বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯

বাংলা ভাষার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল, মধ্য যুগে বাংলা সাহিত্য কেমন ছিল ?.


 আজ সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটির অধিক লোক দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ভাষা ব্যবহার করেন । বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের ব্যবহৃত প্রধান ভাষা হল বাংলা ভাষা । তাছাড়াও বিহার, উড়িষ্যায় বাংলা ভাষায় কথা বলে এমন মানুষ বাস করেন । বাংলাদেশের সরকারি ভাষা হল বাংলা ভাষা । পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের প্রশাসনিক ভাষা হল বাংলা । বাংলা ভাষা হল পৃথিবীর সপ্তম বৃহতম ভাষা । 


 বাংলা ভাষা কবে সৃষ্টি হয়েছিল, সেই নির্দিষ্ট সময় নিয়ে এখন গবেষণা চালান হচ্ছে । বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছর পুরনো মনে করা হয় যে - সংস্কৃত ভাষা থেকে স্বাভাবিক বিবর্তনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশীয় ভাষা যেমন – পালি, প্রাকৃত, সৌরসেনী, অপভ্রংশ ইত্যাদি ভাষার উৎপত্তি হয়েছে । তাই এমন ভাবা হয় যে, বাংলা ভাষার উৎপত্তি সংস্কৃত ভাষা থেকে । আদি-মধ্য যুগে বাংলা ভাষা প্রথম সৃষ্টি হয় । এই ভাষার প্রথা ব্যবহার দেখা যায় চর্যাপদে । 


  চর্যাপদকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসাবে ধরা হয় । হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে এটি আবিষ্কার করেন । সেই সময় সৌরসেনী ও বাংলা ভাষার প্রভাব ছিল । ধীরে ধীরে বাংলা ভাষা সাহিত্যের উপযুক্ত হয়ে ওঠে । সেই সময়ের লেখকরা সৌরসেনী, অপভ্রংশ ও বাংলা ভাষায় কাব্য চর্চা করতেন । মোট ৫০ টি প্রাচীন বাংলায় লেখা চর্যাপদের আবিষ্কার করা হয় । সেগুলির মধ্যে প্রকৃতি, কবিত্ব, অনুভূতি, আবেগ ইত্যাদির প্রকাশ লক্ষ করা যায় ।

 চর্যাপদ ছারাও সেই সময়ে লিখিত বাংলা গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গেছে । চালুক্যরাজ তৃতীয় সোমেশ্বরের আমলে লিখিত মানসোল্লাহ’ গ্রন্থের ‘গীতবিনেদ’ শ্রীকৃষ্ণের লীলা বিষয়ক কিছু গীত আছে । সেটি বাংলা ভাষায় রচিত । এই গ্রন্থের কবিতা গুলি প্রাচীন বাংলা, মাগধী অপভ্রংশ, সৌরসেনী অপভ্রংশের অনুরূপ ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে । পরে এই মাগধী অপভ্রংশ থেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নত বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সৃষ্টি হয়েছে


 সুলতানি আমলে বাংলা ভাষা কেমন ছিল তা বলা সহজ নয় । তবে কিছু পুঁথি থেকে সেই সময় কালের কথা জানা যায় ।  বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ । এর ভাষা থেকে আমরা সুলতানি আমলে বাংলা ভাষা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পারি । বাংলা ভাষার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন বাংলার মুসলিম শাসকগোষ্ঠী ।  খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে বাংলায় ইলিয়াস শাহি বংশের শাসন শুরু হলে সেই সময় বাংলা ভাষায় লেখার কিছু উদাহরণ পাওয়া যায় । আজকের মত সেই সময় বাংলা ভাষার বিভিন্ন ভাগ ছিল । সেই সব সাহিত্যে বেশি দেবদেবীর মহিমা প্রচার করা হত ।

 শিবকে নিয়ে সেয় সময় কিছু সাহিত্য লেখা হয়েছিল, সেগুলিকে ‘শিবায়ন’ বলা হয় । পুরাণের শিব বিষয়ের কাহিনীর সাথে শিব ও দুর্গার ঘর সংসারের কাহিনী যুক্ত করে এই কাব্যগুলি লেখা হয়েছিল । ‘নাথযোগী’ সম্প্রদায়ের দেবতা ছিলেন শিব । তাদের ধর্ম-কর্ম, আচার-আচরণ নিয়ে সে সময় সাহিত্য লেখা হয় । সেই সব সাহিত্যকে বলে নাথ সাহিত্য । এখানে সন্ন্যাস জীবন যাপনের উপর জোর দেওয়া হত ।


 রামায়ণ, মহাভারত সেই সময় খুব জনপ্রিয় ছিল । এই দুই মহা কাব্যের বিভিন্ন অংশ নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি কাব্য লিখেছিলেন । তাছাড়াও এগুলির অনুবাদ করা হত । ভাগবতের কিছুটা অংশ নিয়ে মালাধর বসু বাংলায় অনুবাদ করেন, সেই অংশের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ । বাংলায় রামায়ণ অনুবাদ করেন কৃত্তিবাস ওঝা, আর মহাভারত অনুবাদ করেন কাশীরাম দাশ । রামায়ণ ও মহাভারত প্রথমে সংস্কৃতে লেখা হয়েছিল । বাংলায় অনুবাদের সময় বেশ কিছু পরিবর্তন তার মধ্যে চলে আসে । এই অনুবাদ গুলিতে বাংলার ছবি দেখা যায় ।

 বাংলা সাহিত্যের আর একটি ধারা ছিল মঙ্গল কাব্য । চণ্ডী, ধর্ম, মনসা এইসব দেবদেবীর মহিমা গান গেয়ে শোনানো হত । গানের ভিতর একটা গল্প থাকত, সেই গল্প নিয়ে বেশ কিছু সাহিত্য লেখা হয় । সেগুলিকে বলে মঙ্গল কাব্য । দেবী মনসা কে নিয়ে মনসা মঙ্গল, চণ্ডী দেবীকে নিয়ে চণ্ডীমঙ্গল, ধর্ম ঠাকুরকে নিয়ে তৈরি হয় ধর্ম মঙ্গল । অনেক কবি মঙ্গল কাব্য লিখেছিলেন । এর মধ্যে মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল এখনও প্রচুর জনপ্রিয় হয়ে আছে ।


 ভক্তি ধর্মের প্রভাব বাংলা সাহিত্যে বেশি বিস্তার করে । শ্রীচৈতন্য ও ও বৈষ্ণব-ভক্তিবাদ নিয়ে এই সময় অনেক কাব্য লেখা হয়েছিল । চৈতন্যের জীবনী নিয়ে জে কাব্য লেখা হয় তাকে ‘চৈতন্য জীবনী কাব্য’ বলে । এর পাশাপাশি রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে জে পদ বা কবিতা লেখা হত তাকে বলা হয় পদাবলি সাহিত্য । সেই সময় যা লেখা হত তার বেশিরভাগ সুর করে গাওয়া হত । এই সময়ের লেখাগুলিকে পাঁচালি বলা হয় ।  রামায়ণ, মহাভারত ও দেবদেবীর কাব্য গুলি সব প্রায় পাঁচালির মত গাওয়া হয় ।

 তখনকার সময়ে আরবি ও ফারসি ভাষার সাথে মিল রেখে লেখালেখি শুরু হয় । সুলতান আলাউদ্দিন খলজির চিতোর রাজ্য অভিযানের কাহিনী নিয়ে সৈয়দ আলাওয়াল পদ্মাবতী কাব্য রচনা করেন ।
 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে  জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ 


আমাদের আরও পোস্ট পড়ুন -

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷