ভারতের প্রথম প্রধান মন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর বাংলা জীবনী .
পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ভারতীয়
জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
ছিলেন । গঙ্গা নদীর তীরে এলাহাবাদ শহরে ১৪ই
নভেম্বর, ১৮৮৯
সালে জওহরলাল নেহরু জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতা মতিলাল নেহরু ও মা স্বরূপ রানি । মতিলাল নেহরু ছিলেন একজন
বিখ্যাত আইন ব্যবসায়ী । আইন ব্যবসার কারণে মতিলাল নেহরু এলাহাবাদে বসবাস শুরু করেন
। জওহরলাল ও তার দুই বোন ছিল বিজয়া লক্ষ্মী ও কৃষ্ণা । ভারতের সবথেকে আধুনিক
স্কুলে পড়ার পর প্রায় ১৫ বছর বয়সে নেহরু ইংল্যান্ডের হ্যারোতে চলে যান । তিনি
প্রকৃতি বিজ্ঞানের উপরে কেমব্রিজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে লেখাপড়া করেন । এরপর তিনি কেমব্রিজেই ব্যারিস্টারি পড়া শুরু করেন ।
তিনি দেশে ফেরেন ১৯১২ সালে । ভারতে ফিরে আসবার পরে তখন তার বয়স যখন ছিল ২৭ বছর ।
১৯১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জওহরলাল নেহেরু কমলা কাউলকে বিয়ে করেন । কমলা কাউলের
গর্ভে তাদের একমাত্র কন্যা ইন্দিরা
প্রিয়দর্শীনির জন্ম হয় । নেহেরুর মেয়ে ইন্দিরা
গান্ধী ও তার
স্বামী ফিরোজ গান্ধী । ১৯৪৪ সালে ইন্দিরা
গান্ধীর পুত্র রাজীব
গান্ধীর জন্ম
হয় । পরবর্তীকালে তার মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী ও দৌহিত্র রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৩১
সালে নেহেরুর পিতা মতিলাল নেহেরুর মৃত্যু হয় ।
ইংল্যান্ডে পড়ার সময় থেকেই নেহেরু
ভারতীয় ছাত্র সংসদের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন । এই সময়েই তিনি সমাজতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন । তিনি
নিজেকে একজন আইনজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন । সে সময় পিতার হাত ধরেই নেহেরু
কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দেন । নেহেরু ভারতীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । মহাত্মা গান্ধীর দর্শন ও নেতৃত্ব জওহরলাল
নেহেরুকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে । গান্ধীর নীতি সত্যাগ্রহ ও অহিংসার
প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চম্পারান আন্দোলনের সময় নেহেরু গান্ধীর সাথে পরিচিত হন এবং তাকে সাহায্য
করেন । মহাত্মা গান্ধীর প্রভাবে নেহেরু পরিবার তাদের ভোগ-বিলাসের জীবন ত্যাগ করেন
। তখন থেকে নেহেরু খাদির তৈরি কাপড় পড়তেন । একজন বিশিষ্ট সংগঠক হিসেবে নেহেরু উত্তর ভারতে খুব
জনপ্রিয় হয়ে উঠেন ।
১৯২২ সালের ৪
ফেব্রুয়ারি চৌরিচৌরাতে বাইশজন পুলিশকে বিদ্রোহীরা হত্যা করে । গান্ধী ঐ সময়
কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করছিলেন । গান্ধী এহেন হিংসাত্মক ঘটনার প্রতিবাদে অনশন
ত্যাগ করেন । এই ঘটনার পরে মতিলাল নেহেরু কংগ্রেস ছেড়ে চলে গেলেও নেহেরু গান্ধীর
সাথে কংগ্রেসে থেকে যান । অসহযোগ আন্দোলনের সময়টাতে দু’বার কারাবরণও করেন
নেহরু । ১৯২০ সালে নেহেরু নিখিল ভারত শ্রমিক ইউনিয়ন কংগেসের
সভাপতি নির্বাচিত হন । তিনি ১৯২৪ সালে এলাহাবাদ মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের সভাপতি
নির্বাচিত হন । দুই বছর এই পদে আসীন থাকেন । ১৯২৯ সালের লাহোর সম্মেলনে গান্ধীর
পরামর্শে নেহেরুকে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় । ১৯৩৬ সালে নেহেরু ভারতীয়
জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এর লক্ষ্মৌ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ।
১৯২৯ সালের ৩১
ডিসেম্বর কংগ্রেস
সভাপতি নেহেরু রাভি নদীর তীরে এক জনসভায় ভারতের স্বাধীনতার পতাকা
উত্তোলন করেন । ১৯৩১ থেকে ১৯৩৫ সালের মাঝে মাত্র চার মাস ছাড়া বাকি সময় তিনি বোন
ও স্ত্রীসহ কারাগারে ছিলেন । দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের
ভাইসরয় জনপ্রতিনিধিদের
সাথে কোন রূপ আলোচনা ছাড়াই, ভারতের পক্ষে মিত্রশক্তির বিরূদ্ধে যুদ্ধে যোগদানের ঘোষণা করেন । যুদ্ধের
পর ভারতীয়দের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হবে এই আশায় নেহেরু ব্রিটিশদের সমর্থন
দেন । কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেস নেতাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করলে গান্ধী ও বল্লভভাই প্যাটেল আন্দোলনের ডাক দেন । নেহেরু "ভারত
ছাড়" আন্দোলনকে জনপ্রিয় করতে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সফর করেন । ব্রিটিশ
সরকার ১৯৪২ সালের ৯ আগস্ট নেহেরু ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতার
করে । ১৯৪৫ সালে তিনি জেল থেকে বের হন ।
শুধু
তিনি রাজনীতিবিদ নন, সমান ভাবে পরিচিত একজন কবি, সাহিত্যকার ও দেশপ্রেমী হিসেবে । লেখক হিসেবে নেহরু ছিলেন বিশিষ্ট । শুধু
ভারতীয় উপমহাদেশই নয়, বিশ্বপাঠকের কাছে তিনি একজন সমৃদ্ধ লেখক । ইংরেজীতে লেখা তাঁর তিনটি বিখ্যাত বই- 'একটি
আত্মজীবনী'(An Autobiography), 'বিশ্ব ইতিহাসের কিছু চিত্র'(Glimpses of World
History), এবং 'ভারত আবিষ্কার'(The Discovery of India) চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা
লাভ করেছে । জওহরলাল নেহরু এর বই সমগ্র পড়লে তাঁর ব্যক্তিজীবনের
দর্শন, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অনেকটাই জানতে পারা যায় ।
শুধু মাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী বা রাজনৈতিক নেতা হিসেবেই নয়, একজন শিশুপ্রেমী
হিসেবেও বিখ্যাত তিনি । ভারতে 14ই নভেম্বর তাঁর জন্ম দিনটি পালিত হয় শিশুদের
জন্যে । পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে প্রতিবছর বেশ আনন্দের সঙ্গেই পালিত হয় এই দিনটি । শিশুদের প্রতি
অকৃত্রিম ভালবাসা ছিল তাঁর । তাঁর এই ভালোবাসাই তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে সবার প্রিয় চাচাজী হিসেবে ।
নিখিল ভারত
মুসলিম লীগ নেতা মুহাম্মদ
আলী জিন্নাহ মুসলমানদের জন্য আলাদা
রাষ্ট্র পাকিস্তানের দাবি জানাচ্ছিলেন । অবশেষে
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয় । ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ সালে নেহেরু ভারতের
প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ২৭ মে, ১৯৬৪ পর্যন্ত
তিনি ভারতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৬৪ সালের ২৭ মে নেহেরু
মৃত্যুবরণ করেন ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷