বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা কবে, কিভাবে আবিষ্কার হয়েছিল ?.


 সাধারণ ভাবে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন শুধুমাত্র একজনের দ্বারা ঘটেনা । নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে অনেকের হাতে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি গড়ে ওঠে । মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা সম্পর্কে আমরা একই কথা বলতে পারি । জাইলোগ্রাফী (Block Printing) অষ্টম শতকের গোঁড়ার দিকে চীনদেশে প্রথম এসেছিল । মুদ্রাকররা যে ভাষ্য বা ছবি ছাপাতে চাইতেন তা প্রথমে একটা কাঠের ফলকের উপর উলটো করে খোদাই করে কালি মাখিয়ে কাগজের উপর ছেপে দিতেন । ইতিমধ্যে কাগজ তৈরির রীতিনীতি চিন দেশ থেকে আরবদের মাধ্যমে ইউরোপে চালু হয়ে যায় ।
 
 সচল ধাতুর হরফ ওয়ালা মুদ্রণযন্ত্র ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ জার্মানির মেইনজ শহরে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে । মুদ্রণযন্ত্র আত্মপ্রকাশ করেছিল এক ছোট প্রাদেশিক শহরে, যার জনসংখ্যা ছিল মাত্র তিন হাজার । এই যন্ত্র উদ্ভাবনের সাথে তিনজন মানুষের নাম জড়িয়ে আছে । তাঁরা হলেন যোহান গুটেনবার্গ, যোহান ফস্টে ও পিটার শোফার । 

গুটেনবার্গ, ফস্টে ও শোফার যে মুদ্রণযন্ত্র চালু করেছিলেন তাতে এক বিশেষ ধরণের কালি লাগত । ছবি আঁকার তেল রঙের তেল মিশিয়ে এই বিশেষ ধরণের কালি তৈরি হত । এরসাথে ব্যবহার করা হত কাগজে কালি ছাপ লাগাবার বিশেষ যন্ত্র ও ধাতুর হরফ । ধাতুর হরফ তৈরির কৌশল এসেছিল ধাতুর নানা রকম সূক্ষ্ম কাজ কর্মের বহুকালের পুরনো ঐতিহ্য থেকে ।
 ছাপাখানাতে প্রথম যে বইটি ছাপা হয়েছিল সেটি হল ল্যাটিন ভাষায় মুদ্রিত বাইবেল তার হরফের সৌন্দর্য, হরফ সাজাবার আর ছাপার মুনশিয়ানা প্রায় তাক লাগিয়ে দেবার মত নিখুঁত ছিল । এই বই ১৪৫৫ সালে প্রথম ছাপা হয়েছিল । এর দুবছর পর ফস্টে ও শোফার বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের স্তোত্র সার প্রকাশ করেন । এই বইটি ছিল ইউরোপে প্রথম স্বাক্ষরিত ও তারিখ দেওয়া বই । পরবর্তী তিনশো বছর এভাবেই চলতে থাকে ।
 প্রথম দিকের মুদ্রিত বই গুলি ছিল হুবহু হাতে লেখা পুঁথির মত । সে সময়ের মুদ্রাকররা কম দামে তাদের খদ্দেরের হাতে বই তুলে দেওয়ার কাজ করতেন । মেইনজ শহরের ব্যবসায়ী, আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, সরকারী কর্মচারী ইত্যাদি মানুষদের মধ্যে নতুন বইয়ের চাহিদা ছিল উল্লেখযোগ্য । ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো, সরকারী দপ্তরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ, সমাজে মেলামেশা, জীবিকা নির্বাহ করার জন্য এই সব মানুষদের লেখাপড়া করতে হত । এছাড়াও স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে বইয়ের চাহিদা ছিল অনেক । মানুষেরা নিজেদের দরকারে ল্যাটিন ও নানা ভাষায় বই কিনতেন ।

 মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা আবিষ্কারের আগে লেখাপড়া হত প্রাচীন ও সমসাময়িক পণ্ডিতদের লেখা নকল করে এরফলে দুধরণের সমস্যা দেখা যেত । নকল করার কাজ হত খুব ধীর গতিতে, এবং তাতে প্রচুর ভুলভ্রান্তি দেখা যেত । কিন্তু, মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা আবিষ্কারের ফলে এই দুই সমস্যার সমাধান সম্ভব হল । নির্ভুল রচনা জ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার পরিধির বিস্তার ঘটাল । কোপারনিকাস, ইরাসমাসের লেখা ইউরোপের পণ্ডিত ও জ্ঞানী মানুষদের কাছে ছড়িয়ে পড়ল । দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে ধর্ম সংস্কারের ধ্যান ধারণা ।
 মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা আবিষ্কারের গুরুত্ব সুপ্রাচীন কালে হাতে লেখা আর আধুনিক কম্পিউটার আবিষ্কারের সমতুল্য । এর পাশাপাশি নিষিদ্ধ বইয়ের সংখ্যা বাড়তে লাগল । ১৫৬০ সালের মধ্যে পশ্চিম ইউরোপে বইয়ের উপর সেন্সর প্রথা চালু হয় ।
 ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হয় ১৫৫৬ সালে, গোয়ায় ১৫৬৭ সালে গোয়ার ছাপাখানা থেকে এ অঞ্চলের প্রথম বইটি ছেপে বের হয় খ্রিস্টান মিশনারিরা তাঁদের ধর্মীয় ভাবনা বিভিন্ন প্রকাশনার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতেন বাংলায় প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয় ১৭৭৭ সালে জেমস অগাস্টাস হিকি ১৭৭৭ সালে ‘Bengal Gazette’ নামের সাময়িকপত্র প্রকাশ করেন ১৭৭৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী থেকে প্রকাশিত ‘A Grammar of the Bengal Language’ গ্রন্থে বাংলা হরফের প্রথম মুদ্রিত উপস্থিতি দেখা যায়


 প্রথম এই বই প্রকাশের কৃতিত্ব দেখান ইংরেজ ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হালেদ (১৭৫১-১৮৩০)। বাংলা হরফ নির্মাণকারী তথা বাংলা ছাপাখানা ও মুদ্রণশিল্পের জনক হিসেবে যাঁকে আমরা জানি তিনি হলেন ব্রিটিশ সিভিলিয়ান স্যার চার্লস উইলকিন্স (১৭৫০-১৮৩৬)। হরফ নির্মাণে উইলকিন্সের সহযোগী ছিলেন বাঙালি খোদাইশিল্পী পঞ্চানন কর্মকার উল্লেখ্য, উনিশ শতকের শেষ অর্ধ শতাব্দী ধরে বাংলাদেশের সর্বত্র ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা পেতে থাকে এসব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিলেন বিভিন্ন এলাকার রাজ-জমিদাররা ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব বাংলায় যে মুদ্রণযন্ত্র ছিল, তা নিতান্তই ক্ষুদ্রাকৃতির তখন বেশির ভাগ প্রকাশনা কলকাতা থেকে মুদ্রিত হতো দেশভাগের পর কলকাতা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের প্রথম কৃতিত্ব দেখান মওলানা আকরাম খাঁ
 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জানা অজানা ও ইতিহাস বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা ও ইতিহাস লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

আমাদের আরও পোস্ট পড়ুন -
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷