ভিনগ্রহী প্রাণী বা এলিয়েন বলে কিছু কি আছে ? .
আমাদের মহাবিশ্বে রয়েছে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি বা তারামণ্ডল । আমাদের গ্যালাক্সিতেই রয়েছে
প্রায় ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র যার
মধ্যে আমাদের সূর্য একটি । মিল্কিওয়ে
ছাড়াও মহাকাশে আবিষ্কৃত হয়েছে শতকোটি তারামণ্ডল । বহু দিন আগে থেকেই পৃথিবীর মানুষের
বিশ্বাস যে, পৃথিবীর বাইরেও মহাকাশের অন্যত্র প্রাণ রয়েছে । মহাকাশে
আবিষ্কৃত হয়েছে শতকোটি তারামণ্ডল ও সেখানে যে পৃথিবী সদৃশ নিষ্ক্রিয় বস্তু আছে,
তা শুধু ধারণা নয়, অঙ্ক কষে বলে দেয়া যায় । তাই
বিজ্ঞানীরা যৌক্তিকভাবেই ভাবছেন যে, পৃথিবীর বাইরের অন্যান্য যেকোনো স্থানেই
পৃথিবীর মতো প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে । মনে মনে
একটা প্রশ্ন সকলেরই জাগে তা হচ্ছে সত্যিই কি এলিয়েনের অস্তিত্ব রয়েছে ?
ভিনগ্রহের প্রাণী বা এলিয়েন (Aliens) বলতে পৃথিবী ভিন্ন মহাকাশের অন্য
কোনো স্থানের প্রাণকে বোঝানো
হয় । অনেকে ‘ভিনগ্রহের প্রাণী’ বলতে
মানুষের আকৃতির প্রাণী বুঝে থাকলেও বস্তুত যেকোনো ধরনের প্রাণী এই তালিকায় ধরা
হতে পারে । এ ধারণায় পৃথিবী-ভিন্ন অন্য
জগতের একটা সূক্ষ্ম ব্যাকটেরিয়াকে ভিনগ্রহের
প্রাণী বা এলিয়েন বলা হয় । বাংলায়
পৃথিবী-ভিন্ন অন্য গ্রহের প্রাণকে একত্রে ভিনগ্রহের প্রাণী বলা হয়েছে । তবে গ্রহ ছাড়াও
অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রাণ এর আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় ।
এ বিশাল মহাবিশ্বে সূর্যের মত রয়েছে অসংখ্য
নক্ষত্র । তাদের কোনটিতে আমাদের সৌর ব্যবস্থার
মত ব্যবস্থা থাকতেই পারে যেখানে থাকতে পারে কোন প্রাণী । আমাদের
গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্র আছে । অনেকেই দাবি
করেন ভিনগ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীতে প্রায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করে এবং তাদের দেখাও
পাওয়া গেছে । ঐতিহাসিকরা উৎসে খোঁজ করছেন
ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব আর বিজ্ঞানীরা খোঁজ করছেন পৃথিবীর বাইরের গ্রহ কিংবা
উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব ।
আমাদের সৌরজগতের মঙ্গল গ্রহের
অবস্থান, সূর্যের দিক থেকে পৃথিবীর ঠিক পরেই । একারণে এই গ্রহে প্রাণের বিকাশ ঘটার
মতো উপযুক্ত পরিবেশ থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের দৃঢ় বিশ্বাস । এখনও মানুষ
বিজ্ঞানসম্মতভাবে কোনো ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান পেয়েছে বলে জানা যায়নি, আবার
এরকম দাবি যে একেবারেই নেই এমনটাও সঠিক নয় । তবে দেখা যাক আর নাই যাক আধুনিক
বিজ্ঞানের সূত্রমতে ভিনগ্রহের প্রাণীদের বিবর্তন সম্পর্কে একটা ধারণা ঠিকই করা যায় । বিজ্ঞানীরা ভিনগ্রহের প্রাণীদের
বুদ্ধিমান প্রাণী ধরে নিয়ে বলেন যে, এরকম প্রাণীরা যদি খুব ছোট হয়, তবে কখনোই
বুদ্ধিমান হতে পারবে না। কারণ বুদ্ধিমান হবার জন্য যতটুকু মস্তিষ্ক দরকার তা ধারণ
করার মতো দেহ তাদের নেই ।
জীবনযাত্রায় অন্যতম একটি উপাদান পোশাক । বিজ্ঞানের
কাছে ভিনগ্রহের প্রাণীদের পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই । যারা,
ভিনগ্রহের প্রাণী দেখেছেন বলে দাবি করেন, তাদের বক্তব্য হল ভিনগ্রহের এসব
বুদ্ধিমান প্রাণীরা পোশাক হিসেবে কিছুই পরে না । যেহেতু তারা অতি
বুদ্ধিমান, তাই পোশাক-পরিচ্ছদের বাহুল্য ত্যাগ করতে শিখে নিয়েছে । তবে তারা
মাথায় হুড পরিধান করে থাকে বলে অনেকের দাবি । কারো দাবি,
তারা লম্বা লম্বা জোব্বা পরে থাকে । ভিন গ্রহীদের
অস্তিত্বই যেখানে অনিশ্চয়তায় ভরা, নিঃসন্দেহাতীত ভাবে এ অবধি প্রমাণিত
নয়, অনুমান নির্ভর কিছু তত্ত্বকথা ।
'সুপার আর্থ' তেমনই আর একটি গ্রহ। নাসা নয়, টরেন্টো
বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীর দৌলতে ২০১৭-য় এই গ্রহটির অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা
জানতে পারি । নাম কেন সুপার আর্থ ? বিজ্ঞানীদের ধারণা,
এটি পৃথিবীরই উন্নত সংস্করণ। যার পোশাকি নাম অবশ্য K2-18b । আমাদের
সৌরজগতের বাইরে, পৃথিবী থেকে ১১১ আলোকবর্ষ দূরে, অজানা এক বামন নক্ষত্রকে ঘিরে নিজস্ব কক্ষপথে পাক খাচ্ছে সুপার আর্থ ।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এখানেও প্রাণ আছে । বিজ্ঞানীদের আশান্বিত
করে তোলে জল সদৃশ তরলের উপস্থিতি । টরেন্টোর বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটা জলই। আর জল মানেই সৃষ্টির সম্ভাবনা, প্রাণের
উল্লাস ।
এদিকে, পৃথিবীর
নিকটবর্তী মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে বহুদিন ধরে বৈজ্ঞানিক মহলে নানা
জল্পনা রয়েছে ৷ বিজ্ঞানীদের একাংশ বিশ্বাস করেন ‘লালগ্রহ’
একসময় পৃথিবীর মতোই সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা ছিল ৷ মার্কিন মহাকাশ
গবেষণা সংস্থার কিউরিওসিটি রোভারের তোলা ছবি বিজ্ঞানীদের সেই বিশ্বাসকে আরও উস্কে
দেয় । ছবি বিশ্লেষণ করে কেউ কেউ দাবি করেন, ওই ছবিতেই মঙ্গলে
গাছ ও মাথার খুলির সন্ধান মিলেছে ।
নাসার প্রকাশিত এক ভিডিয়োয়
ছবিটি প্রকাশ করে লেখা রয়েছে, বস্তুটি একটি মঙ্গোলীয় গাছের
প্রস্তরীভূত অংশ হতে পারে ৷ নাসার দাবি অনুযায়ী ছবিটি তোলা ২০১৭-র মার্চে ৷ এই
আলোকচিত্রটি নিয়ে‘প্যারানরমাল ক্রুসিবল’ তাদের ইউটিউব চ্যানেলে একটু বেড়েই খেলেছে। তারা জানায়, গাছের মতো দেখতে বস্তুটি লম্বায় ৩ ফুট । মঙ্গলে একসময় যে প্রাণী ও
উদ্ভিদের অস্তিত্ব ছিল, তা মেনে নেওয়ার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে
বলে তারা সওয়াল করতে থাকে ৷
প্যারানরমাল ক্রুসিবলের এই
ধারণা সমর্থনে এগিয়ে আসেন আর এক বিশ্বখ্যাত মঙ্গলগ্রহ গবেষক স্কট সি ওয়ার্নিং ।
তাঁরও দাবি, একসময় পৃথিবীর মতোই প্রাণের অস্তিত্ব ছিল
মঙ্গলে৷ কোনও এক সৌর বিস্ফোরণে ওই গ্রহে পরবর্তী সময়ে প্রাণের অস্তিত্ব লোপ পেয়েছে
। ওই গবেষক আরও জানান, 'ছবিতে শুধু গাছ নয়, একটি ভিনগ্রহী প্রাণীর মাথার খুলিও দেখা গিয়েছে ৷ মানুষের মাথার খুলির
মতোই যার গড়ন ৷ তাঁর কথায়, ওই খুলিটি প্রমাণ করে একসময়
মঙ্গলে বুদ্ধিমান প্রাণী বসবাস করত ৷ তবে নাসার মনে হয়েছে, এসব
বাজে বকওয়াস । তাই খারিজ হয়ে গিয়েছে এসব তত্ত্ব। নাসার মতে, বস্তুগুলি
পাথার ছাড়া আর কিছু নয় ৷
বহুদিন আগে থেকেই পৃথিবীর মানুষের বিশ্বাস যে,
পৃথিবীর বাইরেও মহাকাশের অন্যত্র প্রাণ রয়েছে । মহাবিশ্ব অনেক বড় হবার কারণেই স্টিফেন হকিং এবং
কার্ল সেগান এর মতে পৃথিবীর বাইরে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা বেশি । সত্যি যদি
মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকতো তাহলে এতদিনে তাদের দেখা পাওয়ার কথা । যদি
এলিয়েন থাকে তাহলে আমরা তাদের দেখতে পাই না কেন? ওরা পৃথিবীতে আসে
না কেন? তবে আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী এলিয়েনের
অস্তিত্বের পাকা-পোক্ত কোনো প্রমাণ পায় নি ।
ভিনগ্রহের প্রাণী সম্পর্কে এখনও বিজ্ঞান কোনো সিদ্ধান্ত না
জানালেও অনেকেই পৃথিবীতে তাদেরকে দেখার দাবি করেছেন এবং পৃথিবীর একটা বৃহত্তর
অংশের মানুষ বিশ্বাস করে যে, ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে । অনেকেই দাবি
করেন ভিনগ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীতে প্রায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করে এবং তাদের দেখাও
পাওয়া গেছে, তাই এটা অসম্ভব নয় যে, পৃথিবীর বাসিন্দারা ভিনগ্রহের প্রাণী দেখেছেন
। জরিপে দেখা গেছে এই বিশ্বাস পুরুষের (২২%) তুলনায় নারীর কিছুটা কম (১৭%) । ধনী-দরিদ্র
নির্বিশেষে ৩৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এই বিশ্বাস বেশি ।
অনেকে
পৃথিবীর বাইরে প্রাণের প্রমাণের জন্য বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দেখা
যাওয়া UFO(=Un-identified Flying Object=অচেনা উড়ন্ত বস্তু) ’র কথা বলেন । তবে
বেশিরভাগ UFO কেই পৃথিবী সৃষ্ট আকাশযান অথবা কোন মহাজাগতিক বস্তু বা দেখার ভুল
হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায় । পৃথিবীতে যদি তাদের দেখা না পাওয়া যায় তাহলে বুঝে
নিতে হয় মহাকাশযান তৈরি করে পৃথিবীতে আসার ব্যাপারে তাদের গরজ নেই । আবার হয়তো ঐ
বুদ্ধিমান প্রাণীর সভ্যতা খুব ক্ষণস্থায়ী; তাদের জন্ম হয় এবং কিছু বোঝার আগেই
তারা নিজেরা নিজেদের ধ্বংস করে ফেলে ।
এখনও পর্যন্ত মানুষ বিজ্ঞানসম্মতভাবে কোনো ভিনগ্রহের প্রাণীর
সন্ধান পেয়েছে বলে জানা যায়নি, আবার এরকম দাবি যে একেবারেই নেই এমনটাও সঠিক নয় ।
ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধানে পৃথিবীতে এবং
পৃথিবী থেকে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন অভিযান । সৌরজগতের শনি গ্রহের সবচেয়ে বড়
উপগ্রহ টাইটানে দীর্ঘদিন
থেকে প্রাণের সন্ধান পাবার আশায় সন্ধান চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা । নাসার বিজ্ঞানীরা ক্যাসিনির পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে জানান যে, শনির অনেকগুলো
উপগ্রহের মধ্যে একমাত্র টাইটানেই প্রাণ ধারণের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট
করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার
জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।আরো পড়ুন -
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷