স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ বা উপসর্গ কি, স্তন ক্যান্সার কেন হয় ?.
স্তন ক্যান্সারে নারীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে
বেশি । সাধারণত
৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে । স্তন
ক্যান্সারে যতজন আক্রান্ত হন তাদের ৮০ ভাগের বয়স হচ্ছে ৫০-এর ওপর । স্তন ক্যান্সারে শুধু নারীরা নন, পুরুষেরা আক্রান্ত হতে পারেন । তবে নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে । পুরুষদের
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার খুবই কম । যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর ৪১ হাজার মহিলা স্তন
ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, সেই তুলনায় মাত্র ৩০০ জন পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হন । যাদের পরিবারে কারোর স্তন ক্যান্সার রয়েছে তাদের এই
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর । স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কিছু কিছু জিনগত পরিব্যক্তি
অনেক সময় দায়ী হয়ে থাকে । প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরলে স্তন ক্যান্সার থেকে সুস্থ
হয়ে ওঠার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে । প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত হলে স্তন ক্যান্সার ১০০ ভাগ
নিরাময় করা সম্ভব ।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ বা উপসর্গ –
সাধারণত
প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার এতো ছোট থাকে যে বাইরে থেকে সেটা বোঝা সম্ভব হয় না । অধিকাংশ সময় স্তনে একটি চাকা দেখা যায় । অনেকের স্তনের বোঁটায় ঘা বা ক্ষত বা বোঁটার চারপাশে
কালো অংশে চুলকানির লক্ষণ দেখা যায় । স্তনের
চামড়ার রং বা চেহারায় পরিবর্তন হয় । স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া । কারো স্তনের বোঁটা দিয়ে দুধের মত সাদা রস নিঃসৃত হতে
থাকে । স্তন লাল
রং হয়ে যায় । স্তনের বোঁটার বিশেষ ধরনের পরিবর্তন, যেমন ভেতরে ঢুকে যায়, অসমান বা বাঁকা হয়ে যায় । স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন,
স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যায় ইত্যাদি ।
স্তন ক্যানসার কেন হয় –
স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা
পিণ্ডে পরিণত হয় । সেগুলি রক্তনালীর লসিকা ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন
জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে । এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা হল ক্যান্সার । কারো যদি বারো বছরের আগে ঋতুস্রাব হয় এবং দেরিতে
মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হয়, তারা ঝুঁকিতে থাকে । সেই সঙ্গে তেজস্ক্রিয় স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে
সাহায্য করে । কারো পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে তাঁদের স্তন
ক্যানসার হতে পারে । দেরিতে সন্তান গ্রহণ, আবার যাদের সন্তান নেই, অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে । আমাদের
জীবনাচরণে এবং খাদ্যাভ্যাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে, সেটি একটি কারণ হতে পারে ।
যেসব মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না, খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণীজ
আমিষ বেশি থাকে, তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে । যারা দীর্ঘদিন
ধরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোনের ইনজেকশন নিচ্ছেন, তারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন । একই সঙ্গে বয়স বাড়ার সাথে স্তন ক্যান্সারে
আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে । ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায় । যেসব মহিলাদের মায়ের ৫০ বছরের আগেই স্তন ক্যান্সার ধরা পরেছে
তাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ১.৭ শতাংশ । যাদের মায়ের স্তন ক্যান্সার ৫০ বছর বা তারপরে গিয়ে
ধরা পরেছে সেখানে এই সংখ্যাটি নেমে দাঁড়ায় ১.৪ শতাংশ । বয়স ৩০-৩৫ বছর হওয়ার পর সব
নারীর নিয়মিত নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখা উচিত । আপনি নিজে নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী আপনার
স্তন পরীক্ষা করবেন ।
বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকেরা বলছেন ভারত বা বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর
বাড়ছে । সেই সঙ্গে বাড়ছে স্তন
ক্যান্সারে আক্রান্তের হার । সামাজিক
রক্ষণশীলতার কারণে ভারত বা বাংলাদেশের নারীরা প্রকাশ্যে স্তন শব্দটি উচ্চারণ
পর্যন্ত করতে চান না । বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন একেবারে শেষ পর্যায়ে । ম্যামোগ্রাম
বা বিশেষ ধরনের এক্স রে, যার সাহায্যে স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ধরা পড়ে । ৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীদের প্রতি তিন বছর পর পর
ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাম করানো উচিত । ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে খুব ছোট থাকা অবস্থাতে বা
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় করা যায় । অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি হল অস্ত্রোপাচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোনাল থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ইত্যাদি ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন
প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে
অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে স্বাস্থ্য লেখাটির
উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷