গাছ-গাছড়ার সাহায্যে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের উপায় কি কি ?.
অনেক
দেশের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে গাছ-গাছড়ার সাহায্যে চিকিৎসা করা একটি অন্যতম
প্রাচীন পদ্ধতি । বর্তমানে আধুনিক যুগেও এখন আমরা তার ব্যবহার করে থাকি । প্রাচীন
কালে মুনি-ঋষিরা সেই সব গাছের গুনাগুণ জেনে তার ব্যবহার করতেন । এখন আমরা জানবো যে
– সেই সব গাছ গাছড়ার ব্যবহার দ্বারা কিভাবে আমরা ঘরোয়া ভাবে কিছু রোগের চিকিৎসা
করতে পারি । সমস্ত টা জানতে আশা করি আমাদের লেখাটি শেষ পর্যন্ত মন দিয়ে পড়বেন ।
১) সাধারণ জ্বর - সাধারণ জ্বর আমাদের
বিভিন্ন কারণে হয় যেমন – অত্যধিক পরিশ্রম, রাত্রি জাগা, ঋতু পরিবর্তন, আঘাত লাগা,
ঠাণ্ডা লাগা ইত্যাদি । এই রোগের লক্ষণ হিসাবে – মাথা ব্যথা, নাড়ীর গতি দ্রুত হওয়া,
খাবারে অরুচি, অস্থিরতা, গরম বা শীত অনুভব করা, পিপাসা ইত্যাদি । ৫ গ্রাম তুলসী
পাতার রস, ১ চামচ মধু, সামান্য মকরধ্বজ ও ৫ গ্রাম শিউলি পাতার রস মিশিয়ে নেবেন । দিনে
তিনবার করে তিনদিন খাবেন । ডাল, সবজি, দুধ, আটার রুটি জাতীয় খাবার খাবেন ।
২) সর্দি-জ্বর – জলে ভিজলে, ঠাণ্ডা
লাগলে, সর্দি-জ্বর হয়ে থাকে । গায়ে জ্বর জ্বর ভাব, নাক দিয়ে জল পড়া, বুক ব্যথা,
হাঁচি প্রভৃতি এই রোগের লক্ষণ । ১০ গ্রাম বাসক পাতার রস, ১০ গ্রাম শিউলি পাতার রস,
১০ গ্রাম তুলসী পাতার রস, ২ চামচ মধু মেশান । প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় তিন-চার
দিন খাবেন । এছাড়া আদা, পেঁয়াজ, রসুন তেল দিয়ে ভেজে গরম ভাতের সাথে খেতে পারেন ।
৩) সর্দি ও কাশি – এই রোগের ফলে বুক
ব্যথা, গলা খুসখুস, হাঁচি, কাশি ইত্যাদি দেখা যায় । হঠাৎ করে গরম থেকে ঠাণ্ডায় বা
ঠাণ্ডা থেকে গরম লাগা, ঠাণ্ডা লাগা, জলে ভেজা ইত্যাদির কারণে আমাদের সর্দি ও কাশি
হয় । ৪ গ্রাম তুলসী পাতা, ৪ গ্রাম আদা,
বাসক পাতা ৪ গ্রাম, তেজপাতা ৩ গ্রাম, বচ ৩ গ্রাম, পিপুল ৩ গ্রাম নিয়ে ৩-৪ কাপ জলে
সিদ্ধ করুন । হালকা গরম করে সেই জল পান করুন । ৫ দিন দুবেলা করে খাবেন । আরেক টি
পদ্ধতি – তুলসীর মঞ্জুরি ১০ গ্রাম, বাসক পাতা ১০ গ্রাম নিয়ে ২৫০ গ্রাম জল নিয়ে
তাতে ফোটাবেন । ১০০ গ্রামের মত জল হয়ে এলে নামিয়ে ছেঁকে নিন । এরপর এর সাথে ৪ চামচ
মধু মেশান । পরপর ৫ দিন দিনে দিনে দুবার করে খাবেন ।
৪) বমি – আমাদের যদি খাওয়ার অভ্যাসের বদল
ঘটে তাহলে বমির সম্ভাবনা দেখা যায় । অসময়ে খাবার খাওয়া, বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া,
অজীর্ণতা, কৃমিদোষ ইত্যাদি থাকলে আমাদের বমি দেখা যায় । ১০ গ্রাম হরিতকী, ১০ গ্রাম
গুলঞ্চ, ১০ গ্রাম গোলমরিচ ও ১০ গ্রাম পিপুল ভালকরে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে । এরপর
এগুলোকে গুঁড়ো করে নিতে হবে । এর সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে দিনে দুবার খেতে হবে ।
গুরুপাক জাতীয় খাবার খাবেন না ।
৫) চুলকানি ও পাঁচড়া - আমাদের শরীর
অপরিষ্কার থাকার জন্য আমাদের এই রোগ দেখা দেয় । প্রথমে ঘামাচির মত ছোটো ছোটো
ফুসকুড়ি দেখতে পাওয়া যায় । সেগুলি চুলকোয়, পরে বড়ো হয়ে ঘা হয়ে ফোস্কার মত হয়ে যায়
। নিম পাতা সেদ্ধ করে সেই জল দিয়ে চুলকানি পাঁচড়ার জায়গাগুলোকে ভাল করে পরিষ্কার
করে নিন । তার আগে আপনি – কর্পূর ২ গ্রাম, ২ গ্রাম সলিস্যালিক অ্যাসিড, গন্ধক গুঁড়ো ২
গ্রাম, ভেসলিন ৫০ গ্রাম, চালমুগরা তেল ১০ গ্রাম মিশিয়ে একটি মলম বানান । প্রতিদিন
একবার করে লাগাবেন ।
৬) পেট ব্যথা – পেটে যদি আমাশয়, কৃমি
থাকে খাবার হজম না হলে বায়ু তৈরি হয়ে পেটে ব্যথা হতে পারে । হরিতকী ১০ গ্রাম,
জোয়ান ১০ গ্রাম, সৈন্ধব লবণ ১০ গ্রাম, শুঁঠ ১০ গ্রাম নিয়ে গুঁড়ো করে নিন । দুপুর ও
রাত্রে খাবার পর ১ চামচ গুঁড়ো এক গ্লাস জলে দিয়ে খাবেন ।
৭) নখকুনি – আমাদের নখের কনে যদি ময়লা
জমে বা নখের মাংস অংশ দূষিত হয়ে যায় তাহলে আমাদের নখকুনি হতে পারে । পরে দেখা যায়
যে সমস্ত নখটি নষ্ট হয়ে যায় । নিমফল ২০-২৫ টি, হরিতকী ২ টি, হলুদ রস ১০০ মিলিগ্রাম
। হলুদের রসের সাথে হরিতকী বেটে নিন, হালকা গরম করবেন । ১ ঘণ্টা অন্তর দিনে ২-৩
বার লাগান ।
৮) কান পাকা ও যন্ত্রণা – ঠাণ্ডা লাগলে,
কানে জল ঢুকলে কানপাকা রোগ হয় । রসুনের রস হালকা গরম করে দু-ফোঁটা কানে কয়েক দিন
দেবেন । কানে যন্ত্রণা হলে দু-ফোঁটা রসুন ও পেঁয়াজের রস হালকা গরম করে দিনে দুবার
দেবেন ।
৯) ব্রণ ও মুখে কালো দাগ
– কাঁচা হলুদের রস ১ চামচ, চিনি ১ চামচ, নিম পাতার রস ১ চামচ এক মাস খালি পেটে
সকাল বেলা খাবেন । ১ চামচ মুলতানি মাটি, আধ চামচ নিমপাতা বাটা, গোলাপ জল, আধ চামচ তুলসী
পাতা বেটে সারা মুখে মাখুন । মুখে কালো দাগ থাকলে – মুসুরির ডাল বেটে দুধ দিয়ে
মুখে লাগালে মুখের কালো দাগ কমে যায় ।
১০) মাথা ধরা, মাথা ঘোরা
– ঠাণ্ডা লাগা, মাথায় রক্তাধিক্য, স্নায়বিক দুর্বলতা, রাতজাগা, নেশা করা,
কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির কারণে এই রোগ হয়ে থাকে । আবার আপনার যদি অন্য কোনও রোগ থাকে
তাঁর ফলে এই রোগ হতে পারে । আগে আপনাকে আপনার অন্য রোগের চিকিৎসা করানো দরকার । দু-ফোঁটা
রসুনের রস নাকে টানলে আরাম পাওয়া যায় । স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাদ্য, পর্যাপ্ত
বিশ্রাম নেওয়া অবশ্যই দরকার ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে
নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার
করুন । স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে স্বাস্থ্য লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো
পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও পোস্ট পড়ুন -
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷