শনিবার, ২ মে, ২০২০

ভারতের প্রথম প্রধান মন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর বাংলা জীবনী .


 পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ভারতীয় জাতীয়  কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন গঙ্গা নদীর তীরে এলাহাবাদ শহরে ১৪ই নভেম্বর, ১৮৮৯ সালে জওহরলাল নেহরু জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতা মতিলাল নেহরু ও মা স্বরূপ রানি । মতিলাল নেহরু ছিলেন একজন বিখ্যাত আইন ব্যবসায়ী । আইন ব্যবসার কারণে মতিলাল নেহরু এলাহাবাদে বসবাস শুরু করেন । জওহরলাল ও তার দুই বোন ছিল বিজয়া লক্ষ্মী ও কৃষ্ণা । ভারতের সবথেকে আধুনিক স্কুলে পড়ার পর প্রায় ১৫ বছর বয়সে নেহরু ইংল্যান্ডের হ্যারোতে চলে যান । তিনি প্রকৃতি বিজ্ঞানের উপরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে লেখাপড়া করেন । এরপর তিনি কেমব্রিজেই ব্যারিস্টারি পড়া শুরু করেন ।
 তিনি দেশে ফেরেন ১৯১২ সালে । ভারতে ফিরে আসবার পরে তখন তার বয়স যখন ছিল ২৭ বছর । ১৯১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জওহরলাল নেহেরু কমলা কাউলকে বিয়ে করেন । কমলা কাউলের গর্ভে তাদের একমাত্র কন্যা ইন্দিরা প্রিয়দর্শীনির জন্ম হয় । নেহেরুর মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী ও তার স্বামী ফিরোজ গান্ধী । ১৯৪৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র রাজীব গান্ধীর জন্ম হয় । পরবর্তীকালে তার মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী ও দৌহিত্র রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৩১ সালে নেহেরুর পিতা মতিলাল নেহেরুর মৃত্যু হয় ।

 ইংল্যান্ডে পড়ার সময় থেকেই নেহেরু ভারতীয় ছাত্র সংসদের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন । এই সময়েই তিনি সমাজতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হন । তিনি নিজেকে একজন আইনজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন । সে সময় পিতার হাত ধরেই নেহেরু কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দেন । নেহেরু ভারতীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । মহাত্মা গান্ধীর দর্শন ও নেতৃত্ব জওহরলাল নেহেরুকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে । গান্ধীর নীতি সত্যাগ্রহ ও অহিংসার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চম্পারান আন্দোলনের সময় নেহেরু গান্ধীর সাথে পরিচিত হন এবং তাকে সাহায্য করেন । মহাত্মা গান্ধীর প্রভাবে নেহেরু পরিবার তাদের ভোগ-বিলাসের জীবন ত্যাগ করেন । তখন থেকে নেহেরু খাদির তৈরি কাপড় পড়তেন । একজন বিশিষ্ট সংগঠক হিসেবে নেহেরু উত্তর ভারতে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেন ।
 ১৯২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চৌরিচৌরাতে বাইশজন পুলিশকে বিদ্রোহীরা হত্যা করে । গান্ধী ঐ সময় কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করছিলেন । গান্ধী এহেন হিংসাত্মক ঘটনার প্রতিবাদে অনশন ত্যাগ করেন । এই ঘটনার পরে মতিলাল নেহেরু কংগ্রেস ছেড়ে চলে গেলেও নেহেরু গান্ধীর সাথে কংগ্রেসে থেকে যান । অসহযোগ আন্দোলনের সময়টাতে দু’বার কারাবরণও করেন নেহরু ১৯২০ সালে নেহেরু নিখিল ভারত শ্রমিক ইউনিয়ন কংগেসের সভাপতি নির্বাচিত হন । তিনি ১৯২৪ সালে এলাহাবাদ মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন । দুই বছর এই পদে আসীন থাকেন । ১৯২৯ সালের লাহোর সম্মেলনে গান্ধীর পরামর্শে নেহেরুকে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় । ১৯৩৬ সালে নেহেরু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এর লক্ষ্মৌ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ।
 ১৯২৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর কংগ্রেস সভাপতি নেহেরু রাভি নদীর তীরে এক জনসভায় ভারতের স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন । ১৯৩১ থেকে ১৯৩৫ সালের মাঝে মাত্র চার মাস ছাড়া বাকি সময় তিনি বোন ও স্ত্রীসহ কারাগারে ছিলেন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের ভাইসরয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কোন রূপ আলোচনা ছাড়াই, ভারতের পক্ষে মিত্রশক্তির বিরূদ্ধে যুদ্ধে যোগদানের ঘোষণা করেন । যুদ্ধের পর ভারতীয়দের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হবে এই আশায় নেহেরু ব্রিটিশদের সমর্থন দেন । কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেস নেতাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করলে গান্ধী ও বল্লভভাই প্যাটেল আন্দোলনের ডাক দেন । নেহেরু "ভারত ছাড়" আন্দোলনকে জনপ্রিয় করতে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সফর করেন । ব্রিটিশ সরকার ১৯৪২ সালের ৯ আগস্ট নেহেরু ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতার করে । ১৯৪৫ সালে তিনি জেল থেকে বের হন ।
 শুধু তিনি রাজনীতিবিদ নন, সমান ভাবে পরিচিত একজন কবি, সাহিত্যকার ও দেশপ্রেমী হিসেবে লেখক হিসেবে নেহরু ছিলেন বিশিষ্ট । শুধু ভারতীয় উপমহাদেশই নয়, বিশ্বপাঠকের কাছে তিনি একজন সমৃদ্ধ লেখক । ইংরেজীতে লেখা তাঁর তিনটি বিখ্যাত বই- 'একটি আত্মজীবনী'(An Autobiography), 'বিশ্ব ইতিহাসের কিছু চিত্র'(Glimpses of World History), এবং 'ভারত আবিষ্কার'(The Discovery of India) চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে । জওহরলাল নেহরু এর বই সমগ্র পড়লে তাঁর ব্যক্তিজীবনের দর্শন, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অনেকটাই জানতে পারা যায়
 শুধু মাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী বা রাজনৈতিক নেতা হিসেবেই নয়, একজন শিশুপ্রেমী হিসেবেও বিখ্যাত তিনি ভারতে 14ই নভেম্বর তাঁর জন্ম দিনটি পালিত হয় শিশুদের জন্যে পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে প্রতিবছর বেশ আনন্দের সঙ্গেই পালিত হয় এই দিনটি শিশুদের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ছিল তাঁর । তাঁর এই ভালোবাসাই তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে সবার প্রিয় চাচাজী হিসেবে
 নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র পাকিস্তানের দাবি জানাচ্ছিলেন । অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয় । ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ সালে নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন । ২৭ মে, ১৯৬৪ পর্যন্ত তিনি ভারতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৬৪ সালের ২৭ মে নেহেরু মৃত্যুবরণ করেন ।

  আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷