বাঘ ও হাতি সম্পর্কে বিভিন্ন জানা অজানা কথা গুলি কি কি ?.
বাঘ - বাঘ হল বড়ো বিড়াল জাতের অন্তর্ভুক্ত একটি স্তন্যপায়ী, ফেলিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সবচেয়ে বড় প্রাণী । পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এলাকায় একে দেখা যায় । আমরা এখন বাঘ ও হাতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আপনাকে জানাবো । বাঘের পা খুব নমনীয় হয় তাই, বাঘেরা চলাফেরা করার সময় সামান্য শব্দ করেনা । অন্য কোনও জন্তু বা মানুষের চলাফেরা এরা সহজে বুঝতে পারে । এদের ধারালো নখ শিকার করার আগে ভেতরে থাকে । বাঘের জোরালো চোয়াল আর ধারালো শ্বদন্ত দাঁত থাকে । এদের ক্যানাইন দাঁত ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয় । বাঘ খুব বুদ্ধিমান প্রানী । এদের সার্কাস এর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় । এরা খুব সহজেই বুঝতেও পারে ।
হাতি তাঁর শুঁড়ের সাহায্যে গাছের ডাল ভাঙা, জল শুষে মুখে ঢালা, মাটি থেকে জিনিস তোলা, ঘাস ছিঁড়ে খাওয়া ইত্যাদি কাজ করে । হাতির শুঁড়ের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি পেশী থাকে । হাতির আর একটি অঙ্গ হল দাঁত । এক একটি দাঁত প্রায় ৫-৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় । ভারতের মেয়ে হাতির দাঁত বেশি লম্বা হয়না । অনেক চোরা শিকারি হাতির দাঁতের জন্য এদের হত্যা করে । বাঘ ও হাতি সম্পর্কে বিভিন্ন জানা অজানা কথা গুলি কি কি ?.
বাঘদের দর্শন শক্তি ও শ্রবণ শক্তি প্রখর হয় । চোখের রেটিনার মধ্যে ট্যাপেটাম লুসিডাম কোষের জন্য রাতের অল্প আলোতে ভাল দেখতে পায় । বাঘ রাতেই বেশি শিকার করে । বাঘ যতটা সম্ভব শিকারের কাছে কাছে থাকে । তারপর সুযোগ বুঝে তাড়া করে বা পিছন দিক থেক শিকারের কাঁধে বা গলায় কামড়ে ধরে । শিকার দমবন্ধ হয়ে না মরা পর্যন্ত বাঘ গলা আঁকড়ে ধরেই থাকে । এরা নিজেদের থেকে বড়ো প্রাণী শিকার করতে পারে । এদের খাবার থাকলেও শিকার হাতছাড়া করেনা । খাবার বেশি হলে সেগুলি জমিয়ে রাখে, পাহারা দেয় । শিকারের প্রয়োজনে এরা জলে সাঁতার কাটতে বা গাছে চড়তে পারে । হরিণ ও শুয়োরের মাংস বাঘদের প্রিয় খাদ্য । আবার বাচ্চা ও বয়স্ক বাঘদের সব সময় শিকার জোটেনা ।
বাঘেরা তাদের নিজের এলাকায় থাকতে বেশি পছন্দ করে । যদি অন্য কোনও বাঘ তাঁর এলাকায় ঢুকে পড়ে তখন দুজনের লড়াই হয় । বাঘেরা মূত্রনালি থেকে বেরনো তরল দিয়ে মাটিতে ও গাছে ছিটিয়ে তাঁর এলাকা চিহ্নিত করে রাখে । আবার অনেক সময় গাছে আঁচড় কেটে বা দাগ দিয়ে থাকে । গন্ধ শুকে বাঘ ও বাঘিনী একে অপরকে খুঁজে নেয় । বড়ো বাঘেরা সাধারণত একা একা থাকে । জননের সময় বাঘিনীর সাথে মিলিত হয় । বাঘের মিলন বছরের যেকোন সময় হতে পারে । তবে নভেম্বর-এপ্রিলের মধ্যেই সর্বাধিক মিলন ঘটে ।
বাচ্চা পালনের সময় বাঘেরা সবথেকে বেশি হিংস্র হয়ে ওঠে । বাচ্চা জন্মানোর আগে একটি পরিষ্কার জায়গা নির্বাচন করে । এরপর সারাদিন ধরে বাচ্চাদের পাহারা দেয় । নিজেদের খাওয়ার সময় তখন এরা ঠিক মত সময় পায়না । বাচ্চারা একটু বড়ো হলে মা বাঘ তাদের শিকার করা শেখায় । প্রথমে কোন শিকার করা প্রাণীর এনে তার মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে দেয় । পরে আধমরা প্রাণী এনে তার মাংস ছিঁড়ে খেতে শেখায় । দাঁতের সাহায্যে মাংস কিভাবে ছিঁড়ে খেতে হয় তাও শেখায় । বাঘেরা তাদের বাচ্চাদের নদীতে সাঁতার শেখাতে নিয়ে যায় । বাচ্চারা ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের সাথে থাকে । বাঘের বাসা বদলের সময় অনেক মানুষ বাঘের আক্রমণের জন্য মারা যায় । কারণ তারা বাচ্চাদের কাছে সহজে কাউকে আসতে দেয়না । সুন্দরবন এলাকায় বাঘ মাঝে মাঝেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে । এদের ধরে আবার বনে ছেড়ে দেওয়া হয় । সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘ সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে ।
হাতি – হাতিকে দুভাগে ভাগ করা হয়, আফ্রিকান হাতি ও এশিয়ান হাতি । হাতির কথা শুনলে আমাদের মনে আগে আসে তাঁর বিশাল দেহ ও শুঁড়ের কথা । পৃথিবীর মাটিতে যত রকম প্রাণী আছে তাদের মধ্যে সবথেকে বড়ো হল হাতি । আফ্রিকান হাতিরা সবথেকে ভারী ও উঁচু হয় । ভারতের এক একটি হাতির ওজন হয় প্রায় দু-হাজার কিলোগ্রাম, উঁচু হয় প্রায় ১১ ফুট পর্যন্ত । হাতির প্রধান কাজের অঙ্গ হল তাঁর শুঁড় । নাক আর ঠোঁট জোড়া লেগে হাতির শুঁড় তৈরি হয়েছে ।
হাতিরা সবসময় একসাথে দলে থাকে । দলটি হল হাতির পরিবার । হাতিরা তাদের সন্তানদের সবসময় চোখে চোখে রাখে । হাতিরা শান্ত হলেও বাচ্চার কষ্ট একদম সহ্য করতে পারেনা । বিপথ হতে পারে এমন জায়গায় হাতিরা যায়না । যদি হাতি কোনও বিপদে পড়ে তখন তাঁরা শুঁড় তুলে ডাকতে থাকে । দলের সবাই তখন একসাথে বিপদের মোকাবিলা করে । হাতি পরিবারের প্রধান হল দিদিমা বা মা । অন্যরা হল তার মেয়ে, নাতি, নাতনি । হাতি প্রতি দু থেকে চার বছরের মধ্যে একটি বাচ্চা প্রসব করে । ছেলে হাতিরা বড়ো হলে দল ছেড়ে একা একা ঘুরে বেড়ায় । হাতিরা বিভিন্ন ধরনের শব্দ করতে পারে, ৬ মাইল পর্যন্ত একে অপরের উচ্চ শব্দ শুনতে পায় ।
হাতি সমাজের নিয়ম খুব কড়া । যদি কোন দলছুট বাচ্চা হাতি কোন মানুষের কাছে আশ্রয় নেয় তাহলে হাতিরা তাকে পরিবারে আর ফিরিয়ে নেয়না । আমরা দেখি যে রেলের ধাক্কায় যদি কোন হাতি আহত হয়, বাকি হাতিরা তখন তাকে ঘিরে পাহারা দেয় । হাতির শরীর বিশাল বড়ো তাই, খাবার লাগে অনেক । একটি হাতি প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০ কেজি ঘাস পাতা খায় । কোনও কারণে জঙ্গলে খাবার অভাব দেখা দিলে এরা তখন জঙ্গল ছেড়ে খাবারের খোঁজে গ্রামের ফসলের ক্ষেতে চলে আসে । এরফলে গ্রামের ফসলের অনেক ক্ষতি হয় । তাড়াতে গেলে ঘর বাড়ি ভেঙ্গে ফেলে, মানুষকে আঘাত করে । অবৈধ শিকার ও জঙ্গলের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে হাতির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে
নীচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার
করুন । বিজ্ঞান বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে বিজ্ঞান লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো
পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আমাদের আরও পোস্ট পড়ুন -
পৃথিবীর জীব বৈচিত্র্য ও তার শ্রেণীবিভাগ গুলি কি কি ?.
সাধারণ বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর গুলি কি কি ?.
মহাকাশ অভিযানের নানা জানা অজানা কাহিনী কি ?.
মানুষের জীবনে জলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গুলি কি কি ?
পৃথিবীর বিভিন্ন আবিষ্কার, আবিষ্কারক, দেশ ও সাল গুলি কি কি ?.
অর্ডার করতে নীচের লিঙ্কে প্লিজ ক্লিক করুন।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
Thank you
উত্তরমুছুন