বছর বয়সে তাদের মধ্য বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় । সতেরো বছর বয়সে তিনি ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিনি রাজকোট শহরে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন ও তারপর বেলুড় মঠ যাত্রা করেন । এরপর তিনি আলমোড়া শহরে স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে যোগ দেন দুই বছর পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন । আমেদাবাদ শহরে নিজের কাকার চায়ের দোকানে যোগ দেন । এরপর তিনি গুজরাট রাজ্য মার্গ বাহন ব্যবহার নিগমের ক্যান্টিনের কর্মচারী হিসেবে যোগ ।

  ছোট বেলায় স্বামী বিবেকানন্দের জীবন তাকে বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত করে । কম বয়স থেকেই মানুষ ও জাতির সেবায় কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে । আট বছর বয়সে মোদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের স্থানীয় শাখায়  সঙ্ঘের বাল স্বয়ং সেবক হিসেবে দলে যোগ দেন । তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের একজন পূর্ণ সময়ের প্রচারক হিসেবে যোগ দেন । ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধ শেষ হলে মোদী আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘে যোগ দেন । নাগপুর শহরে প্রশিক্ষণের পর তাকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
 ১৯৭৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক ঘোষিত জরুরী কালীন অবস্থায় বিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হলে তিনি জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে জরুরী কালীন অবস্থা আন্দোলনে সামিল হন । ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ মোদীকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করায় । ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির গুজরাট শাখার কার্যনির্বাহী সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন । ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে মোদী ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন । জাতীয় স্তরে কাজ করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেন |
 ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে কেশুভাই প্যাটেলের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে এবং তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ভূজ ভূমিকম্পে প্রশাসনিক দুর্বলতার অভিযোগ ওঠে ।  ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই অক্টোবর মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । রেকর্ড সংখ্যক চারবার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জনসেবার কাজ করে গিয়েছেন | মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সরকারীকরণ ও বিশ্বায়ন বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে বেসরকারিকরণের নীতি গ্রহণ করেন ।
 ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে ফেব্রুয়ারি গোধরা শহরের নিকটে বহু হিন্দু তীর্থযাত্রী ও শতশত যাত্রীসহ একটি ট্রেন আগুনে পুড়ে গেলে প্রায় ৬০ জন্মের মৃত্যু ঘটে । গুজরাট জুড়ে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়ে যায় । মোদীর নির্দেশে দাঙ্গায় উস্কানিমূলক পদক্ষেপ বলে সমালোচনা করা হয় । জাকিয়া জাফরি ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ভারতের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মামলা করলে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় বিশেষ তদন্তকারী দলকে এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় । দাঙ্গার কারণে রাজ্যের ভেতর ও বাইরে থেকে মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য চাপ বাড়তে থাকে । অর্থনৈতিক দিকে মোদীর নজর থাকলেও বিভিন্ন সময়ে তাকে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য সমালোচিত হতে হয় ।
 গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি গুজরাটকে শিল্পে বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত করেন । তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে মোদী ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণের ব্যাপারে নজর দে ন। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ১১৩,৭৩৮টি ছোট বাঁধ নির্মাণ করা হয়  । এই সময়কালে মোদী সরকার গুজরাটের সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে সক্ষম হন । মোদীর তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রীত্বের কালে গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স টেক-সিটি প্রকল্পে অগ্রগতি ঘটে ।
 ২০১৪ ও ২০১৯ সালের সংসদীয় নির্বাচনে শ্রী মোদীর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ২১শে মে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন । ২৬শে মে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেন । তিনিই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যার জন্ম ভারতের স্বাধীনতালাভের পর ।
 ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি সার্বিক ও সর্বজনের উন্নয়নের অভিযাত্রা শুরু করেছেন । ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছ ভারত মিশননামে পরিচ্ছন্নতার জন্য দেশজুড়ে এক গণ আন্দোলন শুরু করেন ।  ২০১৫ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের উদ্বোধন করেছেন যার মূল লক্ষ্য এমন ডিজিটাল ইন্ডিয়া সৃষ্টি করা । ভারত সরকার দেশের জনগণের জন্য তিনটি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প চালু করেছে এবং বয়স্কদের পেনসন ও গরীবদের বীমার আওতায় নিয়ে আসার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে । বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচি ও পরিষেবাগুলির সুবিধা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী দ্রুততার ও দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছেন অগ্রণী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে প্রকাশ - প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত রেকর্ড গতিতে দারিদ্র্য মুক্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে ।
 সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শ্রী নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রসংঘ, ব্রিকস, সার্ক, জি-২০ প্রভৃতি শীর্ষ বৈঠকে-এ অংশ নিয়েছেন, যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নানা ক্ষেত্রের বিবিধ সমস্যা নিয়ে ভারতের মধ্যস্থতা, ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ ভাবে সমাদৃত হয়েছে । রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর ভাষণ সারা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে । বছরের একটা দিনকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে পালন করার জন্য শ্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে রাষ্ট্রসংঘ ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবসহিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাবে সম্মতি দেয় |
 রাজনীতির বাইরে নরেন্দ্র শ্রী মোদি নানারকম লেখালেখির কাজও উপভোগ করেন । তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, এরমধ্যে আছে কবিতার বই । কবিতা রচনার পাশাপাশি, বহু গ্রন্থ তিনি লিখেছেন । ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শান্তি ও উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য মর্যাদাপূর্ণ সিওল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন । এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মোদী একাধিক সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছেন ।
  আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জীবনী ও সংবাদ বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জীবনী ও সময় লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷