পিরামিড কবে, কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল ?.
মানবসভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময়
নিদর্শন হল পিরামিড । পিরামিড হল পৃথিবীর
প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের একটি । এর সুবিশাল উচ্চতা ও শৈলীর সামনে দাঁড়ালে বাকরুদ্ধ
হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না । সারা বিশ্বের কাছে মিশরের পরিচিতি আছে তাদের পিরামিড
গুলোর জন্য । পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলো মিশরে অবস্থিত । প্রাচীন কালের
পৃথিবীর সাত আশ্চর্যের মধ্যে পিরামিডই সবচেয়ে পুরনো এবং অনেকাংশে অক্ষত । প্রাচীন মিশরে নির্মিত সব পিরামিড নীল নদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত ।
প্রাচীনকালে মিশরীয়রা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো যে মৃত্যুর পরও তাদের আত্মা
বেঁচে থাকে । মৃতদেহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মমি করতো তারা । মিশরের প্রাচীন রাজাদের মৃত্যুর পর এসব
পিরামিডের ভেতর সমাহিত করা হতো । এসব শরীর মমি করে পিরামিডের ভেতর রাখা হত । ফারাওদের
মৃতদেহের সাথে কবরস্থ করা হতো বিপুল ধন-সম্পদ । আত্মার বেঁচে থাকার জন্য চাই
প্রয়োজনীয় নানা জিনিস । তাই নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বিশেষ করে খাবার-দাবার মৃতদেহের সাথে দিয়ে দিতো তারা । সমাজের
বিত্তশালীদের কবরেও মূল্যবান সামগ্রী দেয়া হতো ।
বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সভ্যতাগুলোর
একটি গড়ে উঠেছিল মিশরে । মেসোপটেমিয়ার
অধিবাসীরা সর্বপ্রথম পিরামিড আকৃতির স্থাপনা তৈরি করেছিল । মিশরের প্রাচীনতম
পিরামিডগুলি আবিষ্কৃত হয়েছে মেমফিসের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাক্কারায় । প্রথম
দিকের ইতিহাস অনুসারে মিশরীয় রাজবংশের মানুষদের মৃত্যুর পরে বেঞ্চ-এর মত কাঠামোতে
চির শায়িত করা হত ।
কোনো বহুভূজের উপর অবস্থিত যে
ঘনবস্তুর একটি শীর্ষবিন্দু থাকে এবং যার পার্শ্ব তলগুলোর প্রত্যেকটি ত্রিভুজাকার
তাকে পিরামিড (Pyramid) বলে ।
পিরামিড একটি বহুভূজাকৃতি ভূমির উপর অবস্থিত । পিরামিডের দুইটি সন্নিহিত তল অর্থাৎ
দুইটি পার্শ্ব তল অথবা একটি পার্শ্ব তল ও ভূমি যে রেখায় মিলিত হয়, তাকে পিরামিডের একটি ধার বলে । পিরামিডের পার্শ্ব তলগুলো যে
একটি সাধারণ বিন্দুতে মিলিত হয়, তাকে পিরামিডের শীর্ষবিন্দু বলে । পিরামিডগুলোর উপরে ছিল
আলাবাস্তার চুনাপাথরের আবরণ । তার ফলে অত বড় ইমারতগুলো সব সময়ে চকচক করত ।
আজ থেকে প্রায় ৪৫০০ বছর আগে নির্মিত
হলেও তা বিজ্ঞানীদের মাথাকে ঘোরাচ্ছে এখনও, কীভাবে মিশরীয়রা এই অদ্ভুত সুন্দর, রহস্যময় জিনিস তৈরি করল । প্রতিটি দেশের সম্পদ সীমিত । এত
বিশাল পাথরগুলো কীভাবে দূর থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল সেটা বের করতে গিয়ে কিছু গবেষক
ধারণা করেন - আদি মিশরীয়রা ওগুলোকে মরুভূমির মধ্য দিয়ে টেনে নিয়ে এসেছে । কিছু
পাথর এসেছিল ওই এলাকার খনি থেকে, বাকিটা দক্ষিণ মিশরের আসোয়ান থেকে নীলনদ হয়ে । সেই সব পাথর
কি ভাবে সাজানো হয়েছিল কিংবা অত উঁচুতে কিভাবে তোলা হয়েছিল, তা নিয়ে নিশ্চিত ইতিহাসবিদেরা । তাঁদের কাছে ক্রেন সদৃশ
কোনো যন্ত্র ছিল না, ছিল না লোহার জিনিস মসৃণ করে সূক্ষ্মভাবে তৈরি করার মত প্রযুক্তি ।
মিশরীয় পিরামিড হল মিশরে অবস্থিত
প্রাচীন পিরামিড-আকৃতির প্রস্তর নির্মিত স্থাপনাসমূহ । মিশরীয় পিরামিডগুলির মধ্যে
সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত পিরামিডগুলি দেখা যায় কায়রো শহরের উপকণ্ঠে গিজায় । গিজার
বেশ কয়েকটি স্থাপনাকে বিশ্বের অন্যতম বৃহদাকার স্থাপনা বলে মনে করা হয় । মিসরে
ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে । সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষণীয় হচ্ছে গিজা'র পিরামিড যা খুফু'র পিরামিড হিসেবে পরিচিত । ফারাও খুফুর পিরামিড আকারে
সবচেয়ে বড়, তার
নাম গ্রেট পিরামিড । এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে । এটি
তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ । এর
উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট । এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত । খুফু’র পিরামিডের ভেতরে কোন চিত্রলিপি পাওয়া যায় নি । খুফুর জন্য নির্মিত গিজার পিরামিডটির পাশে তার রাণীদের জন্য আরো তিনটি
পিরামিড নির্মিত হয় । শহরের রাস্তা ধরে এগোতে থাকলে অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে গিজা
পিরামিড কমপ্লেক্স ।
ইতিহাস থেকে আমরা আরও জানতে পারি - গিজার গ্রেট পিরামিড তৈরিতে প্রায় আড়াই
মিলিয়ন পাথরের ব্লক ব্যবহার করা হয়েছে যার একেকটির ওজন ২-৭০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০
থেকে ৪০ ফুটের মত । পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে পিরামিড তৈরি করা হত । ১৩ একর
জায়গা জুড়ে পিরামিডটি বিস্তৃত । নির্মাণের সময় গিজার পিরামিডের বাইরের
আবরণ এক বিশেষ পাথর দ্বারা আবৃত করা হয় । ৪৫০০ বছরের ঝড়, দুর্যোগ সহ্য করে এখনও টিকে আছে ।
এই পিরামিড গুলো এতটা সূক্ষ্মভাবে
মাপজোখ নিয়ে নির্মিত হয়েছে, দেখে মনে হবে বর্তমান সময়ের কোনো কারিগর সেখানে সময় পরিভ্রমণ করে গিয়ে তৈরি
করে দিয়ে আসছে । এদের সম্মুখভাগ প্রায়ই বিভিন্ন রঙের প্রলেপ দেয়া থাকত, যা জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত গুরুত্ব বহন করত । ২০০৮ সাল
পর্যন্ত মিশরে ১৩৮টি পিরামিড আবিষ্কৃত হয়েছে ।
এগুলির অধিকাংশই নির্মিত হয় প্রাচীন ও মধ্যকালীন ফ্যারাওদের রাজত্বকালে
তাদের ও তাদের পত্নীদের সমাধিসৌধ হিসেবে ।
গিজার পিরামিডের
মাঝামাঝিতে খুফুর পুত্র খাফ্রের সমাধি নির্মিত হয়েছে । তার শাসনামলেই দ্য গ্রেট স্ফিংক্স
নির্মিত হয় । গ্রেট পিরামিড সামনে স্ফিংক্স হল একটি প্রাণীর মূর্তি যার শরীরটি সিংহের এবং মস্তকটি মানুষের । স্ফিংক্স-টির উচ্চতা ২০ মিটার এবং দৈর্ঘ্য
প্রায় ৭৩.৫ মিটার । সম্ভবত সাড়ে ৪ হাজার বছরেরও আগে বেলে পাথর দ্বারা নির্মিত এই মূর্তি ।
একটা বিষয়ে মিশরীয়রা বরাবরই চুপ
থেকেছে । সেটি হল কীভাবে পিরামিড তৈরি হল । এ বিষয়ে কোথাও স্পষ্ট করে কোনো প্রমাণ
তাঁরা রেখে যায়নি । সাধারণ মানুষের পক্ষে ১৪৫ মিটার উচ্চতায় কয়েক টন ওজনের পাথর
উঠানো সম্ভব ছিল ? নাকি সেগুলো ছিল জায়ান্টদের কাজ । তাহলে কারা পিরামিড বানিয়েছিল ? কেন এত বড় পাথর ব্যবহার করা হল ? অনেকেই বলেন - ভিনগ্রহ বাসীরা এটা তৈরি করেছিল অথবা হাজার
হাজার মিশরীয় দাস বছরের পর বছর টন টন পাথর কেটে এনে এই পিরামিডগুলো বানিয়েছিল । বর্তমানকালের
বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন হাজার হাজার মানুষ মিলে বছরের পর বছর এত কষ্ট সহ্য করে
পিরামিডগুলো বানিয়েছিল । ভিনগ্রহ বাসীরা পিরামিড তৈরি করেছিল এর তেমন শক্ত প্রমাণ
নেই । ফারাওদের সময়ে হাজার হাজার ইহুদী
মিশরে দাস হিসাবে ছিল । তারা ছিল অত্যাচারিত । অনেকে ভাবেন এই দাসদের দিয়েই
পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল । এখানে খনন করা হচ্ছে, আরো হবে এবং একদিন হয়ত পুরো পিরামিডের রহস্যই আমরা উদঘাটন
করে জানতে পারব । পিরামিড দেখার জন্য প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক মিশরে আসেন ।
আমরা কি বর্তমানের আধুনিক প্রযুক্তি
ব্যবহার করে একটি পিরামিড বানাতে পারব ? আপনার কি মনে হয় ।
আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে বা আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে
তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্ট টি পৌঁছেদিতে অনুগ্রহ করে
শেয়ার করুণ । ইতিহাস ও জানা অজানা বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে ইতিহাস ও জানা অজানা
লেখাটির উপর ক্লিক করুণ । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে আপনার প্রয়োজন অনুসারে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷