শয়তানের বাইবেল বই কিভাবে, কবে তৈরি হল ?.
কোডেক্স জিগাস হল বিশ্বের
বৃহত্তম এখন বিদ্যমান মধ্যযুগীয় অলংকৃত পাণ্ডুলিপি । কোডেক্স জিগাস এর অন্য নাম হল ‘শয়তানের বাইবেল’ বা ‘Devil's
Bible’ । ল্যাটিন শব্দ কোডেক্স জিগাজ, যার
অর্থ হল - বিশাল আকারের বই । এটি ৩৬.২ ইঞ্চি লম্বা, ১৯.৭ ইঞ্চি চওড়া এবং ৮.৬ ইঞ্চি পুরু, ওজন প্রায় ৭৫ কিলোগ্রাম । এ বইটি যে নামে সর্বাধিক
পরিচিত তা শুনলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন । কারণ এর আরেক নাম হল শয়তানের বাইবেল । এটিই হল মধ্যযুগীয় পাণ্ডুলিপি গুলির মধ্যে বৃহত্তম ।
কেন এই বইটি লেখা হয়েছিল তা নিয়ে একটি কাহিনী
প্রচলিত আছে । পাণ্ডুলিপিটি সম্পর্কে সবচাইতে বিস্ময়কর যে তথ্য প্রচলিত সেটি
হল - ১৩শ শতাব্দীর প্রথম তৃতীয় অংশে বোহেমিয়ার (বর্তমানে চেক প্রজাতন্ত্র) বেনেডিক্ট পোডলাজাইসের আশ্রমে এটি তৈরি করা
হয়েছিল । এই
পাণ্ডুলিপির লেখক ছিলেন একজন মোনাকো (সন্ন্যাসী) যে তার মোনাকোর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে
। যার ফলে শাস্তি হিসেবে তাকে জীবিত দেওয়াল গেঁথে মৃত্যুদণ্ড
প্রদান করা হয় ।
কিন্তু, সন্ন্যাসী রাজার কাছে আর্জি করলেন, তাকে যেন শেষ বারের মতো একটি সুযোগ দেয়া হয় । বিনিময়ে
তিনি পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান সংকলন করে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দেবেন । ধারণা করা হয় যে - হারমেন
নিকোলাস নামের এক চার্চের সন্ন্যাসী ছিলেন তিনি ।
বিনিময়ে
তিনি পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান সংকলন করে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করে দেবেন । রাজা
তার প্রস্তাবে রাজি হলেন ঠিকই, কিন্তু তাকে সময় দিলেন মাত্র এক রাত্রি ।
সন্ন্যাসী
রাজি হয়ে গেলেন । তিনি কাজে লেগে গেলেন । তিনি মাঝ রাত পর্যন্ত
দেখেন মাত্র অর্ধেক পাতা লিখতে পেরেছেন । তিনি মধ্যরাত্রি কাছাকাছি নিশ্চিত হন, যে তিনি একা এই কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবেন না । তাই তিনি একটি বিশেষ
প্রার্থনা করেন শয়তানের কাছে । শয়তানের
কাছে এই বলে সাহায্য কামনা করেন যে - শয়তান যদি তাকে এই বই
লিখে দেয় তবে তিনি তার আত্মা শয়তান কে সপে দেবেন । তার আত্মার বিনিময়ে বইটি সম্পূর্ণ করার জন্য সাহায্য
প্রার্থনা করলেন । সাড়া
দেয় শয়তান । স্ব-শরীরে হাজির হয় শয়তান । শয়তান পাণ্ডুলিপিটি সম্পূর্ণ করে এবং মোনাকো শয়তানের সাহায্যের
কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য প্রতীক হিসেবে সে একটি চিত্র সংযোগ করেন ।
নিজেকে প্রমাণ
দেবার জন্য নিজ হাতে শয়তান তার ছবি বইটির ২৯০ নং পৃষ্ঠায় এঁকে রেখে যায় । তাই এই বইটি শয়তানের বাইবেল নামে পরিচিত ।
কোডেক্স জিগাস একটি কাঠের তৈরি কভার
দিয়ে ঢাকা, যা চামড়া এবং কিছু অলঙ্কৃত ধাতু দিয়ে
আবৃত । বইটিতে গাধার চামড়া দিয়ে তৈরি মোট ৩১০টি পৃষ্ঠা ব্যবহৃত
হয়েছে । প্রাথমিক দিকে এতে ৩২০টি পাতা ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে এর থেকে কিছু পাতা অপসারিত করা হয়েছে । কি কারণে এই পাতাগুলি সরিয়ে ছিলেন তা জানা যায় না । এই পৃষ্ঠাগুলোর আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি । বইটি তৈরি করতে ১৬০টি গাধা অথবা সম্ভবত
বাছুরের চামড়া প্রয়োজন হয়েছে । ক্ষুদ্রাকৃতির লেখা
মধ্যে অনেক ধরণের তান্ত্রিক মন্ত্র, জাদুমন্ত্র, স্বর্গের শহরের ছবি এবং শয়তানের ছবিও অঙ্কিত আছে । পাণ্ডুলিপিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ১২৯৫ সালের দিকে সেডলেক সভ্যতার সাথে এই গ্রন্থের সম্পৃক্ততা
আছে ।
গ্রন্থটি মূলত
ল্যাটিন ভাষায় রচিত তবে, এর মধ্যে আরো
কিছু ভাষার অক্ষরেরও অস্তিত্ব দেখা গেছে যেমন, হিব্রু, গ্রীক ও স্ল্যাভিক । ছবির ধরণ দেখে মানুষের মুখে মুখে
প্রচলিত হয়েছে যে এই গ্রন্থ শয়তানের সাহায্য নিয়ে লেখা হয়েছে । শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গ্রন্থটিতে এক ধরণের
হাতের লেখা দেখা গেছে । লেখার ধরণ দেখে বিশেষজ্ঞরা মোটামুটি একমত যে - গ্রন্থটির এক ব্যক্তির লেখা । এ থেকে লোক মুখে প্রচলিত
হয়েছে যে,
বইটি রাতারাতি লেখা হয়েছে । লোকমুখে প্রচলিত এই কথার কোন নির্ভরযোগ্য উৎস
নেই । কারো একার পক্ষে বইটি বহন করা সম্ভব নয় । বইটিকে এক স্থান থেকে অন্ন স্থানে নিয়ে যেতে কমপক্ষে ২ জন ব্যক্তির
প্রয়োজন । বইটিতে ভয়ঙ্কর রোগের অভিশাপ ও মুক্তি, আত্মাকে বশীকরণ ও লালন-পালন, কালা
জাদুর মন্ত্র সহ নানান বিষয়ে সমাধান দেওয়া আছে । কিভাবে
ডাইনি চেনা যায় তার বর্ণনা রয়েছে এখানে ।
প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, বইটি লেখতে সময় লেগেছিল মাত্র একটি রাত । কিন্তু বিজ্ঞানীরা এই তথ্যের
সাথে একমত নন । কোডেক্স জিগাস নিয়ে আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেল ‘National
Geography’ বেশ কয়েকটি প্রামাণ্য চিত্র প্রচার করে । ন্যাশনাল জিওগ্রাফির এক গবেষণায় বলা হয়েছে - কোন
মানুষ যদি ছবি ছাড়াই শুধু লেখা দিয়ে এই গ্রন্থ লিখতে চায় তাহলে তাকে একাধারে রাত
দিন মিলিয়ে নির বিচ্ছিন্নভাবে ৫ বছর লিখতে হবে ।
সুইডেন জাতীয় গ্রন্থাগারের গবেষকদের মতে - যদি লেখক পুরো সপ্তাহ জুড়ে প্রতিদিন প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে লিখে থাকেন,
তাহলেও বইটি শেষ করতে তার লেগে যাবে প্রায় ত্রিশ বছর । প্রথমে
পাণ্ডুলিপিটি স্থান পেয়েছিল প্রাগে দ্বিতীয় রুডলফের সাম্রাজ্যিক গ্রন্থাগারে । ১৬৪৮ সালে প্রাগের সাথে ৩০ বছরের যুদ্ধ
শেষে বিজয়ী সুইডিশ সৈন্যরা এই বই লুঠ করে ১৬৪৮ সাথে স্টকহোমে সুইডিশ রয়াল
লাইব্রেরীতে নিয়ে যায় । স্টকহোমের সুইডেনের জাতীয় গ্রন্থালয়ে এই
গ্রন্থটি বর্তমানে সংরক্ষিত আছে । সেখানে
এটি জনসাধারণের দর্শনার্থে প্রদর্শিত হয় । আপনি সুইডেন গেলে গ্রন্থটি দেখে আসতে পারেন । এ বইটি
নিয়ে দিন দিন বিজ্ঞানীদের আগ্রহ বাড়ছে । কিন্তু এখনো এই বইটির আসল রহস্য উদঘাটন
করা সম্ভব হয়নি । কোডেক্স জিগাস নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে । এই অদ্ভুত পাণ্ডুলিপিটি
যুগ যুগ ধরে জ্ঞান পিপাসুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন
লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের
কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে শেয়ার করুণ । জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জানা অজানা লেখাটির উপর ক্লিক করুণ ।
পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । আপনার ইমেল দিয়ে আমাদের ওয়েবসাইট টি সাবস্ক্রাইব করুন ।
আমাদের আর পোস্ট -পৃথিবীর অবাক, মজার কথা গুলি কি কি ?
বিখ্যাত ১৫০ টি বই ও লেখক, লেখিকার নাম কি কি ?.
ভারতের বৃহত্তম, উচ্চতম, দীর্ঘতম, সর্বাপেক্ষা বেশি বস্তু গুলি কি কি ?.
ভারতের জাতীয় পতাকার অজানা কাহিনী কি ?.
প্রথম ভারতীয় এবং বাঙালি পুরুষ ও মহিলা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কে কে ?
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷