শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

ভারতের বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের বাংলা জীবনী.


ওঠো, জাগো, লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না - স্বামী বিবেকানন্দ .

 স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন দেশাত্বপ্রান, সমাজসেবী ও এক আদর্শ সন্ন্যাসী । ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি উত্তর কলকাতায় সিমলা অঞ্চলে বিখ্যাত দত্ত পরিবারে স্বামী বিবেকানন্দ জন্ম গ্রহণ করেন । পিতার নাম বিশ্বনাথ দত্ত ও মাতার নাম ভুবনেশ্বরী দেবী । বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতা উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী । আদর করে তাঁরা বিলে বলে ডাকতেন শৈশব থেকে বিবেকানান্দ নির্ভীক, সত্যবাদী ও সহানুভূতিশীল ছিলেন । শৈশবে তিনি অত্যন্ত দুরন্ত ছিলেন, পিতামাতার পক্ষে তাকে সামলানো মাঝে মাঝেই দুঃসাধ্য হয়ে উঠত । ছাত্র হিসাবে ছিলেন খুবই মেধাবীপ্রথমে নিজ গৃহে মায়ের নিকট এবং পরে একজন গৃহশিক্ষকের নিকট নরেন্দ্রর শিক্ষাজীবন শুরু হয় । 


 তিনি তিন বছরের পাঠ্য এক বছরে পড়ে ১৮৭৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষা দেন ও প্রথম বিভাগে পাশ করেন । তিনি মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন ও স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে শিক্ষালাভ করেন । পিতার প্রগতিশীল ও যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও মায়ের ধর্মপ্রাণতা বিবেকানন্দের চিন্তা ও ব্যক্তিত্ব গঠনে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল । তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে আরও একটি ভাল গুন পেয়েছিলেন সেটি হল,  তিনি ভাল রান্না করতে পারতেন । স্বামী বিবেকানন্দের মধ্যে নানা গুনের সমন্বয় দেখা দিয়েছিল । সবাইকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন, নিজের নিন্দা বা অপ্রিয় কথা বলতে তিনি কুণ্ঠিত হতেন না । সমকালীন ভারতে ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে এক সংকট পূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল । জাতীয় জীবনে এক নির্ভর যোগ্য শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল । এই রকম এক পরিস্থিতিতে দেশ পেল স্বামী বিবেকানন্দকে । অল্পকাল বয়স থেকে সমাজ সেবার প্রবণতা তাঁর মধ্যে ছিল । অশিক্ষিত, দরিদ্র, হরিজনদের সেবার জন্য তিনি ছুটে যেতেন ।

 ছোটবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি তিনি আকর্ষিত হতেন । সাধু সন্ন্যাসীদের প্রতি তাঁর আকর্ষণ অল্প বয়স থেকে ছিল । দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, শিল্পকলা ও সাহিত্য বিষয়ে বই পড়ায় তার বিশেষ আগ্রহ ছিল । তিনি রাজা রামমোহন  রায়ের বেদান্ত বিষয়ক গ্রন্থাদি পাঠ করে ব্রাহ্মসমাজের প্রতি আকৃষ্ট হন । নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কথা প্রথম শোনেন জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশনে পড়ার সময় । ১৮৮১ সালে মাত্র আঠারো বছর বয়সে দক্ষিণেশ্বরের রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয় । প্রথম দিকে রামকৃষ্ণ তাঁর উপর প্রভাব সৃষ্টি করতে না পারলেও, কালক্রমে রামকৃষ্ণের সর্বজনীনতা, উদার নৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি শিক্ষার দ্বারা স্বামীজী গভীর ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন । শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশ, বানী ও গৌতম বুদ্ধের জীবন ও বানী তাঁকে বিশেষ প্রভাবিত করেছিল । গৌতম বুদ্ধের মানব সেবা স্বামীজীকে বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করেছিল ।

 শ্রী রামকৃষ্ণের শিষ্যত্ব গ্রহণ করার পর নরেন্দ্রনাথ স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত হন শ্রী রামকৃষ্ণের দেহ ত্যাগের পর তিনি তাঁর বানী প্রচার করতে ছয় বছর ধরে সারা ভারত পর্যটন করেন । তিনি দেশবাসীর অবর্ণনীয় দুঃখ, দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেন । তিনি উনুধাবন করলেন যে ভারত আজ দরিদ্র ও অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে আছে । ১৮৮৩ সালে কন্যাকুমারীতে স্বামীজী সিদ্ধান্ত নিলেন যে, ভারত ও ভারতবাসীর সামগ্রিক কল্যাণ করে অবহেলা, অন্ধকার দূর করে সমগ্র জাতিকে উপরে তুলে আনবেন । ভারতের অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি সক্রিয় হন । দেশ ও দেশবাসীর জন্য তাঁর ভালবাসা ছিল গভীর । দেশের মানুষদের দুর্দশা মোচনের জন্য জনসেবার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেন । তিনি ভারতে নবজাগরণ আন্দোলনের এক নতুন গতি সঞ্চার করেছিলেন । দেশমাতৃকার সেবার জন্য বিবেকানন্দ যুব সমাজকে জীবন উৎসর্গ করার আহবান জানান । তাঁর স্বদেশ সেবামূলক আবেদনে ভারতের আদর্শবাদী যুব সমাজ অনুপ্রাণিত হয়েছিল,দরিদ্রের সেবার আহবানের তিনি যথাযথ সাড়া পেয়েছিলেন, তাঁর ডাকে দেশের যুব সমাজ উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণ কর্মে ব্রতী হয় ।  

 ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে ভারতবর্ষের মহান ঐতিহ্য এবং সনাতন হিন্দু ধর্মের আদর্শের কথা প্রচার করে স্বদেশের গৌরব  এনে দেন । যার মাধ্যমেই তিনি পাশ্চাত্য সমাজে প্রথম হিন্দুধর্ম প্রচার করেন । দি নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড তাঁকে ধর্ম সম্মেলন থেকে আবির্ভূত বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করে । তিনি বোস্টন, ডেট্রয়েট, নিউ ইয়র্ক, বাল্টিমোর, ওয়াশিংটন, ব্রুকলিন প্রভৃতি শহর থেকে বক্তৃতা করার আমন্ত্রণ লাভ করেন । বহু আমেরিকান নারী-পুরুষ তাঁর শিষ্যত্ব লাভ করেন এবং বেশ কয়েকজন তাঁর সঙ্গে ভারতে চলে আসেন । এরপর তিনি সেখান থেকে লন্ডনে যান । এই সময় তাঁর সাথে মিস মার্গারেট নোবেলের পরিচয় হয় । তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং বাকি জীবন ভারতবর্ষেই অতিবাহিত করেন । এভাবে বিভিন্ন দেশ ঘুরে তিনি ১৯০০ সালে বেলুড়ে ফিরে আসেন । ১৮৯৭ সালে তিনি ক্যাথলিক মিশনের মডেল অনুসারে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি হিন্দু ধর্মকে একটি বিশ্বধর্মে পরিণত করেন । তিনি ছিলেন ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনা সম্পন্ন ।
 স্বামী বিবেকানন্দ সকলের জন্য প্রেম প্রীতি ভালোবাসার কথা বলে গেছেন । দরিদ্র নারায়ণ সেবার উপর তিনি জোর দিয়েছিলেন । মানবতা ও মানবসেবার মাধ্যমে সকলকে আত্ম নিয়োগ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন । তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সব সম্ভাবনার দেশ মনে করেন ।  প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যর মধ্যে সহযোগিতা এবং মৌলিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মধ্যেই মানুষের ভবিষ্যৎ বিদ্যমান বলে তিনি উপলব্ধি করেন । তিনি পশ্চিমী সংস্কৃতির ভাল দিক গুলি সংগ্রহ করে ভারতীয় করণ করেন । দুনিয়ার যা কিছু ভাল তা সংগ্রহ করার জন্য আহ্বান করেন । ভবিষ্যৎ জাতির জন্য ক্ষতিকর সবকিছুকেই তিনি কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন ।
 জীব সেবার মধ্য দিয়ে তিনি ঈশ্বর সেবার আদর্শ খুঁজে পেয়েছিলেন  তাঁর প্রধান শিষ্যা ছিলেন মার্গারেট নোবেল । পরে তিনি ভগিনী নিবেদিতা নামে পরিচিত হন । সমাজ সেবা, শিক্ষা বিস্তার, বেদান্ত, দর্শন ইত্যাদি প্রচারের মাধ্যমে তিনি দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন । তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থগুলি হল – বর্তমান ভারত, পরিব্রাজক, জ্ঞানযোগ, পাচ্য ও পাশ্চাত্য তার জন্মদিনটি ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয় ।
 ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ৪ জুলাই মাত্র ৩৯ বছর বয়সে এই বীর সন্ন্যাসী পরলোক গমন করেন ।

 আমাদের লেখা আপনার কেমন লাগছে ও আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তবে নিচে কমেন্ট করে জানান । আপনার বন্ধুদের কাছে পোস্টটি পৌঁছে দিতে দয়া করে শেয়ার করুন । জীবনী বিষয়ে আরও পোস্ট পড়তে নিচে জীবনী লেখাটির উপর ক্লিক করুন । পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ 


আমাদের আরও পোস্ট পড়ুন - 

আপনারা দয়া করে এখানে থাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের উপর ক্লিক করে জিনিস কিনুন, তাহলে আমি কিছু কমিশন পাব।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷